একমনে চুষছিলাম, আর বউটা কোমড় তুলে তুলে রস খাওয়াচ্ছিলো আমাকে। এই যোনি শুধু আমার। শুধু আমি এই যোনি ভোগ করব আজীবন। লক্ষ্মী বউ আমার। এসব ভাবছি আর চুষছি, রস খাচ্ছি।
আর একটু হলেই বউটাকে ধসিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু হলের একটা লোক আসছিল এদিকে। তাই তাড়াতাড়ি ছেড়ে ওর পাশে বসলাম। ও ও অতি দ্রুত পায়জামা টা তুলে চুপচাপ বসে রইল। লোকটা চলে গেলে ওর কানের কাছে গিয়ে বললাম, “তুলতুলে নরম আর মিষ্টি গোলাপ, বউ।”
ও লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢাকল, তারপর আমার বুকে মুখ লুকালো। আমিও ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম, “আর আগাবো বা বউ। বাকি সবটা ফুলসজ্জায় নেবো।” ও ফিসফিস করে বলল, “তোমার ঐটা ভিতরে নিতে ইচ্ছে করছে।”
আমি বললাম, “কোনটা? জিহ্বা নাকি নিচের ঐটা?”
– নিচেরটা বুদ্ধু।
– একবারে ফুলসজ্জায় ইচ্ছেমতো ঢুকাবো ঐটা তোমার যোনিতে। সারারাত ধরে। বলে রাখলাম।
– তোমার সর্বজনস্বীকৃত বউ হবো তখন। কপালে সিঁদুর থাকবে, হাতে শাখা পলা থাকবে। তোমার যা ইচ্ছা, যতবার ইচ্ছে করবা। আমার বাধা দেওয়ার অধিকারও তো থাকবে না।
– না বউ, তোমার ভালো না লাগলে তখন বলবা। তখন আর করব না।
– পাগল একটা। আমি কখনোই মুখ ফুটে বলব না, করো। বাঁধা দেবো। ফুলসজ্জায় ও দেবো। তুমি আমার বর আর ভালোবাসার মানুষ। তুমি তখন জোর করে…
– জোর করে কি?
– কিছু না।
– বলো লক্ষ্মীটি।
– না।
– প্লিজ বলো।
– না, বুঝে নাও। লজ্জা করে।
– না, তোমার মুখেই শুনব। বলো।
একটু থেকে, দুহাতে মুখ ঢেকে বললো,
– ধর্ষণ করবে তোমার বউকে।
অবাক হয়ে বললাম, “কিহ!”
– হ্যা রুদ্র। তুমি জোর করে করবে। ধর্ষণ করবে আমি বাঁধা দিলে। আমি এটাই চাই, আর এই জোর করে করাটাকেও আমি উপভোগ করব। আমি যতবার না না বলব, তুমি তত জোরে জোরে করবে, ঢুকাবে ঐটা। দুইহাত চেপে ধরে ঢুকাবে। আমি আমার ভালোবাসার বরের কাছে শতসহস্র বার ধর্ষিত হবো রুদ্র। তবে হ্যা, তুমি শুধু এইটুকু বুঝে নিও, কখন আমি মিথ্যেমিথ্যি না বলছি, আর কখন সত্যি ই ইচ্ছে নেই।
এরপর দুর্গাপূজার চলে এলো। টিউশন পড়াতাম একটা। সেই টাকা জমিয়ে একটা কাতানের লাল পাড়ের সাদা শাড়ি কিনে দিলাম। ওর খুবই পছন্দ হল শাড়িটা। অষ্টমীর দিন সকালে স্নান করে একটা সাদা পাঞ্জাবি গায়ে চাপিয়ে গেলাম দেখা করতে। একটা পার্কে বসে আছি। আসতে দেরী হচ্ছে। একসাথে অঞ্জলি দেব, তো অঞ্জলির সময় পার না হয়ে যায়। ফোন চাপছি তো চাপছি। পাক্কা দেড় ঘন্টা পরে তিনি আসলেন। প্রথম দেখায় মাথা ঘুরে গেল। উনি হেঁটে আসছেন, আর আমি একদৃষ্টে নিষ্পলক তাকিয়ে আছি। অদ্বিতীয় সুন্দরী লাগছিল শাড়িটাতে। ঈশ্বরের কি অপূর্ব সৃষ্টি। মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, এই অপরূপু সুন্দরী আমার জিএফ, আর হবু বউ।
হবু বউ এতো কনফিডেন্সের সাথে বলতে পারছি কারণ নন্দিনীর বাবা মেয়েকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছেন। তার বিশ্বাস, মেয়ে পঁচা শামুকে পা কাটবে না। আর বিয়ে নিয়েও কোনো জোর জবরদস্তি করেন না। মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করতে চায়, উনি তা মেনে নিয়েছেন। অর্থাৎ আমি পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছি ওকে ঘরে তোলার। বিয়ে হয়ে যাবে সারাক্ষণ এই দুশ্চিন্তা করতে হয় না আমার।
কাছে এসে চোখের সামনে হাত নাড়াতে আমার ঘোর কাটল। এতোক্ষণ একভাবে তাকিয়ে ছিলাম বউটার দিকে। বলল,
– কি দেখছ এতো?
