সতী শর্মিলা ২য়

ততক্ষণে খানিকটা নার্ভ ফিরে পেয়ে সুস্থির হয়েছে শর্মিলা । মা শর্মিষ্ঠার অ্যাডভাইস মনে পড়তেই এগিয়ে এসে ঝুঁকে পড়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে চাইলো অধ্যাপককে । কিন্তু , জিমন্যাস্টের ক্ষিপ্রতায় অনেকটা ঝুঁকে-পড়া শর্মিলার দুই উপর-বাহু ধরে সোজা করে তুললেন ওকে ডঃ রায় – ”না নাঃ , একদম না , আমি লোকটা প্রণামের কাঙাল বা বিশ্বাসী কোনোটাই নই । আমার গাঈডেন্সে যদি পরীক্ষার রেজাল্ট বাবামা-কে সন্তুষ্ট করতে পারে তো সেটি-ই হবে তোমার প্রণাম ।” বলতে বলতে হাত সরিয়ে আনার সময়েই ছুঁয়ে গেল অবিন্যস্ত-দোপাট্টা শর্মিলার ‘এগিয়ে-ছাতি’ কুর্তি-ফোঁড়া চুঁচিদুটো । – এটা কী হলো – মনে হলেও , তখন আর অতো কনসেনট্রেটের সময় নেই – মায়ের বলে-দেয়া কথা মতো শর্মিলা প্রথম কথা বললো – জিজ্ঞাসার আকারে – ”মা আপনার জন্যে একটু বিরিয়ানী পাঠিয়েছে , স্যার । ওটা কি আমি …. আপনার ফ্রিজ-টা কোথায় বললে আমি….”

শর্মিলার ফোলা গালটা টিপে দিয়ে হেসে উঠলেন প্রফেসর রায় – ”ছি ছি , আমার জন্যে উনি আবার কষ্ট করে … না না , এ ভারী অন্যায় …” ব’লেই জুড়ে দিলেন – ”আমার” । রঙ্গিলা ততক্ষনে একটা সোফায় আরাম করে বসে পড়েছে । ডঃ রায় বললেন – ”তুমি একদম ব্যস্ত হয়ো না মিলা । ওসব ফ্রিজে রাখাটাখার ….” বলতে বলতেই একটু গলা তুলে ডাকলেন – ”সাবি – এইই সাবিইই… এখানে আয় তাড়াতাড়ি….”

বলার প্রায় সাথে সাথই যে হাজির হলো তাকে দেখার কথা শর্মিলা ভাবতে পারেনি বোঝা-ই গেল ওর সপ্রশংস নিষ্পলক মৌনতা দেখে । বোধহয় , রঙ্গিলাও বেশ কিছুটা অবাকই হয়েছিল । ওর , বন্ধ করতে ভুলে যাওয়া , হাঁ-মুখই তার প্রমাণ দিচ্ছিলো । – ওদের , মানে শর্মি আর রঙ্গির , চাইতে , দেখেই বোঝা যায় , বয়সে কয়েক বছরের বড়ই হবে মেয়েটি । বোধহয় বছর তেইশ-চব্বিশ । কিন্তু , এমন চমকদার রূপ সচরাচর দেখা-ই যায় না । লম্বায় কমসে-কম সাড়ে পাঁচ ফিট তো অবশ্যই , শর্মির ঠিক পাশেই দাঁড়ানোতে দেখা গেল এক/দেড় ইঞ্চি ছাড়িয়ে গেছে শর্মির মাথা । আর , চোখ নাক ঠোট কপাল সামান্য তামাটে চুল – পশ্চিমে দেশে যাদের ‘রেড-হেড’ বলে – সব মিলিয়ে যেন বিজলি-চমক । সালোয়ার আর ঢিলে কামিজ পরে থাকায় পরিপূর্ণ ভাবে বুকের গঠন , সেই মুহূ্র্তে , বোঝা না গেলেও – ওদেরকে নমস্কার করার সময় , কামিজে টান পড়েই বোধহয় , পূর্ণ-প্রস্ফুটিত ভুঁইপদ্মের মতোই যেন দল মেলে হেসে উঠলো ওর মাইদুখান । শর্মির মনে হলো , কামিজের প্রাচিরের উদ্দেশ্যে , বোধহয় আড়ালি-মাইদুটো , গর্জে উঠছে – ”ভেঙে ফ্যাল , কর রে লোপাট্…”

