ইনভেস্টিগেটর

“আমি আরেকটু ভালোভাবে ব্যাপারটা বুঝতে চাই, রুপা। এই যা। এতদিন পরকিয়া, অবৈধ প্রেম, রিয়েলস্টেটের ফ্যাক্ট চেক- এসব বালছাল করেছি। যখন শুরু করেছিলাম খেচর, এমন ভেতো ইনভেস্টিগেটর হব, কল্পনাও করিনি। আমি একটা ভালো কেইস চাই, একটা মাথা খাটানোর মতো কেইস। তাহলে অন্তত বলতে পারব, আমি ইনভেস্টিগেশন করি, রিয়েল ইনভেস্টিগেশন করি! আর এই প্রথম আমরা এমন কমপ্লিকেটেড কেইস পেলাম!”“কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। কোন কিছু করার এক্সেসও নেই!”, বলল রুপা, ডেসপারেট গলায়।“থাকতেও পারে! কে ভেবেছিল, শ্রীমঙ্গলে এসে এমন একটা কেইস পাব? এই কেইসে অনেক কিছুই থাকতে পারে যেটা সাদা চোখে ধরা পড়ছে না!”হতাশ হয়ে হাত ছুড়ল রুপা, বলল না কিছু একটা বলতে গিয়েও।ভিডিওটা চালু করে প্লেব্যাক স্পিড কিছুটা কমিয়ে দিল নির্জন। দেখল, রুপাও লাগিয়ে দিয়েছে চোখ। মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে দুজন হোটেল স্টাফ- একজন কমবয়সী, আরেকজন মধ্যবয়স্ক, তাকিয়ে আছে তাহমিনা হায়াতের ফাঁক হয়ে থাকা ভোকাল কর্ডের দিকে। কী যেন বলল মধ্যবয়স্ক লোকটি, শোনা গেল না ঠিক, কমবয়সী ছেলেটির চোখ বারবার চলে যাচ্ছে মৃতদেহের যোনিতে!এবারে বেরিয়ে গেলো লোকদুটো, পারিজার আর্তস্বর স্পষ্ট শোনা গেল ভিডিওতে- নির্জন ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটরের আলো ফেলেছে তাহমিনা হায়াতের পায়ে- পজ করল নির্জন।“এই যে আলোটা দেখছো, এই আলোতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট থাকলে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।”, বলল নির্জন।“আপনি যে এই লাইট ইউজ করেছেন, কেউ দেখেনি?”“মনে হয় না। দেখলে পুলিশকে বলত, পুলিশ সেকথা জিজ্ঞেসও করত!”ভিডিওটা আবার চালু করে দুই সেকেন্ড পর আবার পজ করল নির্জন।“আঙ্গুলের কোন দাগ তো নেই!”, বলল রুপা।ভিডিওতে তাহমিনা হায়াতের পেটে, বুকে ও তলপেটে আলো পড়েছে, কোথাও কোন দাগ দেখা যাচ্ছে না। ভিডিওটা আবার চালু করল নির্জন- আলোটা পড়েছে মুখে, মুখেও কোন দাগ নেই; এমনকি দাগ নেই হাতেও।বিছানাতেও আলো ফেলেছিল নির্জন, সেখানে বেশ কিছু আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট।“তাহমিনা হায়াতের দেহে কোন ফিংগারপ্রিন্ট নেই! আপনার ডিটেকশন লাইট কাজ করে তো?”“কাজ না করলে বিছানাতেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেখা যেত না!”, বলল নির্জন।“তবে কি কিলার একবারও তাহমিনা হায়াতকে টাচ করেনি? এটা কী করে সম্ভব!”, বিস্মিত হয়ে বলল রুপা।“হয়তো পিঠের দিকে আছে, সেদিকে তো আলো ফেলতে পারিনি!”“হতে পারে- এটা কী লেখা?”, হঠাত জিজ্ঞেস করল রুপা।“কোথায়?”“ভিডিওটা একটু পিছিয়ে নিন, একটা কাগজ দেখলাম ড্রেসিং টেবিলে…”নির্জন কয়েক সেকেন্ড পিছিয়ে চালু করল ভিডিওটা। মধ্যবয়স্ক লোকটার পাশে, খাটের ডানদিকে একটা ড্রেসিং টেবিল, সেখানে আয়তকার একটা কাগজ- তাতে লেখা আছে কিছু।“দেখা যাচ্ছে না!”“ছবিগুলাতে দেখা যেতে পারে। ওয়েট!”মোট ১৩টা ক্লিক করেছে নির্জন, একই জায়গা থেকে ঘরের বিভিন্ন প্রান্তকে ফোকাস করে- তবে ৬৪ মেগাপিক্সেলের বড় ল্যান্ডস্কেপে ধরা পড়েছে পুরো ঘরটাই, প্রতিটি ছবিতেই।একটা ছবিতে ড্রেসিং টেবিলটা এসেছে ভালোমতো। জুম করল নির্জন টাচবারে বৃদ্ধা আর তর্জনি রেখে- সাদা আয়তকার পৃষ্টাটার মাঝবরাবর লেখা-“আর কোন ফুল নয়, রৌদ্রতৃপ্ত সূর্যমুখী নয়,তপ্ত সমাহিত মাংস, রক্তের সন্ধানে ঘুরে ফেরে।”“কবিতা? তাহমিনা হায়াত কবিতা পড়তেন?”, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রুপা।“তপ্ত সমাহিত মাংস, রক্তের সন্ধানে ঘুরে ফেরে”, স্পষ্ট করে উচ্চারণ করল নির্জন। “আর কোন ফুল নয়, রৌদ্রতপ্ত মাংস নয়?”“কার কবিতা? আপনি তো কবিতা পড়েন- এটা পড়েননি আগে?”রুপার মুখের দিকে তাকাল নির্জন, ওর চোখে ঘোর। বলল, “আর কোন ফুল নয়, রৌদ্রতপ্ত সূর্যমুখী নয়- শব্দুগুলো প্রচণ্ড ক্যাপভেটিং। কোন এলেবেলে কবির কবিতা এটা নয়!”“তাহলে কার? শামসুর রাহমানের?”, জিজ্ঞেস করল রুপা।নিরুত্তর থেকে কবিতার লাইনদুটো বারংবার সশব্দে উচ্চারণ করতে লাগল নির্জন- ক্রোমের কার্চবারে লিখল লাইনদুটো।“এটা ‘ফিরে এসো, চাকা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা”, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলল নির্জন।“বিনয় মজুমদার!”“হ্যাঁ। বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ!”“পুরো কবিতাটা নেই? নাম দেখুন তো কবিতাটার!”একটা লিংকে ক্লিক করল নির্জন।“মুক্ত ব’লে মনে হয়; হে অদৃশ্য তারকা, দেখেছোকারাগারে দীর্ঘকাল কী-ভাবে অতিবাহিত হ’লো।“সেখানে আছে পুরো কবিতাটাই কিন্তু কবিতার নামটা দেয়া নেই! আরো কয়েকটা লিংকে ক্লিক করেও নামটা খুঁজে পেল না নির্জন।“বইটা আমার সংগ্রহে আছে, আজিজ থেকে কিনেছিলাম। কিন্তু এখানকার কোন বইয়ের দোকানে কি এই বই পাওয়া যাবে?”, রুপার দিকে তাকিয়ে বলল নির্জন।“তার দরকার নেই। এই বইয়ের পিডিএফ পাওয়া যাবে অবশ্যই। সেটাই নামিয়ে নিন।”ইবুক কোনকালেই পছন্দ ছিল না নির্জনের। কোন ইবই’ই শুরু করে শেষ করতে পারেনি ও, ধরে রাখতে পারেনি মনোযোগ। বইয়ের “মায়ের মতো ভালো” পাতার সাথে প্রতিনিয়ত ক্ষতিকর আলোকরশ্মি নিঃসরণকারী স্ক্রিনের তুলনা চলে? আর এখন কিছু ওয়েবসাইট লেখকের রয়্যালিটি দূরে থাক, লেখকের অনুমতি পর্যন্ত না নিয়ে ইবুক আপলোড করে দিচ্ছে ইচ্ছেমতো। কোন বই সামান্য আলোচিত হলেই কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসছে এসব ওয়েবসাইটে- ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পেশাদার লেখক ও প্রকাশক।উপায় না থাকায় একটা ওয়েবসাইট থেকে বইটি ডাউনলোড করল নির্জন।কয়েকটা পাতা স্ক্রল(!) করে নির্জন বলল, “কবিতাগুলোর নাম দেননি কবি। যে তারিখে কবিতাগুলো লিখেছে, সেটাই কবিতার নামের জায়গায় লেখা, সেটাই নাম!”