গার্গির বৌদি বেশ গছালো বোঝাই যায়…আর তাদের দারিদ্রও নিয়ে লজ্জিতো ও. দেয়াল এর প্লাস্টর খসে ইট বেরিয়ে পড়েছে… সেখানেই রুচি সম্মতো ভাবে সূচি-শিল্পো বা আঁকা চ্ছবি দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছেন তিনি.
সাধারণ সব জিনিস ও যার যার নিজের জায়গায় রয়েছে… টেবিল এর উপর অনেক বই পত্রও দেখলো তমাল… নেরেচেরে দেখছিল তমাল…
গার্গি বলল… বৌদি গল্পের বই এর পোকা… আর গোয়েন্দা গল্পের তো অন্ধ-ভক্ত.
তমাল বলল… আমার আসার উদ্দেশ্যটা বলোনি নিশ্চয়?
গার্গি বলল.. তা বলিনি বটে… তবে বৌদি কিছু সন্দেহ করেছে.
তমাল বলল… ভালো কথা… আমাদের কী পরিচয় দিয়েছ?
গার্গি বলল… কুহেলিকে সবাই চেনে এ বাড়িতে… আর আপনি হলেন তার দূর সম্পর্কের দাদা. কখনো গ্রাম দেখেন নি… তাই গ্রাম দেখতে এসেছেন.
তমাল বলল… যাক… সম্পর্কটা দূরে রেখে ভালই করেছ… তারপর দুস্টু হাঁসি দিলো চোখ টিপে. তৃষা বৌদি চা নিয়ে এলে সবাই চা শেষ করলো নীরবে.
তারপর তৃষা বৌদি বলল… ওদের ঘরে নিয়ে যাও গার্গি… এত দূর থেকে এসেছে… খুব ক্লান্ত নিশ্চয়.
তমাল বলল… না না… ক্লান্ত বেশি নই… তবে ফ্রেশ হয়ে গ্রামটা একটু ঘুরে দেখবো.
তৃষা বলল… হ্যাঁ গ্রাম দেখতে এসেছেন… সে তো দেখবেনই… যান ফ্রেশ হয়ে নিন…
গার্গি নিয়ে যাবে. তমাল বলল… আমি আপনার থেকে ছোট… আমাকে আপনি বলবেন না প্লীজ.
তৃষা বলল… আচ্ছা… তাই হবে ….. প্রত্যেক তলাতে ৬টা করে রূম. দোতলার এক কোণে গার্গির দাদা বৌদি থাকেন… অন্য কোনায় তমালের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে… তার পাশের ঘরে থাকবে গার্গি আর কুহেলি.
গার্গিদের বাড়িতে ওভারহেড ওয়াটর ট্যাঙ্কের ব্যবস্থা নেই. ইলেক্ট্রিসিটী আছে যদিও… তবে পাত লাগানো হয়নি. নীচে কলঘরে টিউবওয়েল বসানো আছে. সেখান থেকেই জল আনতে হয় দোতলায়.
দোতলায় একটা কমন বাতরূম আছে. সেখানে চৌবাচ্ছায় জল ভড়া আছে. তমাল নিজের জন্য বরাদ্ধ ঘরে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে নিলো.
কুহেলি ফ্রেশ হবার পরে তমাল গার্গিকে বলল… চলো তোমাদের গ্রামটা ঘুরে আসি.
গার্গি বলল.. এখনই যাবেন?
তমাল বলল… হ্যাঁ চলো এখনই যাই… আর তুমি কুহেলির বন্ধু… আমাকে আপনি বলো না… তুমিই বলো. গার্গি একটু হেঁসে ঘার নারল.
তমাল আবার বলল… ভালো কথা… তোমার ঠাকুরদা যে কবিতাটা দিয়েছেন তোমাকে… ওটা সঙ্গে নাও. গার্গি আবার ঘার নেড়ে সেটা আনতে নিজের ঘরে চলে গেলো.
