অষ্টম পর্ব
আজ বউভাত।জানলার ধারে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত মানুষের পথ চলা দেখছি। বাড়িতে দু-দুটো বউ সেখানেও ব্যস্ততা কিছুটা অন্য রকম।একদিন যে বাড়ীর সঙ্গে ছিল ওতপ্রোত সম্পর্ক বিয়ের পর সে বাড়ী আজ আর পাঁচটা বাড়ীর মত ধরাছোয়ার বাইরে।ইচ্ছে হলেই যে কোনো ঘরে আমি ঢুকতে পারবো না।সময়মতো চা পাইনি বলে চোটপাট করতে পারবো না। ফাল্গুণী চাকরি করে না মৌমিতা চাকরি করে কিন্তু একজায়গায় দুজনে এক। ডান হাত উল্টে দেখলাম মন এখানে ঠোট রেখেছিল।মাথায় খালি দুষ্টু বুদ্ধি। কাল রাতে মেসেজ আসেনি। এভাবে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে মেসেজ আসা।দেখতে দেখতে তিন সপ্তাহ চলে গেল একদিন ফিরে আসবে অতনু।সেই এক ঘেয়ে জীবনযাপন।দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এল।
সকাল থেকে এ বাড়ীতে অশান্তি। পশুপতি শাড়ী কিনে এনেছেন।দুটো শাড়ী একই রকম। নির্মলাসুন্দরী বেকে বসেছেন তিনি যাবেন না,শরীর ভাল নেই।তনিমা হতাশ কত আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল সবার সঙ্গে দেখা হবে আবার।সেই ছেলেটা যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছিল।বৌদি বলছিল ছেলেটার নাম মণিশঙ্কর,দাদা নিশ্চয়ই চিনবে। তাকে ঘুরে ঘুরে দেখছিল। বোউদির সঙ্গে কথা বলার আছিলায় তার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে ছিল। ভেবেছিল বৌদি আলাপ করিয়ে দেবে। বৌদির উপরু খুব রাগ হয়।একটা কথা মনে পড়তে হাসি পেল,বৌদি বলল ভুত মণিশঙ্কর ভুল ধরিয়ে দিল মেয়েরা ভুত নয় পেত্নী হয়। ভুত হয় ছেলেরা।সজলকে এখনই বাতিল করার দরকার নেই,বেশি প্রশ্রয় না দিলেই হল।
পশুপতি বউকে বোঝায়,দেখো কুটুম বলে কথা তুমি না গেলে ভাল দেখায় না। বউমার যাওয়া আর তোমার যাওয়া কি এক হল?
–দেখো আমাকে জ্বালাতন কোর নাতো?আমি কি বেড়াতে যাচ্ছি?বিয়ে বাড়ী যেমন তেমন গিয়ে হাজির হলেই হল?বউমা শোনো।
আমি বেরিয়ে সামনে গিয়ে দাড়াতে নির্মলা সুন্দরী বললেন,তুমি বলছিলে না কদিন গিয়ে থাকবে?
–আমি একা যাবো না।
–অতনু নেই কে তোমায় নিয়ে যাবে বাছা?তুমি বলবে শাশুড়ীর শরীর ভাল না–।
–আমার শরীর ভাল না মা।
–তোমার আবার কি হল দিব্যি তো চরে বেড়াচ্ছিলে? তুমি কি আমাকে জব্দ করতে চাও?
–আমার শরীরের সঙ্গে আপনার জব্দ হওয়ার কি হল?
–মুখে মুখে তর্ক করবে না বলে দিচ্ছি।পদ্ম ঠিকই বলেছিল মেনিমুখোরা তলে তলে বেশি শয়তান।
–বাইরের লোকের সঙ্গে বাড়ীর বউকে নিয়ে কথা বলতে লজ্জা করল না?