– একটা অপ্সরা। আপনার নাম কি দেবী?
– ইশ, ঢং যত। যেন আগে কখনো দেখে নি।
উঠে ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলাম। বললাম,
– তোমাকে কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে তুমি নিজেই জানো না।
– এই, কি করছ? ছাড়ো, কেউ দেখে ফেলবে।
– দেখুক।
বলে আরো শরীরের সাথে চেপে ধরলাম। ঠিক তখনই আমার নিচের অঙ্গটা ওর কোমড়ে চেপে বসল আর ও ও আমাকে জড়িয়ে ধরে অস্ফুটে একটা উমমমম শব্দ করে উঠল। নেশা জড়ানো গলায় বলল, “তোমার চোখের কামনা দেখে বোঝা যাচ্ছে আমায় কতটা সুন্দর লাগছে। দুষ্টুটা যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে আমায়।”
– শুধু চোখ?
– ধ্যাৎ পাজি। ওটা অমন হল কি করে?
– এতো সুন্দরী বউ পাওয়া সত্ত্বেও যার ঐটা শক্ত হবে না, সে অবশ্যই হিজরা।
– হয়েছে, শুধু পাম দেওয়া।
– ইচ্ছে করছে এখনই সব খুলে তোমাকে শুইয়ে ইচ্ছামতো করে করে তোমার গর্ভে বীজ দিয়ে দেই।
– ইশশশ, দুষ্টু একটা। ছাড়ো। অঞ্জলি দিতে হবে না? তার আগে প্যান্ট নষ্ট হলে চলবে? ওখান থেকে কিছু বের হওয়ার আগে ছাড়ো আমায়।
– লক্ষ্মীটি, অলরেডি বের হয়ে গিয়েছে যে।
– ইশ্, পাজি একটা। চলো। শুদ্ধ করে নেই আগে।
– আগে মন্দিরে চলো। অঞ্জলি দেওয়ার আগে আগে শুদ্ধ কোরো। নাহলে ওখানে গিয়ে আবার শুদ্ধ করতে হবে।
– ধ্যাৎ অসভ্য, পাজির হাড্ডি। আচ্ছা, চলো তাড়াতাড়ি।
এরপর মন্দিরে গিয়ে জল নিয়ে কিসব মন্ত্র পড়ে আমার গায়ে ছিটিয়ে দিল, নিজের গায়েও একটু দিল। তারপর অঞ্জলি দিয়ে একসাথে পার্কে হাঁটছি। লোকজন পার্কে আজ অনেক কম দেখছি। চার পাঁচ মিনিট পরে একজন দুজন করে জগিং করতে করতে যাচ্ছে। একজন ক্রস করে চলে যাওয়ার পরপরই ওকে টেনে কিস করতে শুরু করলাম একটানা এক মিনিট কিস করলাম।তারপর জড়িয়ে ধরলাম। নিচের পাজিটা এক সেকেন্ডের জন্যও শান্ত হয়নি। হাড়ের মতো শক্ত হয়ে আছে। ওকে একটু উঁচু করলাম জড়িয়ে ধরে। এতে একেবারে নন্দিনীর যোনিতে চেপে বসল ওটা প্যান্টের উপর থেকে।আমার এটা প্রায় ছয় ইঞ্চি লম্বা আর পাঁচ ইঞ্চি ঘের। গড়পড়তা এশিয়ানদের মতোই, শুধু ঘেরে বেশখানিকটা বেশি। ও একদিন ধরে ভয় পেয়েছিল। বলেছিল, “এতো মোটা! আমি নিতে পারবনা আমার অতটুকু গোলাপের মধ্যে।” হেসে বলেছিলাম, “অসংখ্যবার নিতে হবে বউ। তোমার জন্যই তো তৈরি।” সেইটা এখন ওর নরম তুলতুলে যোনিতে ঘষা দিচ্ছে কাপড়ের উপর থেকে। আর এখন আমি করছি না। লক্ষ্মীটিই পা উচু করে করে ঘষে নিচ্ছে ওর ইচ্ছেমতো। হঠাৎ একজনের পায়ের শব্দে সচেতন হয়ে পাশাপাশি হাঁটা শুরু করলাম। জগিং করে লোকটা চলে গেলেই বউ জড়িয়ে ধরে বলল,
