বজ্রাঘাত ১ম অংশ

মুখ ফিরিয়ে অটোর আশায় তাকায় দূরে… নাঃ… কিছুর দেখা নেই… ফের মুখ ফেরায় পাগলটার দিকে… একটা অনবদ্য কৌতুহলে। হটাৎ খেয়াল করে পরনের প্যান্টের সামনেটায় কোন চেন বা কিছু নেই… আর তার ফাঁক দিয়ে দিনের আলোয় যেটা চোখে পড়ে পৃথার… দেখে তো প্রায় ভিমরি খাবার অবস্থা হয়… সর্বনাশ… এত বড় কারুর হয়? চোখ গোলগোল করে তাকায় পাগলটার দুই পায়ের ফাঁকে… সেখানে একটা বিশাল বড় জিনিসটা নেতানো অবস্থায় ঝুলছে… এত বড় সে বাপের জন্মেও দেখেনি কখনও… কত হবে? এক ফুট নাকি? নাকি তার থেকেও বেশী? দেখেই তার মনে হয় যদি এই মালটা তার শরীরের মধ্যে ঢুকতো, তাহলে কি অবস্থা হতো তার… ভাবতেই শিউরে ওঠে সে… ঢোক গেলে একবার… মুখ তুলে আশপাশে দেখে নেয় আর কেউ তাকে এই ভাবে পাগলটার ওইটার দিকে দেখছে যে সেটা খেয়াল করছে কিনা… নাঃ… কেউ তার দিকে নজর দিচ্ছে না দেখে নিশ্চিন্ত হয় সে… ফের মুখ ঘুরিয়ে তাকায় পাগলটার দিকে… মনে মনে বিশ্লেষন করার চেষ্টা করে যে নেতানো অবস্থাতেই এত বড়, দাঁড়ালে কি হবে? দু’ফুট? ভাবতেই সিরসির করে ওঠে পায়ের মাঝে… মনে মনে ভাবে, যখন ও পাগল ছিল না, তখন নিশ্চয়ই কাউকে করতো… হয়তো ওর বৌ ছিল, কিম্বা গার্লফ্রেন্ড… উরিব্বাস… তার নির্ঘাত ভ্যাজাইনাটা ফেটে ফুটিফাটা হয়ে গিয়েছিল… মাগো… আমি হলে তো করতেই দিতাম না কোনদিন… মরেই যেতাম বোধহয়…

‘যাবেন না কি দিদি?’ কানে প্রশ্নটা আসতে আনমনে মুখ ঘুরিয়ে তাকায় প্রশ্ন কর্তার দিকে… ‘উ?’

‘বলছি, যাবেন?’ ফের প্রশ্ন করে অটোর ড্রাইভার…

এবার সম্বিত ফেরে পৃথার… লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে গাল দুটো তার… ‘ইশশশশ… ছি ছি… অটোর ড্রাইভারটা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে যে আমি পাগলটার পেনিসটার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম… এ মা… কি ভাবলো লোকটা…’

তাকিয়ে দেখে অটোর সামনের বাঁদিকের সিটটা খালি রয়েছে… পেছন দিকে তিনটে লোক বসে আছে সিট জুড়ে।

‘ও… হ্যা… হ্যা… যাবো…’ বলে তড়িঘড়ি এগিয়ে যায় অটোর দিকে।

ড্রাইভার বলে ওঠে, ‘দিদি, আপনি কি পেছনে বসবেন? তাহলে এনাকে বলছি সামনে বসার জন্য…’

সামনের সিটে ব্যাগ সামলে বসতে বসতে বলে পৃথা… ‘না, না, ঠিক আছে, আমি সামনেই বসছি… একটু পরেই তো নেমে যাবো…’ ড্রাইভারের পাশে বসে দুই পায়ের ফাঁকে জড় করে গুঁজে নেয় লুজ প্লাজোটা… ডানপায়ের থাইটা ঠেঁকে যায় ড্রাইভারের পায়ের সাথে… একটু অস্বস্তি হয় ঠিকই, কিন্তু কিছু করার নেই, সরে বসার সম্ভাবনা একেবারেই নেই, তাই বাধ্য হয়েই চেপে বসে থাকে সে।

