আমি শেষ পর্যন্ত মুখ খুললাম – “আমি কিছু বুঝতে পারছি না কি হলো সেদিন… বাবা ওরকম রেগে গেলো কেনো… আর সেদিন তুই বলছিলিস কাকিমার সাথে অনেক নোংরা জিনিস করেছে এই গ্রামের লোকেরা… কি হয়েছে সুমন্ত?… তুই আমায়ে খুলে বলছিলিস না কেনো?”
সুমন্ত – “তুই ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য বুঝিস?”
আমি – “কি পার্থক্য?.. ছেলেদের চুল ছোট হয়ে আর মেয়েদের বড়”
সুমন্ত মুচকি হেসে বলল – “আর কোনদিনও ভেবেছিস.. মেয়েদের বুকের ব্যাপারে|”
আমি – “হ্যাঁ.. মেয়েদের দুধ হয়ে.. যখন মেয়েরা বড় হয়ে যায়”
সুমন্ত – “আরেকটা জিনিস আছে… মেয়েদের নুনু হয় না…”
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম| সুমন্ত – “হ্যাঁ …আমি সব সময়ের সাথে জেনেছি… তুই জানিস ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়ে কেনো?”
আমি – “আমি ভাবিনি….”
সুমন্ত – “তুই কি কাকু কাকিমাকে জিজ্ঞেস করেছিস তুই পৃথিবীতে এসেছিস কি ভাবে|”
আমি – “হ্যাঁ”
সুমন্ত – “কি বলেছে কাকু কাকিমা?”
আমি – “ভগবান পাঠিয়েছে আমাকে পৃথিবীতে”
সুমন্ত – “সব মিথ্যে কথা অভি… আমি সব জেনেছি এই গ্রামে আসার পরে| সেদিন যা আমার বাবা মা কাকু কাকিমাকে বুঝিয়েছিলো সব মিথ্যে| আমার মায়ের সাথে দীপক কাকুর বিয়ে হয়েছিলো এবং দীপক কাকু প্রথম এই সব শুরু করে আর তারপর আস্তে আস্তে আমার মাকে তুলে দেয় অন্য গ্রামের লোকেদের হাতে| আমার মায়ের তিন বার বিয়ে হয়েছে এই গ্রামে, প্রথমবার দীপক কাকু তারপর রামচন্দ্র আর শেষে রজত সেথ| মায়ের দুবার পেট ফুলেছিলো, প্রত্যেক বার বাচ্চা হওয়ার পর মাকে নতুন করে বিয়ে দেওয়া হয়ে| ..তুই জানিস না আমার এক ভাই আর বোন আছে| আমার বাবা মায়ের বিয়েতে আমি জন্মেছিলাম আর মায়ের বাকি বিয়েতে আমার ভাই আর বোন জন্মেছে| এটা হচ্ছে এই গ্রামের প্রথা একবার যদি কোনো এই গ্রামের পুরুষ মানুষের সাথে যদি কোনো মহিলার বিয়ে হয়ে যায়ে সে পুরোপুরি এই গ্রামের বন্দিনী হয়ে যায়ে কিন্তু প্রথম বিয়েটা সেচ্চায়ে হতে হবে| এই প্রথা থেকে বেড়ানোর শুধু একটা উপায়ে যদি সেই মহিলাকে এই গ্রামের কোনো পুরুষ যে সেই মহিলার বর্তমান স্বামী তাকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়ে এবং তাকে পুরো পঞ্চায়েতের সামনে সেটা বলতে হবে এবং পঞ্চায়াতকে রাজি হতে হবে এই ব্যাপারে| কাকিমাকে দেখার পর থেকে রজত সেথ আমার মাকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে এবং পঞ্চায়াতের লোকেরা রাজি যদি কাকিমা এই গ্রামে বন্দিনী স্ত্রী কর্তব্য পালন করে|”
আমি – “আমি কিছু মাথা মুন্ডু বুঝছি না সুমন্ত”
সুমন্ত – “সময়ে হলে সব বুঝতে পারবি”
আমি – “তুই কি বলতে চায়চিস আমার মায়ের কোনো বড় বিপদ”
সুমন্ত – “জানিনা রে| কিন্তু আমরা সবাই এই গ্রাম থেকে মুক্তি পেতে চাই|”