– হোটেলে নিয়ে চল তোমার বউকে।
– না বউ, সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। আমি সবার সম্মতিতেই তোমার সাথে মিলিত হবো। সবার সামনে থেকে তুলে আনব।
– আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না, জানতে চাই না। তুমি এখনই হোটেলে নিয়ে করবে আমাকে। বাচ্চা আসলে আসুক। আমি বাচ্চা গর্ভে নিয়েই তোমার হাতে সিঁথিতে সিঁদুর পড়ব।
আমি ওর গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু একে দিলাম। বললাম,
– শান্ত হও লক্ষ্মীটি। এখন যে আমার কোনো চাকরি নেই। তারপর শুধু চাকরি পেলেই তো হবে না, তোমার মত মেয়েকে পেতে তেমন যোগ্য চাকরি পেতে হবে। তুমি আমাকে ভালোবাসো, এই চাপে যেন আঙ্কেল আমার হাতে তোমায় তুলে না দেন। আমি তোমার যোগ্য বুঝেই যেন এমনটা করেন উনি।
– আমি তোমায় ভালোবাসি, এটাই তোমার সবথেকে বড় যোগ্যতা রুদ্র। অন্য কে কি ভাবল তাতে কিছু যায় আসে না। দুবেলা দুমুঠো ভাত আর পড়ার মতো কাপড় দিতে পারবে তো? এতেই আমার হবে।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম ওকে। বললাম,
– তোমার মতো নির্লোভ মেয়েরাই রাণীর মতো জীবন যাপনের যোগ্য। তোমায় রাণীর মতো রাখতে পারার মতো যোগ্যতা না হওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নেই লক্ষ্মীটি।
ওর সারা মুখে অনেক আদর করলাম এরপর। সম্পূর্ণ কামহীন হয়ে। তারপর পরম ভালোবাসায় আবার জড়িয়ে রাখলাম বেশ কিছুক্ষণ। আস্তে আস্তে বলতে থাকল,
– কি অদ্ভুত দেখো তুমি, সব ছেলেরা প্রেমিকাকে ভোগ করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। ভালোবাসার পরীক্ষা নেয় নাকি। আর আমি তোমাকে এতোবার সুযোগ দেই, জোর করি আমার সব নিয়ে নেওয়ার জন্য, তাও তুমি নাও না। তুমি কোন ধাতুতে গড়া বলোতো।
– হা হা হা, তোমার প্রেমের ধাতুতে।
এরপর ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ হল। সিজি খুব বেশি ভালো ছিল না। স্কিলের জোরে একটা বেসরকারি ফার্মে মোটামুটি বেতনে চাকরি পেলাম একটা। বউয়ের পড়াশোনা তখন মাস ছয়েক বাকি। ইঞ্জিনিয়ারিং চলা অবস্থায় হালকা পাতলা বিসিএস প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করেছিলাম, এবার জান পরাণ লাগিয়ে প্রস্তুতি শুরু করলাম। কারণ ইচ্ছে ছিল ক্যাডার হয়েই ওকে ঘরে তুলব। শ্বশুর বাবার যেন আপত্তি করার কোনো সুযোগ না থাকে। এমনিতে নন্দিনী একবার বললেই উনি আর দ্বিমত করবেন না, কিন্তু ওনার মনে কোনো অপূর্ণতা থাকুক এমনটা আমি চাই না। কিন্তু