ড্রাইভার ছেড়ে দেয় অটোটা পৃথাকে নিয়ে।

অটোর ড্রাইভারটা কেমন যেন ধুমসো মত… রোগা পাতলা হলে একটু ভালো হত… অনেকটা জায়গা নিয়ে বসে রয়েছে… যার ফলে পৃথাকে খুব কষ্ট করে বসতে হয়েছে সামনের সিটে। ড্রাইভারের সিটের সাথে লাগানো একটা ছোট্ট কাঠের টুকরোর ওপরে যে ভাবে সে বসেছে… তাতে শুধু মাত্র নিতম্বের একটা দাবনা শুধু ঠেকাতে পেরেছে, আর একটা দাবনা শূন্যে ঝুলছে বলতে গেলে। বাধ্য হয়েই একটু ডান দিকে অটোর ভেতর দিক করে ঝুঁকে বসে পৃথা… হাতের সামনে রডটাকে বাঁ হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে থেকে ডান হাতের চাপে কোলের ওপর চেপে রাখে ব্যাগটাকে। যেতে যেতে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে সরে যাওয়া একের পর এক দোকান, বাড়ি। তাকিয়ে থাকে ঠিকই, কিন্তু চোখের সামনে যেন তখনও পাগলের ওই বিশাল জিনিসটার ছবি ভাসতে থাকে… পায়ের ফাঁকটা সুরসুর করে তার… ওইখানে জল কাটছে নাকি আবার? নিজেই নিজেকে মনে মনে প্রশ্ন করে পৃথা হাসে আপন কৌতুকে।

হটাৎ যেন নিজের ডান দিকের বুকটার ওপরে কেমন একটা আলতো চাপ লাগে… প্রথমটা গুরুত্ব দেয় না সে… কিন্তু দ্বিতীয়বার পেতেই আড় চোখে তাকায় নিজের বুকের দিকে… অটোর ড্রাইভারটা গাড়ির ক্লাচের কাছটা এমন ভাবে ধরেছে যে ওর বাঁ হাতের কুনুইটা এসে ঠেকছে পৃথার বুকের ওপরে।

সরে যাবে? ভাবে পৃথা… কিন্তু সরে যাবেটাই বা কোথায়… সরতে গেলে তো বাইরে পড়ে যাবে… ততক্ষনে আবার ড্রাইভারের কুনুই এসে ঠেকে বুকের ওপরে… এবারে যেন চাপটা আগের থেকে আর একটু বেশি… ছুয়েই সরে যায়… এমন ভাবে কুনুইটাকে লাগাচ্ছে যেন চালাতে গিয়ে অসাবধানে লেগে যাচ্ছে বুকের ওপরে… মাল খুব চালাক… বুঝতে অসুবিধা হয় না পৃথার।

হটাৎ মাথায় বদমাইশী খেলে… কেন জানে না একটু দুষ্টুমী করার ইচ্ছা জাগে মনের মধ্যে… হয়তো পাগলাটাই এটার কারণ… বাঁ হাতটাকে নামিয়ে কোলের ব্যাগটাকে ধরে নিয়ে ডানহাতটাকে ড্রাইভারের পেছন দিকে নিয়ে গিয়ে সিটের পিছনের রডটাকে চেপে ধরে সে… তারপর অটোর আরো খানিকটা ভেতর দিকে ঢুকে বসে পাছা ঘসে… নিজের ডানদিকের নরম বুকটাকে এগিয়ে দেয় ড্রাইভারের কুনুইয়ে আরো কাছে… মুখটাকে গোবেচারার মত করে সোজা তাকিয়ে থাকে কাঁচের ওপারে।

এবার আর ড্রাইভারকে কষ্ট করে কুনুই এগিয়ে ঠেকাতে হয় না… হাতটাকে একটু নাড়াতেই কুনুইটা ঠেকে যায় পৃথার বুকের সাথে… পৃথা আরো খানিকটা হেলে যায় ড্রাইভারের দিকে। ড্রাইভার ঢোক গেলে একটা… স্পষ্ট সেটা বুঝতে পারে চোখের কোন দিয়ে পৃথা… মনে মনে হাসে। ব্রাহীন বুকের বোঁটার স্পর্শ পেতে অসুবিধা হয় না ড্রাইভারটার… এবার আর সে কুনুই সরায় না… হাতটাকে আগুপিছু করে নাড়িয়ে ঘসতে থাকে তার কুনুইটাকে পৃথার বুকের সাথে… রীতিমত চাপ রেখে…