এ নিশ্চয়ই স্যারের বোন । স্যার-ও দেখতে খুউব সুন্দর । – ভাবলো শর্মিলা । – তারপর নিজের মাথা থেকেই , মায়ের নির্দেশগুলিকে এক্সটেন্ড করে নিয়ে ভাবলো … নিচু হয়ে পা ছুঁতে যেতেই ছিটকে তিনহাত সরে গেল সাবি । সৌজন্য দেখিয়ে শর্মিলা এবার সরব হলো – ”তুমি তো আমাদের চেয়ে বড়ই হবে সাবিত্রীদি – তাই তোমাকে তো প্রণাম …” – শর্মিলার কথা অসমাপ্ত-ই রয়ে গেল ডঃ রায়ের হোহোহো… হাসির আওয়াজে ….

যেন অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে প্রফেসর শর্মিলার দিকে তকিয়ে বললেন – ”তুমি ওকে প্রণাম করবে কী করবে না সে-সব পরের কথা – কিন্তু , মিলা তুমি ওকে ”সাবিত্রীদি” বললে কেন ? ওর নাম জানো তুমি ?” – দৃশ্যত অপ্রস্তুত শর্মিলা খানিকটা আমতা আমতা করে জবাব দিলো – ”ওইই যে স্যার , আপনি ডাকলেন ‘সাবি’ নামে ….” – অধ্যাপক আর ধন্দে রাখলেন না – সোফায়-বসা রঙ্গিলা , আর সাবি-র পাশে , খানিকটা সঙ্কুচিত হয়ে দাঁড়িয়ে-থাকা শর্মিলা – দু’জনের দিকেই তাকিয়ে , হাত বাড়িয়ে কনুইয়ের উপরের দিকটা ধরে , টেনে আনলেন সাবিকে । নিজের পাশে , প্রায় শরীরের সাথে চেপে রেখে , ওর কোমর বেড় দিয়ে ধরে , ঘোষণার ঢঙে জানালেন – ”নাম-কে ছোট করে ডাকাটা আমার অভ্যেস । তোমাকে বলছি শুনছো – ‘মিলা’ । ওকে বলছি – ‘গিলা’ …. তারপর যেন খুনের কিনারা করে , খুনীর নাম-বলা , গোয়েন্দার মতো বললেন – এ ‘সতী’ হ’তেও পারে , কিন্তু , ”সাবিত্রী” নয় ।” কমরে হাতের চাপ বাড়িয়ে নিজর দিকে আরোও একটু টেনে এনে ফাইন্যাল টাচ্ দিলেন – ” এ হলো – ‘সাবিনা’ – সাবিনা রেহমান । . . . . . বিরিয়ানীর প্যাক-টা ও-ই রাখবে ফ্রিজে । ওর হাতেই দাও মিলা ।…

একটু আনঈউস্যুয়াল হলো ঠিক-ই , কিন্তু , পরিবেশটা হালকা হয়ে গেল অনেকখানি । শর্মিলাও যেন প্রায় পুরোপুরিই সহজ হয়ে গেল । প্রশ্ন করেই বসলো – ”সে ঠিক আছে স্যার । বেশিরভাগ লোক-ই আমায় ছোট করে ‘শর্মি’ বলে । ‘মিলা’টা-ও চলতে পারে । কিন্তু , স্যার , আমার বেস্টফ্রেন্ডকে ‘রঙ্গি’ বলে অনেককেই ডাকতে শুনেছি – আপনিই শুধু রঙ্গিলাকে ছোট করে নিয়ে ডাকলেন – ”গিলা” । কেন স্যার ?!…

ডঃ রায় ওনার সেই পেটেন্ট হাসিটা আবার হাসলেন । তারপর জিজ্ঞেস করলেন – ”মিলা , ওয়াশরুমে যাবে ?” – শর্মি মাথা নেড়ে ‘না’ জানাতে এবার রঙ্গিলার দিকে তাকিয়ে শুধোলেন – ”তুই তো নিশ্চয় যাবি – নয় ? এতোক্ষনে তো তুই নিশ্চয়ই ‘গিলা’ হয়ে গেছিস ? ঠিক বলছি না ভাগ্নী ?” – শর্মির চোখের দিকে তাকিয়ে তীর্যক হাসলেন – ”তোমার বেস্টফ্রেন্ড ‘গিলা’ হয়ে গেছে । মানে , আমিই ওকে ‘গিলা’ করেছি । – নামটাকে ছোট করে দিয়ে আরকি…”

শর্মিলার মুখ লজ্জার ছায়া ঘনালো – গহন মেঘের মতো । – স্পষ্ট অনুভব করলো ও নিজেও যেন হয়ে গেল – গি-লা । – ওর সুগঠিত , ওল্টানো-ছাল কদলীকান্ড-সদৃশ , দুই থাইয়ের মাঝখানটি । ওর সবাল গুদ । – ডঃ রায়ের দিকে তাকিয়ে , যেন গলা চিরেই , বেরিয়ে এলো – ” আমি যাব , আমি ওয়াশরুমে যাব , স্যা-র . . 