–ব-উ-মা।পশুপতি গর্জে উঠলেন।তুমি খুব বাড়াবাড়ি করছো তখন থেকে লক্ষ্য করছি।যাও ঘরে যাও,তোমাদের কাউকে যেতে হবে না।
–আমি কি বাড়াবাড়ি করলাম? মা-ই তো বললেন আমাকে নিয়ে ওনার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছেন।
–আমাকে ঘাটিও না বলছি,পরশু রাতে যে পৌছে দিল ছেলেটি কে?
–বাবা ছেলেটা আমাদের সঙ্গে আসেনি।তনিমা বলল।
–তুমি চুপ করো।বড়দের মধ্যে কথা বলতে আসবে না।
আমি আর দাড়ালাম না,এরা খুব নোংরা যত কথা বলবো তত ক্লেদ উঠবে।বন্ধু,কিসের বন্ধু যদি না দেখতাম। তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেছে কোথায় রামায়ণ মহাভারত পড়বে তা না লুকিয়ে লুকিয়ে পর্ণোগ্রাফির বই পড়ে।ঘরে এসে বালিশে মুখ গুজে কেঁদে ফেললাম।
বাপের বাড়ী শ্বশুরবাড়ী কোনোটাই আজ নিজের বলে মনে হচ্ছে না।গভীর অন্ধকারে জোনাকির মত মিট মিট করে জ্বলছে একটি মুখ,অবজ্ঞা অবহেলায় আজও অম্লান। তাতেই আরো বেশি রাগ হয়, একটু মান-অপমান বোধও কি থাকতে নেই?কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,ঘুম ভাঙ্গল সন্ধ্যে বেলা। নির্মলা সুন্দরী বললেন,ভাত ঢাকা আছে খেয়ে নেও।
–আমার ক্ষিধে নেই।
–কি ব্যাপার বলতো?তোমার মতলবটা কি কোন রাগের প্রতিশোধ নিতে চাও বউমা?
–দোহাই আপনার,বিশ্বাস করুন আপনাদের প্রতি আমার কোনো রাগ নেই।আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন।
নির্মলা সুন্দরী দমে গেলেন কি ভেবে যাবার আগে বললেন,শোনো বউমা তুমি শান্তিতে থাকো তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই শুধু একটা অনুরোধ নিজে যা করে বেড়াও আমার মেয়েটাকে তার সঙ্গে জড়িও না।
নির্মলাসুন্দরী চলে গেলেন। আমি অবাক হয়ে ভাবি কি সব বলে গেলেন উনি? তনিমাকে কিসের সঙ্গে জড়ালাম আমি? আমার বিয়ের আগে থেকেই সজলের সঙ্গে তনিমার আলাপ।খাটের উপর পড়ে থাকা মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ বক্স খুললাম। নতুন কোনো মেসেজ নেই।রাত বাড়তে থাকে সবাই ব্যস্ত বিয়ে বাড়ীতে হয়তো,ফাল্গুণী আর মৌমিতাকে সাজিয়ে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে।একে একে এসে তুলে দিচ্ছে তাদের হাতে উপহার।খুব অভিমাণ হয় কারো কি একবারও মনে হল না বাড়ীর একমাত্র মেয়ে মণিমালা বিয়েতে আসেনি। কেন এলনা গুরুতর কিছু ঘটতেও তো পারে। ফোন করে খবর নেবার প্রয়োজন বোধ করল না কেউ? ছোড়দা বড়দা বউ পেয়ে সব ভুলে গেছে? না,কারো মনে রাখার দরকার নেই আমিও আর কাউকে মনে করতে চাইনে। যা আছে আমার কপালে তাই হবে। উঠে রান্না ঘরে গিয়ে চা করছি নির্মলা সুন্দরী এসে জিজ্ঞেস করলেন,এত রাতে চা করছো,এ বেলাও কিছু খাবে না নাকি?
–আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না মা।
–ঠিক আছে ইচ্ছে না করলে থাক।খালি চা খেও না সঙ্গে মুড়ি বা বিস্কিট কিছু খেও।
শাশুড়ির সদয় ব্যবহার ভাল লাগে,জিজ্ঞেস করলাম,আপনি চা খাবেন?
–আমি? আচ্ছা দাও।কিছুক্ষণ পর চিন্তিত ভাবে জিজ্ঞেস করেন,আচ্ছা বউমা মেয়েটা এখনো ফিরল না কোথায় যেতে পারে বলতে পারো?
–তনিমা আপনাকে বলে যায় নি?
–আমাকে কি কিছু বলে,সারাক্ষণ মোবাইল কানে কি যে বকবক করে কার সঙ্গে কে জানে। অতনুকে পইপই করে বলেছিলাম ওকে ঐসব দেওয়ার দরকার নেই তা কেউ শোনে আমার কথা?
শাশুড়ীর প্রতি মায়া হয় বললাম,চিন্তা করবেন না এখুনি চলে আসবে।বাস ট্রামের যা অবস্থা।
–চিন্তা করছি না, কি জানো ছেলেদের গায়ে না পড়লেও মেয়েদের গায়ে ছাপ পড়ে যায়।
নির্মলাসুন্দরীকে এককাপ চা দিয়ে একটা বাটিতে মুড়ি আর চা নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম।মুড়ি চিবোতে চিবোতে ভাবতে থাকি ছাপ পড়ে ঠিকই আবার ছাপ তোলার নানা ওষুধ বেরিয়েছে বাজারে। পরক্ষণেই মনে পড়ল সঞ্চিতাদির কথা ,আমার দুসম্পর্কের দিদি।বিয়ের পর গর্ভবতী হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় চেক-আপের জন্য।তখন নাকি ডাক্তারবাবু পরীক্ষা করে জিজ্ঞেস করেছিলেন,আগের সন্তান এ্যাবর্শন করিয়েছিলেন না নষ্ট হয়ে গেছিল?ব্যাস আসল ব্যাপার ফাঁস হতেই পত্রপাঠ বউকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাপের বাড়ি।সঞ্চিতাদি বাপের বাড়ীতে পুত্র সন্তান প্রসব করে।খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ীর লোকেরা সে যাত্রা ক্ষমা করে দিয়ে সঞ্চিতাদিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
একেই বলে ভাগ্য,ছাপ বাইরে মোছা গেলেও ভিতরে থেকে যায়।আমার ক্ষেত্রে অবশ্য প্রেগন্যান্সি হয়নি তার আগেই রোধ করা হয়েছিল। মুখটা মনে পড়ল, মন তখন পাগল হয়ে গেছিল। মুড়ি চিবোতে বেশ লাগছে।তনিমা কোথায় গেল?সজলের সঙ্গে যায় নি তো?তনিমা আসল কথা জানে না,ওর ধারণা ওকে দেখেই মন এগিয়ে এসেছিল।ব্যাপারটা ভাবতে বেশ মজা লাগে।কত বয়স হবে তনিমার? খুব কম হলেও তিন-চার বছরের ছোট হবে আমার থেকে?
তনিমার গলা পাচ্ছে,মনে হচ্ছে তনিমা ফিরেছে।জোরে জোরে কথা বলেছে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি ঘর থেকে।আমি শুয়েই থাকলাম। শাশুড়ী বলছেন,কি হল আবার?এবাড়ীতে দেখছি সবার ক্ষিধেতে অরুচি?
–জানো মা বৌদির বাপের বাড়ী হেভি সাজিয়েছে।
–তুই কি করে জানলি?
–ওদিকে একটা কাজে গেছিলাম দূর থেকে দেখলাম।
–একা একা অতদুর গেছিলি না আর কেউ সঙ্গে ছিল?
–কে আবার সঙ্গে থাকবে?তোমার যত বাজে কথা।বৌদি কি ঘুমিয়ে পড়েছে?