বুকের ওপরে নাগাড়ে ঘসা খেয়ে ভিজে উঠতে থাকে পৃথা একটু একটু করে… খুব সামান্য পরিমানে হলেও, রস চুঁইয়ে বেরিয়ে এসে জমা হয় তার গোপানাঙ্গের মুখে… ভালো করে ডান হাতের মুঠোয় অটোর রডটাকে চেপে রেখে আরো খানিকটা শরীর এগিয়ে দেয় সে… প্রায় চেপে বসে যায় ড্রাইভারের কুনুইটা তার বুকের সাথে… অনেক কষ্ট করে মুখটাকে ভাবলেশহীন রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়… আড় চোখে একবার তাকায় ড্রাইভারের কোলের দিকে… দেখেই প্রায় হেসে ফেলার উপক্রম হয় পৃথার… একটা বেশ ছোটখাটো তাঁবু তৈরী হয়ে গিয়েছে ড্রাইভারের কোলের কাছটায়… প্যান্টের কাপড়ের ওপরে ফুটে উঠেছে একটু ভেজা দাগ যেন।

সামনেই দেখতে পায় শপিং মলটা… তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে, ‘ব্যাস ব্যাস ভাই… এখানেই নামবো… এখানেই…’

ড্রাইভার অসম্ভব অনিচ্ছা সত্তেও থামিয়ে দিতে বাধ্য হয় অটোটা।

অটো থেকে নেমে পৃথা ব্যাগ খুলে মিহি গলায় জিজ্ঞাসা করে, ‘কত ভাই?’

ব্যাজার মুখে ড্রাইভার বলে, ‘আট টাকা…’ বলতে বলতে একবার তাকে আগাপাশতলা দেখে নেয়।

ওকে দেখতে দেখে একটু সময় নেয় পয়সা বার করতে… ইচ্ছা করেই খানিক দাঁড়িয়ে থাকে ড্রাইভারের সামনে… আরো একবার আড় চোখে তাকায় ড্রাইভারটার কোলের দিকে… হি হি… এখনও তাঁবুটা কমে নি… মনে মনে হাসে পৃথা… তারপর গুনে গুনে আটটা টাকা বের করে ড্রাইভারের হাতে দিয়ে অম্লান বদনে হাঁটতে শুরু করে নিতম্বে উত্তাল হিল্লোল তুলে শপিং মলটার দিকে ফিরে। মনে মনে ভাবে, স্টান্ডে নেমেই হয় আজকেই একটা লটারীর টিকিট কাটবে, তা নয় তো সুলভ কমপ্লেক্স খুঁজবে শরীর হাল্কা করার জন্য। ড্রাইভারকে মাস্টার্বেট করার সিনটা ভাবতেই হেসে ফেলে পৃথা। পরক্ষনেই তাড়াতাড়ি এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নেয় কেউ দেখছে কিনা, কারণ রাস্তায় অকারণে যদি তার মত সফিস্টিকেটেড মেয়েকে এই ভাবে আনমনে হাসতে দেখে, যে কেউ তাকেও পাগলই ভাববে, ওই পাগলটার মত।

৬।।

‘আজকের মাংসটা কিন্তু দারুন রান্না করেছ পৃথাদি… তোমার থেকে রেসিপিটা কিন্তু আমার চাই…’ কলকল করতে করতে বলে ওঠে মৌসুমী… সুশান্তর ভাবী বউ।

ছোট্ট হাসি হেসে উত্তর দেয় পৃথা, ‘বেশ তো… এ আর এমন কি, আমি হোয়াটস্‌আপ করে দেব’খন…’।

এর মাঝে বেশ কিছুদিন কেটে গিয়েছে… তেমন কিছু ঘটনা ঘটেনি পৃথার জীবনে এই ক’টা দিনের মধ্যে… প্রতিদিন কার যথারীতি রোজনামচা চলেছে… সকালে ওঠা… রেডি হওয়া… অফিস যাওয়া… অফিসে কাজ সারাদিন… আর সন্ধ্যেবেলায় ফিরে আসা। গতানুগতিক একটা সপ্তাহ কেটে গিয়েছে।