তিনজনে মেঠো পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গ্রামটা ঘুরে দেখছে. জায়গাটা এখনো সত্যিকারের গ্রামই রয়েছে. আধুনিকতা ঢোকার চেস্টা করছে বটে.. তবে এখনো খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি. ছাড়া ছাড়া কিছু ঘরবাড়ি রয়েছে… কেউ কেউ অল্প বিস্তর পাকা করে নিয়েছে… তবে বেশির ভাগই কাঁচা. গার্গিদের বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা নির্জন জায়গায় চলে এলো ওরা.
সামনে একটা খাল দেখলো… বেশ বড়ো. সেদিকে তমাল তাকিয়ে আছে দেখে গার্গি বলল… এটা আগে এক সময় শাখা-নদী ছিল… এখন মজে গেছে বলে পঞ্চায়েত থেকে সংস্কার করে চাষ-বাস এর জন্য জল সরবরাহ করার কাজে ব্যবহার করা হয়.
তমাল মাথা নেড়ে বোঝালো… বুঝেছে সে. খাল এর পারটা বেশ উচু… আর ঝোপ ঝাড়ে ভর্তী সাইড দুটো. ওরা উচু পার থেকে একটু নেমে এসে ঢালের উপর একটা ফাঁকা জায়গায় বসলো… উপর থেকে দেখা যাচ্ছে না ওদের.
তমালের দুপাশে গার্গি আর কুহেলি বসলো. তমাল বলল.. কই দেখি কাগজটা দাও গার্গি. সেটা হাতে নিয়ে নেড়ে ছেড়ে দেখলো তমাল. খুব পুরানো একটা কাগজ… লাল হয়ে চ্ছোপ চ্ছোপ দাগ পড়ে গেছে. বেশ শক্তও হয়ে গেছে… চাপ দিলে ভেঙ্গে যাবে এমন ভয়ও রয়েছে.
তমাল সাবধানে কাগজটার ভাজ খুলে দেখলো ফাউন্টেন পেনে লেখা একটা লম্বা কবিতা. একবার চোখ বুলিয়ে বলল… থাক পরে পড়ছি.. আগের কথা আগে জানা ভালো…. তুমি বরং প্রথম থেকে বলো গার্গি. তিনজনে একটু নড়েচড়ে আরাম করে বসলো.
গার্গি বলতে শুরু করলো… আমাদের বাড়িটা দেখে বুঝতেই পারছেন… এক সময়ে এই বাড়ি এখনকার মতো ছিল না. গ্রামের মানুষ এখনো একে জমিদার বাড়ি নামেই ডাকে. ইংরেজ দের তবেদারি করে রায়চৌধুরী উপাধি পয়জযন আমার ঠাকুরদার প্রপিতামহ… ইন্দুভূষণ রায়চৌধুরী.
অনেক জমিজমা ছিল তার. ইংরেজ দের তোসমদি করে বিভিন্ন উপায়ে সেটা ফুলে ফেপে রাজকীয় হয়ে উঠলো তার আমলে. জমি জমার সঙ্গে সঙ্গে বেবসা বাণিজ্জো ও শুরু হলো… সিন্দুক ভরে উঠে উপচে পড়তে লাগলো. তারপর যা হয় তাই হলো…
বিলাসিতা আর বাবুগিরিও এসে পড়লো মা-লক্ষ্মীর পিছু পিছু. ইন্দুভূষণ এর পরে জমিদারী পেলেন তার পুত্র শসিশেখর রায়চৌধুরী. তিনি বাবুগিরি আর উশৃণ্খলতাকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেলেন. তার সঙ্গে যোগ হলো লাম্পত্ব. দেশ বিদেশ থেকে বাইজী আসতে লাগলো প্রায় দিন. মদ আর যৌনতার ফোয়ারা ছুটলো.
গ্রামটা শহর থেকে অনেক দূরে বলে ইংরেজদের বড়ো কর্তাদের বাগানবাড়ী হয়ে উঠলো এটা. আর বিদেশী প্রভুদের খোসামদিতে যথেচ্ছো অর্থ-নাস হতে শুরু করলো. ভড়া চৌবাচ্ছায় ছিদ্র হলে যেভাবে জলের স্তর চুপি সারে নামতে থাকে… সেভাবেই সঞ্চিত ধন কমতে শুরু করলো. আমার ঠাকুরদার বাবা চন্দ্রনাথ রয়চৌধুরী যখন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হলেন তকন অর্ধেকেরও বেশি নস্ট হয়ে গেছে.
