মায়ের সাথে স্বর্গীয় অনুভূতি ৮ম

অলসতা নিয়ে ঘুমটা ভাঙল। গা’টা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে। টাইট জাঙ্গিয়া প্যান্টের ভেতরেই বীর্যস্খলনের ফলে কেমন চ্যাটচেটে ভেজা ভাব অনুভব করছি। প্রচণ্ড অস্বস্তিকর ব্যাপার। এখুনি বাথরুম গিয়ে প্যান্ট না বদলালে সারাদিন এই ঝঞ্ঝাট বইতে হবে। কেমন যেন কুটকুট করছে ভেতরটা। ঘড়িতে সময় দেখলাম সকাল সাড়ে আটটা। বাইরে একটা হট্টগোল হচ্ছে। অনেক মানুষজন মিলে একসঙ্গে কথা বলছে মনে হয়।এখান কার সবাই উচ্চ স্বরে কথা বলে মনে হয়। তাঁদের গলার আওয়াজেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। অ্যালার্ম এর আলাদা করে প্রয়োজন হয় না।
বারান্দার দরজা দিয়ে প্রভাতের সোনালি রোদ্দুর এই ঘরের পশ্চিম দেওয়াল অবধি পৌঁছে গেছে।ঘুম ভাঙলেও আমি বিছানাতেই শুয়ে ছিলাম। ঠিক সেই সময় রান্নাঘর থেকে দিদার আসার শব্দ পেলাম, “গতকাল আমায় বিয়ে করবো বলছিল ওই ছেলেটা কই? সেকি এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি?”
দিদার কথা শুনে আমি বিছানায় উঠে বসলাম ।
“কি দাদু ভাই? এতক্ষণ ধরে ঘুমালে হবে? সকালবেলা তোমার বাবা চলে যাবার সময় তোমায় কত ডাকলেন। তুমি শুনতেই পেলে না”।
হকচকিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, “বাবা ভোর বেলায় বেরিয়ে পড়েছেন দিদা?”
তিনি আমার ডান পাশে বসলেন এবং হাসি মুখে জবাব দিলেন, “হ্যাঁ গো দাদুভাই। তখনতো তুমি গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিলে”।
আমি মুখ নামিয়ে মৃদু গলায়, “হুম” বললাম।
তিনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন কিছু বলতে দাদু ভাই?”
“না। এমন’ই দিদা…তেমন কিছু না…। আর মা কোথায়?”
“তোমার মায়ের তো সেই ভোর বেলা থেকেই ভীষণ কাজ। বাবার একমাত্র মেয়ে বলে কথা…সে এখন বাথরুম
গেছে। স্নানে আছে বোধয়”।
“মা ভালো আছে তো… দিদা?”
“সে ফিরলেই না হয় তুমি জিজ্ঞেস করে নিও দাদুভাই”।
“হুম”।
তিনি আমার থুতনিতে হাত রাখলেন, “কি হয়েছে দাদু ভাই? মন খারাপ করছে তোমার?”
আমি হাঁফ ছাড়লাম। তারপর বললাম, “জানো দিদা গতরাত আমি একটা ভীষণ বাজে স্বপ্ন দেখেছিলাম”।
“কি স্বপ্ন দাদুভাই? আমায় বলা যায়…?”
“নাহ থাক দিদা। তোমাকে আর শুনতে হবে না”।
“বল না দাদুভাই। স্বপ্নই তো দেখেছো। সত্যি তো আর হয়ে যায় নি…। সুতরাং বলেই ফেল”।
আমি একটু কাঁচুমাচু ভাব নিয়ে বললাম, “গতরাত আমি স্বপ্নে দেখলাম। আমি তোমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছি…। আর তুমি আমার হাত নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছ…”।
দিদা হাসলেন, “তারপর”।
আমি বললাম, “তোমাকে দাদাইয়ের কাছে থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছি! দাদাইও তরোয়াল হাতে নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমিও নিজের তরোয়ালটা বের করলাম। তোমার পেটে ঠেকালাম। তুমি যদি আমার না হতে পারো। তাহলে দাদাইয়েরও হতে পারবে না এই বলে তোমাকে মারার চেষ্টা করছি আমি। তুমি ছটফট করছ…। এমন সময় দাদাই এসে তরোয়াল ধরে রাখা আমার হাতটা ঘচাৎ করে কেটে ফেললেন! আর গলগল করে আমার রক্ত বেরিয়ে পড়ল”।
আমার স্বপ্ন শুনে দিদা তো হো হো করে হেসে ফেললেন, “মানে তোমার দাদাইয়ের আমি রানী!!!”