আজ, শনিবার ছিল বলে রাতে, ডিনারে ওদের দুজনকে ইনভাইট করেছিল পৃথা। কথা প্রসঙ্গে সুশান্তই বলেছিল ওকে যে ওর বাড়ি থেকে নাকি বিয়ের ঠিক করে ফেলেছে। শুনে ওকে কঙ্গ্রাচুলেট করে বলেছিল, ‘বাহ… এতো দারুন খবর… যাক… তাহলে কোলকাতায় এসে একটা বিয়ে খাওয়া যাবে, কি বলো?’ খবরটা বলে সুশান্ত বোধহয় ওর এতটা আগ্রহ দেখবে, সেটা ঠিক আশা করে নি, উত্তরে সুশান্ত বলেছিল, ‘তোমার খারাপ লাগছে না শুনে?’

অবাক হয় পৃথা… ‘খারাপ লাগবে? এ বাবা… কেন?’

‘না মানে…’ আমতা আমতা করে সুশান্ত।

‘আরে বাবা, খারাপ লাগবে কি, শুনে ভিষন ভালো লাগছে… তোমার মত একজন বন্ধু পেয়েছি, আর তার বিয়ে হবে, উফফফফ… দারুন এঞ্জয় করবো… কি বলো? আমি কিন্তু তোমার বিয়ের শুরু থেকেই থাকব… সে তুমি নেমতন্ন করো আর না করো… আগেই বলে দিলাম কিন্তু…’ সাদা মনে হইহই করে বলে উঠেছিল পৃথা।

আর কিছু উত্তর দেয় নি সুশান্ত। চুপ করে গিয়েছিল। সেও ব্যাপারটা নিয়ে আর এগোয়নি, হটাৎ করে একটা কাজ এসে যাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল পৃথা।

কিন্তু মনের মধ্যে ছিল, যে একদিন ওদের দুজনকে ডেকে খাওয়াবে সে, খবরটা শুনে সত্যিই খুব খুশি হয়েছিল পৃথা। তাই আজ শনিবার ছিল বলে এই দিনটাই ঠিক করে বলে দিয়েছিল সুশান্তকে। সুশান্তর যে খুব একটা ইচ্ছা ছিল না মৌসুমীকে নিয়ে আসার, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় নি পৃথার, কিন্তু সেই একটু জোর দিয়েছিল সুশান্তকে, যাতে ও মৌসুমীকে সাথে করেই আসে।

আলাপ হবার পর খারাপ লাগেনি মেয়েটিকে, বয়সে তার থেকে যথেষ্টই ছোট… সবে কলেজে ঢুকেছে… বাড়ির থেকেই নাকি ওদের দেখা শোনা করে বিয়ের ঠিক হয়েছে… সারাক্ষন সময়টা জুড়ে কলকল করে বকে গিয়েছে তার সাথে। ছোট্টখাট্ট শরীরের একদম বাচ্ছা মেয়ে… রোগা পাতলা… বুক পাছা এখনও সেই ভাবে তৈরী হয়নি… তবে বিয়ের জল লাগলে ফুলে ফেঁপে উঠবে, তাতে সন্দেহ নেই… গড়নটা সেই রকমেরই। গায়ের রঙটা একটু চাপা… তার মত সুন্দরীও নয়, কিন্তু তাতে কি? দেখতে খারাপ মোটেও নয়… একটা কেমন ছেলেমানুষি ব্যাপার আছে মেয়েটার মধ্যে। তবে বড্ড বকে… বকবক করে মাথা ধরিয়ে দেবার জোগাড়… পৃথাকে নিয়ে তার যেন বিস্ময়ের শেষ নেই… সে একা একটা মেয়ে বাড়ির সবাইকে ছেড়ে এত দূরে এসে চাকরী করছে, থাকছে একা একটা ফ্ল্যাটে এই ভাবে, ভাবতেই নাকি তার শিহরণ হচ্ছে… আবার যখন শুনেছে যে পৃথা ক্যারাটে জানে… শুনে সে কি ভিষন আপ্লুত… এই কয়’এক ঘন্টায় পৃথাকে প্রায় সুপার হিরোইন বানিয়ে ফেলেছে যেন। পৃথার নাকি সবই দারুন… বোঝ ঠেলা।