খুব মন দিয়ে শুনছিল তমাল আর কুহেলি.. তমাল নরম ঘাস এর উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো. কুহেলি তার বুকের উপর শুয়ে কোনুইয়ে ভর দিয়ে মাথা উচু করে রাখলো. তার বুক তমালের বুকের উপর আশ্রয় নিলো.
সেদিকে তাকিয়ে গার্গি একটু মুচকি হেঁসে আবার বলতে শুরু করলো…. সারা জীবন লাম্পত্ত আর খোলাম কুচীর মতো টাকা উড়িয়ে শেষ বয়সে অনুতাপ হলো বোধ হয় শসিশেখরের.
Part VIII
তিনি জীবন ধারার রাস টানতে চেস্টা করলেন… কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে… বয়স তাকে অসমর্থ করে তুলেছে. জমিদারীতে তখন আয় এর চাইতে ব্যায় বেশি.
তাই বোধ হয় তিনি ছেলের নাম এ একটা উপদেশ… কবিতা আকারে লিখে ছেলের হাতে দিলেন. এটাই সেই কবিতা… বা ছড়া. কবিতাটা দিয়ে ছেলে কে বললেন… যদি কোনদিন বিপদে পরো.. এটা কে মন দিয়ে পড়ো… বিপদ থেকে উদ্ধার এর পথ খুজে পাবে এর ভিতর. কিন্তু জমিদারী রক্তও শরীরে রয়েছে…
প্রথম বয়সে আমার ঠাকুরদার বাবা ও বেশ কিছু টাকা উড়িয়ে দিলেন বাবুয়ানিতে. কিন্তু তিনি শিক্ষার আলোর পথ দেখেছিলেন. সেই যুগেও আমার ঠাকুরদার বাবা বি.এ পাস করেছিলেন.
বাইরের সমাজে মিশে তিনি সম্পত্তির কদর করতে শিখলেন. দেওয়া কবিতাটাও হয়তো তার শুভ বুদ্ধির জাগরণ ঘটিয়েছিল. তিনি চেস্টা করে গেছেন পরিবারকে বাঁচিয়ে তোলার. কিন্তু কথায় বলে এক পুরুষ পর পর ভালো আর খারাপ গুণ বংশ ধারাতে প্রকাশ পায়.
আমার ঠাকুরদার ভিতরও শসিশেখর এর খারাপ গুণ গুলো পুরো মাত্রায় প্রকাশ পেলো. আমার ঠাকুরদার নাম অলকেস রায়চৌধুরী. সারা জীবন সংসার সম্পর্কে উদাসীন.
ভোগ বিলাস এ ডুবে থাকলেন যৌবন এ. চন্দ্রনাথ এর বয়স হয়েছে… তিনি ছেলে কে বাগে আনতে পারলেন না. দারিদ্রও এসে হানা দিতে শুরু করলো পরিবার এ. ভালো পরিবার দেখে ছেলের বিয়ে দিলেন চন্দ্রনাথ… এক ছেলে এবং এক মেয়ে হলো তার… নিখিলেস ও সর্বানী… মানে আমার বাবা ও আমার পিসি. তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে তমালের বুকের উপর শুয়েই পড়েছে কুহেলি…
তমাল তার চুল গুলো নিয়ে বিলি কাটছে… কিন্তু পুর্ণ মনোযোগ গার্গির দিকে… গার্গি বলে চলেছে…. চন্দ্রনাথ ও একদিন তার ছেলে কে ডেকে ভাবর দেওয়া কবিতা আর একই উপদেশ ছেলে অলকেস কে দিয়ে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে গেলেন.
শসিশেখর যেমন পরন্ত বেলায় এসে অনুতাপ করেছিলেন… অলকেস এর ভিতর ও সেটা দেখা দিলো. তিনি লক্ষ্য করলেন এক পুরুষ পর পর বংশগতিতে গুণ এর প্রবাহ তার ছেলের বেলায় খাটলো না.
