মামার সাথে নানান গল্প করে এরপর বিদায়ের সময় এলো। বের হয়ে ভাবছি, এখন কোথায় যাবো? তারপর মনে হল, বাইরে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করি। আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে, ও বের হবে আমাকে খুঁজতে, এবং ইচ্ছেমতো বকতে। ভাবনামতো একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে ওদের বাড়ির গেটের দিকে লক্ষ্য রাখছি। আমার ভাবনা সঠিক প্রমাণ করে ২ মিনিট পরেই বের হয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। দৌড়ে সামনে গেলাম। ও এমন দৃষ্টিতে তাকলো আমার দিকে যেন তখনি পারলে ভস্ম করে দেয়। পড়োয়া না করে হাত জোড় করে ওর সামনে বসে পড়লাম হাঁটু গেঁড়ে। বলতে শুরু করল,
– সমস্যা কি তোমার? এখানে কেন এসেছো? আমাকে কি একটু শান্তি দেবে না তুমি?
– ক্ষমা করো লক্ষ্মীটি। ক্ষমা। প্রথম দিনই তো বুঝে গিয়েছিলে, আমি একটা নিরেট গাধা। গাধা বলেই এতোবড় ভুল করে ফেলেছি। ক্ষমা করে দাও। আর কোনোদিন এমন ভুল হবে না।
– আমাদের সব সম্পর্ক শেষ। তুমি সফল হয়েছো। এখন সব মেয়ের বাবা তোমাকে যোগ্য মনে করবে। যাও, গিয়ে বিয়ে করে নাও।
– পায়ে পড়ি তোমার, এমন কথা বোলো না। আমার ভ্রান্ত ধারণা ছিল। এখন আমি সম্পূর্ণ চেঞ্জড। তুমি আর একটা চান্স দিয়ে দেখো। আর কখনো ভুল বুঝবো না তোমাকে।
– তুমি ভুল বোঝোনি। ভুল আমি করেছি তোমাকে ভালোবেসে। এখন যাও। জীবনে আরো উন্নতি করো এই আশা করি।
– তুমি ছাড়া এখন আর কোনো কিছুর মানে নেই আমার জীবনে। সব ছেড়ে চলে এসেছি। তুমি চাইলে এই ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরিও ছেড়ে দেবো। আমি শুধু তোমাকে চাই। আর কিছু না। কিচ্ছু না।
– এখানে সিনক্রিয়েট করো না। যাও এখান থেকে।
– তুমি ক্ষমা না করা পর্যন্ত আমি এই গ্রাম ছাড়ব না। না খেয়ে না ঘুমিয়ে পথে পড়ে থাকব। থাকার ও তো জায়গা নেই। এখন তুমি ভেবে দেখো কি করবে।
মনে হল কাজ হয়েছে এই কথায় একটু। দৃষ্টি একটু শান্ত হলো। বললো,
– ওঠো।
– না উঠব না।
– প্লিজ ওঠো। কথা শোনো একটু।
উঠে দাঁড়ালাম।
– পারো তো শুধু ইমোশোনাল ব্ল্যকমেইল করতে। আর কি পারো। প্রপোজ করেও তো এই কাজ করেছিলে।
– তুমি ছাড়া তো বেঁচে থাকাই সম্ভব না। কি করবো বলো।
– হয়েছে হয়েছে। অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছ দেড় বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু আমি তো আরেক গাধা। তোমার কষ্ট দেখতে পারি না। তাই তুমি খালি এমন করো।
হাতজোড় করে মাথা নিচু করে বললাম,
– ক্ষমা করুন মহারাণী। আর কভু এহনো ভুল হবে নাকো।
– তোমাকে দিয়ে কাব্য হবে না। শুধু শুধু চেষ্টা করো না তো।
– হো হো হো।
– আস্তে। কেউ শুনে ফেলবে।
– সে যাক। নিজের কি হাল করেছো লক্ষ্মীটি? আমার সেই ভুবনমোহিনী রূপের অধিকারীর এ কি অবস্থা?