বউয়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করত খুব। কথা শুরু করলেই তিন চার ঘন্টা কোথা থেকে পার হয়ে যেত বুঝতেই পারতাম না। কথাটা ওকে বলতে হল না, ও ই বুঝে নিয়েছিল। তাই নানা ছোটো খাটো কারণে খারাপ আচরণ করতে শুরু করল। কিন্তু ও এমন ছিল না। আগে অনেক বড় ব্যাপারেও দেখেছি অল্পস্বল্প প্রতিক্রিয়া দেখাতো। এইসময় ও আমাকে খেপানোর জন্য বারবার বলতো, “বেসরকারি চাকরিকে আমি কোনো যোগ্যতা মনে করি না। এটা আজ আছে, কাল নেই৷ কোনো নিশ্চয়তা নেই। তুমি সরকারি চাকরি পেলে আমার কথা ভেবো, নাহলে ভুলে যাও।” কিন্তু ভার্সিটিতে থাকা কালীন কখনো ও এমন কথা বলে নি। আমি তো গাধা। ওর কথা অবাক হতাম, কিন্তু ভাবতাম সত্যি ই ও মন থেকে বলছে। এভাবে কিছুদিন বলার পরে কথা বলা একদম কমিয়ে দিলাম। দিনরাত পড়া নিয়ে থাকতাম। মাথার মধ্যে শুধু ঘুরত, “আমি যোগ্য নই। অপমান করেছে আমার যোগ্যতা নিয়ে।” বেসরকারি চাকরি টা ছেড়ে দিলাম।
এরপরের কথাটা সংক্ষিপ্ত। প্রিলিতে টিকলাম, রিটেনেও ভালোভাবে টিকে গেছি। ভাইভা দিতে যাওয়ার আগে ওকে মেসেজে জানিয়ে গেলাম, “যাচ্ছি ভাইভায়।” ব্যাস এতটুকু।
ভাইভা দিয়ে মন্দিরে গেছি। দেখি ও ও এসেছে। চোখের নিচে কালি পড়েছে। আগের থেকে চিকন হয়েছে অনেকটা। আমাকে দেখেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। কাছে এগিয়ে এলো। বলল,
– কেমন আছো রুদ্র।
– এইতো আছি। তুমি?
– ভালোই।
মনে মনে বললাম, তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু এমন অবস্থা হল কি করে তাই বুঝতে পারছি না। জিজ্ঞেস করল,
– ভাইভা ভালো হয়েছে?
– হুম, মোটামুটি হল। শিওর না। কি যে হয়।
হঠাৎ ওর আগের ব্যবহারের কথা মনে পড়ল। কিভাবে স্বার্থপরের মতো আচরণ করে দূরে সরে গিয়েছে। অজুহাত দিয়ে বললাম,
– যাচ্ছি, একটা কাজ আছে।
বলেই সাথে সাথে চলে এলাম। দেখেছিলাম, মুহুর্তে ওর হাসি মুখটা মলিন হয়ে গিয়েছিল।
কয়েক মাস পরে রেজাল্ট দিল। কঠোর পরিশ্রমের ফল পেয়েছি অবশেষে।এডমিন ক্যাডারে ম্যাজিস্ট্রেট এখন আমি। খবরটা পেয়েই বাবা মা কে জানালাম। তারপর বোনের কাছে গেলাম, একবারে গিয়ে খবরটা দেবো বলে। ওর বাসা আমার মেস থেকে দশ কিলোর মতে দূর। বাসে যাচ্ছি আর ভাবছি, বোন জানলে বোনের মাধ্যমে নন্দিনীও জানবে। তখন ওর মুখটা কেমন হবে ভাবছিলাম আর মনে মনে হাসছিলাম।
গিয়ে নক করতে বোন দরজা খুলল। বলল,
– ভাই যে, এলি অবশেষে। এতোটুকু দূরে থাকিস, এতোদিনে একবার আসলি না।
– একটা লক্ষ্যের পিছনে ছুটছিলাম রে। পৌঁছাতে পারলাম অবশেষে।
– ক্যাডার হয়েছিস তাহলে?