কাব্যটা মাত্র তিন ফর্মার। যেহেতু কবিতার প্রথম শব্দটা নির্জন জানে- মুক্ত- প্রতিটা কবিতার শুধু প্রথম শব্দটিই পড়ছে ও।বেশিক্ষণ খুঁজতে হলো না ওকে, পেয়ে গেলো কয়েক মিনিটের মধ্যে। আর কবিতার নামটা দেখে মুখ হাঁ হয়ে গেল ওর!২৭ জানুয়ারি ১৯৬২!“আজকের তারিখ!”, বলে উঠল রুপা।বিস্মিত হতভম্ভ নির্জন তাকিয়ে রইল একদৃষ্টে তারিখটার দিকে।-নির্জন ]“এটার মানে কী!”, বিস্মিত রুপার প্রশ্ন।কবিতার নামটা দেখে এতটাই হতভম্ভ হয়ে গিয়েছে নির্জন, জবাব দিতে পারল না ও। “তপ্ত সমাহিত মাংস”- শব্দ কয়েকটি আঘাত করতে লাগল মাথায়।“জানি না, রুপা। এটার মানে বোঝার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এই কাগজটা কে রেখেছে, সেটা জানা!”“তাহমিনা হায়াত নিজেই রাখেননি তো?”, বলল রুপা ল্যাপটপটা টেনে নিয়ে।“তাহমিনা হায়াত কবিতার পাঠক কি? আমার মনে হয় না! তাহলে কথায় অন্তত প্রকাশ পেত!”, একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বলল নির্জন।“কথায় প্রকাশ পাওয়ার কি আছে? এটা তো ঢোল পিটিয়ে বলার মতো বিষয় নয়!”, একটা ছবির দিকে তাকিয়ে বলল রুপা।“বিনয় মজুমদার কিন্তু শামসুর রাহমান বা সুনীল নন, রুপা। পশ্চিমবাংলার কথা জানি না, কিন্তু বাংলাদেশে তার পাঠক হাতেগোণা। ওপারবাংলার গদ্য যেভাবে এদেশে আসে, কবিতা তো সেভাবে আসে না। নিবিষ্ট পাঠক ছাড়া, সাধারণ পাঠক বিনয় মজুমদারের কবিতা পড়া দূরে থাক, নামটাও জানবে না!”“তাহমিনা হায়াত হতে পারেন না তেমন?”, ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল রুপা।“হতেন পারেন না, বলছি না, তবে সম্ভাবনা কম। তাহমিনা হায়াতের কথা বলার ধরণটা খেয়াল করেছো? কারণে অকারণে ইংরেজি ব্যবহার করেন! কবিতা বাদ দাও, নিয়মিত গল্প উপন্যাস পড়লেও তাকে এভাবে ইংরেজির কাছে হাত পাততে হতো না!”“এটা দেখুন!”আরেকটা ছবি জুম করেছে রুপা- এই ছবিতে পৃষ্ঠাটার লেখাগুলো পড়া না গেলেও, কাগজটা দেখা যাচ্ছে।“কাগজটার উপর একটা বডি লোশনের বোতল রাখা!”নির্জন সিগারেটের ছাই এশট্রেতে ফেলে, তাকাল ছবিটার দিকে। ড্রেসিং টেবিলে বহুজাতিক কোম্পানির বেশকিছু পণ্যের পাশে ছোট্ট কাগজটা রাখা- উড়ে না যায়- বোধহয় তাই, কাগজটার উপরে রাখা হয়েছে বডি লোশনের বোতলটা।“একটা জিনিস ভেবেছো?”, আবারও বলল নির্জন, “মাত্র দুইটা লাইন কেন কেউ একটা পাতায় প্রিন্ট করবে? করলে পুরো কবিতাটাই করার কথা নয় কি? দুইটা মাত্র লাইন তো হাতেও লেখা যেত!”“ভালো প্রশ্ন!”নির্জন লেপটাকে আরো ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়ে বলল, “এটা তাহমিনা হায়াত করেননি!”“তাহলে কে করেছে? খুনি?”“হয়তো”, বলল নির্জন, “হয়তো ও একটা ক্লু রেখে গেছে, এমন একটা ক্লু যেটা সাদা চোখে কারো নজরে পড়বে না! এ কারণেই হাতে না লিখে, প্রিন্ট করেছে লাইনদুটো, যাতে হাতের লেখা চিহ্নিত হওয়ার ভয় না থাকে!”“কিন্তু কেন করবে এমনটা!”“প্রশ্নটা সেখানেই!”কবিতাটা আরেকবার পড়ল নির্জন।“অদৃশ্য তারকা, আজ মুক্ত ব’লে মনে হয়; ভাবি,বালিশে সুন্দর ফুল তোলা নিয়ে এত ক্লেশ।“চতুর্দশপদী কবিতা- খেয়াল করেছে নির্জন, বাকিগুলোও তাই। কবির ১৯৬১ সালের ৮ মার্চ থেকে ৬২ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত লেখা নির্বাচিত কিছু কবিতা স্থান পেয়েছে “ফিরে এসো, চাকা” কাব্যে।“বিনয় মজুমদার জানুয়ারিতে লেখা একটা মাত্র কবিতা “ফিরে এসো, চাকা”য় রেখেছেন!”“হ্যাঁ, একটাই।“, বলল রুপা, “এটা কোইন্সিডেন্স কীভাবে হয়?”“এদেশে কাল্ট মর্যাদা পাওয়া একটা কাব্যের জানুয়ারিতে লেখা একটামাত্র কবিতার মাঝের দুটো লাইন পাওয়া গেছে খুন হওয়া এক নারীর ড্রেসিং টেবিলে- লাইনদুটোর মধ্যে “তপ্ত সমাহিত মাংস” শব্দকয়েকটি আছে- কবিতাটার নাম ২৭ জানুয়ারি, ১৯৬২ এবং ঐ তারিখেই করা হয়েছে খুনটা!”নির্জন সিগারেটে লম্বা টান দিল আরেকটা, ধোঁয়ার রিং ছুঁড়ে বলল, “জুলফিকার আমান সফল ব্যবসায়ী, তিনি কাঁচা মেধা নিয়ে ঢাকায় এতবড় ব্যবসা দাঁড় করাননি। তাহমিনা হায়াতকে খুন করার কোন দরকার নেই তার, যেখানে তিনি ডিভোর্স দিতে পারেন চাইলেই।““মনোয়ার ওমরই বা কেন কাজটা করবেন?”, বলে উঠল রুপা, “অন্যের বৌয়ের মধু চাকছেন, নিজে অবিবাহিত, মেরে ফেলার মতো বোকামি তিনি করবেন না!”“এটা খুনের প্যাটার্ন হতে পারে!”“মানে? কীসের প্যাটার্ন?”, চমকে জিজ্ঞেস করে রুপা।“এক কাপ কফি হলে ভালো হয়না?”রুপা রিসেপশনে ফোন করে দুকাপ কফি পাঠাতে বলল রুমে।“কীসের প্যাটার্নের কথা বলছেন আপনি?”“খুনী কেন এই কবিতার লাইনদুটো রেখে যাবে? মেবি হি ইজ প্লেয়িং আ গেইম! হয়তো ও আগেও খুন করেছে এবং খুনগুলো করেছে “ফিরে এসো, চাকা”র কবিতাগুলো লেখার তারিখেই! নাউ হি’জ রিভিলিং হিজ রিক্রেট!”“আপনি সিরিয়াল কিলারের কথা বলছেন!”“হ্যাঁ!”“কিন্তু কেন? সিরিয়াল কিলার খুন করলেই বা কেন এই কাজটা করবে?”, অবিশ্বাসী গলায় প্রশ্ন করল রুপা।নির্জন কিছু বলতে যাবে, বেজে উঠল ডোরবেল। নির্জন উঠে নিয়ে এলো কফির মগদুটি, সার্ভিসকে বিদায় জানালো দরজা থেকেই।বিছানায় লেপের নিচে ফিরে, কফিতে চুমুক দিয়ে নির্জন জিজ্ঞেস করল, “জোডিয়াকের কথা জানো?”“রাশি? আমি ওসবে বিশ্বাস করি না!”“আমি জোডিয়াক কিলারের কথা বলছি!”“কফিটা সুন্দর”, কফিতে চুমুক দিয়ে বলল রুপা। “না, জোডিয়াকের নাম শুনিনি কোনদিন!”“জোডিয়াক ক্যালিফোর্নিয়ার এক সিরিয়াল কিলার যে এপর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে। ধরার সম্ভাবনাও নেই আর, এতদিনে মরেটরে গেছে। তাকে নিয়ে অনেক থিওরি প্রচলিত আছে, একজন তো নিজের বাপকেই জোডিয়াক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। জ্যাক দ্যা রিপারের মতো অবস্থা অনেকটা!”থামল নির্জন। ধোঁয়া ওঠা কফিকে চুমুক দিয়ে তাকাল রুপার বন্দুকের মতো তাক করে থাকা কৌতূহলী চোখের দিকে।