ওর গালে হাত দিয়ে বললাম। চোখে জল চলে এলো।
আচমকা জড়িয়ে ধরল। তখন মধ্য দুপুর। আসেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। একটা গাছের নিচে এভাবে বহুদিন পরে আবার এক হল দুটি প্রাণ। বলতে লাগল,
– অনেক কষ্ট পেয়েছি রুদ্র। অনেক কেঁদেছি। এবার তুমি এসে গেছো। তুমি সব কষ্ট ভুলিয়ে আমাকে ঠিক করে দেবে আবার?
– অবশ্যই অবশ্যই করবো। এখন থেকে চব্বিশ ঘন্টা যাতে কাছে থাকতে পারো, সেই ব্যবস্থা করছি।
– একদম ছেড়ে যাবে না।
– কক্ষনো না।
– আমি কাল বাড়ি যাবো। তারপর যতদ্রুত সম্ভব তুমি ব্যবস্থা করো সব।
– হুম হুম, অবশ্যই।
– পাজি একটা। খালি জ্বালায় আমাকে। এখন তুমি বাড়ি যাও। আমি তো কাল ফিরব। আজ গেলে সন্দেহ করতে পারে।
– না, কাল একসাথে, একবাসে করে যাবো।
– থাকবে কোথায়?
– এখানে মন্দির আছে না কোনো?
– ধ্যাৎ। আর খাবে কোথায়?
– দেখি। পথিক বলে কেউ যদি একটু আশ্রয় দেয়।
– চুপ। আমার বর এভাবে রাস্তা ঘাটে থাকবে, এ হবে না। তুমি বাড়ি যাবে। এটাই ফাইনাল। এখনি।
– আচ্ছা, বিকালে যাবো। তুমি বিকালে দেখা করবে তারপর।
– না, তাহলে তোমার দুপুরে খাওয়ার সমস্যা হবে।
– প্লিজ। এতোদিন পরে তোমাকে দেখলাম। এতটুক তে মন ভরে বলো? খাওয়ার ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। একটা মুদি দোকান দেখেছিলাম। ওখান থেকে চা বিস্কুট খেয়ে নেবো।
– তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না। আচ্ছা, বিকালে যাবে কিন্তু।
– আচ্ছা, দেখা করব কোথায়?
– উত্তর দিকে একটা মন্দির আছে। ১০ মিনিটের মতো লাগে হেঁটে যেতে। ওখানে।
– আচ্ছা, বিকাল ৫ টা। অপেক্ষা করব।
– হুম। এখন এসো।
– তোমার ফোন নাম্বার টা দাও।
– এখন তো আর ফোন ইউজ করি না। তুমি নেই, ফোন দিয়ে কি করব?
– এত্তো ভালোবাসো আমায়?
– তুমি বুঝবে না। যাই হোক, মামার ফোন আছে। আমি ওটা দিয়ে তোমায় কল দেব।
– আচ্ছা, নাম্বার রাখো।
– তোমার ফোন নাম্বার বহু আগেই মুখস্থ করে রেখেছি বুদ্ধু।
– আমিও রেখেছিলাম। কিন্তু সে নাম্বার তো অফ এখন।
– হুম, যাও এখন। কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
কপালে একটা গভীর চুমু এঁকে দিলাম।
– হুম, হয়েছে। যাওওওও।
তারপর ঠেলে পাঠিয়ে দিল।
হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে। গ্রামটা ঘুরে দেখতে লাগলাম। আসলেই সুন্দর। মামাকে বলা কথা মিথ্যে হল না তাহলে।
৫ টার অনেক আগে মন্দিরে গিয়ে বসে ছিলাম। মহাদেবের অসাধারণ সুন্দর মন্দির। প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। ভক্তিভরে প্রণাম করলাম। এরপর মা দুর্গাকেও মনে মনে প্রণাম করলাম। সবখানে সাহায্য করেছেন মা। ওর অভিমান এতো সহজে ভাঙাতে পারব ভাবি নি। ইমোশনাল ব্লাকমেইল টা কাজে লেগেছে খুব। হি হি হি।
৫ টা ১০ এর দিকে এলো। মুখ এখন আট গোমড়া নেই। একটা মৃদু হাসি লেগে আছে। এগিয়ে গেলাম ওর কাছে। কাছে এসে আচমকা পাশ কাটিয়ে মহাদেবকে গিয়ে প্রণাম করল। হেসে ফেললাম ওর কান্ড দেখে। সাথে খুব ভালো ও লাগল। একদম মনের মতো একটা বউ পেতে যাচ্ছি আমি।
এরপর কাছে আসলে গালে আলতো হাত বুলিয়ে দিলাম। কেমন শিহরিত হল ও। চোখ বুজে ফেলল। কিন্তু এরপরেই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে শুরু করল। বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
– কাঁদে না লক্ষ্মীটি। আর কোনো কষ্ট পেতে দেব না তোমাকে। বাকি জীবন শুধু আদর আর ভালোবাসায় কাটাবে তুমি।
– ঈশ্বর আমার সব চাওয়া পূরণ করেছেন। তোমার আশাও পূর্ণ হয়েছে আর তুমিও ফিরেছ।
– এমন সতীলক্ষ্মী বউয়ের ডাক ঈশ্বর না শুনে পারেন?