– এডমিন।
– নন্দিনীকে জানিয়েছিস?
– ঐ স্বার্থপর মেয়েকে?
– ভাই!!!
– তুই জানিস না, ওর কাছে নাকি আমার সরকারি চাকরির কোনো দাম নেই। এই ও একদিন আমাকে বলেছিল, দুমুঠো ভাত আর কাপড় হলেই নাকি ওর চলবে।
– তোর অবাক লাগল না? কেন ও হঠাৎ এমন স্বার্থপরের মতো কথা বলতে শুরু করল?
– লেগেছে, কিন্তু আসলে মানুষের চিন্তা ভাবনার তো পরিবর্তন হয়, ওর ও হয়েছে। আগের কথার কোনো মানেই হয় না এখন ওর কাছে।
– হা হা হা হা হা হা হা।
– হাসছিস কেন?
– ছিহ্ রুদ্র, ছিহ্। এতোবড় বোকা তুই? এতো সামান্য একটা জিনিস বুঝতে তোর এতো সময় লাগে? তাও তো এখনো বুঝিস নি মনে হয়।
– কি বুঝব?
– কিছুই বুঝতে হবে না, তুই বের হয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। ম্যাজিস্ট্রেট রুদ্র, হা হা। গাধা ম্যাজিস্ট্রেট।
– কিসব বলছিস তুই কিছুই মাথায় ঢুকছে না। আর তুই কোনোদিন আমাকে রুদ্র বলে ডাকিস নি। আজ এমন কেন করছিস?
– তুই ভাই ডাকের যোগ্য নস। তোকে অনেক অনুরোধ করে বলেছিলাম, আমার বান্ধবীটাকে আগলে রাখিস৷ এই তার নমুনা! তোর জন্য নিজের প্রেম ত্যাগ করল, দিনের পর দিন তোকে মিস করে ছটফট করত, আমার কাছে এসে বারবার তোর খোঁজ খবর নিত। দিন দিন তোর বিরহে কিভাবে শুকিয়ে গেছে তার সাক্ষী আমি মিস্টার রুদ্র। তুই তো ওর নেশায় মত্ত ছিলি। পড়াশুনা চালে তুলে ঘন্টার পর ঘন্টা ওর সাথে কথা না বললে তোর দিন যেত না। একবার ভেবে দেখত, তোর কাছ থেকে সরে না গেলে তুই মন দিয়ে,একটা জেদ নিয়ে পড়তে পারতি? এই জায়গায় আসতে পারতি?
– আমাকে বুঝিয়ে বলতে পারত।
– তোকে বলে নি?
– বলেছে, কিন্তু…..
– কিন্তু কি? বললাম না? নেশা। তোকে ওর নেশা থেকে ছাড়ানো অনিবার্য ছিল। তোকে ভালোভাবে বলে সরে গেলে তুই ওকে যেতে দিতি না। কিন্তু আমি ভেবেছি প্রথমে রাগ করলেও পরে তুই অবশ্যই বুঝবি ওর ত্যাগের কথা। ও তো ক্যাডার চায় নি রুদ্র। তুই চেয়েছিস। তোর মনে হয়েছে, ওর বাবা ক্যাডার জামাই পেলে না করতপ পারবে না। উনি কি কখনো তোকে এই কথা বলেছে? একসময় ও বুঝল, ক্যাডার হওয়াটা আসলে তোর স্বপ্ন। আর এটা পূরণ করার জন্য তোর কাছ থেকে সরে আসল, কিন্তু তোকে ত্যাগ করে নি। ও প্রতিদিন মন্দিরে যেত জানিস? অনেকদিন আমি দেখেছি, ও কান্না করেছে মায়ের পায়ে, যাতে তুই তোর স্বপ্ন পূরণ করতে পারিস। কিন্তু যে তোর জন্য এতো ত্যাগ স্মীকার করল, তার প্রতিদানে তুই ওকেই ত্যাগ করলি!!!