আমি ঠিক মতো বুঝতে পারছিলাম না সুমন্ত কি বলছিলো, শুধু বুঝতে পারছিলাম যে সুমন্ত অনেক কিছু জানে যা আমার ভালো ভাবে জানা নেই| রাতে মাকে নিয়ে শেখর কাকু আর শিখা কাকিমা ফিরলো| মাকে প্রচন্ড ক্লান্ত দেখ্চ্ছিলো, চোখ গুলো ফোলা ফোলা লাগছিলো, মুখে কান্নার ছাপ ছিলো| এসে আমাদেরকে শিখা কাকিমা খেতে দিয়ে দিলো আর আমাকে বলল সুমন্তের সাথে আজ রাতে শুতে|
আমরা ঘরে চলে যাওয়ার পর সুমন্ত আমাকে বলল – “অভি জেগে থাকিস…..আমরা চলে গেলে বাবা মা এই সব বিষয়ে কথা বলবে কাকিমার সাথে|”
ঘরের আলো বন্ধ করে দেওয়ার পর আমরা কিছুক্ষণ চুপ চাপ শুয়ে ছিলাম| সুমন্ত বলল – “চল অভি এবার ওঠ”|
আমরা চুপ চাপ ঘর থেকে বাইরে বেড়ালাম, দেখলাম সেই মাঝের ঘরে মা , শেখর কাকু , শিখা কাকিমা আর রঘু বসে আছে| শেখর কাকু – “দেখ রঘু …. তোর পায়সার আরো দরকার থাকলে বল আর আপত্তি থাকলে জানা|”
রঘু – “আপনারা যা দিচ্ছেন তাতেই আমি খুশি… কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে যদি এই ব্যাপারে গ্রামের লোকেরা জেনে যায়ে.. আপনি এই এলাকার লোকদের জানেন না…. রজত সেথ কথায়ে সবাই ওঠে বসে|”
শেখর – “দীপক তোকে সব বলেছে কিভাবে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছিলো এতোদিন…. কিন্তু তোর তো এতদিন লাগবে না…. যখন জয়ন্ত দা ঠিক হয়ে যাবে বৌদিকে নিয়ে চলে যাবে গ্রাম থেকে শিগ্রয়ই|”
মা চুপচাপ মাথা নিচু করে শুনছিলো|
রঘু – “কিন্তু জয়ন্ত বাবু যদি রেগে যায়ে….”
শেখর কাকু – “রাগবে কেনো… তুই যা করছিস.. তুই তো ভালোর জন্য করছিস…. তুই তো জানিস কি ঘটেছে আজ…. রজত সেথের লোকেরা কেনো হামলা করেছে জয়ন্ত দার উপর…. শুধু গ্রামের লোকের বউ হয়ে থাকলে বৌদি শুধু নিরাপদ থাকবে”
রঘু – “ঠিক আছে ডাক্তার বাবু…”
রঘু মায়ের দিকে তাকালো|
শিখা কাকিমা – “কাকলি…. রঘুকে মানানো হয়ে গেছে… এবার সব তোর উপর.. যা করবি তাড়াতাড়ি কর| এরপর যদি খারাপ কিছু হয়ে , আমাদের কাছে কেঁদে লাভ হবে না|”
মা – “আমাকে একটু ভাবতে দাও…”
শেখর কাকু – “কাল সকালে চলে আসিস…. কাকলি এই সব জিনিস বেশি দেরি করে লাভ নেই…”
রঘু – “ঠিক আছে ডাক্তার বাবু.. আমি তাহলে এখন আসি| সকালে চলে আসবো|”
রঘু চলে যাওয়ার পর, মা বলল – “শিখাদি তোমার সাথে একটু আলাদা ভাবে কথা বলতে চাই ”
শিখা কাকিমা শেখর কাকুর দিকে তাকিয়ে বলল – “তুমি রাতের খাওয়ার গুলো একটু গরম করে দাও…অনেক খন হয়ে গেছে…নিশ্চয়ে ঠান্ডা হয়ে গেছে …..আমি কাকলির সাথে কথা বলি”
শেখর কাকু – “হা…তোমরা কথা বোলো| আমি খাওয়ার গুলো গরম করছি|”
শেখর কাকু রান্না ঘরে চলে গেলে, মা শিখা কাকিমা বলে বসলো – “এগুলো একদম ঠিক হচ্ছে না….আমি বিবাহিত…কি করে আমি রঘুকে বিয়ে করতে পারি…আমার খুব ভয় করছে|”
শিখা কাকিমা – “একদম বোকার মতো কথা বলছিস..তুই তো বিয়ে করে রঘুর সাথে সংসার পাতছিস না| যা করছিস তুই তোর পরিবারের জন্য করছিস, দেখলি তো কি ঘটলো আজ…সেদিন একই জিনিস ঘটেছিলো আমাদের সাথে….দীপক না থাকলে আজ আরো অনেক বাজে জিনিস ঘট তো|…আর জয়ন্ত হাতে সময়ে পাবে সব কিছু গুটিয়ে চলে যেতে|”
মা – “তাহলে তোমরা এতদিন এই গ্রামে রয়েছো কেনো ?”