–জানিনা বাপু আজ সারাদিন কিছু খেল না,খানিক আগে চা করে নিয়ে গেল। অল্প একটু খা।
–ঠিক আছে খুব অল্প দেবে।কিছুক্ষণ নীরবতা শাশুড়ি সম্ভবত ভাত আনতে গেলেন।তনিমার গলা পাওয়া গেল,জানো মা দাদার অফিসের ম্যানেজার বৌদির দাদার বন্ধু।
–আগে তো শুনিনি,তুই এত খবর কোথায় পাস?
–আগে ইনফোসিসে ছিল,ইনফোসিস থেকে মোটা মাইনের অফার দিয়ে ওদের ব্যাঙ্গালোর অফিসের জন্য ডাকছে। কেন যাচ্ছে না জানো হি-হি-হি।
–এর মধ্যে হাসির কি হল?
–ফিঁয়াসেকে ছেড়ে যাবে না হি-হি-হি।
–সে আবার কি?
–লভার,লভার এখানে থাকে তাই ব্যাঙ্গালোর যাবে না।
খেয়েদেয়ে তনিমা দরজা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করে,বৌদি ঘুমিয়ে পড়েছো?
তনিমা যা বলল সত্যিই কি অতনুর অফিসের ম্যানেজার? আমি সাড়া দিলাম না,রাত দুপুরে গপ্প করার মত মেজাজ আমার নেই।তনিমা এত কথা জানলো কি করে? কে ওকে এত খবর দিল? মনের সত্যিই কি কোনো প্রেমিকা আছে? বন্দনাকেও বলেছিল এ কথা।যদি সত্যিই কোনো প্রেমিকা থাকে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। মোবাইলে টুং করে শব্দ হল। অনেকদিন বাঁচবে মন। মেসেজ খুলে দেখলাম,আজ কেন এলেনা?
যাক একজন তবু যাইনি বলে খবর নিল। পরমুহুর্তে প্রেমিকার কথা ভেবে পটপট টাইপ করি,তুমি কেন মেসেজ করো?মাথার বালিশের কাছে ফোন রেখে গায়ে চাদর টেনে শুয়ে পড়লাম।টুং করে শব্দ হল,আবার কে? মেসেজ খুলে চোখের সামনে ধরলাম,আনন্দ পাই।সেদিন দুটো কথা বলে একটু ছুয়ে কি আনন্দ পেয়েছি তুমি জানোনা।
মোবাইল হাতে ধরে ভাবছি, দুটো কথা বলেই আনন্দ আর কিছু চাই না?আমি আবার টাইপ করি,কথা বলতে ইচ্ছে হলে ফোন করতে পারো।সেণ্ড বাটন টিপে দিয়ে মনে হল এটা কি ঠিক করলাম? ফোন বেজে উঠল খাল কেটে আমিই কুমীর ডেকে আনলাম। তাড়াতাড়ি ফোন কানে দিয়ে বলি,এত রাতে কি ব্যাপার?
–মণি অনেক রাত অবধি তোমার জন্য বিয়েবাড়ীতে ছিলাম,তুমি এলে না কেন?কোনো সমস্যা?