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। কি করেছি আমি! ও সেদিন মন্দিরে আমার জন্য গিয়েছিল, আর আমি ওকেই ইগনোর করে চলে এসেছি!
ও বলতে থাকল,
– তোর ভাইভার দিন ও সবথেকে কষ্ট পেয়েছে। তোর ভাইভা শেষ, তখনও নাকি তোর কি রাজকার্য পড়ে গিয়েছিল যে ওর সাথে দুমিনিট কথা বলারও সময় পাস নি। এইটা কেঁদে কেঁদে আমাকে বলেছিল। আমার সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা ছিল না রুদ্র। এরপর থেকে ওকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
– কিহ্! খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে?
– হ্যা, তাই। এখন তুই যা। যদি কোনোদিন ওকে বউ করে সাথে নিয়ে আমার দরজায় আসিস, সেদিন তোর জন্য এ দরজা খুলবে, নয়তো না।
– কিন্তু এই ভুল করার পরে আমি কি আর ওর যোগ্য আছি?
– যদিও তুই কখনোই ছিলি না, কিন্তু ও সবসময় তোকে ওর যোগ্য মনে করত। কেন জানি না। এখনও ওর কাছে যোগ্যই আছিস, শুধু ওকে খুঁজে বেড করে ওর অভিমান ভাঙাতে হবে। দেড় বছরের অভিমান। লেগে থাকতে পারলে হবে। কারণ তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে ও।
আর কিছু না বলে বের হয়ে গেলাম। ও প্রতিদিন মন্দিরে যেত বলল। সোজা মন্দিরে গেলাম। পুরোহিত কে জিজ্ঞেস করলাম, ওর নাম বলে। মন্দিরে ভোগ দিতে হলে তাতে একটা কাগজে নাম লিখে দিতে হয়। তাই নামটা জানতে পারে। কিন্তু না, নাম দিয়ে বলতে পারল না। এরপর প্রতিদিন আসত, মুখের গড়ন, মাঝারি, চিকন, আর চোখের নিচে কালি পড়া একটা মেয়ের কথা বললাম। চোখের নিচে কালি পড়া আর প্রতিদিন আসত শুনে বলল, “হ্যা, আসত তো। কিন্তু তিন চারমাস আসে না।” বুঝলাম, ভাইভার ঐদিনই শেষবার এসেছিল। মায়ের পায়ে পড়লাম গিয়ে। বললাম, “মা, ফিরিয়ে দাও ওকে। ও ছাড়া সবকিছু অর্থহীন।” অনেক কাঁদলাম। পরে মনে হল, ক্যাডার হয়েছি কোনোভাবে জানতে পারলে তো আসবে একবার মন্দিরে। বসে থাকলাম ওখানেই, বাকি দিন, সারা রাত। না খেয়ে না ঘুমিয়ে। আসল না। পরের দিনও থাকলাম। আসে নি ও। তাহলে কি আমি এখানে আসার আগেই ও মন্দিরে এসেছিল? তাহলে ওকে পাবো কিভাবে? মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলাম। বড্ড অভিমান নিয়ে কোথায় লুকিয়ে আছো লক্ষ্মীটি।
হঠাৎ মনে পড়ল, দোষ তো আমি করেছি। তার শাস্তি ওর পরিবারকে কেন দেবে? এমনতো ও না। তাহলে ও কি ওর বাসায়ই আছে? সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলাম বোনের কাছে। ওদের গ্রামের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলাম। জানে না ও। যাই হোক, ও না জানলেও ওর কলেজ তো জানে। গেলাম কলেজে। ম্যাজিস্ট্রেট এখন আমি। গুরুতর অপরাধের সন্দেহভাজনের তালিকায় নন্দিনীর নাম আছে জানিয়ে ওর ডিটেইলস নিলাম। চলে গেলাম ওর গ্রামে। এতো দ্রুত এখন মাথা কাজ করছিল, তিন বছর আগে ওর মুখে শোনা ওর বাবার নামও মনে পড়ল। সবই মায়ের কৃপা। গ্রামে গিয়ে নন্দিনীর নাম বললে লোকে নানারকম ভাববে, অনেক গুজব ছড়িয়ে পড়তে পারে। গ্রামের মানুষজন অনেকটা এমনই। প্রতিবেশীর সমস্যা খোঁজায় তৎপর সর্বদা। এইজন্য ওর বাবার নাম খুব কাজে দিল। গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই ওদের বাড়ির অবস্থান বলে দিল। তখন সূর্য ডুবতে যাচ্ছে। দেখলাম উঁচু পাঁচিল দেওয়া। দারোয়ান আছেন। কি করি? গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– চন্দ্রশেখর বাবু আছেন?