“অন্যান্য সিরিয়াল কিলারের মতো জোডিয়াক খুন করে চুপ থাকত না। খুন করে সেই খুনের ডিটেইলস জানাত পুলিশকে ফোন করে, পত্রিকায় চিঠি লিখে! আবার চিঠির সাথে সাইফারও থাকত, চিঠিতে জানিয়ে দিত- সেটার সমাধান করতে পারলে ওর আসল পরিচয় জানা যাবে!”“মাই গড! ওকে ধরতে পারেনি কেন? ডিসাইফার করতে পারেনি সাইফারগুলো?”“ওর সব চিঠি ডিসাইফার করা যায়নি। যে কয়েকটা করা গিয়েছিল, সেসবে ওর পরিচয় ছিল না। নর্দান ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে রীতিমত ত্রাশ সঞ্চার করেছিল জোডিয়াক। ওকে নিয়ে ডেভিড ফিঞ্চারের সিনেমা আছে একটা, জোডিয়াক নামেই, দেখতে পারো!”কফির কাপটা পাশের ছোট্ট ডেস্কের উপর রেখে, আরেকটা সিগারেট জ্বালল নির্জন।বলল, “জোডিয়াক এই কাজগুলো কেন করেছিল বলে তোমার মনে হয়? খুন করেই পুলিশকে ফোন করা, পত্রিকায় চিঠি লেখা, নিজের পরিচয় জানিয়ে ক্রিপটিক ম্যাসেজ পাঠানো- কেন করেছিল এসব?”“আমি কী জানি!”“কারণটা ধরতে পারলে, তাহমিনা হায়াতের খুনির কবিতা রেখে যাওয়াটা ব্যখ্যা করতে পারবে।“রুপা অপেক্ষা করল নির্জনের উত্তরের জন্য। এ কয়েকদিনে ও বুঝে গিয়েছে, মাঝেমাঝে কথায় পেয়ে বসে নির্জনকে, তখন যে প্রশ্নগুলো করে, সেসবের উত্তরের ধার ধারে না ও, নিজেই জবাব দিয়ে দেয় সময়মতো।“ইনভেস্টিগেটরেরা ধরে নিয়েছে, জোডিয়াক এটেনশন সিকার। তাই ও পত্রিকায় চিঠিগুলো লিখেছে- সফলও হয়েছে তাতে। গোটা নর্দান ক্যালিফোর্নিয়া ওর ভয়ে কাঁতর ছিল! অথবা…”কফিতে চুমুক দিল নির্জন।“ও অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছিল। রিমোর্স- এর চেয়ে ভালো জ্বালানি আর নেই! হয়তো ও চাইছিল, ওর শাস্তি হোক, ও ধরা পড়ুক! ইড, ইগো, সুপারইগোর যুদ্ধে মূলত এটা হয়। অথবা…”“অথবা কী?”, প্রশ্ন করল রুপা।“অথবা ও পুলিশের সাথে খেলছিল। আমেরিকার গর্ব করার মতো পুলিশ এডমিনিস্ট্রেশন ওর কাছে হেরে যাচ্ছে বারংবার, এটা দেখে ও নিজের পুরুষাঙ্গ মনের খায়েসে চুলকানোর মতো আনন্দ পাচ্ছিল! কিংবা-”“আবার কিংবা!”“কিংবা পুলিশকে জোডিয়াক মিসলিড করতে চেয়েছিল। পুলিশ আর প্রেস যদি ওর সাইফার আর চিঠিতেই মত্ত থাকে, তাহলে ও নিজেকে ঢাকার সুযোগ পাবে সেই সুযোগে!”“বুঝলাম। তার সেটার সঙ্গে তাহমিনা হায়াতের খুনের সম্পর্ক কী?”নির্জন হেসে বলল, “এজন্যেই আমার একজন ডক্টর ওয়াটসনের দরকার, সবটা খুলে বললে গাম্ভীর্য টেকে?”“এসেছে আমার শার্লোক! করেন তো পরকিয়ার রহস্য সমাধান- তার জন্য আবার সাগরেদ চাই!”, বলল রুপা, “যা বলছিলেন খুলে বলুন!”সোজা হয়ে বসল এবারে নির্জন, টিকঠিক করতে থাকা দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল, “মনের সবক’টা জানালা খুলে দাও, ওকে? এবার ভাবো কারণগুলো। আমাদের কিলার এটেনশন সিক করতে অথবা পুলিশকে মিসলিড করতে কিংবা খুনের প্যাটার্ন বাতলে নিজেকে ধরিয়ে দিতে অথবা গেইম খেলতে কবিতাটার লাইনদুটো রেখে যেতে পারে না কি? এটা কি এতোটাই অসম্ভব?”রুপা জবাব দিল না কোন।“এই লিডটা ধরে আমরা যদি এগোই না, হয় কিলার পর্যন্ত পৌঁছব নয়তো চলে যাব উল্টো পথ ধরে টেকনাফের বদলে তেঁতুলিয়ায়!”, বলল নির্জন, “এই খুনের ইনভেস্টিগেশনের সূত্র এই কবিতার লাইনদুটোই, অন্তত আমাদের কাছে!”রুপা কিছু বলার আগেই ফোনটা বেজে উঠল নির্জনের। নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে, ফোন কানে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।“তোমার ফোনে কল ঢুকছিল না কেন? দুপুর থেকে কতবার ট্রাই করলাম!”১৩সন্ধ্যার মেদুর অন্ধকারে কুয়াশা মিশছে একটু একটু করে- লনের ফ্লাডলাইটের আলোয় ভাসছে কুয়াশা, ট্রাকের চাকার পেছনের উড়ন্ত ধূলিকণার মতো। দূরের চা বাগানের ভেতরের বজ্রাহত নিথর সান্ত্রী গাছগুলো দাঁড়িয়ে- বোঝা যাচ্ছে শুধু তাদের কালো অবয়ব। একটা খেঁকশিয়াল ডেকে উঠল কাছে কোথাও।লনে এখন দাঁড়িয়ে নেই কেউ। সকালে তাহমিনা হায়াতের খুনের পর অনেকেই চলে গিয়েছে হোটেল ছেড়ে; যারা থেকে গিয়েছে সাহস করে, তারা এখন রুমের ভেতর উষ্ণ কম্বলের নিচে। সিলেটে বিরাজ করছে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, যুগান্তরের খবর- তার রেশ পড়েছে শ্রীমঙ্গলেও।“আজ পূর্বাচলে একটা ফ্ল্যাটের বায়না করে এলো মোমিন, জানো? দুই কোটি টাকা ডাউনপেমেন্ট। কিছুদিনের মধ্যেই ওখানে শিফট করব!”ফোনের ওপাশে ভ্যাজরভ্যাজর করে যাচ্ছে সাইফা, সেদিকে নির্জনের খেয়াল নেই। ও তাকিয়ে আছে এল শেইপড বিল্ডিংটার তৃতীয় ফ্লোরটার দিকে- তাহমিনা হায়াতের রুমের দরজা খোলা- কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে সামনের বারান্দায়।“তোমার স্বামীকে এভাবে টাকা ওড়াতে বারণ কর, সাইফা। রিটায়ারমেন্টের পর নির্বাচন করতে হবে না? দল থেকে নমিনেশন কিন্তু ১০/১৫ কোটিতেও এখন হচ্ছে না!”পার্লামেন্টে অবসরপ্রাপ্ত সচিব আর সেনাসদস্যের আধিক্য মাথায় রেখে খোঁচাটা মারল নির্জন, সাইফা ধরতে পারল না।বলল, “নির্বাচন তো করবে কিন্তু কোন দলের হয়ে করবে, সেটা হলো চিন্তার কথা!”পুলিশের একটা ভ্যান সাইরেন না বাজিয়ে এসে দাঁড়াল হোটেলের গেটে। পুলিশের বড় কোন কর্তাই হবেন- একজন সিপাই অথবা কন্সটেবল খুলে দিল ভ্যানের গেট তার নামার জন্য- গটগট করে চলে গেলেন তিনি রিসেপশনের দিকে। তাহমিনা হায়াতের রুমেও সৃষ্টি হলো কিছুটা চাঞ্চল্য। যে পুলিশটা রেলিং এ হেলান দিয়ে সিগারেট ফুঁকছিল, সে আধফোঁকা সিগারেটটা ফেলে দাঁড়াল সোজা হয়ে।“এত চিন্তার কী আছে? তোমার স্বামীর তো আর আদর্শ টাদর্শ নেই। যে দল নমিনেশন দেবে, সে দলের প্রতীকে নির্বাচন করবে। এখন আদর্শের রাজনীতি কেউ করে?”পুলিশের সেই কর্তাটাকে নির্জন এবারে দেখল তিন তলায়, হাঁটছেন দৃপ্ত ভঙ্গিতে- তার পেছনে আরো কয়েকজন পুলিশ চলেছে মোসায়েবের মতো। সবার পেছনে মিস্টার ব্যানার্জি; বিনয়ের মূর্ত প্রতীক ব্যানার্জি হাতদুটো পেছনে রেখে হাঁটছে ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের পেছন পেছন চলা তেলবাজ ফার্স্টবয়ের মতো।