 . দুটো মাস কোথা দিয়ে কী করে যে কেটে গেল যেন বুঝতেই পারা গেল না । এর মধ্যে বেশ ক’টি ব্যাপার ঘটেছে । তার ভিতর সবচাইতে যেটি ভাল লাগে শর্মিলার সেটি হলো সে-ও সাবি নয় , সাবিনার নামটি ছোট করে – করে নিয়েছে বীনা । ডাকে বীনাদি ব’লে । বীনাও যেন ভীষণ আপন করে নিয়েছে শর্মিলাকে । বীনা নিজের কথাও কিছুটা কিছুটা শুনিয়েছে শর্মিকে । কিন্তু , লক্ষ্য করেছে , স্যারের সামনে বীনাদি যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ । ও তো শর্মিদের চাইতে বড়জোর বছর পাঁচ-ছয়ের বড় । তার মানে , বাইশ-তেইশের উচ্ছ্বল যুবতী । স্যারের সামনে কিন্তু কেমন যেন গম্ভীর হয়ে , রাশভারী মুখে থাকে । শুধু শর্মির সাথে একা থাকলেই বোঝা যায় সাবিনার প্রাণোচ্ছ্বলতা । এমনকি , রঙ্গি থাকলেও ওর সামনেও যেন নিজের তৈরি একটা খোলসে ঢুকে পড়ে বীনাদি । খোলস ছেড়ে বেরুলেও ওর অ্যারাবিয়ান ধরণের আকর্ষনীয় মুখে যেন এঁটে নেয় একটা গাম্ভীর্যের মুখোশ ।

আর একটা ব্যাপার ঘটেছে । শর্মিলা এখন ‘স্যার’এর সাথে যোগ করে ডঃ রায়কে ডাকে ‘স্যারমামু’ – যদিও উনি বলেছিলেন রঙ্গিলার মতোই ওনলি ‘মামু’ ডাকতে । শর্মিলা ওর মায়ের কথা ব’লে প্রকারান্তরে এড়িয়ে গেছে । সাবিনার মতো কাকু নয় , রঙ্গির মতো মামু-ই বলে , তবে , একটি ‘স্যার’ যুক্ত করে । – মামুর বাসায় এলেই রঙ্গির এখনও প্রথম কাজ ডঃ রায়কে সাপটে জড়িয়ে খানিকক্ষণ আদর খাওয়া । মামু-ও , শর্মিলা লক্ষ্য করেছে , আর দিতে একটুও কৃপণ নন । উনিও অকাতরে বিলিয়ে দেন আদর । শর্মিলার উপস্হিতির কোন তোয়াক্কা না করেই , রঙ্গির পাছায় একটা হাত রেখে সজোরে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে করতে ওর গালে গাল ঘষেন বা বগলে মুখ গুঁজে দিয়ে অন্য হাতের থাবায় , পোশাকের উপর থেকেই , ভরে নেন রঙ্গির একটা মাই । রঙ্গিরও তো ভীষন বাই । শর্মিলার চোখের উপরেই ওরা দুই মামা-ভাগ্নী পরস্পরের নিম্নাঙ্গ , একে অন্যের সাথে , সজোরে ঘষাঘষি করে । … ছাড়াছাড়ি হবার পর রঙ্গিলা অবশ্যই ছোটে বাথরুমে ।

আরো একটা ব্যাপারও দিন তিনেক হয়েছে । স্যারের স্টেশনে নামার পরে শর্মিলা দেখেছে রঙ্গির বয়ফ্রেন্ড ভিক্টর হাজির । তখনও ওর রাহুলের সাথে রিলেশন্ হয়নি । কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট ভিক্টরের সাথে ট্রেনেই ক’দিনের পরিচয় । এবং – প্রেম । রঙ্গির এমন ঘনঘন প্রেমে পড়া স্বভাব । সে যাই হোক , রঙ্গির মিনতি শর্মি যেন স্যারকে গিয়ে বলে – রঙ্গির জ্বর , তাই আসতে পারেনি । রঙ্গি ঠিক ফেরার সময় শর্মিকে ধরে ফেলবে । একসাথেই বাড়ি ফিরবে । – শর্মিলকে কেন কিছু বলার বা জিজ্ঞাসার সুযোগ না দিয়েই ওরা দু’জন ‘বাইঈ’ করে সরে পড়ে ।…..