– জ্বি আছেন। কি দরকার?
– আচ্ছা, ওনার এক মেয়ে আছেন না? কি যেন নাম। ন.. ন..নন্দিনী। সম্ভব ঢাকার এক কলেজে পড়ে। উনি কি ঢাকায় নাকি বাড়িতে?
– দিদিমনি তো এখন মামার বাড়িতে আছে বেশ কিছুদিন হল।
– ওহ্ আচ্ছা। মামার বাড়িটা কোথায়?
– আজব তো। কে হে তুমি? আর একবার কর্তার খবর, একবার দিদিমনির খবর জানতে চাইছ। মতলব কি?
ম্যাজিস্ট্রেট কার্ডটা বের করলাম। বললাম, আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। ওনার এক বান্ধবী নিখোঁজ। এই কারণে ওনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করা দরকার। যত শীঘ্র সম্ভব ওনার কাছে আমাদের টিমের পৌঁছাতে হবে।
কাজ হল এতে। বিশ্বাস করল। মামাবাড়ির ঠিকানা, মামার নাম। সব জেনে নিলাম। তখনই রওনা হলাম। পৌঁছাতে সকাল হয়ে যাবে। বাস ভার্নিতে আমার ঘুম হয়না বলতে গেলে। তার উপর ওকে হারানোর ভয়। সব মিলিয়ে ঘুমের ছিটেফোঁটাও হল না। বাস থেকপ নেমে অটো নিলাম, তারপর ১ ঘন্টা আরো হাটা। খিদেয়, ক্লান্তিতে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। তবু হেটে যাচ্ছি। মোটামুটি ১০ টা নাগাদ পৌঁছলাম ওর মামার বাড়ি। এখন সবথেকে বড় পরীক্ষা। ওকে মানবো কিভাবে?
ওর মামার বাড়ির একটু দূরে একটা গাছের নিচে বসে ভাবছি, এমন সময় একজন লম্বা চওড়া লোক, বয়স ৪০/৪৫ হবে, এসে জিজ্ঞেস করল,
– কে তুমি ভাই?
– আমি রুদ্র সেন।…. এর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
– ওহ আচ্ছা। তো এখানে বসে আছেন যে। আর আপনাকে খুব ক্লান্ত ও লাগছে। সকাল থেকে না খেয়ে আছেন বুঝি।
গ্রামের মানুষদের এই দিকটা ভালো লাগে খুব। যতই একে অন্যের দোষ খুঁজুক, দিনশেষে বিপদে পড়লে এরাই সাহায্য করে। আশেপাশের লোকেরাও বাদ পড়ে না। আর আমি ম্যাজিস্ট্রেট জানার পরে তুমি থেকে আপনিতে চলে গিয়েছেন মুহুর্তে। বললাম,
– আপনি আমার থেকে বয়সে অনেক বড়। আপনি আমাকে তুমি করেই বলবেন প্লিজ।
– তা ঠিক আছে। তো চলো আমার সাথে, খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নেবে। তারপর যেখানে যাবার যাবে।
– অসংখ্য ধন্যবাদ।
বলে হাঁটতে শুরু করলাম ওনার সাথে। আমার কাঁধে একটা ব্যাগ। আর সিম্পল প্যান্ট শার্ট পড়া ইন করে। তাই দেখে সভ্য ঘরের ছেলেই মনে হবে যে কারো।
আরে এ কি, এ তো নন্দিনীর মামার বাড়িতেই ঢুকছেন। ইনিই কি তাহলে নন্দিনীর মামা? জয় মা দুর্গা। এতোটা ভাগ্যের সহায় পাবো ভাবি নি।
বাসায় ঢুকেই হাঁক দিলেন,
– এই যে শুনছ?