বুকে মুখ লুকালো। এরপর ফিসফিস করে বলল,
– আমাকে কবে নেবে?
– যত শীঘ্র সম্ভব।
– তোমার ট্রেইনিং শুরু কবে থেকে?
– এটাও খেয়াল রেখেছো!(ম্যাজিস্ট্রেটদের জয়েন করার পরে ৬ মাসের একটা ট্রেইনিং হয়) একমাস পরে জয়েন। তারপর পনেরো দিন পর থেকে শুরু।
– তারমানে মাত্র এই কটা দিন তোমাকে কাছে পাবো? তারপর আবার বিরহ শুরু?
– না বউ। আমি ট্রেইনিং এর মাঝে মাঝেও আসব কিছু সময়ের জন্য।
– তা তো খুব অল্প সময়। কয়েক ঘন্টা।
– হুম, এসে আদর করে, জ্বালিয়ে নেব ইচ্ছেমতো।
বলে চোখ মারলাম একটা। ইঙ্গিত বুঝে কিল ঘুষি দিল কিছু।
– অসভ্য। খালি দুষ্টুমির ধান্দা।
– এমন লক্ষ্মী, সর্বগুনসম্পন্না, অপরূপা বউয়ের বর হয়ে যদি বউয়ের সাথে প্রচুর দুষ্টুমি না করি তো ভয়ানক পাপ হবে আমার।
– শুরু হয়ে গেল পাম দেওয়া। সুযোগ পেলেই পাম দিতে ছাড়ো না তুমি।
এভাবে খুনসুটিতে বেশ কিছু সময় গেল। সন্ধ্যা হবে হবে, এমন সময় বলল,” এবার তুমি বাসায় যাও। আমি কাল সকালে ফিরব। আর হ্যা, যা করার তাড়াতাড়ি করবে। নয়তো আবার হারিয়ে যাবো কিন্তু।” মুখে আঙুল দিয়ে বললাম,
– এমন কথা বলো না সোনা। মরে যাবো আমি তুমি না থাকলে।
– চুপ, বাজে কথা শুধু। আচ্ছা যাই এখন। মামা খোঁজাখুজি করব নয়তো। টা টা।
– কিসের টা টা। তোমাকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি। তারপর ফিরব।
– আমি পারব যেতে।
– চুপ, এমন সন্ধাবেলায় একটা পরীর মতো মেয়েকে একা ছেড়ে দেব? চলুন মহারাণী। আমি আপনাকে অনুসরণ করিতেছি।
– খালি বাড়িয়ে বলা। আচ্ছা চলো।
এরপর ওকে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি। পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। বাড়ি গিয়ে মা বাবাকে বললাম ওর কথা। মা আগেই জানতো। বাবাও অমত করল না সব শুনে। ও বাড়ি যাওয়ার পরের দিনই ওর বাড়িতে গেলাম আমরা। খুব পছন্দ হলো ওকে বাবা মায়ের। মা তো পারলে তখনই আশীর্বাদ করে আসে। কিন্তু বাবার কথায় দুদিন পরে ধুমধাম করে আশীর্বাদের আয়োজন করা হল। অবাক করা ব্যাপার হল, আশীর্বাদের দিন গিয়ে দেখি এই তিন চারদিনে ওর মুখের ঔজ্জ্বল্য ফিরে এসেছে। সবসময় একটা আলতো হাসি লেগে থাকে মুখে। চোখের নিচের কালো দাগও গায়েব। মায়ের অনুরোধে সাতদিন পরে বিয়ের দিন ঠিক হল। ওর বাবা তো মানবেই না। আদরের মেয়ে, কতো আয়োজন! সাতদিনে সম্ভবই না। তাও জোরাজোরি করে রাজি করানো হল। মায়ের জোরাজুরির পিছনে তো মূলত হাত আমারই। হি হি। বলতে দ্বিধা নেই, আর এক মুহুর্তের দেরীও যেন সহ্য হচ্ছিল না।
বিয়ের দিন এলো। আশীর্বাদের সময় থেকে বোন, রাহুলদা আছে সাথে। আস্তে আস্তে বন্ধুরাও সব চলে এসেছিল তিন চারদিন আগেই। সবাই খুব মজা করছে।
লক্ষ্মীটির শুকনো মুখে লাবণ্য ফিরে এসেছে। ফুল ভ্রমরকে আকর্ষণ করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েছে। আর ভ্রমর তো কুপোকাত। কিছুক্ষণ পরপর শর্টপ্যান্ট চেঞ্জ করতে হচ্ছে খুব সাবধানে। লজ্জার কথা বড্ড। ওর অপরূপ রূপ দেখে কোনোভাবেই নিচের পাজিটা শান্ত থাকতে পারছে না। টং হয়ে আছে পুরো। ভাগ্য ভালো ধুতি পড়ে আছি।