তবে , সে সব দিনেই , বিশেষত , স্যার বাসায় না থাকলে , সাবিনা মানে বীনাদি শর্মিলার সাথে মন খুলে গল্প করে । আর , সেই সূত্রেই শর্মিলা জানতে পারে সাবিনা টেন অবধি স্কুলে গেছে প্রধাণত ওর মৃত মায়েই উৎসাহ আর আর্থিক জোগানে । আব্বু ত ছিল পাঁড় মাতাল আর জুয়াড়ি । আনুষঙ্গিক যতো রকম ”গুণ” থাকতে হয় সে গুলির কোনটিরই কমতি ছিল না ওর আব্বুর । চুরি-ছিনতাইয়ের বখরা নিয়ে মারপিটে আব্বু স্ট্যাবড্ হয় । হাসপাতালে মাস দুয়েক থেকে প্রাণে বাঁচলেও চলার , কার্যত , উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও হারায় । – একদিকে মামলা অন্যদিকে ওষুধপত্তর । একটি জুয়েলারী-দোকানে কাজ নিতে হয় সাবিনাকে । – সেই দোকানেই ‘কাকু’র সাথে পরিচয় সাবিনার । তারপর সাবিনাদের বাড়িতেও উনি যাতায়াত শুরু করেন । মা কে প্রস্তাব দেন ওনার বাসায় দেখভাল করার কাজের । তাতে বাড়ি বাড়ি শায়াব্লাউজ বিক্রীর মতো ‘টাকা কম শ্রম বেশি’ হবে না । আব্বু তো তো উঠতেও পারে না । ওর পিছনের খরচ মা আর টানতে পারছিল না । রাজি হয়ে যায় মা । কাকুর বাসা থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হতেই মা ফিরে আসতো । – মাস দুয়েক পরে মা একজন আয়া ঠিক করে দিল আব্বুকে দেখার জন্যে । অধিকাংশ রাতেই আর ফিরতো না মা , রয়ে যেতো কাকুর বাসাতেই ।….

এর ঠিক তিন মাস পরেই আব্বু রাতে ঘুমিয়ে আর জাগলো না । অন্যদিন ফজর আজানের সাথে সাথেই জেগে উঠতো । শরীরের কারণে নমাজ আদায় করা তো সম্ভব ছিল না । শুধু খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতো ফ্যালফ্যাল করে – দু’ চোখ দিয়ে অঝোরে নামতো পানির ধারা – আকাশ ক্রমশ ফর্সা হয়ে হয়ে এসে যেত আরেকটি সকাল । …… সেদিন মা বাড়িতেই ছিল । …. মাটি দেবার পরেও পাড়ার কেউ কেউ ফিসফিস করে আব্বুর মৃত্যুর জন্য মা কে , আর , পরোক্ষে কাকুকেই দায়ী-দোষারোপ করতো । . . .

দেড় মাস পরেই আমরা চলে এলাম কাকুর এখানে । মায়ের ওই শায়াব্লাউজ বিক্রীর কাজটা কাকু আর করতে দিল না মা কে । তবে , আমার কাজটা করাতে আপত্তি করলো না দুজনের কেউ-ই । কাকু অবশ্য বলেছিল আমাকে আবার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে । …. অধিকাংশ রাতেই ঘুম ভেঙে দেখতাম মা আমার পাশে নেই । প্রথম প্রথম ভাবতাম হয়ত বাথরুম গেছে । ঘুমিয়ে পড়তাম আবার ।…

এক রাত্রে ব্যতিক্রম ঘটলো । রাত প্রায় দুটো বাজে তখন । ঘরের হালকা আলোর সাথে বাইরের হাইমাস্ট থেকে আসা আলোয় দেয়াল-ঘড়িটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল । বাথরুম যাবার জন্যে বিছানা থেকে নেমে দু’পা এগুতেই – ”না নাঃ ওখানে নাঃ – পারবো না নিঃতে…” – পরিষ্কার মায়ের গলা । আসছে যেন কাকুর বেডরুম থেকে ….