তার ছেলে মানে আমার বাবা ও জমিদার বংশের সমস্ত দোশ গুলো ধারণ করলেন… চন্দ্রনাথ এর গুণ বা শিক্ষা… কোনোটাই পেলেন না আমার বাবা. তার অকরমন্নতায় সংসার এর লক্ষ্মী পরিবার ছেড়ে চলে গেলেন.. আর দারিদ্রের অতলে তলিয়ে গেলাম আমরা. অলকেস চেস্টা করেছিলেন পরিবার কে শৃংখলায় বাধতে…
তাই শেষ বয়সে তিনি বেশ কঠোর এবং রাগী হয়ে পড়েছিলেন. আমার পিসি সর্বানী এই সময় একজন নিচু জাত এর ছেলের প্রেমে পড়েন. বাড়ি থেকে পালিয়ে তাকে বিয়েও করেন.
অলকেস রেগে গিয়ে তাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিতও করেন. কিছুদিন পরে তাদের এক সন্তান হয়… আমার পিসতুতো দাদা… সৃজন. একটা আক্সিডেংটে পিসি পিষেমসাই দুজনই মারা পড়েন…
সৃজনদার বয়স তখন ১২ কি ১৩. ঠাকুরদা ভেঙ্গে পড়েন মেয়ের মৃত্যুতে. সম্পত্তি থেকে বঞ্চিতও করলেও সৃজনদাকে বাড়িতে আশ্রয় দেন. সেই থেকে সে এই বাড়ি তেই আছে. আমার বাবা মা এর ২টি সন্তান…
আমার দাদা অম্বরিস রয়চৌধুরী আর আমি. দাদা বছর ৫ এক হলো বিয়ে করেছেন. কিন্তু সংসার এ তার ও মন নেই. ভিষণ বোড মেজজি… আর মদ গাঁজা জুআ কোনো কিছুই বাদ নেই তার.
আমরা আস্তে আস্তে সমাজ-স্তর এর সর্বোচ্ছ শিখর থেকে সরবো-নিম্নও স্তর এ এসে পৌচ্চেছি তমাল দা… জানি না কিভাবে চলবে এর পরে. পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাড়াবো… টাকার অভাবে সেটাও শেষ করতে পারবো না বোধ হয়…. এই পর্যন্ত বলে গার্গি একটু থামল…
তমাল ও কুহেলি ও চুপ থেকে তাকে সময় দিলো গুছিয়ে নিতে. তারপর তমাল বলল… তারপর কী হলো গার্গি? কবিতাটা তোমাকে কবে দিলেন তোমার ঠাকুরদা?
গার্গি বলল…. কলেজ হোস্টেলে থেকেই খবর পেলাম ঠাকুরদা ভিষণ অসুস্থ. আমি চলে এলাম. শেষ দিকে ঠাকুরদা প্রায় কাউকেই সহ্য করতে পারছিলেন না… একমাত্র আমি ছাড়া. আমাকে ভিষণ ভালোবাসতেন তিনি. আমি গেলেই উনি কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন. বলতেন তুই এ আমাদের বংশের এক মাত্র ভর্ষা…..
আমি পৌছে দেখলাম তিনি ভিষণ অসুস্থ. তিনি বললেন গার্গি বাদে সবাই একটু বাইরে যাও… আমার সাথে দিদিভাই এর একটু কথা আছে. অনিচ্ছা সত্বেও সবাই বেরিয়ে গেলো.
আমাকে বললেন দরজা লাগিয়ে দিতে. তারপর চাবি দিয়ে সিন্দুক খুলতে বললেন. ভিতরে টাকা পয়সা কিছুই ছিল না… ছিল একটা উইল… আর একটা খামে ওই কবিতাটা.
আমাকে বললেন… দিদিভাই… আমি চললাম… কিছুই দিয়ে যেতে পারলাম না তোদের. বাড়িটায় এক মাত্র সম্বল… সেটা তোর দাদা কেই দিয়ে গেলাম. তবে এই একটা জিনিস অনেক পুরুষ ধরে চলে আসছে আমাদের বংশে. জানি না এটাতে তোর কিছু লাভ হবে কী না.