মালাবদল হল, সাত পাঁকে বাঁধলাম, অপরূপার সিঁথি সিঁদুরে রাঙিয়ে দিলাম। চোখ সরানো দায়। মা এসে দুজনের চুলের ফাঁকে একটু করে কাজল দিয়ে গেল, নজর না লাগে তাই। এতো হাসি পেলো! ছোটো বাচ্চা যেন আমরা।
এরপর শুরু হল সমস্যা। বাসর রাত। অনেকে এসে গল্প, হাসি ঠাট্টা করছে। হারামি বন্ধুগুলো ইচ্ছেমতো মজা নিচ্ছে। চারজন বিবাহিত অলরেডি, ওদের বিয়েতেও মজা নিয়েছি আমরা, এখন আমার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে তার। তা নাহয় মানলাম, কিন্তু বাকি যে সাতটা হারামি অবিবাহিত, ওরাও চরম মজা নিচ্ছে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি লাইফ, সবখানের বন্ধু আছে। দাঁড়াও বাছাধনেরা, আমারও সুযোগ আসবে। সবথেকে বেশি মজা করছে বোন আর রাহুলদা। ওরা পুরোটা সময়ের সাক্ষী। আমাদের সম্পর্কের অনেক মজার ঘটনা, সিক্রেট জানে। সব ফাঁস করে দিচ্ছে রে। আর হাসির রোল পড়ছে। বউটাও খুব পরিমাণে হাসছ। মাঝে মাঝে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকছি। তাই দেখে সবাই আরো মজা নিচ্ছে। উফ্, যন্ত্রণা যত। আস্তে আস্তে সবাই যে যার রুমে চলে গেল ঘুমাতে। শুধু বোন আর রাহুল দা রইল আমাদের সাথে। বাসর রাত পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব নাকি তাদের উপরে পড়েছে। এই নিয়ম যে কে করেছে? বিয়ে হওয়ার পরে বাসর রাতেও বর বউ একা সময় কাটাতে পারবে না। তারপর আবার কালরাত। উফ্, যত্তসব ঘোড়ার ডিমের নিয়ম। যদিও এরেঞ্জ ম্যারেজ এ নিয়মটা ভালো। ফুল সজ্জার আগে বর বউ দুরাত সময় পায় মানিয়ে নেওয়ার। কিন্তু ভাই, লাভ ম্যারেজে তো এটার দরকার নেই। দুজন উন্মুখ হয়ে থাকে চরম মিলনের জন্য। তাতে বাঁধা দেওয়া ঠিক? শুয়ে শুয়ে তাই ভাবছিলাম। শোয়ার ধরণও একটা শাস্তি। চারজনই ফ্লোরিং করতে হচ্ছে। আর আমাদের দুজনের মাঝে বোন আর রাহুলদা। আমি, তারপর রাহুলদা, তারপর বোন, এরপর লক্ষ্মীবউটা। হঠাৎ টের পেলাম রাহুলদা গভীরভাবে নিঃশ্বাস ফেলছে। মানে ভালোভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে। করণীয় ঠিক করে ফেললাম, উঠে ওদের পায়ের সামনে থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বৌএর কাছে পৌঁছলাম। ডিম লাইট জ্বলছে। সব না হলেও একটু আদর তো করবই। গিয়ে পায়ে শুরশুরি দিলাম। ও ও ঘুমায় নি দেখছি। সাথে সাথে উঠে বসল। তারমানে ওর ও একই অবস্থা! কিন্তু নড়াচড়ায় ওর শাখা পলা চুড়ির শব্দ হল। কেউ টের পায়নি হয়তো। কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু দিয়েছি মাত্র, এমন সময় নষ্টের গোড়া কুটনী বুড়ি বোনটা গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠল,
– অনেক রাত হয়েছে। ঘুমো দুটে। পরশুরাতে সব হবে।