রাত বাড়তে সুশান্তরা বেরিয়ে পড়ে। হাউসকোটটা গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলে এগিয়ে দেয় পৃথা, নীচ অবধি… তারপর ফিরে আসার সময় আবার দেখা অলোকবাবুর সাথে… ‘বন্ধু বোধহয়?’ দেঁতো হাসির সাথে প্রশ্ন আসে।

‘হুম… অফিস কলিগ…’ মাথা হেলিয়ে উত্তর দেয় পৃথা… ‘ইনভাইট করেছিলাম… আমার ফ্ল্যাটে… সন্ধ্যেটা এঞ্জয় করার জন্য… বেশ কাটলো, জানেন…’ দাঁত বের করে হেসে বলে সে অলোকবাবুকে… ‘রাত তো অনেক হল, এখনও ঘুমান নি? পাহারা দিচ্ছিলেন?’ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে সে। ‘কাকিমা এখনও জেগে?’

‘কাকিমা’ কথাটা শুনেই যেন মনে হল অলোকবাবুর উৎসাহে কেউ জল ঢেলে দিল, মিইয়ে গিয়ে বলে উঠলেন, ‘ও… হ্যা… এই তো… এবার ঘুমাতে যাবো… আচ্ছা… ঠিক আছে… যাই… কেমন?’ বলে ঘরে ঢুকে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দেন অলোকবাবু।

ওনার অবস্থা দেখে হেসে ফেলে পৃথা… মাথা নেড়ে হাসতে হাসতে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

৭।।

ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায় পৃথা… বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো কিচেন থেকে পাত্র এনে ঢেলে গুছিয়ে রাখে ফ্রিজের মধ্যে। খাবার নষ্ট করা একদম পোষায় না তার। মাংস যা বেঁচেছে, মোটামুটি তার একার পক্ষে আরো দিন দুয়েক চলে যাবে… ভাবে পৃথা… রাতের দিকে বাইরে থেকে রুটি কিনে এনে এই মাংস দিয়ে চালিয়ে নেবে’খন… আর সকালে তো সাধারণতঃ বাইরেই লাঞ্চ করে নেয় সে… রান্না করার ঝক্কিটাও বাঁচবে তাহলে। মনে মনে খুশিই হয় একটু। ন্যাকড়া ভিজিয়ে এনে মুছতে থাকে ডাইনিং টেবিলটাকে ভালো করে… গুনগুন করে গান করে আপন মনে।

স্নান করতে ঢুকে চুল ভেজায় না পৃথা… রাতে চুল ভেজালে শুকোবে না, আর এখন যে ভাবে বর্ষা চলছে, ঠান্ডা লেগে সর্দি জ্বর হওয়া বিচিত্র নয়… মা তো পইপই করে বারণ করে দিয়েছে রাতে স্নান না করতে। আরে! রাতে একবার গায়ে জল না ঢাললে হয় নাকি? চিরদিনের স্বভাব রাতে স্নান করে ঘুমাতে যাওয়া… একবার গায়ে জল না পড়লে ঘুমই আসবে না। চুল না ভেজালেই হল। নগ্ন শরীরে ঠান্ডা জলের স্পর্শে সারাদিনের ক্লান্তি যেন এক নিমেশে চলে যায়। চোখ বন্ধ করে পীঠের ওপরে শাওয়ারের জল নেয় সে, সামনের দেওয়ালে হাত দুটোকে রেখে, সামান্য ঝুঁকে। শাওয়ারের জল তার পীঠের ওপরে পড়ে, গড়িয়ে নেবে যায় সুঠাম দেহের নীচের পানে… নিতম্বের কোমল দুটো ঢেউয়ের ওপর দিয়ে।