আমি লাজুক ভাব নিয়ে বললাম, “ হ্যাঁ দিদা! স্বপ্নে আমি বড় দোষ করে ফেললাম গো”।

দিদা উঠে পড়লেন। আমার কাঁধে চিমটি কেটে বললেন, “ওই যে কাল রাতে তুমি আমায় নিয়ে যাবে বলছিলে! তাই তোমার স্বপ্নদোষ হয়েছে!”

যাইহোক দিদার সঙ্গে কথা বলে মনের গ্লানি দূর করলাম। কি ভয়বহ স্বপ্ন মাইরি!
বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে বাথরুমের কাছে গিয়ে দেখলাম ভেতর থেকে লাগানো। মা আছে বোধয়। স্নান
করছে। আর সরলা মাসিকেও দেখলাম কুয়োর চার পাশে ঘুরঘুর করছে।
“ব্রাশ এনে দেবো বাবু?” হাসি মুখে সে আমায় জিজ্ঞেস করল। আমিও মাথা নাড়ালাম।
“দ্যাখো ওই দিকে বাথরুম আছে। তোমার দরকার লাগলে যেতে পারো”।
আমি স্নানাগারের পাশের কুঠুরিতে ঢুকে পড়লাম। প্রাকৃতিক কাজ পরে হবে। প্যান্ট খুলে আগে “বাল বিচি” গুলো ধুয়ে ফেলি। সকাল থেকে চ্যাটচ্যাট করছে সেখানটা।
প্রাতঃ কর্ম সেরে ছাদে উঠে এসে দেখলাম মা একটা চেয়ারে বসে পশ্চিম দিকে মুখ করে আপন মনে চুপ করে বসে আছে। এলোমেলো চুল গুলো শীতল বাতাসে উড়ছে। মুখে একটা শুষ্ক ভাব স্পষ্ট। ঠোঁটের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। পরনে একটা মোটা নাইট গাউন। যার কনুই অবধি ঢাকা। ডান হাতে চায়ের কাপ। কাপের হাতলে মধ্যমা আঙ্গুল ঢোকানো।
আমি উঠে এসে তাঁর কাছে দাঁড়ালেও আমার দিকে তাকাল না। একমনেই পশ্চিম দিকে তাকিয়ে ছিল। শান্ত স্থির চোখ দুটো তাঁর। যেন গভীর চিন্তনে মগ্ন আছে। আমি তাঁর মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে মা যেদিকে তাকিয়ে ছিল সেই দিকে চোখ রাখলাম। বাড়ির পেছনে মোরামের রাস্তা বয়ে গেছে কিছু দূরে। উত্তর পূর্ব থেকে দক্ষিণ পশ্চিম দিকে। তার ওপারে পাকা ধানের ক্ষেত। আরও দূরে ছোট ছোট বাবলা গাছের ঝোপ। নীল আকাশ দিয়ে এক ঝাঁক চড়ুই পাখি কিচিরমিচির শব্দ করে উড়ে চলে গেলো। শীতের ঠাণ্ডা বাতাসে এখানে মিহি ধুলো উড়ে যায়। ফলে বেশিক্ষণ বাইরে থাকলে গায়ে একটা খসখসে ভাব তৈরি হয়। আমি সোয়েটার গায়ে এবং গতরাতের পাজামাটা পরে ছিলাম। সোয়েটারের পকেটে হাত দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশটা একবার দেখে নিলাম। বাড়ি গুলো সব পূর্ব দিকে রয়েছে। পশ্চিম দিক এখনও ফাঁকা। চাষবাস হয় বলে ঘরবাড়ি এই দিকটায় হয়নি এখনও।
আমরা মা ছেলে কোন কথা বলছিলাম না। মাকে এই শীতের সকাল উপভোগ করতে দিচ্ছিলাম। দাদাইকে বিদায় জানানো এই একদিন হল মাত্র। জানিনা মায়ের এই শোক কাটতে আরও কত দিন লাগবে।
ছাদের ধারে টবের উপর লাগানো ফুলের গাছ গুলোর ফাঁকে আমি পা ঢুকিয়ে মায়ের চেয়ে থাকা প্রান্তের দিকেই পুনরায় চোখ রাখলাম।