‘আজি এসেছি – আজি এসেছি….’ রিংটোনের ডোর-বেল বেজে উঠতেই শশব্যস্ত বীনাদি শর্মিকে বলে উঠলো – যাওও পড়তে বসো , তোমার স্যারমামুকে যেন কিচ্ছুটি ব’লো না । আমি দরজা খুলতে যাচ্ছি ……..

সেদিনও ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হলো । মায়ের তৈরি করে দেওয়া প্যান্ কেক নিয়ে শর্মিলা আর রঙ্গিলা স্টেশনে নামার পরেই যেন ভুঁই ফুঁড়ে আবির্ভাব ভিক্টরের । বুঝেই গেল শর্মিলা , তবু , কাঁচুমাচু মুখে , যেন বাধ্য হয়ে ডিসিশন নিতে হচ্ছে ঢঙে বলা , রঙ্গির কথাগুলো শুনলো হাসি চেপে রেখে । ভিক্টরের এক দিদা নাকি গুরুতর অসুস্হ । শেষ শয্যায়-ই বলা যায় । তিনি বারবার নাকি অস্ফুটে ”রঙি রঙি” করছেন । সুতরাং , সবাই ধরেই নিয়েছে উনি রঙ্গিলাকেই দেখতে চাইছেন । – তো , রঙ্গিলা কি বৃদ্ধার শেষ ইচ্ছেটি পূরণ করবে না ? শর্মির আত্মা কী বলে ? – প্রশ্ন ছুড়েই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইলো রঙ্গিলা । ….. অগত্যা …..

স্যারের বাসায় পৌঁছে জানলো বিশেষ একটি দরকারে এইই মিনিট দশেক আগে ওনাকে বেরুতে হয়েছে । বলে গেছেন , ফিরতে সম্ভবত দেরী হবে । শর্মিলারা অন্তত ঘন্টা থাকুক । তারপর না-হয় চলে যাবে । স্যার পরে ফোন করে নেবেন ।

সাবিনা , মানে , শর্মির বীনাদি বাসায় একাই রয়েছে । রঙ্গির কথাটা বীনাদিকে বলা যেতেই পারে – ভাবলো শর্মিলা । ও তো বন্ধুর মতোই এখন । তবে , তার আগে , বীনাদির মায়ের কথাটা শুধাতে হবে । আগের দিন বলতে শুরু করেও স্যার চলে আসায় আর শোনা হয়নি । সঙ্গে আনা কেক বীনাদির হাতে দিয়ে ওর রুমেই বসলো শর্মিলা । কফি বানাতে গেল সাবিনা শর্মিলাকে বসতে বলে ।

পলিথিনের চেয়ারটার পাশে কাঁধের ঝোলা ব্যাগটা নামিয়ে রেখে বসলো শর্মিলা । সব সময় খুট খুট্ করে মোবাইল খোঁচানোর অভ্যাস ওর নেই । এধার-ওধার তাকিয়ে , কোন একটা পত্রিকা ম্যাগাজিনের সন্ধান করতে করতেই নজরে এলো পাশের টেবলটায় রাখা হরেক জিনিসপত্রের মধ্যে থেকে আধখানা বেরিয়ে থাকা একটা ফ্ল্যাপের দিকে । মনে হলো মা শর্মিষ্ঠার ড্রেসিন টেবলের একেবারে নীচের ড্রয়ারে ঠিক একই রকম ফ্ল্যাপ্ দেখেছিল যেন । নামটা-ও মনে আছে স্পষ্ট ।

হাত বাড়িয়ে টেনে বের করলো , আরো হরেক রকমের টুকিটাকি জিনিসপত্রের তলায় চাপা পড়া , আধঢাকা ফ্ল্যাপটা । – ওভরাল । – ঠিকই আন্দাজ করেছিল শর্মিলা । মা রেগুলার খায় এই ট্যাবলেট । শর্মিলা গুগল করে তখনই জেনে নিয়েছিল ওটার সম্পর্কে । গর্ভনিরোধক ওষুধ । মা বাবা প্রায় প্রতি রাতেই চোদাচুদি করে , ওরা স্বামী-স্ত্রী । ওরা অবাঞ্ছিত গর্ভ আটকানোর জন্যে ওটা ইউজ করতেই পারে । কিন্তু …. সাবিনা – মানে , বীনাদি…..