গা ভালো করে মুছে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে পৃথা… নগ্ন শরীরেই ঘুরে ঘুরে ফ্ল্যাটের সমস্ত আলোগুলো এক এক করে নিভিয়ে ঢোকে বেডরুমে… সুইচ টিপে আলো জ্বালে ঘরের। বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা ছবিটার কাছে এগিয়ে যায়… হাতের একটা আঙুল তুলে নিজের ঠোঁটে ছোঁয়ায় তারপর সেই আঙুলটাকে এগিয়ে বাড়িয়ে দিয়ে ছোঁয়া দেয় ছবির লোকটির ঠোঁটের ওপরে… ‘হাই…’ ফিসিফিসিয়ে ওঠে লোকটির চোখের দিকে তাকিয়ে।

বিছানার বেডকভারটাকে তুলে ঘরের মধ্যে রাখা চেয়ারটার ওপরে রেখে দিয়ে ঘরের কোন থেকে বিছানা ঝাড়ার প্লাস্টিকের ঝাড়ুটা এনে ভালো করে ঝাড়ে বিছানার ওপরটাকে… তারপর ঝাড়ুটাকে ফের যথাস্থানে ফিরিয়ে রেখে দিয়ে আবার বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। কিচেনে গিয়ে একটা কাঁচের গ্লাস হাতে নিয়ে ফিরে আসে বসার ঘরে। কাবার্ডের মধ্যে রাখা ওয়াইনের বোতলটাকে বের করে নিয়ে খানিকটা ওয়াইন মাপ করে ঢেলে নেয় গ্লাসে, তারপর গ্লাসটা সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে ছিপি টাইট করে আটকায় বোতলটায়… ফিরিয়ে রেখে দেয় কাবার্ডের মধ্যে। টেবিল থেকে গ্লাসটা তুলে নিয়ে ফিরে আসে বেডরুমের মধ্যে… দেওয়ালের কাছে গিয়ে সুইচ টিপে বড় আলোটাকে নিভিয়ে দিয়ে শুধু নাইট ল্যাম্পটা জ্বেলে দেয়… আজ যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ঘরের এসি আর চালাতে ইচ্ছা করে না… বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে, গা ধোয়ার পর সেই চ্যাটচ্যাটে ব্যাপারটাও আর নেই… ফ্যানের রেগুলেটর ঘুরিয়ে স্পিডটা একটু বাড়িয়ে দিয়ে গ্লাস হাতে উঠে আসে বিছানায়… বালিসটাকে খাটের হেডবোর্ডের ওপরে রেখে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে ছোট একটা সিপ দেয় গ্লাসের তরলে… আআআহ্‌… চোখ বন্ধ করে জিভের ওপরে স্বাদ নেয় দামী ওয়াইনের।

গ্লাসের ওয়াইনে সিপ করতে করতে ভাবতে থাকে পৃথা – দেখতে দেখতে বেশ অনেক কটা দিনই এই ফ্ল্যাটটায় কেটে গেল… ভাগ্‌গিস পাওয়া গিয়েছিল ফ্ল্যাটটা… সুশান্তকে সত্যিই অশেষ ধন্যবাদ… ও না খুজে দিলে যে কি হত… দূর… ওই ক’টা দিন মহুয়ার বাড়ি পিজি থাকতে হয়েছিল বটে, কিন্তু একদম ইচ্ছা করছিল না থাকতে… ভালো লাগে নাকি কারুর সাথে বিছানা শেয়ার করতে? বরাবরই একা শুয়ে অভ্যস্ত… বাড়িতে থাকতো রানীর মত… বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে… নিজস্ব একটা ঘর… সেখানে যদি আর কারুর সাথে বিছানা শেয়ার করতে হয়… ভালো লাগে? বিছানা হবে এই রকম… ইশশশ… কি সুন্দর বিছানাটা… ঠিক বাড়িরটার মত –

ভাবতে ভাবতে চোখ খুলে বাঁ হাতটা নিয়ে বিছানার ওপরে বোলায়… ঘরের স্বল্প নিলাভো আলোয় কেমন মায়াবী লাগে তার বিছানাটাকে… সাদা বেডশীটটা নীল আলোয় কেমন যেন স্বপ্নিল মনে হয় পৃথার… গ্লাস থেকে আরো খানিকটা তরলে সিপ করে… গলার মধ্যে দিয়ে নামে যাবার সময় দেহটা খানিকটা উষ্ণ হয়ে ওঠে যেন তার… শরীরটা আরো খানিকটা ঘসটিয়ে নামিয়ে দেয় নীচের পানে… দেহটাকে এলিয়ে দেয় বিছানার ওপরে আধশোয়া ভঙ্গিতে, মাথাটা থাকে হেডবোর্ডের ওপরে, বালিশ ছুঁয়ে… সিলিংএর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ ভাবতে থাকে সারাদিনটার কথা।