তবে তোকে এটা দিয়ে গেলাম. তুই লেখা পড়া শিখেছিস… তুই হয়তো এই জিনিসটার উদ্দেশ্য আর নির্দেশ বুঝতে পারবি. আমার মনে হয়… কিছু একটা ব্যাপার আছে এটার ভিতর.. তাই তোকে দিয়ে গেলাম…. বলে খামটা তিনি আমার হাতে তুলে দিলেন… আর বললেন এটা যেন হাত ছাড়া না করি…
দুদিন পরে ঠাকুরদা মারা গেলেন. তমাল প্রশ্নও করলো… আর কে কে জানে খাঁ তার কথা? গার্গি বলল… সবাই জানে. ঠাকুরদা বেঁচে থাকতে কেউ কিছু বলল না… কিন্তু তিনি চলে যেতেই সবাই আমাকে চেপে ধরলো… কী দিয়ে গেছেন আমাকে ঠাকুর দা? আমি খামটা তাদের হাতে তুলে দিলাম.
দাদা কবিতাটা দেখে বিদ্রুপ করলো. সৃজন দা মুখ বাঁকালো… শুধু বৌদির ভুরু কুচকে রইলো. তারপর উইলটা পড়া হলো. ঠাকুরদা উইল করে গেছেন… আমার স্থাবর ও অস্থাবর যাবতীয সম্পত্তির ভিতর শুধু মাত্র স্থাবর সম্পত্তি… এই বসতবাড়ি পাবে আমার একমাত্র পুত্র নিখিলেস এর পুত্র অম্বরিস.
আর আমার সমস্ত অস্থাবর এবং গচ্চিত সম্পত্তি পাবে নিখিলেস এর কন্যা গার্গি রায়চৌধুরী. আবার উল্লেখ যে একমাত্র গার্গি রায়চৌধুরী এর অধিকার থাকবে তার উপর… অন্য কারো নয়. সবাই অবাক হয়ে গেলো… অস্থাবর সম্পত্তি…
টাকা পয়সা যত সামান্নই আছে… সেগুলো উইল করে যাবার দরকার ছিল না… তবুও তিনি কেন উইল করলেন… এবং ২বার উল্লেখ করে গেলেন উইলে… কেউই বুঝতে পারছিল না.
দাদার ধারণা বুড়ো বয়সের ভিমরতি… নিজেকে নাকি ঠাকুরদা তখনও জমিদার ভেবে স্বপ্ন দেখতেন.. আর ভাবতেন তার সিন্দুক বোঝাই সোনা দানা মোহর… সেই কল্পনার ধ্যানেই আমাকে দিয়ে গেছেন.
বৌদি কিন্তু সন্দেহ করলো সেদিন সবাইকে বের করে দিয়ে ঠাকুরদা আমাকে কোনো দামী জিনিস বা তার হদিস দিয়ে গেছেন. প্রথমে আমার উপর চোট্পাট্.. তারপর ভয় দেখিয়ে কথা আদায়ের চেস্টা চলল…
লাভ হলো না দেখে এখন খুব ভালো ব্যবহার করে মন জয়ের চেস্টা করে চলেছেন. কিন্তু তমালদা বিশ্বাস করূন আমি কিছুই জানি না… কিছুই বুঝতে পারছি না… !
তমাল বলল… বলাই বাহুল্য়ো.. তুমি বুঝতে পারলে আমাকে ডাকতে না গার্গি. আচ্ছা এবার এসো দেখা যাক তোমার ঠাকুরদা তোমাকে কী দিয়ে গেছেন… খাম থেকে কাগজটা খুলে কোলের উপর স্বযত্নে মেলে ধরলো তমাল. তারপর জোরে জোরে পড়তে শুরু করলো….
“চন্দ্র-কথা” জীবনটাও চাঁদ এর মতো/ সামনে আলো পিছে ক্ষত/ যখন আলোয় বসতে থাকে, কেউ দেখেনা অন্ধকার/ হঠাৎ আঁধার ঘনায় যখন…. চতুর্দিকে বন্ধ দ্বার./ ভয় পেয়ো না অন্ধকারে/ ফুটবে আলো চন্দ্রহারে/ কানক প্রবায় বড় জীবন…. সঠিক শ্রম আর কাজে/ দুবার খুলে বাইরে এসো….