“এত ঠাণ্ডা! এই ঠাণ্ডায় চোদা দরকার ছিল আর তুমি বাল কত দূরে! ধুর!”ঠাণ্ডার কথায় নির্জনের খেয়াল হলো, থরথর করে কাঁপছে ও। গোসলের পর আর জ্যাকেট চাপায়নি, গায়ে শুধু একটা শার্ট, তার নিচে তাঁতের গেঞ্জি।পুলিশের কর্তাটি ঢুকল তাহমিনা হায়াতের রুমে। নির্জনের ঠোঁটে ফুটে উঠল ব্যঙ্গাত্মক হাসি। “কিপ দ্যা ক্রাইম সিন আনচেঞ্জড”- পড়েছিল ও পুলিশিং এর উপরে লেখা একটা বইয়ে। খুনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে, স্পটের ক্ষতি না করা, খুনের সময় যেমন ছিল, তেমনই রাখা- পুলিশের প্রধানতম দায়িত্ব- অন্তত ফরেনসিক এভিডেন্স সংগ্রহ না হওয়া পর্যন্ত। আর সরকারের এই মহান চাকরটি গটগট করে ঢুকে পড়লেন ক্রাইম সিনে, সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে।তাহমিনা হায়াতের ঘরের দিকে চোখ রেখেই বলল নির্জন, ফোনের ওপাশে থাকা সাইফাকে, “দূরে আছি বলেই তো আমার অভাববোধ করছো, সাইফা। কাছে থাকলে, মোমিন সাহেবের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে যেতাম!”আরো বেশ কয়েকমিনিট তিন তলার আলোকিত অভিশপ্ত ঘরটার দিকে নজর রেখে, কাঁপতে কাঁপতে অপ্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ে কথা বলে রুমে ফিরে এলো নির্জন।নির্জনকে দেখে রুপা বলল, “সংবাদ২৪৭ তাহমিনা হায়াতকে নিয়ে নিউজ করেছে। একটা টিভি চ্যানেলও করেছে নিউজ, দেখলাম ইউটিউবে!”রুমের ভেতরের উষ্ণতায় নির্জনের কাঁপুনি কমল কিছুটা। হাতের আঙ্গুলগুলো জমে গিয়েছে যেন- আর কিছুক্ষণ ঠাণ্ডায় দাঁড়িয়ে থাকলে নির্ঘাত হাত থেকে ফোনটা পড়ে যেত।“পড়ে শোনাও”, বলল নির্জন যান্ত্রিক কণ্ঠে।স্ক্রিনের দিকে চোখ রেখে পড়তে লাগল রুপা স্পষ্ট উচ্চ স্বরে-“শ্রীমঙ্গলে অধ্যাপিকার রহস্যজনক মৃত্যু!”“শ্রীমঙ্গলের অদূরে হোটেল নিসর্গের একটি রুমে আজ সকালে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, মৃতার নাম তাহমিনা হায়াত (৩৮), তিনি ঢাকার ইউরেশিয়া ইউনিভার্সিটি ওফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজির অধ্যাপিকা ছিলেন।বেশ কয়েকদিন ধরে সেই হোটেলে অবস্থান করছিলেন তাহমিনা হায়াত। আজ সকালে হোটেলের এক কর্মচারি তার নির্দেশমত সকালের খাবার পৌঁছে দিতে গেলে, তাকে মৃত আবিষ্কার করে। পরে খবর পেয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।এই খুনের ব্যাপারে শ্রীমঙ্গলে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। খুনের ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) পলাশ রেহমান বলেন, “গলায় ছুরি চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হোটেলে পৌঁছে তার নগ্ন দেহ উদ্ধার করি। হত্যা করার আগে তাকে রেইপ করা হয়েছে কিনা সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। শরীরের অন্য কোথাও কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে, বাকিটা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে জানা যাবে!”এঘটনায় এপর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি কাউকে। পলাশ রেহমান বলেন, “কাউকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। হোটেল কতৃপক্ষ ও হোটেলের কয়েকজন রেসিডেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।”এ বিষয়ে ইউরেশিয়া ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজির উপাচার্যের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের তরফ থেকে এপর্যন্ত কোন মন্তব্য পায়নি সংবাদ২৪৭।”আরো বেশ কয়েকটি নিউজপোর্টালের খবর পড়ে শোনাল রুপা, সবগুলোতেই প্রায় একই কথা লেখা।“কী বুঝলেন? কী মনে হচ্ছে?”, জিজ্ঞেস করল রুপা।নির্জন এর মধ্যেই ঢুকে গিয়েছে লেপের নিচে- বলল, “ঠিক এই কাজটাই তোমাকে করতে হবে, রুপা!”“মানে?”“এটা যদি সত্যি সিরিয়াল কিলারের কাজ হয়ে থাকে, যে সম্পর্কে আমি অনেকটাই নিশ্চিত, তাহলে একটা এমও- মোডাস অপারেন্ডি- সোজা বাংলায় অপরাধের নির্দিষ্ট ধরণ, পাওয়া যাবেই।““প্রত্যেক খুনের ক্ষেত্রেই কি এমও থাকে?”, জিজ্ঞেস করল রুপা।“আরে না, বোকা। বেশিরভাগ খুনই তো হয় ঝোঁকের মাথায়, এমেচারদের দ্বারা। তাদের আবার ধরণের কী আছে? সাধারণত যারা সিরিয়াল অফেন্ডার, ধরো ডাকাত কিংবা চোর, তাদের প্রত্যেককের একটা ধরণ আছে অপরাধের; সিরিয়াল কিলারদের তো থাকেই!”থামল নির্জন। তারপর জিজ্ঞেস করল আবার, “তাহমিনা হায়াতের খুনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো কোনগুলো, একটু বলত।”ল্যাপটপটা কোল থেকে সরিয়ে রেখে ভাবল কিছুক্ষণ রুপা। তারপর বলল, “গলায় ছুরির একটা মাত্র পোঁচ, তাহমিনা হায়াতের নগ্ন দেহ, হোটেল রুম আর কবিতার লাইনদুটো।”“দারুণ”, হাতের আঙ্গুলগুলো নিজের মাথায় চালিয়ে বলল নির্জন, “গলায়, ঠিক ভোকাল কর্ডের ওপর ছুরির পোঁচ, এটা মোডাস অপারেন্ডি হতে পারে। এমেচারের কাজ এটা নয়, খুনের উত্তেজনায় তাহলে আরো কয়েক জায়গায় কোপ মারত। কিলার একটা মাত্র ছুরির পোঁচ দেয়ার পর, আর কোন আঘাত করার প্রয়োজনবোধ করেনি। হয়তো বসে বসে নিবিষ্ট হয়ে তাহমিনা হায়াতের মৃত্য যন্ত্রণা উপভোগ করেছে। এটা কোনভাবেই ওর প্রথম খুন হতে পারে না, ঠিক এমন স্টাইলেই ও আরো খুন করেছে!”“রেইপের ব্যাপারটা আপনি মাথাতেই আনছেন না কেন?”, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রুপা।“আনছিনা কারণ”, বলতে লাগল নির্জন, “তাহমিনা হায়াতের বুকে, পেটে, স্তনে কোন আঙ্গুলের বা হাতের ছাপ আমি পাইনি। রেইপ করলে তাহমিনা হায়াতের সারা দেহে তার হাতের ছাপ থাকত। আর এটা যদি সত্যিই সিরিয়াল কিলারের কাজ হয়ে থাকে, তবে ও রেইপ করার মতো ভুল করবে না।“রুপা অধৈর্য হয়ে বলল, “নগ্ন হওয়ার ব্যাপারটাকে কীভাবে ব্যখ্যা করবেন?”“প্রশ্নটা সেখানেই”, বলল নির্জন। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলল, “এটাকে যে ব্যখ্যা করা যায় না, তা নয়। এক্ষেত্রে টেড বান্ডিকে টেনে আনতে হয়।