”কফিঈঈঈ গরররমমম….” বলতে বলতে দরজার মুখেই , ট্রে হাতে , থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো সাবিনা । শর্মিলার হাতে ধরা , অর্ধেক খরচ-হওয়া , গর্ভরোধী বড়ির পাতা । ওভরাল ।

”স্যরি বীনাদি , আমি… আসলে ঠিক … মানে…” – এগিয়ে এসে বিছানার ওপরেই হাতের ট্রে-টা নামিয়ে রাখতে রাখতে সাবিনা লে উঠলো – ”তোমার স্যরি হওয়ার কোন দরকার নেই শর্মিলা । এসো , কফি নাও । আমরা তো এখন প্রায় বন্ধু-ই হয়ে গেছি … তাই…” – শর্মিলা ততক্ষনে স্টেডি হয়ে গেছে । ওর কথা শেষ করতে না দিয়েই সরোষে বলে উঠলো – ”ভুল । তুমি অ্যাকেবারেই ভুল বলছো বীনাদি …” – সাবিনার বেদনা-ঘনিয়ে-আসা চোখের তারা আর জিজ্ঞাসা-মাখা হতাশ-মুখের দিকে তাকিয়ে শর্মিলা থেমে থেমে বলে চললো – ”আবার বলছি তুমি ডাঁহা ভুল বলছো । তুমি এইমাত্র বললে ‘আমরা তো এখন প্রায় বন্ধু-ই হয়ে গেছি’ – এটিই ভুল । আমরা মোটেই ”প্রায় বন্ধু” নই – আমরা পুউউরো হান্ড্রেড পারসেন্ট বন্ধু – বন্ধু – ব-ন্ধু…” বলতে বলতে এগিয়ে এসে , তখনও-বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে-থাকা সাবিনাকে , জড়িয়ে ধরলো শর্মিলা । সাবিনাও পিছিয়ে রইলো না । দুহাতে জড়িয়ে ধরলো শর্মিকে । দু’জনের মিলিত-হাসিতে , মুহূর্তে আশ্বিনের মেঘ হয়ে পেঁজা-তুলোর মতো যেন , উড়ে গেল যেটুকু লাজ- লৌকিকতা , বাধবাধো ফর্ম্যালিটি , অস্বস্তিকর সামান্য ভিন্নতা আর দূরত্ব ছিল – সব স – ব . . . .

আলিঙ্গন ভেঙে এক পা পেছিয়ে এসে সাবিনা হাসতে হাসতেই বললো – ”নাও , এ রকম করলে কফি কিন্তু জলের মতো ঠান্ডা হয়ে যাবে আর তুমি হয়ে উঠবে আুনের মতো গরম ।” – শর্মিলার হাসি আর সাবিনার খোলা আপার-আর্মে আলতো চাঁটিই বুঝিয়ে দিল দুজনের মধ্যে আর মানসিক-দূরত্বের ছিটেফোঁটাও নেই ।

বিছানায় বসেই কফিতে চুমুক দিতে দিতে এবার সরব হলো সাবিনা – ”ওই ওভরালের পাতাটা দেখে বেশ অবাক হয়েছ – নয় ?” – শর্মিলাকে ‘হ্যাঁ’ ‘না’ কোনকিছুই বলার সময় না দিয়েই সাবিনা আবার জুড়ে দিল – ”তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে নিশ্চয় , শর্মি ?” – এবার দ্রুত মাথা নাড়ানোর সাথে সাথে মুখেও বলে উঠলো শর্মিলা – ” না না , কেউ নেই …. ” তার পরেই , কেন-কে-জানে , যোগ করে দিল – ”রঙ্গির আছে ।” – কাপ নামিয়ে একপাশ করে দিতে দিতে হাসলো সাবিনা – ”ওটা না বললেও চলতো । ওর ভাবভঙ্গি যা দেখেছি এখানেই কাকুর সাথে ….. তোমার রঙ্গি কিন্তু ভীষণ কামবেয়ে মেয়ে – সে যাইই বলো…”

শর্মিলারও কফি শেষ হয়ে গিয়েছিল । কাপ রেখে এবার বললো – ”আজ-ও তো রঙ্গি ওর বিএফের সাথে স্টেশন থেকেই কেটে পড়লো । এবার স্যারমামুকে কী যে বলি …. সে যাক্ , আগের দিন কিছু বলতে বলতে স্যারমামু এসে যাওয়ায় আর শোনা হয়নি । আজ বলবে নাকি বীনাদি ?

2 thoughts on “সতী শর্মিলা ২য়”

  1. মায়ের সাথে স্বর্গীয় অনুভূতি ৫ম পর্বটা কবে আসবে?

Leave a Reply