এমন মুহূর্তে মা’ই প্রথম কথা বলে উঠল, “জানিস বাবু! ছোট বেলায় যাদেরকে দেখে বড় হয়েছি….। যাদের কোলে কাঁখে চেপে মানুষ হয়েছি। যারা আমাদের জন্ম দিয়েছেন! তাঁরা হটাৎ ছেড়ে চলে গেলে বুকে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়। সেটা কখনও পূরণ হয়না…। এমনকি নতুন প্রজন্ম জীবনে এলেও সেই জায়গা ভরাট করতে পারে না। খালিই থাকে…” ।

আমি অন্যমনস্ক ছিলাম। আচমকা তার গলার আওয়াজ শুনে পেছন ফিরলাম, “হুম……। কি….কি বললে?” মা আবার চুপ করে গেলো, যেদিকে চেয়ে ছিল সেদিকেই চোখ মেললো। আমি ছাদের ধার থেকে ফিরে তাঁর কাছে এসে দাঁড়ালাম, “হ্যাঁ…। তুমি ঠিকই বলেছ মা! ভালোবাসার মানুষ গুলো আমাদের ছেড়ে চলে গেলে ভীষণ কষ্ট হয়”।
মায়ের মৌন ধারণ দেখে চেয়ারের পেছনে এসে তাঁর দুই কাঁধে হাত রেখে দাঁড়ালাম।দেখলাম মা নিজের বাম হাত দিয়ে আমার বাম হাতের আঙ্গুল স্পর্শ করল। তারপর ধরা গলায় বলল, “কিছু খেয়েছিস বাবু? ব্রেকফাস্ট করেছিস?”
মায়ের এই কথাটা শোনার জন্য আমার মনে হচ্ছিলো যেন কয়েক যুগ ধরে অপেক্ষা করছি। নইলে গত বিয়াল্লিশ ঘণ্টা ধরে তাঁর এক আলাদা রুপ দেখতে পাচ্ছিলাম।এক অজানা চরিত্রের মানুষ। যে আমার মা নয়, বরং বছর ছয় সাতের এক মেয়ে, যার প্রিয় জিনিস খোয়া গিয়েছে। ফলে সে কান্নায় ভেসে পড়েছে। যে রাত দিন দেখে নি। সময় পরিস্থিতি দেখে নি। আশে পাশের মানুষ জন কেও অগ্রাহ্য করেছে।যে কেবল নিজের বায়নার উপর অটল থেকেছে। সবকিছু ভুলে পিতৃশোকে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল বেচারি। টানা দুই দিনের শোকাচ্ছন্ন ভাব কাটিয়ে মা নিজের সন্তানের খোঁজ নিচ্ছে এটা জেনে আমার মনের মধ্যে যে কি পরিমাণ তৃপ্তির অনুভূতি হচ্ছিলো তা বলে
বোঝানো সম্ভব নয়।
খুশি মিশ্রিত টলমলে গলায় আমি তাঁর কানের কাছে মুখ এনে বললাম, “মা…। তুমি কথা বলছো, আমার খোঁজ নিচ্ছ, এতেই আমার খিদে মিটে গেছে…। নইলে গত দুই দিন ধরে তোমার বড্ড অভাব বোধ করছিলাম গো। আমার সেই রাগী স্বভাবের পুরনো মাকে যেন কোথায় হারিয়ে ফেলেছিলাম”।
মায়ের আবার ধরা গলায় বলল,“এটা তোর নিজের ঘর নয় বাবু। যেখানে তুই নিজের ইচ্ছা মতো যখন তখন মুখের কাছে খাবার পেয়ে যাবি।সবাই সবার কাজে ব্যস্ত থাকবে। সুতরাং তাঁদের সুবিধা মতো চলবি। কাউকে অর্ডার দিবিনা একদম”।
মায়ের এই রকম গম্ভীর সতর্কবাণী পেয়ে আমি আবার তাঁর মুখের সামনে এসে দাঁড়ালাম। তাঁর ম্লান মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে চাপা হাসি দিয়ে বললাম, “এটা তো আমার নিজেরই ঘর মামনি। দাদাইয়ের বাড়ি ছিল। তাঁর অবর্তমানে এই বাগানবাড়ি এখন আমার”।