শিখা কাকিমা ততলে তত্লে বলতে লাগলো – “না ওরকম ব্যাপার নয়ে আমরা চাইলে এই গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে পারতাম….”
মা একটু অন্যরকম চোখে শিখা কাকিমার দিকে তাকাতে – “তোর কি বিশ্বাস হয়ে না… আমাদের কোথায়ে…. সেদিন তোদেরকে আমরা জানিয়েছিলাম আর আজ তোকে শুধু বোঝাচ্ছি… তোদের ভালো চাই আমরা|” আর তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল – “শোন্… আমার বরটাকে একটু সাহায্য করি.. খাওয়ার গুলো গরম করার| এই সব জিনিস করার অভ্যাস নেই তো|”
মা বলে উঠলো – “আমার কোনোরকম সাহায্য লাগবে শিখা দি?”
শিখা কাকিমা – “না না..তুই এখানে বোস| আমি আসছি|”
কিছুক্ষণের মধ্যে রান্না ঘর থেকে রাতের খাওয়ার গুলো নিয়ে এলো শিখা কাকিমা আর শেখর কাকু| সবাই খেতে বসলো, সবাই খাওয়া শুরু করে দিলো কিন্তু মা চুপচাপ বসে ছিলো| শিখা কাকিমা – “কি রে কাকলি তুই তো কিছুই খাচ্ছিস না?”
মা – “আমার মাথা কাজ করছে না…বুঝতে পারছি না কি করতে চলছি আমি….”
শিখা কাকিমা – “একটু কিছু তো খা কাকলি”
মা – “শিখা দি …আমার কিছু খেতে ভালো লাগছে না…আমি কোন ঘরে শোবো বলে দাও…আমি চলে যাচ্ছি|”
শেখর কাকু – “কাকলিকে জোর করো না….ও কোন ঘরে শোবে দেখিয়ে দাও|”
শিখা কাকিমা মাকে নিয়ে গেলো অন্য একটা ঘরে, ফিরে এসে বসে থাকা শেখর কাকুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল – “তোমার কি মনে হয়ে কাকলি রাজি হয়ে যাবে?…. আমরা কি মুক্তি পাবো?”
শেখর কাকু দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল| দুজনকে চুপচাপ খেতে দেখে আমরা আমাদের ঘরে ফিরে এলাম| আমি আর সুমন্ত বেশিক্ষণ কথা বললাম না এবং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম|
ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার জন্য টুথপেষ্ট কোথায় পাবো জিজ্ঞেস করার জন্য বাইরে বেরোতেই দেখলাম সেই মাঝের ঘরে রঘু সেজে গুজে বসে আছে আর পাশে শেখর কাকু| শেখর কাকু রঘুকে কি যেনো বলছে, রঘু বলছে – “কোনো চিন্তা করবেন না.. সব বন্দোবস্ত হয়ে গেছে… মন্দিরে ওরা থাকবে|”
শেখর কাকু – “তুই কিছু জানিস রজত সেথ গ্রামের পঞ্চায়াতের সাথে কথা বলেছে কিছু আমাদের ব্যাপারে?”