দাড়াও জগত মাঝে./ দৃষ্টি রেখো চতুর্পাশে/ কোথায় সুযোগ, কখন আসে/ অপেক্ষা আর ধৈর্য রেখো… ইন্দু-সম সহনশীল/ কামনে সে জোৎসনা পেতে… জমায় আলো তিল তিল./ মধ্য বয়স পথ দেখাবে/ কোথায় মাথা খুড়তে হবে/ সঠিক পথের সন্ধানেতে…. চক্রাকারে ঘুরছে হায় !/ আকার বারে… আকার কমে… সোলো-কলা পুর্ণ হয় !!/ পূর্ণিমা… আর অমনীসা/ একই শশির দুটি দশা/ উল্টো সোজা দুইই সঠিক… দুটো থেকেই শিক্ষা নাও/ ডাইনে এবং বাঁয়ে ঘুরে… সঠিক লক্ষ্যে পৌছে যাও !/ কবিতাটা পড়া শেষ হতেই কুহেলি বলল… বাবাহ! কী এটা?
এতো দেখি হিতপদেশ ! আমি তো ভাবলাম গুপ্তধন টন কিছু হবে. হা ! সারা জীবন বাবুগিরি করে শেষে এসে উপদেশ? তাও আবার উইল করে দিয়ে গেছে… আজব ব্যাপার সব.
Part IX
কুহেলির ব্যাঙ্গে গার্গি একটু দুঃখ পেল… আর একটা হতাশাও গ্রাস করলো তাকে… মুখটা কালো হয়ে গেলো গার্গির. সেটা লক্ষ্য করলো তমাল. বলল… আমি কিন্তু মজা পাচ্ছি. আবার কৌতুহলও বোধ করছি. গার্গির কথা অনুযায়ী এটা শসিশেখরের লেখা… তার মনে প্রায় ১৫০ বছরের পুরানো. কবিতাটার ভাষা দেখে কী তোমাদের সেটা মনে হচ্ছে?
কুহেলি বলল… তাই তো? কী যেন একটা খট্কা লাগছিল মানে… তুমি বলাতে এখন বুঝলাম ভাষাটা আমাকেও ভাবিয়েছিল.
গার্গি বলল… হ্যা আমার ও কেমন জানি লেগেছিল. তমাল বলল… গল্পটা যখন চালু আছে…
তখন একটা উপদেশ হয়তো ঠিকই শসিশেখর দিয়ে গিয়েছিলেন… কিন্তু এটা সেটা নয়. এটা লেখা হয়েছে অনেক পরে. শসিশেখর এর যুগে বাংলা ভাষা এই রকম ছিল না. সেই গল্পটাকে বজায় রাখা হয়েছে এই কবিতাটাকে গোপন রাখতে. এটা খুব বেশি হলে ৮০ কী ৯০ বছরের বেশি আগে লেখা হতেই পরে না.. অর্থাত এটা লিখেছিলেন চন্দ্রনাথ… তাও তার শেষ বয়সে. গার্গি দের পূর্বপুরুষ দের সবার নাম এই চাঁদ এর প্রতি-শব্দ আছে… ইন্দু.. শশি.. চন্দ্র…. কিন্তু কবিতাটার নাম খেয়াল করো… “চন্দ্র-কথা”.
এর ভিতরও একটা সূত্র দিয়ে গেছেন তিনি. ইন্দু বা শশি নয়… চন্দ্রনাথ এর নিজের কথা এটা. এখন প্রশ্নও হলো… এই রকম একটা সস্তা কবিতা কেন বংশ পরম্পরায় উত্তরাধিকার সূত্রে দান করা হবে? কবিতাটার সাহিত্য মূল্য কিছুই নেই… ভিষণ কাঁচা একটা কবিতা… গুরু চন্ডালী দোশ আছে… কিন্তু বলার ধরণটা কৌতুহল জাগায়.
কিছু একটা বলার চেস্টা করা হয়েছে সু-কৌশলে. আর সেটা একমাত্র গার্গি দের বংশে উচ্চো শিক্ষিত চন্দ্রনাথই পারতেন. সুতরাং এটা তারই লেখা.. এব্যাপারে আমি নিশ্চিত.
জলদি করে পরের অংশটুকু দিন..
আপনাকে ধন্যবাদ