অধ্যায় ১
সহরের রাশি রাশি বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ির মধ্যে একটির দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ানর পর চিরুনিতে জড়ানো ছেঁড়া চুলের নুটি পাকিয়ে নিচে ফেলে দিল মায়া। কিন্তু তার পরেই তার খেয়াল হল যে চুলের নুটিতে সে থুথু দেয়নি, সব সময় ওর দিদিমা তাই বলতেন।
আসলে ওর মন ছিল নিজের ওজনের দিকে, ভাবত যে ও মোটা হয়ে যাচ্ছে। যেমন আজ কালরে ১৯-২০ বয়েসি মেয়েদের মনে হয়। ওর দামি জিন্স আর টি শার্ট ফিট্ হবে না, সখিরা ওকে মোটা বলে খ্যাপাবে— ছেলেরাই বা কি বলবে, “অ্যাই মোটি?”
চুলের নুটি যাতে নিচের বাড়ির জাংলা দিয়ে ভিতরে পড়েছে কিনা দেখার জন্যে ঝুঁকে দেখে মায়া; ও দেখল ওর চুলের নুটি তুলর বিচির মত ভাসতে ভাসতে এগুচ্ছে একটা বয়স্ক লোকের দিকে ও বুঝতে পারল যে চুলের নুটি অই লোকটার গায়েই পড়বে, তাই উঁকি ঝুঁকি মারা ছেড়ে ও একটু অপরাধ বোধ নিয়ে সে পালায় ঘরের ভিতর।
চুলের নুটি পড়ে লোকটার একেবারে মুখের উপর, সে মুখ তুলে তাকায় কিন্তু দেখেতে পায়ে না কাউকেই। কিন্তু চুলের নুটি হাতে নিয়ে সেই লোকটা বুঝতে পেরে গেল যে এটা একটি অল্প বয়সী মেয়েদের চুলের গুচ্ছ আরে এটি কোথা থেকে- কোন বাড়ির থেকে এসেছে সেটিও ঠিকঠাক আন্দাজ করে ফেলল… রাস্তায় পড়ে থাকা একটা কাগজের টুকরোতে ভালো করে সে মুড়ে নিল সেই মায়ার চুলের নুটি আর সেটিকে যত্ন করে নিজের পকেট এ রেখে এগিয়ে চলল|
মায়া এই ব্যাপারে কিছুই জানতে পারল না…
***
বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে, চুলের নুটির ঘটনা মায়া ভুলে গেছে। তবে তার মন যেন চঞ্চল হয়ে উঠেছে, পড়া লেখায় সে হেলায় হারিয়েছে, বেশীর ভাগ সময় সে যেন ঘুমিয়েই থাকতে চায়। তার ওজোন কমে গেছে, সে খাওয়া দাওয়াও ঠিক করে করছে না।
প্রথমে দিদিমা এই লক্ষণ গুলকে উপেক্ষা করে, কারণ এই বয়েসে মেয়েরা প্রেমে পড়ে। এটা বোধ হয় একটা প্রেম রোগ! ছেলে যদি ভাল হয়, তো ক্ষতি কি?
দিদিমার চিন্তা দিন কে দিন বাড়তে থাকে। হটাত মেয়েটার কি যে হল? ওর যে মা’ও অনেক দিন আগে মারা গেছে আর বাবা ওকে দিদিমার আর অবিবাহিত মাসির কবলে ছেড়ে, নিজের কাজ আর কাজ ঘটিত ‘লিব ইন’ সম্পর্ক নিয়েই ব্যস্ত।
কিন্তু দিদিমার চিন্তা আরও বেড়ে যায় যখন তিনি বুঝতে পারেন যে মায়া অন্তর্বাস পোরতে খুব একটা আর ইচ্ছুক নয়। সে সব সময়েই যেন কিছু ভাবতে থাকে, নিজের মনে মৃদু মৃদু হাঁসতে থাকে। মাঝে মাঝে ডাকলে মাঝে মাঝে সাড়া দেয়না। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে।
এইরকম করে আরও কয়েক দিন কেটে যায়, মায়া আর কারুর সঙ্গে কোন কথা বলেনা। দিদিমার আর মাসির চিন্তা বেড়ে যায়।
“মায়া, তোর কি হয়েছে?”, জিগ্যেস করলে তারা একটাই উত্তর পায়
“কিছু না…”
আরও এক সপ্তাহ কেটে যায়, মায়া আর পড়তে যায় না শুধু বাড়িতেই বসে থাকে আর মাঝ রাতে মায়ার ঘর থেকে ভেসে আসে তার মিষ্টি হাঁসি।
শেষে দিদিমা আর মাসি ঠিক করেন যে পরের দিন সকালেই তারা মায়াকে এক মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে।
সেই দিন রাতে দিদিমা আর মাসির ঘুম ভেঙ্গে যায়। তারা শুনতে পারছিল, মায়ার হাঁসি আর কোঁকানি। দুটোতেই যেন চরম কামুকতার ছাপ!
ওরা মায়ার ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে দ্যাখে যে মায়া হাত পা ছড়িয়ে চিত হয়ে শুয়ে হাঁসছে আর কোঁকাচ্ছে; সে সম্পূর্ণ উলঙ্গ। ওর দেহ এমন ভাবে ঝাঁকুনি খাচ্ছে, যেন কোন অদৃশ্য শক্তি ওর যৌনসহবাস করছে।
ওরা ভয় পেয়ে গিয়ে মায়া কে জাগানোর বৃথা চেষ্টা করে শেষ কালে ভয়ে পেয়ে গিয়ে, ঈশ্বরের কে ডাকতে থাকে।
ব্যাস! অনেক হয়েছে।
কোন সন্দেহ নেই যে মায়া কোন ধরণের কুদৃষ্টির অধীনে পড়েছে। এর উপচার ডাক্তার কোরতে পারবে না… পারবে এক তান্ত্রিক যার নাম গোগা বাবা! ওনাকে খবরটা দিতেই হবে।