উফফফ, কষ্টে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে করছিল। কি দরকার এতো ডিস্টার্ব করার? বউও দেখছি মুখ টিপে হাসছে আমার দুর্দশা দেখে। তখন রাহুলদাও বলে উঠল,
– ইয়ে, শালাবাবু চলে এসো এদিকে। আজকে ওকে জ্বালিও না তো।
এটাই বাকি ছিল। কুটনীটার জন্য রাহুলদারও ঘুম ভেঙে গেছে। মনে মনে একশটা গালি দিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। বোন আর বউটা এখনও হাসছে। শুয়ে আস্তে আস্তে বলতে থাকলাম,
– তোমাদেরও তো অনেকদিন প্রেমের পরে বিয়ে। তোমাদের তো আমার কষ্টটা বোঝা উচিৎ রাহুলদা।
রাহুলদা হেসে বলল,
– এই জ্বালা আমরাও সহ্য করেছি ভাই। একটু ধৈর্য্য ধরো। এখন খিদে বাড়িয়ে নাও৷ পরশুরাতে মন ভরে….
– তাও আবার পরশু! মাঝে আবার কালরাতও আছে! হায় কপাল!
– হা হা হা, শালাবাবুগো। কিছুই করার নেই। এখন লক্ষ্মী ছেলের মতো ঘুমাও তো।
মনের মধ্যে একরাশ কষ্ট নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। বউটাও আমার অসহায় অবস্থা দেখে হাসছিল। দাঁড়াও, পরশু মজা বোঝাবো। সারারাত শাস্তি দেবো। নতুন বউ বলে কোনো ছাড় দেবো না একদম।
পরেরদিন নিয়ে এলাম অবশেষে আমার রাণীকে। বহু চড়াই উৎরাই এর পরে পেয়েছি ওকে, ভাবতেই নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। নানারকম আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সেদিন গেল। রাতে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। জ্বালার উপর জ্বালা। কিন্তু নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম এই বলে যে কালই সব লুটব লক্ষ্মী বউটার।
মাঝরাতে চুপিচুপি উঠলাম। ভাবলাম গিয়ে একটু দেখে আসি। সবে ওর রুমের দরজার সামনে গিয়েছি, অমনি মা বের হল কি একটা কাজে। একদম হাতেনাতে ধরা। ইচ্ছেমতো কান মলে দিল। তারপর ধমক দিয়ে বলল, “যা, রুমে যা।” মুখ কাচুমাচু করে চলে এলাম।
পরদিন সকাল থেকে বউভাতের তোড়জোড়। বউ বিশাল ঘোমটা দিয়ে নানান কাজে ব্যাস্ত। আমাকে যেন দেখছেই না এমন ভাব। দাঁড়াও, ভাব বের করতেছি। কিছু আত্মীয় স্বজনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে প্রণাম করলাম। বড় পিসি বলে উঠল, “দেখো, যেনো সাক্ষাৎ লক্ষ্মী নারায়ণের জুটি। কারো নজর না লাগে।” দেখলাম লজ্জায় মাথা নিচু করল। তখনই পিছন থেকে শাড়ির ফাঁক থেকে পেটে আলতো করে ছুয়ে দিলাম। শিউরে উঠে আমার দিকে তাকালো। তারপরই কপট রাগের ভাব ফুটে উঠল মুখে। গুরুজনেরা কিসব বলে যাচ্ছে কে জানে, আমি দুষ্টুমি করেই যাচ্ছি। ওর অতিরিক্ত নরম পিছনটাতে হালকা চাপ দিলাম শাড়ির উপর থেকে। শুধু শিউরে উঠছে। কাউকে কিছু বলতে পারছে না। নীরবে সহ্য করতে হচ্ছে। যতক্ষণ আত্মীয়রা কথা বলল, ততক্ষণ ইচ্ছেমতো জ্বালালাম, টিপলাম ওর নরম পিছনদুটো। আত্মীয়রা গেলেই আমার কলাট ধরে বলল,
– সমস্যা কি তোমার? ওনাদের সামনে এসব কি করছিলে?