রঘু- “হ্যাঁ বলেছে… আপনার স্ত্রী যতো ওই সব জিনিস পত্র আছে… দিয়ে দেওয়া হবে…. আপনার স্ত্রী এই বিয়ের পরে এই গ্রামের বন্দিনী নয়ে…. এখন শুধু আপনার…. খুশি তো ডাক্তার বাবু|”
শেখর কাকু – “তুই কি খুশি নোস.. এরকম একটা দুধে আলতা মেশানো রূপসীর স্বামী হতে চলছিস…”
রঘু – “আমি তো স্বপ্নে ভাবিনি আমার ভাগ্যে এরকম একটা সুন্দর গতর জুটবে.. সব রজত বাবুর কৃপা. .কখন আসবে আমার সপ্নরানী .. তাড়াতাড়ি করতে বলুন”
শেখর কাকু – “দেখ… ও তোর সাথে রাজি হয়েছে কারণ তোকে ও বিশ্বাস করে, বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত এমন কিছু করিস না…যাতে ও পিছিয়ে যায়ে… তুই তো জানিস এই গ্রামের প্রথা|”
রঘু মুচকি হাসলো এবং হঠাৎ আমাকে দেখে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো| শেখর কাকু আমাকে দেখতে পেলো এবং জিজ্ঞেস করলো – “কি রে কিছু লাগবে বাবাই…”
আমি বললাম – “কাকু.. আমি দাত মাজা খুজছিলাম… মুখ ধোবো|”
শেখর কাকু আমাকে নিয়ে বাথরুমে এবং দাত মাজা দিয়ে বলল – “নে মুখ ধুয়ে নে|”
শেখর কাকু বেড়িয়ে গিয়ে মাঝের রুমে আসতেই রঘু বেশ চিন্তিত সুরে জিজ্ঞেস করলো – “ছেলেটা কিছু শোনেনি তো?”
শেখর কাকু মুচকি হেসে বলল – “ওই টুকুনি বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করো না রঘু….. যদি শুনে থাকে কিছু… এখনো বোঝার বয়েস হয়েনি|”
আমি তাড়াতাড়ি দাত মেজে বাথরুম থেকে বেরোতেই দেখলাম মা যেনো শাড়িটাড়ি পড়ে কোথায়ে যেনো বেড়ানোর জন্য তৈরী হচ্ছে| শেখর কাকু বলছিলো – “কতক্ষণ লাগবে ওখানে শেখরদা?.. এরপর হাসপাতালেও যেতে হবে|”
শেখর কাকু – “আরে..আমি তো তোমার সাথে থাকবো কাকলি…ওই সব হয়ে গেলো আমাকে তো হাসপাতালে যেতেই হবে|”
মাকে যেতে দেখে, আমি মাকে জিজ্ঞেস করে বসলাম – “মা .. তুমি কোথায়ে যাচ্ছো?”
আমার এই প্রশ্ন শুনে মা কেনো জানিনা ঘাবড়ে গেলো| শিখা কাকিমা – “আরে তুই ঘুম থেকে উঠে পড়েছিস বাবাই…রাজা কি এখনো ঘুমাচ্ছে?…যা ওকে ডেকে দে না সোনা|”
আমি জিজ্ঞেস করলাম – “মা কোথায়ে যাচ্ছে কাকিমা?”
শিখা কাকিমা – “কোথায়ে যাবে মা?…এই একটু বাইরে যাবে ..বাবাকে দেখে আসবে|”
আমি – “আমিও যাবো বাবাকে দেখতে|”
শেখর কাকু – “এখন এই সময়ে বাচ্চাদের ঢুকতে দেয় না…তুই আর সুমন্ত একসাথে খেলা ধুলো কর| ফিরে এসে তোকে নিয়ে যাবো বাবার কাছে|”
আমি মায়ের দিকে তাকালাম, মা আমাকে দেখে বলল- – “আমি কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবো সোনা|”
মা শেখর কাকু আর রঘু কাকুর সাথে বেড়িয়ে যাওয়ার পর, শিখা কাকিমা সুমন্তকে ঘুম থেকে উঠিয়ে মুখ ধোয়ার জন্য বাথরুমে পাঠালো আর তারপর আমাদের দুজনকে সকালের খাওয়ার খেতে দিলো| শিখা কাকিমাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিলো|
প্রায় দুই ঘন্টা পর শেখর কাকুর গাড়ি সুমন্তের বাড়ি সামনে দাড়াতে, শিখা কাকিমা দৌড়ে বাইরে গেলো| সকালে মা রঘু আর শেখর কাকু ওই গাড়িতে গেছিলো| গাড়িটা দেখলাম অন্য একটা লোক চালাচ্ছে| লোকটা গাড়িটা থামাতে, শেখর কাকু যে লোকটার পাশে বসে ছিলো দরজা খুলে নেমে এসে গাড়ির পিছনের দরজাটা খুললো|মা নামলো, গোলায় মালা পড়ানো মাথায় সিদুর আর অন্য দরজা দিয়ে রঘু নামলো| রঘুর গলায় একই রকম মালা| শেখর কাকু – “কাকলি ভেতরে যাও…”