কি যেন মনে পড়তে হটাৎ করে উঠে বসে বিছানায়… হাতের গ্লাসটার থেকে আরো খানিকটা ওয়াইন একটা বড় চুমুকে শেষ করে রেখে দেয় সেটা পাশে, বিছানার ওপরেই… তারপর হাত বাড়িয়ে তুলে নিয়ে আসে পাশের টেবিলে রাখা ছবিটাকে। ঘরের কম আলোয় অস্পষ্ট ছবির মুখ গুলো… তাতে তার কিছু যায় আসে না… ওই অস্পষ্ট মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকে পৃথা… আজকাল এটা ওর একটা নতুন নেশা বলা যেতে পারে… রাতে শোবার সময় ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ছবিটাকে টেনে নেয় নিজের কাছে… সারাদিনের সমস্ত কথাগুলো শোনায় ছবির চরিত্রটিকে… একবার না বলতে পারলে যেন স্বস্তি পায় না পৃথা। কথা বলে লোকটির সাথে… অনেক সময় পরামর্শও নেয় সে… অবস্যই সেটা নিজের মনেই… সত্যি সত্যি উত্তরই বা পাবে কি করে সে… তাও… তাতেই যেন খুশি সে। ঘরের আলো কম থাকলে লোকটির স্ত্রীর মুখটা স্পষ্ট হয় না বলে যেন সেও একটু খুশি হয়… নয়তো তার স্ত্রীর সামনে এই ভাবে বিবাহিত একটা লোকের সাথে মন খুলে কথাই বা বলে কি করে? তাই না?

গ্লাসটা হাতে তুলে তলানির শেষটুকু গলায় ঢেলে দেয়… তারপর গ্লাসটাকে ফের রেখে দিয়ে তাকায় ছবির দিকে… ‘জানো… আজ সুশান্ত আর ওর হবু বৌকে ডেকেছিলাম ডিনারে… তোমাকে তো বললাম কাল রাতে যে ওদের ডাকবো… বেশ ভালো লাগলো বউটাকে… কেমন বাচ্ছা বাচ্ছা… খুব মিষ্টি… আর জানো… উফফফফ… তোমাকে কি বলবো… কি বকবকটাই না করতে পারে… সারাটা’খন তো শুধু বলতে গেলে ওই বকে গেলো… এই জানো… তোমার পৃথাকে মৌসুমীর না খুব ভালো লেগেছে… হ্যা গো… খালি আমার কথা শুনতে চায়… ইশশশ… বাবুর হিংসা হচ্ছে বুঝি?… না না… তুমি হিংসা করবে কেন? তুমি তো আমার সোনাটা… মুউউউআআআআ…’ ছবিটাকে তুলে চুমু খায় পৃথা আধো অন্ধকারে লোকটির ঠোঁটটাকে আন্দাজ করে। তারপর নামিয়ে ফের বলতে শুরু করে… ‘উফফফফ… ওই আর এক হয়েছে তোমাদের অলোকবাবু… মালটা এত আলুবাজ যে কি বলবো… আজকেও ওদের এগিয়ে দিতে বেরিয়েছি… ব্যাটা ঠিক বেরিয়ে এসেছে… হে হে… জানো… আমি না যেই কাকিমার কথা জিজ্ঞাসা করেছি, ব্যাটা সুরসুর করে ঘরে ঢুকে গেছে… হি হি… ভালো করেছি না?’