একজন মহিলা বের হয়ে এলেন। ইনি তাহলে মামী হবেন। মামা বলতে থাকলেন,
– দেখলাম ইনি পথের পাশে ক্লান্ত হয়ে বসে আছেন। সকাল থেকে না খেয়ে হেঁটে এতদূর এসেছেন। এর খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করো তো একটু।
মামী দেখলাম মামার কথায় খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। মুখটা কেমন কালো হল। কিন্তু কিছু বললেন না। আমাকে নিয়ে মামা টিউবওয়েলের কাছে গেলেন। হাত মুখ ধুয়ে এক পরম শান্তি অনুভব করলাম। মনে মনে মা কে ডাকছি। মা, রক্ষা কোরো। অনেক সাহায্য করেছো। আর একটু করো মা। জয় মা দুর্গা। খেতে বসলাম। মামী ভাত, ডাল আর আলুভর্তা দিলেন। খিদে পেটে এই জিনিস যেন অমৃতের মতো লাগল। কাল দুপুরে অল্প কিছু খাওয়া হয়েছিল। তারপর এই। খেতে খেতে হঠাৎ শুনলাম এক পিচ্চি মেয়ে বলছে, “নন্দিনী দি, এসো লুডু খেলব।”
নন্দিনী, আমার নন্দিনী, লক্ষ্মীটি আছে পাশের ঘরেই। ভাবতেই চোখে জল চলে এলো। শুনলাম বলছে, “ভালো লাগছে না রে কাজল। পরে খেলব।”
– তুমি সারাক্ষণ মন মরা হয়ে বসে থাকো। খেলতে বললে শুধু পরে আর পরে। কথা বলব না তোমার সাথে, যাও।
মনটা কেঁদে উঠল। অনেক কষ্ট দিয়েছি ওকে না বুঝে। আর না।
চুপচাপ খেয়ে উঠলাম। হাতমুখ ধুয়ে বের হবো। মনখারাপ হয়েছিল। একবার চোখের দেখাও হল না। এমন সময় মামা বললেন,
– আরে যাচ্ছো কোথায়? মাত্র খেয়ে উঠলে। একটু বসো, বিশ্রাম করো। তারপর যেও। দুটো কথা বলি এসো।
– না মামা, থাক।
– তা বললে হবে না। এসো। রেস্ট নাও।
এরপর না করলে বিপদ। আমার তো থাকারই ইচ্ছে। এর বেশি ফরমালিটি করা যাবে না। তাহলে ছেড়ে দিতে পারে। হি হি। মামা বলতে শুরু করলো,
– তা তুমি হটাৎ এই গ্রামে?
– আসলে আমার এক বন্ধু এই গ্রামে এসেছিল। ও অনেক প্রশংসা করেছে। গ্রামটা নাকি অনেক সুন্দর। তাই এবার সুযোগ পেয়ে চলে এলাম।
– ওহ আচ্ছা। আসলেই অনেক সুন্দর।
হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি একজোড়া চোখ উঁকি দিয়ে দরজার পর্দার আড়াল থেকে আমাকে দেখছে। ইয়েসসস, নন্দিনী, দেখেছে আমাকে। কন্ঠ শুনেছে হয়তো। আমি তাকানোর পরেই সরে গেল। বুঝেছে আমি দেখেছি।