““এর নামটা শুনেছি। ইউটিউবে একে নিয়ে ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম বোধহয়।““শোনারই কথা”, বলল নির্জন। “টেড বান্ডি হয়তো আমেরিকার ইতিহাসের মোস্ট ইনফ্যামাস সিরিয়াল কিলার! ও ছিল প্রচণ্ড সুদর্শন ও বুদ্ধিমান। স্কলারও। আইন নিয়ে পড়াশুনা করেছে। টেড ওর দৈহিক সৌন্দর্য আর স্মার্টনেসকে কাজে লাগিয়ে মেয়েদের পটাত, তারপর তাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলত। ক্যানিবেলও ছিল, একপ্রকার!”“ইয়াক! মাংস খেত?”“হ্যাঁ। ধরা পড়ার পর টেড বান্ডির ফ্রিজে বেশ কয়েকজন নারীর দেহের অংশ পাওয়া যায়!”“ভাবা যায় না!”, বলল রুপা।“সাইকোপ্যাথেরা সিডাকসান বিদ্যা ভালোই জানে। অনুতাপ থাকে না বলে, সফলতার জন্য যা কিছু করতে পারে ওরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফলও হয়। টেড বান্ডি আইনের ছাত্র ছিল। ওকে ধরা হলে কোর্টে নিজেকে নিজেই ডিফেন্ড করেছিল টেড। আর এত ভালো ডিফেন্ড করেছিল নিজেকে যে, পড়েছি, জাজ নাকি মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “You’d have made a good lawyer.. I’d have loved to have you practice in front of me. But you went another way, partner.””“অবিশ্বাস্য!”“আমাদের কিলার এমন নয় কীভাবে বুঝলে? হয়তো তাহমিনা হায়াতকে ও স্টাডি করেছে, তাকে পটিয়েছে, সিডিউস করেছে, তারপর এসেছে এই রুমে। হয়তো তাহমিনা হায়াত নিজেই তাকে তার রুমে ইনভাইট করেছে!”“মাথা ঘুরছে আমার। ব্যাপারটাকে আপনি এত কমপ্লিকেটেড করে ফেলছেন কেন?”“আমি কঠিন করছি না, রুপা। ব্যাপারটা কমপ্লিকেটেডই, আমি ব্যাখ্যা করে সহজ করতে চাইছি!”ফোন আবারও বেজে উঠল নির্জনের। সুপ্রভার নামটা স্ক্রিনে দেখে রুপা বলল, “প্রভাপু আমার বদলে এখানে এলেই আমাকে লাশটা দেখতে হতো না!”ফোনটা রিসিভ করে নির্জন বলল, “কিছু পেলে?”সুপ্রভাকে ভালোমতোই চেনে নির্জন। তাহমিনা হায়াতের খুনের পর ও যে চুপ করে বসে থাকবে না, সে ব্যাপারে নির্জন নিশ্চিন্ত। এতক্ষণে হয়তো তাহমিনা হায়াতকে নিয়েই ঘাটছিল সুপ্রভা, কিছু একটা নজরে আসায় ফোন দিয়েছে নির্জনকে।“আমি তাহমিনা হায়াতের ফেসবুক আইডিটা ঘাটছিলাম। একটা ব্যাপার নজরে এলো। ২০১৭ সালে মাদ্রাসায় শিক্ষকের দ্বারা শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে একটা পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। পোস্টটার কেমন্ট সেকশনে অনেকে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। ধর্ষণের হুমকিও ছিল।““হুমকি ধর্ষককে না দিয়ে যে প্রতিবাদ করল তাকেই দিল!”“টিপিকাল ব্যাপার। মেয়েদের বেলায় যেমন পোশাকের দোষ ধরা হয়। আসল কথায় আসি- বেশ কয়েকজন হুমকি দিয়েছিল। যারা হুমকি দিয়েছিল, তাদের সবার প্রোফাইল চেক করেছি। তাদের মধ্যে একজনের বাড়ি শ্রীমঙ্গল; নাম জিহাদুল ইসলাম!”“ইন্টারেস্টিং!”, বলল নির্জন। “আচ্ছা তুমি আমাকে ঐ ছেলের আইডির লিংকটা পাঠিয়ে দাও!”সুপ্রভার কথাটা রুপাকে বলতেই ও বলল, “সরাসরি ডেথ থ্রেট দিল আর পুলিশ কিছু করল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোথায় থাকে এসব ক্ষেত্রে?”নির্জন জবাবে বলল না কিছুই। চোখের উপরের দিকটা দপদপ করছে ওর, মনে হচ্ছে কপালে হাতুড়ি মারছে কেউ। তখন ওভাবে শুধুই শার্ট গায়ে বাইরে গিয়ে ঠিক করেনি নির্জন, বুঝল- ঠাণ্ডা লাগলেই মাঝেমাঝে এমন হয় ওর। মাথাব্যথার উপশম নিকোটিনে হয় না জেনেও, একটা সিগারেট জ্বালল। অভ্যাসবশত।“আপনি এখনো সিরিয়াল কিলার থিওরিতেই পড়ে আছেন?”, ঠাট্টা করল রুপা।“হ্যাঁ!”, বলল নির্জন। “মৌলবাদীরা এভাবে খুন করে না!”“সেটা ঠিক অবশ্য। ওরা পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে পালায়। এত নিখুঁতভাবে ওরা কাউকে মারেনি!”“একদম”, বলল নির্জন। “ধর্মানুভূতি লাগলে ওরা ম্যানিয়াক হয়ে যায়। আর তখন অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করেই কোপায়। তাহমিনা হায়াতকে যদি কোন ফান্ডামেন্টালিস্ট ফ্যানাটিকই মারত তবে তাকে হোটেল রুমে না মেরে বাইরে কুপিয়ে মারত। এই স্টাইলটা ওদের সাথে যায় না!”“কী যেন নাম বলল, প্রভাপু? জিহাদুল ইসলাম? ও তাহলে সাসপেক্ট লিস্ট থেকে বাদ?”“আমার সাসপেক্ট লিস্ট থেকে বাদ বটে। তবে পুলিশ ওকে খুঁজে বের করবে নিশ্চয়ই। খুনটা সে করলে ধরা পড়বেই। কিন্তু আমি সেই দিকটা ইনভেস্টিগেট করতে চাইছি, যে দিকটায় পুলিশ নজর দেবে না!”সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে নির্জন তাকাল রুপার দিকে। রুপা আবারও ল্যাপটপটা চালু করেছে, তার উজ্জ্বল আলোয় রঙিন আভা পড়েছে মুখে; রুপার চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ, কপালে বিরক্তি, ভেজা ঠোঁটদুটো রাগে বিড়বিড় করছে যেন।সারাটা দিনের কথা ভাবতে লাগল নির্জন সিগারেটে ভেসে ভেসে। “কত দীর্ঘ দু-জনার গেল সারাদিন, আলাদা নিঃশ্বাসে-“ কার কবিতা? অমিয় চক্রবর্তী? সত্যিই দিনটা দীর্ঘ হলো খুব। কত অল্প সময়ে ঘটে গেল কতকিছু! পাল্টে গেল কতকিছু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে!ঘড়িতে কেবল সাড়ে সাতটা। শীতে সুবিশাল রাতের বয়স মাত্র দুঘণ্টা। গতকাল এই সময়েই লনে ফ্লাড লাইটের আলোয় ব্যাটমিন্টন খেলছিল কয়েকজন; কেউ কফি কেউ সিগারেট হাতে হাস্যোজ্জ্বল উচ্চ কণ্ঠে আড্ডা মারছিল অনেকে। আর আজ কী নীরব! একটা রাত যেন চুষে টেনে নিয়েছে সব আনন্দ হৈ হুল্লোড় তার অসীম কৃষ্ণগহ্বরে!আটটা! ঠিক সকাল আটটায় এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙ্গেছিল নির্জনের। তারপর জাগিয়েছিল ও রুপাকে। রুপার যোনির শরাবান তাহুরার স্বাদ নিচ্ছিল যখন, শুনেছিল সেই বুক হিম করা আর্তচিতকার! ক’টা বাজছিল তখন? সাড়ে আটটা? আত’টা পনেরো?“কী দীর্ঘ রাত শীতের!”“হ্যাঁ?”