একটু ভেবে চিন্তান্বিত গলায় বলতে থাকে… ‘তোমাকে না একটা কথা বলবো বলবো করে বলাই হয় নি… অবস্য আমিও একেবারে যে নিশ্চিত তা নই… তবুও… একটা ব্যাপার আমার একদম ভালো লাগছে না জানো…’ বলতে বলতে পাশে রাখা গ্লাসটা তুলে ঢালতে যায় গলায়… কিন্তু ফাঁকা গ্লাস থেকে কিছুই পড়ে না… ছবিটাকে বিছানায় রেখে বলে, ‘দাঁড়াও… একটু অপেক্ষা করো… এটাকে ভরে এনে বলছি…’ বলে উঠে যায় ঘরের বাইরে।

কাবার্ড খুলে বোতল বের করে খানিকটা তরল ঢেলে নেয় গ্লাসে… তারপর বোতলটাকে আর ফিরিয়ে রাখে না কাবার্ডের মধ্যে… গ্লাস আর বোতল, দুটোকেই দুই হাতে নিয়ে ফিরে আসে বিছানায়… বোতলটাকে এক সাইডে রেখে দিয়ে ভালো করে বালিশে হেলান দিয়ে আবার বসে সে… তারপর গ্লাস থেকে একটা বড় চুমুক দিয়ে বাঁ হাতে তুলে নেয় ছবিটাকে…

‘আজকাল একা থেকে এটা বেশ একটা অভ্যাস হয়েছে জানো তো… একটু আধটু খেলে মন্দ লাগে না… সারাদিনের খাটাখাটনির পর বেশ রিফ্রেশিং লাগে যা হোক… কি বলো? আচ্ছা? তুমি খেতে? উহঃ… খেতো না আবার… আমি জানি… বেশ ভালোই খেতে… কি ঠিক বলিনি? অবস্য তোমাদের মত অত কড়া আমি খেতে পারি না, আমার বাবা এই ওয়াইনই ভালো… একটু আধটু খেলে খারাপ কি?’

গ্লাস তুলে আরো একটু সিপ করে পৃথা… ঠোঁটের ওপরে গ্লাসের কিনারা লাগিয়ে জিভ বোলায়… তারপর গ্লাসটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ঠেকায় ছবির গায়ে… ‘উহহহ… দেখ… মদের গন্ধ পেয়েই কেমন চোখগুলো চকচক করে উঠল… এই… পাশে তোমার বউ আছে না? ও কিন্তু দেখতে পাচ্ছে… বলে দেবো, বউদিকে? হু? ওর বর মদ খেতে চাইছে?’ আরো খানিকটা ওয়াইন কথায় কথায় পৃথার গলা দিয়ে নেবে যায়।

গ্লাসটাকে পাশে রেখে দিয়ে বলে ওঠে… ‘ওই দেখো… কথায় কথায় যেটা বলতে যাচ্ছিলাম, সেটাই তো বলা হলো না তোমাকে… আরে… আশ্চর্য লোক তো… মনে করাবে তো… নাকি… সব শুধু আমার দায়… হুঁ?’ বলতে বলতে মাথাটা পেছন দিকে হেলায় পৃথা… বেশ ভার লাগে মাথার মধ্যেটায়… ইতিমধ্যেই প্রায় অনেকটা ওয়াইনই পেটে চলে গিয়েছে… খানিক চোখ বন্ধ করে থেকে আবার মাথা সোজা করে তাকায় আবছায়া ছবিটার দিকে… ছবি ধরা হাতের বুড়ো আঙুলটাকে ঠেকায় লোকটির গালের ওপরে… একটু বুলিয়ে নেয় সেখানে… তারপর সিরিয়াস মুখ করে বলে সে… ‘জানো… আমার না সুশান্তর ইদানিং কালের ব্যবহারটা ঠিক ভালো লাগছে না… ওর মধ্যে আগের সেই বন্ধুত্বটা যেন নেই… তার বদলে ও আরো কিছু চাইছে আমার থেকে… এটা কি ঠিক? বলো? আরে বাবা, তোর সাথে একটা মেয়ের বিয়ের ঠিক হয়ে রয়েছে… সেখানে আমার দিকে ঢলিস কেন? সত্যি বলছি… এই তোমার গা ছুয়ে… বিশ্বাস কর… আমার মনে কিন্তু ওর প্রতি এতটুকুও কোন ওই ধরণের অনুভূতি নেই… সিরিয়াসলি… আমি কক্ষনো ভাবি নি এই সব নিয়ে… কিন্তু ও কেন এই রকম করছে বলো তো?’

Leave a Reply