– আ..আমি কি করলাম?
– কি করলে, না?
বলে কান মলে দিল।
– আউ, লাগছে।
– লাগুক, পাজি অসভ্য।
তখনই মা চলে আসায় ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মা এসে বলল,
– কি বউমা? জ্বালাচ্ছে ও? বলো আমাকে। কাল রাতে কান মলেছি, এখন আবার মলে দেব।
– কাল রাতেও কান মলা খেয়েছে? হি হি৷ কেন মা, কি করেছিল।
– তা পরে বলব। এখন বলো, কি করেছে হারামজাদা?
– তেমন কিছু না মা। ওর নাকি কান চুলকাচ্ছিল, তাই আরকি। হি হি।
– হা হা হা। আচ্ছা থাকো। আমি ওদিকটা দেখে আসি।
বলে মা চলে যেতেই বলল,
– কি? বলব মাকে তোমার কাজের কথা?
– ক্ষমা করুন মহারাণী। আর হবে না৷ কিন্তু আমি ভাবছি তোমাদের দুজনের কানমলা খেয়ে আমার কান না বড় হয়ে যায়।
ভুবনভোলানো হাসি দিয়ে চলে গেল। সবে তো শুরু। আরো কত জ্বালাই দেখো।
বৌভাত হয়ে গেল ভালোভাবেই৷ সবাই দেখে একবাক্যে বলল, এতো সুন্দরী বউ তারা কখনো দেখেনি। আর আমার বউ তো লজ্জায় লাল নীল হলুদ সব হচ্ছে শুনে।
সন্ধ্যায় সবাই মিলে গল্প করছে৷ সবার মধ্যমণী হয়ে আছেন উনি। আর ওনার পাশে বোন বসে আছে। গিয়ে চোখের ইশারা করতে উঠে অন্যখানে গিয়ে বসল, আর সেই সিট দখল করলাম আমি। খুব ধীরে ধীরে পিঠে হাত বোলাতে শুরু করলাম। সবাই গোল হয়ে বসাতে কেউ দেখার সম্ভাবনা নেই পিছনে কি হচ্ছে তা। টের পাচ্ছি লক্ষ্মীটির শরীর কাঁপছে আমার স্পর্শে। সাহস বাড়ল, আস্তে আস্তে হাত উপরে উঠাচ্ছি। এরপর ওর ওর বগলের নিচ থেকে হাত নিয়ে স্তনের একপাশে আলতো করে ছুয়ে দিলাম। বউটা গভীর কামনা ভরা চোখে আমার চোখে তাকালো। বুঝলাম, কাজ হয়েছে। এখন থেকেই অল্পস্বল্প গরম করে রাখি, রাতে সব লুট করা সহজ হবে তাহলে। আজ এই স্তন দুটোর যে কি হাল করব!!!!! ভাবতেই ওখানটা এমন শক্ত হয়ে উঠল যেন প্যান্ট ছিড়ে বেরিয়ে আসবে। একহাতে আলতো করে আমার হাতটা নামিয়ে উঠে দাঁড়ালো। এরপর মায়ের কাছে গিয়ে বলল,”আপনারা বসুন, আমি একটু আসছি মা।” বলে বাইরে বেরিয়ে গেল। আমিও আস্তে আস্তে কেউ খেয়াল না করে এভাবে বেরিয়ে আসলাম। এসে দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে আবার হাঁটতে শুরু করল। আমিও পিছন পিছন হাঁটছি। দেখি ঘরের পিছন দিকটা যাচ্ছে। মনটা একটা আশায় নেচে উঠল। পিছনে গিয়ে দাঁড়াতেই ঘুরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আধো আলো আধারি তে এমন একটা পরিস্থিতিতে সামলাতে পারলাম না। ঘাড়ে গলায় ইচ্ছেমতো চুমু দিতে থাকলাম। ওর স্তন দুটো পুরো চেপে আছে আমার বুকে। তারপর সারা মুখে কিস করতে থাকলাম। তারপর গভীরভাবে লিপ কিস করলাম। তারপর ওর নরম স্তন দুটো চেপে ধরে বললাম,