আত্মমগ্ন চিন্তার ছটা কখন মুখে উচ্চারিত হয়েছে বুঝতে পারেনি নির্জন। রুপার প্রশ্নে সচকিত হলো ও। বলল, “লাশটাকে পাওয়া গেছে আটটার পর। কতোটা সময় পেয়েছে কিলার, ভাবতে পারো?”“অনেক সময়!”, স্ক্রিন থেকে চোখ না সরিয়ে বলল রুপা। “পালানোর সময় তার নিশ্চয়ই কোন প্রবলেম হয়নি। এত শীতে এমন পাহাড়ি রাস্তায় কারো থাকার কথা নয়- কারো চোখে পড়ে যাওয়ার ভয় ছিল না একদম!”প্রায় ফুরিয়ে আসা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে রুপার দিকে ফিরল নির্জন। রুপার এই ক্লান্ত মুখের সঙ্গে ওর নির্মল বাসন্তী মুখের তুলনা করে মায়া হলো ওর। খুব বাজে গেল ওর দিনটা- সাধারণ একটা ইনভেস্টিগেশনে এসে ওকে জড়িয়ে পড়তে হলো এমন ফ্যাসাদে!রুপার কাঁধে মাথা রাখল নির্জন। রুপা বালেশে হেলান দিয়ে বসে ছিল- ল্যাপটপটা সরিয়ে রাখল ও, নির্জনকে এভাবে কাছে ঘেঁষতে দেখে। বলল, “কী?”“তুমি না চাইলে তোমাকে এর মধ্যে জড়াব না, রুপা। আমি একাই পারব!”রুপা নির্জনের মুখের বেশ কয়েক সপ্তাহ না কামানো দাড়িতে হাত বুলিয়ে দিল। বলল, “আমি চেষ্টা করব আপনাকে সাহায্য করতে!”দু’পা দিয়ে নির্জন জড়িয়ে ধরল রুপার কোমর। একটা হাত পাছায় রেখে ঠোঁটের কাছে ঠোঁট এনে বলল, “সকালের অসম্পূর্ণ কাজটা সম্পূর্ণ করা দরকার!”“করুন! কে বারণ করছে?”রুপার নরম পাছা খামচে ধরল নির্জন। গুঙিয়ে উঠল রুপা। নির্জন বাম হাতে স্তন মর্দন করতে করতে বলল, “আমাদের “ফিরে এসো, চাকা” কাব্যের তারিখগুলো মিলিয়ে মিলিয়ে গুগোলে সার্চ করতে হবে রুপা। এই তারিখের আর কোন খুন হয়েছে কিনা বের করতে হবে খুঁজে!”নির্জনের প্যান্টের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিল রুপা। হাতে নিল ওর ক্রমশ শক্ত হতে থাকা বাড়া। বাড়ায় হাত বুলিয়ে বলল রুপা, “এখন ওসব বাদ দিন না!”বাদ দিতেই চেয়েছিল নির্জন- তাহমিনা হায়াতের ব্যপারটা মাথা থেকে দূরে সরাতেই রুপার দেহে আশ্রয় নিয়েছে সে, কিন্তু কোনোভাবেই চিন্তাটাকে সরিয়ে দিতে পারছে না।রুপা নিজেই স্তন অবমুক্ত করে দিল ওর নির্জনের মুখের সামনে, নির্জনের মাথাটা ঠেসে ধরল স্তনের মাথায়। ডান স্তনের বোঁটাটা মুখে পুড়ল নির্জন, দু ঠোঁটের মাঝে নিয়ে চুষতে লাগল ও। নির্জনের লালায় পিচ্ছিল হয়ে উঠল রুপার বৃন্তাংশ। বাম হাত রুপার পাজামার ভেতরে পাঠিয়ে অনুভব করতে লাগল নিম্নাংশের উষ্ণ কোমলতা। নির্জনের হাতকে জায়গা করে দিতে দুপা ফাঁক করল রুপা- নির্জন হাতটা এনে রাখল ওর যোনির ওপর। বালের জঙ্গলে পথ হারাতে লাগল ওর আঙ্গুল!“উম্মম… ভালো লাগছে!”, অস্ফুট বলল রুপা।রুপার যোনি ভিজতে শুরু করেছে এর মধ্যেই- রগড়ে দিল নির্জন। তারপর যোনি-পাপড়ি মেলে ধরল দু’আঙুলে- মধ্যমা আর অনামিকা ঢুকিয়ে দিল ভেতরে।“উফফ…নাহ… এখন ফিংগারিঙ্গে পোষাবে না… উম্মম… চুদুন আমাকে…প্লিজ!”সময় নিতে চেয়েছিল নির্জন; ইচ্ছে ছিল রুপার দেশের আনাচে কানাচে চোরাগলিতে ঘোরাঘুরি করে পাড় করবে ঘণ্টাখানেক- সে ইচ্ছের গুঁড়ে বালি।যোনি থেকে হাত সরিয়ে দ্রুত নিজের প্যান্টটা খুলে ফেলল নির্জন। রুপার প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত নামিয়ে নিজেকে ওর দুপায়ের মাঝে স্থাপন করল নির্জন। নির্জনের ব্যালাস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপনের জন্য প্রস্তুত!রুপা নির্জনের পূর্ণ উত্থিত বাড়াটা ডান হাতে নিয়ে যোনিতে লাগিয়ে দিল- নির্জন সামান্য কোমর চালাতেই পিচ্ছিল আঁধার সুড়ঙ্গে ঢুকে ট্রেন- বেজে উঠল গার্ডের বাঁশি!“উফফফ… আস্তে আস্তে ঢোকান…”ধিমা তালে, মাঝারি লয়ে কোমর ওঠানামা করতে লাগল নির্জন। রুপা নিজেই ওর প্যান্টটা পুরোটা খুলে ছুঁড়ে ফেলেছে মেঝেতে। দুপায়ের বেড়িতে জড়িয়েছে ও নির্জনের কোমর, আর দুহাত রেখেছে ওর পাছায়।দ্রুত না ঠাপালেও জোড়াল ঠাপ দিচ্ছে নির্জন- বাড়াটা পুরো বের করে গেঁথে দিচ্ছে পূর্নশক্তিতে- প্রতিঠাপে আর্তনাদ করছে খাটটা।“আপনি এত ভালো চুদেন কেমন করে? উম্মম… কতজনকে চুদেছেন এপর্যন্ত… আঃ… হ্যাঁ?”হাসি পেল নির্জনের। বাংলা একটা পানুতে এমন কথা শুনেছিল ও। পানুর মেয়েটি মদ্যপ অবস্থায় চোদা খেতে খেতে ছেলেটিকে ঠিক এই প্রশ্নটিই করেছিল! কনসেন্ট ছাড়া ভিডিও করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়া- ব্যাপারটাকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না সে। কিন্তু তেমন ভিডিও দেখতে ওর খারাপ লাগে- এটাও বুকে হাত দিয়ে ও বলতে পারবে না! “আম আ ফাকিং হিউম্যান বিইং আফটার অল!”, মনে মনে বলল নির্জন।“কী? বলছেন কেন কেন?”, হিসহিসিয়ে প্রশ্ন করে রুপা।নির্জন জবাব দেয় না। দু হাতে খামচে ধরে ও রুপার দুলতে থাকা স্তন!“আউচ! ছিঁড়ে ফেলবেন নাকি আমার দুধদুইটা!”রাতের খাবারের পর ল্যাপটপের সামনে বসল ওরা। রাত জাগতে হতে পারে ভেবে নির্জন রিসেপশনে বলে একটা ফ্লাক্সে কফি আনিয়ে নিয়েছে; সাথে হালকা কিছু খাবার। দশটা বাজে কেবল- ঢাকায় থাকলে হয়তো এতক্ষণে বাইরে থেকে ফিরত নির্জন। কিন্তু এখানে দশটা মানে অনেক রাত। জেলা কিংবা উপজেলা শহরগুলো রাত দশটার মধ্যেই শুনশান হয়ে যায়- রাস্তায় কুকুর ডাকে। এখন হয়তো চিত্র পাল্টেছে কিছুটা, কিন্তু এই পাহাড়ি জায়গায় তার প্রভাব পড়েনি।রুপা বলল, “কীভাবে কী করব এখন?”এখন বেশ উৎফুল্ল লাগছে রুপাকে- কিছুক্ষণ আগের আর্থস্যাটারিং অর্গাজমের প্রভাবেই হয়তো- মুখে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা, চোখদুটোয় প্রত্যাবর্তন করেছে সহজ কৌতূহল।নির্জন বলল, “গুগোলের সার্চবারে ‘খুন’ লিখে সার্চ করতে হবে। কয়েক হাজার রেজাল্ট পাব এতে। কিন্তু ঘাবড়াবার প্রয়োজন নেই!”“তাহলে?”“আমাদের প্রয়োজন ‘ফিরে এসো, চাকা” কাব্যের তারিখগুলোতে আর কোন খুন হয়েছে কিনা সেটা জানা। আমরা শুধু সেই তারিখের খবরগুলোই পড়ব। সার্চ রেজাল্ট এলে আমরা নিউজ অপশনে ক্লিক করব। তারপর “টুলসে” ক্লিক করলেই নির্দিষ্ট তারিখের খবর পাওয়ার অপশন চলে আসবে। সেখানে সাল আর তারিখ বসিয়ে দিলেই সেই দিনে কোন খুন হয়েছে কিনা সারাদেশে, জানা যাবে। দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি!”