মা আমার কথার কোন উত্তর দিলো না। পুনরায় সে পশ্চিম দিকে চোখ রাখল।
আমি তাঁর সামনে থেকে উঠে গিয়ে পুনরায় ছাদের কিনারায় এসে দাঁড়ালাম, “এমনিই মস্করা করছিলাম মা।তুমি কিছু মনে কর না”।
সে এবারও চুপ করে রইল। আমি হাফ ছাড়লাম।তারপর অপর একটা চেয়ার টেনে তাঁর মুখোমুখি বসে পড়লাম। তাঁর দু’হাত আমার হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম, “সত্যি কথা বলতে জানো মা?আমি তোমার জন্য চিন্তিত। গত দুই দিন ধরে নিজেকে একবার তাকিয়ে দেখেছো…। চোখে ঘুম নেই তোমার। খাবার ঠিক মতো খাচ্ছ কি না
জানি না। চোখের নীচ দুটো ফুলে উঠেছে।মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তোমার…”।
মা আমার কথার কোন উত্তর দিলো না।
আমি তাঁর কোমল হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরলাম। বললাম, “দাদাই… আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এটা যেমন সত্য, ঠিক এটাও সত্য যে আমাদেরও জীবন আছে। আমারও জীবন আছে। তুমি আমার জীবন মা!তুমি তা ভালো করেই জানো। তবে তুমি যে ভাবে শোক পালন করছো তাতে আমার ভয় হচ্ছে মা। দয়া করে তুমি এমন করো না। তুমি শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাও।আমি আমার মাকে স্বাভাবিক রূপে ফিরে পেতে চাই তাড়াতাড়ি”।
আমার কথা শুনে মায়ের ঠোঁটের কোণে অস্পষ্ট হাসি ফুটল। তাতে আমি কিছুটা আশার আলো দেখতে পেলাম। সে আমার দিকে চোখ তুলল, “মন মানতে চায় না রে বাবু!”
আমি তাঁর কথায় কিঞ্চিৎ উৎসাহিত হলাম।তাঁর দুটো হাত পুনরায় চেপে ধরলাম, “মনকে বোঝাও মামনি…। এই ভাবে জীবন চলে না। তুমি শুধু আমার পুরনো মাকে ফিরিয়ে দাও…। দ্যাখো দিদামণিকে! তিনি কত সুন্দর আছেন। দিব্যি মেনে নিয়েছেন সত্য টাকে”।
মা আবার ম্লান হাসল। তাঁর বাম হাত দিয়ে আমার বাম গাল বুলিয়ে দিলো, “আমাকে কিছুটা সময় দে বাবু। সব ঠিক হয়ে যাবে”।
আশ্বস্ত মন নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। মনে মনে বললাম, “মা যখন বলছে, তখন মা সত্যিই খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে যাবে”।
প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য আলাদা কথা বলা শুরু করলাম। পশ্চিম দিকের বহুদূরে অবস্থিত আবছা দেখা যাওয়া চিমনীটার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা মা! ওই চিমনী টা কিসের?”
মা চোখ মেললো, “ওটা বক্রেশ্বর থার্মাল প্লান্টের চিমনী। আকাশ পরিষ্কার বলে এখান থেকেও দেখা যাচ্ছে”। আমি মুখ নামালাম, “হুম” !

4 thoughts on “মায়ের সাথে স্বর্গীয় অনুভূতি ৮ম”

Leave a Reply