– এ দুটোর আজ যে কি হাল করব সোনা, ভাবতেও পারছ না।
– তোমার জিনিস, আজ রাতে তুমি যা ইচ্ছা তাই করবে আমার নিয়ে। কিন্তু এখন সবার মাঝে এমন কেন করছ লক্ষ্মীটি?
– জানি না বউ। সামলাতে পারছি না কোনোভাবে। ইচ্ছে করছে এখনই খাই এদুটো।
ঠিক তখনই পিছন থেকে গলা খাঁকারির শব্দ শুনে চমকে তাকাতে দেখি বোন আর রাহুলদা দাঁড়িয়ে আছে। মেজাজ এবার সত্যি গরম হল। এখন আর আমাদের বাঁধা দিতে পারেন না ওনারা। আমি কিছু বলার আগে রাহুলদা বললো, এদিকে এসো তো আমার সাথে। আর নন্দিনী, তুমি তিন্নির সাথে একটু দাঁড়াও। কিছু বলতে চেয়েও কেন জানি বলতে পারলাম না। ওনার সাথে একটু তফাতে গিয়ে দাঁড়িয়ে রাগত স্বরে বললাম,
– বলো রাহুলদা, কি বলবে?
– বাবা! রাগ করেছো? আমার কথা শুনে রাগ চলে যাবে বাছাধন।
তারপর কানের কাছে এসে আস্ত বলল,
– তো নিজেকে এখন সামলাতে বলছে কে, হুম?
শুনে অবাক হলাম। তারমানে ওনাদেরও ইচ্ছে আমরা কাছে আসি? তাহলে এভাবে এসে বাঁধা দেওয়ার মানে কি? যদিও এখন আর কিই বা করতাম। সব তো করা যেত না এখানে। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে আবার বলল,
– কি ভাবছ শালাবাবু? হ্যা, আমরা চাই তোমরা কাছাকাছি এসো একে অপরের, আদর করো। সারাদিনই মাঝে মাঝে খেয়াল করেছি, বোনটাকে যখন তখন জ্বালাচ্ছো। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করছ না। শুধু ওকে গরম করছ। আরে বাবা, সবার সামনে থেকে কোলে করে ওকে রুমে নিয়ে ইচ্ছেমতো সেক্স করলেও কার বাপের কি বলার সাধ্য আছে এখন? যদিও একটু লজ্জার ব্যাপার হয়ে যায় সেটা। কিন্তু সেক্স না করো, বাকিগুলো তো করতে পারতে সুযোগ বুঝে কোনো বাথরুমে নিয়ে। তোমার মাথায় বুদ্ধি একটু কমই আছে। যদিও এই ভুলটা আমিও করেছি। সারাদিন তোমার বোনকে দেখে জ্বলেছি, আর তাই রাতে তাড়াহুড়ো করে রাতটা নষ্ট করেছি।
কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর আবার বলতে শুরু করল,
– জানো রুদ্র, মেয়েদের কাছে এইরাতটা কত্তো স্পেশাল হয়! প্রথমবার কাছে আসা, আর প্রথমবার তার স্বামী তার ভিতরে প্রবেশ করে, সাথে তার সতীপর্দা ছিড়ে কুমারিত্বের অবসান হয়। ব্যাথা, লজ্জা, ভালোবাসা, মিলনের সুখ সবকিছু প্রবলভাবে পাওয়ার রাত এটা। কিন্তু আমি নষ্ট করেছিলাম এইটা। যদিও তোমার দিদি বেশি রাগ করে নি আমাকে, কিন্তু বুঝিয়েছিল ভালোভাবে। তাই আমি চাই না তোমারও এমন পরিস্থিতি আসুক।
– তাহলে এখন কি করণীয় রাহুলদা বলুন?