নির্জন ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ এর সবগুলো খুন সম্পর্কিত খবর বের করল সার্চ করে।রুপা বলল, “প্রতিদিন সারাদেশে কম তো খুন হয় না। ঐ তারিখগুলোতে আরো অনেক খুব হতে পারে। আমাদের কিলারের খুন কিনা সেটা বুঝব কী করে?”বিরক্ত হলো নির্জন এই প্রশ্নে। বলল, “এতক্ষণ কী বোঝালাম তোমাকে তাহলে? এমও- মোডাস অপারেন্ডি মিলিয়ে। ২১ সেপ্টেম্বর ধরো ঢাকা কিংবা রংপুরে কুপিয়ে এক গৃহবধূকে হত্যা করেছে স্বামী কিংবা স্বামীকে স্ত্রী- এটা তো আমাদের কেইসে রিলেভেন্ট নয়। আমাদের কিলারের হত্যার স্টাইলের সাথে মিললেই তবে সেটাকে পড়ব!”“তবুও তো কম নিউজ পড়তে হবে না!”, বলল রুপা। “কতগুলো কবিতা আছে, কতগুলো তারিখ আর শুধু এবছরের খবর খুঁজলে তো হবে না। হয়তো গত দশবছরের খবর ঘাঁটতে হবে!”নির্জন হাসল। বলল, “ইনভেস্টিগেশন তো শুধু সাসপেক্টের উপর নজর রাখা নয়, রুপা। পেপারওয়ার্কও ইনভেস্টিগেশনের অংশ। আর কোন উপায় নেই- করতেই হবে। আর ভাবো, আমরা এই কেইস ইন্টারনেটের যুগে না পেয়ে শার্লোক হোমস কিংবা ব্যোমকেশের যুগে পেলে কী হতো! তখন তো আর একটা ক্লিকেই সব খবরের কাগজের নিউজ সামনে চলে আসত না। পত্রিকা অফিসে বসে প্রত্যেকটা দিনের খবর ঘাঁটতে হতো!”“আর সে দায়িত্ব আমাকে দিলে আমি সেদিনই ইস্তফাপত্র দিয়ে দিতাম আপনাকে!”, বলল রুপা শক্ত মুখে।স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালে লেপ্টে থাকা ময়লা শামুকের গতিরে রাত গড়িয়ে চলতে লাগল। বর্ষার অঝোর বৃষ্টির পর যেভাবে টিপটিপ করে আকাশ কাঁদে, সেভাবেই শিশির ঝরছে বাইরে। এতক্ষণ করিডোরে মাঝেমাঝেই সার্ভিস বয়দের পায়ের মৃদ্যু আওায়াজ আসছিল- এখন বন্ধ হয়েছে তাদের আসা-যাওয়াও। এঘরের স্থায়ী বাসিন্দা মোটা ধেড়ে টিকটিকিটা শুধু ভাবলেশহীন ঝুলে আছে দেয়ালে ঝুলন্ত টিকটিক করতে থাকা ঘড়িটার পাশে খাদ্যের আশায়। রুপা ও নির্জন তাকিয়ে ল্যাপটপের জ্বলজ্বলের স্ক্রিনের দিকে- চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে খবরের হেডলাইনগুলোর উপর। দেশে খুনের হার এতো বেশি, আগে ভাবেনি নির্জন। প্রতিদিনই প্রায় দেশের আনাচে কানাচে হত্যা কিংবা হত্যাচেষ্টা হয়েছে একাধিক জায়গায়। ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন আর বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডের কারণ দাম্প্যত্যকলহ অথবা জমি সংক্রান্ত বিরোধ যার সঙ্গে এই কেইসের দূরতম সম্পর্কও নেই।রাত সাড়ে এগারোটায় যখন নির্জন প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছে আর ধরিয়েছে আরেকটা সিগারেট, তখন রুপা বলল, “এই খবরটা দেখুন। ২০১২ সালের ২৬ আগস্টের খবর-”ক্লান্তিতে চোখ বুজেছিল নির্জন- চট করে তাকাল স্ক্রিনের দিকে, সিগারেটে টান দিয়ে পড়তে লাগল, “কাওরান বাজারের হোটেল গ্রাসল্যান্ড থেকে ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার, হোটেল ম্যানাজার ও দুই কর্মচারী আটক!”নিউজটায় ক্লিক করল রুপা। দেশের একটা নির্ভরযোগ্য সংবাদ সংস্থার খবর, খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ নেই কোন।খবরটা নির্জনকে শুনিয়ে পড়তে লাগল রুপা।“আজ ভোরে রাজধানীর কাওরানবাজার এলাকার হোটেল গ্রাসল্যান্ডে এক তরুণীর মৃতদেহ আবিষ্কার করে পুলিশ। খুনি সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় হোটেলের ম্যানাজার কল্লোল গোমেজ ও শান্ত ইসলাম নামের এক কর্মচারীকে।পুলিশের সূত্র থেকে জানা যায়, তরুণীকে হত্যার পর ম্যানাজার কল্লোল গোমেজ ও আব্দুর রহমানকে মাঝরাতে মৃতদেহটি সরাতে দেখে ডিউটিরত ট্রাফিক পুলিশ থানায় খবর দিলে তাদের হাতেনাতে ধরা হয়।এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) মধুসূদন দত্ত জানান, “আমরা মাঝরাতে খবরটি পাই। হাতেনাতে ধরা হয়েছে তাদের। যদিও তারাই খুনটা করেছে কিনা সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই এখনো। তারা বলছে, গতকাল সন্ধ্যায় একজন এসে একটি রুম এক রাতের জন্য ভাড়া নেয়। মাঝরাতে সন্দেহ হলে ওরা রুমের ভেতরে ঢুকে মৃতদেহটি আবিষ্কার করে। ভয়ের চোটে তারা মৃতদেহটি সরানোর ব্যবস্থা করে। এটা তাদের বক্তব্য- সত্যটা হয়তো ফারদার ইনভেস্টিগেশনের পর জানতে পারব আমরা।”তরুণীর হ্যান্ডব্যাগ থেকে পাওয়া আইডিকার্ড থেকে মেয়েটির পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। নাম হালিমা সিদ্দিকা। সে ইডেন মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী।“আরো একটি নিউজপোর্টাল এই মৃত্যুর খবর ছেপেছে “হোটেল গ্রাসল্যান্ডে ইডেল মহিলা কলেজ শিক্ষার্থীর নগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার, আটক দুই!”ক্লিকবেইট শিরোনাম জেনেও ক্লিক করল নির্জন। এখানে পাওয়া গেল কিছু নতুন তথ্য-“ঢাকার কাওরান বাজার এলাকার হোটেল গ্রাসল্যান্ডে ইডেন কলেজের এক শিক্ষার্থীর নগ্ন মেতদেহ আবিষ্কার করে পুলিশ। আটক করে সন্দেহভাজন দুজন হোটেল কর্মচারীকে।জানা যায়, মৃতার নাম হালিমা সিদ্দিকা (২১), সে ইডেন মহিলা কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাকে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে হোটেল রুমে। হোটেলের দুই কর্মচারী মৃতদেহটি আবিষ্কার করে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করলে ধরা পড়ে যায় পুলিশের হাতে।সন্দেহভাজন আটকৃতরা হলেন হোটেলের ম্যানাজার কল্লোক গোমেজ ও শান্ত ইসলাম। এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানার ওসি জানান, “এ ধরণের ঘটনা অনভিপ্রেত। আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। খুনি ধরা পড়বেই!”নির্জন বলল, “এমও মিলে গেল যে!”রুপা বলল, “আপনি নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে যে এটা আমাদের কিলাররেই কাজ?”