– এইজন্যই তো এসে পাকড়াও করলাম তোমাদের দুটিকে। শোনো, এখানে কেউ আসার সম্ভাবনা খুব কম। তাও যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করতে পারে তাই আমি আর তোমার বোন ঘরের যে পাশ থেকে এসেছো, ওখানে দাঁড়িয়ে পাহারা দেবো। তুমি ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে মিলন বাদে বাকি সব করে…
– কি?
– কিভাবে বলি? আচ্ছা, খোলাখুলি ভাবেই বলি। বউয়ের অর্গাজম করাও।
– কিহ্!
– হ্যা রে ভাই, হ্যা। শোনো, অত সহজ না কাজটা। ইয়ে মানে, এরজন্য কিন্তু বউয়ের মধু খেতে হবে। মানে বুঝেছ তো কি বলেছি?
– হুম তা তো বুঝেছি। কিন্তু কেন?
– বউকে অর্গাজম করালে দেখবে তোমারও অস্বস্তি উত্তেজনা একটু কমবে। ফলে রাতে ধীরে সুস্থে বউকে আদর করে খেলিয়ে খেলিয়ে মজা দিতে পারবে।
– আসলেই?
– আরে হ্যা। আর চাইলে তুমিও একবার ঝড়িয়ে নিতে পারো নিজেরটা। কিন্তু ওটা আবশ্যিক নয়। কিন্তু বউকে একটু ঠান্ডা করো তো শালাবাবু।
– আচ্ছা রাহুলদা। দেখি চেষ্টা করে। তোমরা পাহারা দিও কিন্তু।
– অবশ্যই। আর একটা কথা, আধাঘন্টা বলছি বলে তারাহুরো করো না, সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে কোরো যতক্ষণ লাগে। তোমাদের এতো কাঙ্ক্ষিত পবিত্র একটা মিলনে সাহায্য করতে এতোটুকু কষ্ট তো করতেই পারি আমরা।
আনন্দে জড়িয়ে ধরলাম রাহুলদাকে।
– তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো রাহুলদা!?
– হয়েছে হয়েছে। আমাকে না জড়িয়ে ধরে যাকে ধরা দরকার তাকে ধরো গিয়ে। তোমার বোন ওদিকে তাকেও রেডি করে রেখেছে দেখো।
– হুম, যাচ্ছি দাদা।
– বিজয়ী ভব। হা হা হা।
হেসে চলে এলাম।
এদিকে আমার প্রাণপ্রিয়াকে বোন বলছে,
– শোনো ম্যাডাম, বান্ধবী তুমি আমার। কোনো কথা লুকিও না। সত্যি করে বলতো নন্দিনী, তোরা আগে কখনো করেছিস?
– কি?
– আহা, কচি খুকি, কিচ্ছু বোঝে না। তাড়াতাড়ি বল, মিলিত হয়েছিস আগে ভাইয়ের সাথে?
লজ্জায় মুখ ঢেকে লক্ষ্মীটি বললো,
– উহু।
– ইশ, এক দুবার করা উচিৎ ছিল রে। তাহলে আজ রাতে জমিয়ে মজা নিতে পারতি।
– ধ্যাৎ, কিসব বলছিস।
– আবার লজ্জা পাচ্ছে দেখো। আচ্ছা শোন, করিস নি তাতে সমস্যা নেই। ওদিকে তোর রাহুলদা ভাইকে বোঝাচ্ছে যাতে সমস্যা এড়ানো যায়, তুইও একটা কাজ কর। তাহলে রাতে কোনো কষ্ট হবেনা।