নির্জন সিগারেটে টান দিয়ে বলল, “নিশ্চিত মোটেও নই তবে এই নিউজটা ইন্ট্রিগিং। এই পেইজটা সেইভ করে রাখো।“সার্চবারে ফিরে গিয়ে অন্য একটা তারিখ বসাল রুপা, শুরু করল ২০১০ সাল থেকে।রাত ভোর হওয়ার আগে মোট ৬ টা কেইস খুঁজে বের করল নির্জন যার সঙ্গে তাহমিনা হায়াতের কেইসের পুরোটা না হলেও সত্তরভাগ অন্তত মিল আছে।নির্জন বলল, “আমাদের ঢাকায় ফিরতে হচ্ছে কাল, রুপা। সবগুলো ঘটনাই ঘটেছে ঢাকায়। আমরা শ্রীমঙ্গলে বসে এর কিনারা করতে পারব না!”“আমার হামহাম দেখা তাহলে হলো না এবারে!”, হতাশ হয়ে বলল রুপা, ল্যাপটপ ব্যাগে ঢুকিয়ে।“হামহাম হারিয়ে যাচ্ছে না, রুপা। কিন্তু আমাদের হোটেলকিলার ধরা না পড়লে হয়তো আরেকজনের প্রাণ হারিয়ে যাবে!”আলো নিভিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই মিষ্টি গলার একটা পাখির ঘুমঘুম উসখুস ডাক শুনতে পেল নির্জন।***বিকেলের আলো তখনও ছিল আকাশে যাই যাই করেও থেকে যাওয়া অতিথির মতো। কিন্তু স্টেশনে পৌঁছল ওরা চারিদিকে সন্ধ্যার তেলেজলে আঁধার নেমে আসার পর, ট্রেন আসার মিনিট কয়েক আগে। রোগাক্রান্ত কুকুরের পশমের মতো কুয়াশা ছড়িয়ে ছিটিয়ে এখানে ওখানে।ব্যাগগুলো রুপার জিম্মায় রেখে টিকিট কাটতে গিয়েছিল নির্জন- প্যান্টের পকেটে ভাইব্রেট করে উঠল ফোন।“খবর পেয়েছেন কিছু?”, বলল সুপ্রভা ফোনের ওপাশ থেকে।কাউন্টারে ঢাকার দুটো এসি টিকিটের কথা বলে নির্জন বলল সুপ্রভাকে, “কীসের খবর?”“কাল আপনাকে যার কথা বলেছিলাম, জিহাদুল ইসলাম, ওকে আজ পুলিশ গ্রেফতার করেছে হবিগঞ্জ থেকে।““অনলাইনে খুন, ধর্ষণের হুমকির জন্য যদি গ্রেফতার করতে শুরু করে পুলিশ, তাহলে আরো অন্তত এক হাজার হাজতখানা তৈরি করতে হবে নতুন করে!”, বলল নির্জন টাকাটা কাউন্টারে দিয়ে, রুপার দিকে হাঁটতে হাঁটতে।“ওকে কিন্তু তাহমিনা হায়াতের খুনি সন্দেহেই আটক করেছে, খবরে দেখলাম!”সিলিট থেকে ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস এসে দাঁড়িয়েছে প্ল্যাটফর্মে। রুপার হাতে টিকিট দুটো দিয়ে, ব্যাগদুটো হাতে নিয়ে সুপ্রভাকে বলল, “এই জিহাদি জাহিদুলকে হুমকি দেয়ার জন্য আটক করলে ঠিকাছে। তবে খুনের ক্ষেত্রে… নাহ- পুলিশের সময় নষ্ট হবে শুধু!”“হয়তো। আমি শুধু খবরটা আপনাকে জানালাম!”ফেরার পথে কেবিন নেয়ার ইচ্ছেটা বহুকষ্টে দমন করেছে নির্জন। ট্রেনে সেক্স করার বহুদিনের একটা ফ্যান্টাসি আছে ওর, এবারে সেটা পূরণ হলো না। এই ইনভেস্টিগেশন আরো কতদিন চালিয়ে যেতে হবে ও জানে না। টাকা খরচ করতে হবে ভেবেচিন্তে। ইনভেস্টিগেশনটা ও চালিয়ে যাচ্ছে নিজের তাগিদে, অর্থ যোগান দেয়ার কেউ নেই। ভাগ্য ভালো, জুলফিকার আমান পনেরো দিনের সার্ভেইল্যান্স কস্ট দিয়েছেন। যেহেতু ওদের ফিরে যেতে হচ্ছে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই, নির্জন ঠিক করেছে এই টাকাটা ও তাহমিনা হায়াতের হত্যারহস্য উদ্ঘাটনেই খরচ করবে।“এইতো সেদিনই ট্রেনে করে এলাম। আবার ফেরত যাচ্ছি সেই বালের জায়গাটায়। ভাল্লাগে?”বেশ উচ্চস্বরে বলল কথাটা রুপা। সামান্য দূরেই এক চশমাচোখের ভদ্রলোক ‘কালের কণ্ঠ’ পড়ছিলেন, নারী কণ্ঠে বাল শব্দটা শুনেই বোধহয় তাকালের বিস্মিত চোখে। তারপর নাকটা একবার ফুলিয়ে চোখ ফেরালেন পত্রিকার পাতায়।নির্জন নিচুস্বরে বলল, “আমি তোমাকে আবার নিয়ে আসব, কথা দিলাম, রুপা। মন খারাপ করো না।“রুপা বলল, “এখন ঢাকায় কী করবেন? ঐ ছয়টা খুন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবেন?”কামরার ভেতর জ্যাকেটের দরকার নেই; নির্জন জ্যাকেট খুলে একটা চাদর দুজনের গায়ের উপর ফেলে জড়িয়ে ধরল রুপাকে। বলল, “হ্যাঁ। তবে কাল যে ছ’টা কেইস ঘাঁটতে হবে ভেবেছিলাম, তার মধ্যে থেকে তিনটার এই কেইসের সাথে মিল আছে কিন্তু মনে হচ্ছে না ওসব আমাদের কিলারের কাজ!”রুপাও নির্জনের দেহে চেপ্টে লেগে গেল। বলল, “কেন?”“কারণ এই তিনটা খুনে ছুরির ব্যবহার হয়নি। আমাদের কিলার কিন্তু ছুরি চলাতে এক্সপার্ট- অন্তত আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। সেই তিনটা খুনের একটায় গলা টিপে, একটায় বালিশ চাপা দিয়ে এবং আরেকটায় সিলিং এ ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর সেসব খুনের সাথে যারা জড়িত তারা সবাই ধরাও পড়েছে ইতোমধ্যে। ঐ তিনটা কেইসে তাই সময় নষ্ট করার মানেই হয় না কোন!”“আর বাকি তিনটা কেইস?”, নির্জনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল রুপা।“এই কেইসগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং, রুপা। মারাত্মকভাবে ইন্টারেস্টিং!”রুপা কোন প্রশ্ন না করে তাকিয়ে রইল নির্জনের দিকে। নির্জন ওর কৌতূহলী চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলল, “এই তিনটা কেইসেই ভিক্টিমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে হোটেল রুমের ভেতর। একই প্যাটার্নে বলব না। তাহমিনা হায়াতের মতো শুধুই ভোকাল কর্ডে ছুরির পোঁচ ছিল না, দেহের অন্যান্য অঙ্গেও ছিল। আর তাদের সবাইকে পাওয়া গিয়েছে নগ্ন অবস্থায়, তাদের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর!”“আল্লাহ! এসব আপনি কখন জানলেন?”ট্রেন একটা স্টেশনে থেমেছে। জানলার কাচের ভেতর দিকে তাকিয়ে স্টেশনের নাম জানার ব্যর্থ চেষ্টা করে নির্জন বলল, “তোমার ঘুম থেকে ওঠার আগে। ন’টার দিকেই ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল, তারপর অনেক ঘেটে এসব বের করেছি!”“এসব কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি?

3 thoughts on “ইনভেস্টিগেটর”

  1. বদ্দা, স্কিনে হাতের আঙ্গুলের ছাপ পড়ে না। হাতের আঙ্গুলের ছাপ পড়ে একমাত্র ফ্লাট সারফেসে, যেমন কাঁচের গ্লাস, দরজার নব… এমনকি তেল চকচকে বার্নিশড কাঠ ছাড়া নরমাল কাঠেও ছাপ পড়ে না। এটাই একমাত্র দূর্বলতা পেলাম। এছাড়া দূর্দান্ত লেখা।

Leave a Reply