আমি কথা বলতে পারি না চোখ ঝাপসা হয়ে এল। আবার বলল,মণি চুপ করে থেকো না,কি হয়েছে আমাকে বলো।
–মন আমি ভাল নে-ই।গলা ধরে আসে।
–বুঝেছি তোমাকে আর বলতে হবে না। মণি তুমি কাল তোমাদের বাড়ীর কাছে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পার্কে এসো,আমি তোমাকে নিজের চোখে একবার না দেখলে শান্তি পাবো না।
আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি বললাম,ফুচকা খাওয়াতে হবে।
মনের সঙ্গে এইটুকু কথা বলে বেশ হালকা বোধ হচ্ছে।সকাল থেকে বহন করছিলাম একটা দম চাপা কষ্ট,বুকে কফ জমলে যেমন হয় এখন সহজে নিশ্বাস নিতে পারছি। নিজেকে আর একা অসহায় বোধ হচ্ছে না।প্রেমিকার জন্য ব্যঙ্গালোর যাচ্ছে না জিজ্ঞেস করতে হবে কে সেই প্রেমিকা যার জন্য মোটা মাইনের অফার উড়িয়ে দিয়েছে।খালি চ্যাংড়ামি।আচ্ছা যদি বলে,আছে একজন প্রেমিকা?তাতে কি আমার মন খারাপ হবে? কেন মন খারাপের কি আছে বিয়ে করবে না চিরকাল আমাকে মেসেজ করে যাবে?আমি জিজ্ঞেস করবো,তকে বিয়ে করছে না কেন? চোখ জড়িয়ে আসছে ঘুমে,ডুবে যায় নিবিড় অন্ধকারে।
নবম পর্ব
ঘুম ভাঙ্গল একটু বেলা করে,যেন স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম।কালকের রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করি। বিশ্বাস করতে পারিনা যা যা ঘটেছিল।ফোনে কথা বলেছি কতকাল পরে।আজ দেশবন্ধু পার্কে দেখা করার কথা।শাশুড়ী চা দিতে এলেন।আমি বললাম,আমাকে ডাকলেই পারতেন।
–তুমি কি এ জগতে ছিলে যে ডাকবো? কি কুম্ভকর্ণ ঘুমরে বাবা। আমি ডাকছি তনিমা ডাকছে ঘুম ভাঙ্গলে তো,অতনু ফোন করেছিল কতক্ষণ কথা বলল।
–অতনু ফোন করেছিল? কখন?
–এখন এ্যামেরিকায় গভীর রাত্রি।ফোন করেছিল তখন প্রায় পৌনে একটা।
শাশুড়ী এমনভাব করছে যেন এ্যামেরিকার সব কিছু তার নখদর্পণে।গরবিনী গলায় নির্মলা সুন্দরী বললেন,সবার জন্য গিফট কিনেছে।আর তো মোটে পাঁচটা মাস দেখতে দেখতে কেটে যাবে।আবার কে ফোন করল?শাশুড়ী ফোন ধরতে গেলেন।
শাশুড়ীর গলার স্বর মুহুর্তে বদলে গেল,আমি আপনাকে ফোন করবো ভাবছিলাম।..বউমার শরীর এমন খারাপ ফেলে যেতেও পারি না আবার…কি আর করবেন কপালে না থাকলে যা হয়..এখন ভাল আছে..কাল আবার আপনার জামাই ফোন করেছিল…কি আর বলবে দুঃখ করছিল থাকতে পারল না বলে…যাক ভালোয় ভালোয় মিটেছে এই শান্তি..আছা রাখছি?
মনে হচ্ছে আমাদের বাড়ী থেকে ফোন এসেছে। নির্মলাসুন্দরী বেমালুম মিথ্যে বলে গেলেন,গলা একটুও কাপলো না।আমাকে একবার দিতে পারতেন,দেবেন কেন মিথ্যের জাল যদি ছিড়ে যায়।বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করলাম ঘরে ফিরে দেখি তনিমা বসে আছে।শাশুড়ি বলছিলেন মেয়েটাকে যেন না জড়াই।বেশি প্রশ্রয় না দেওয়াই ভাল।কোথায় কি করে বসবে দোষ হবে আমার?
তনিমা আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,বৌদি তোমাকে হেববি দেখতে লাগছে।শিশির সিক্ত ফুলের মত।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম চুলে জলকণা চিক চিক করছে শিশির সিক্ত সম্ভবত সেই জন্য।
আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম,কোথায় গেছিলে কাল?তোমার মা চিন্তা করছিলেন।
–ছাড়ো তো মার কথা।মার ধারণা আমি বুঝি সজলের সঙ্গে প্রেম করছি।আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি এখানে ছিপ ফেলে লাভ নেই।অন্য পুকুর দেখো।কি বলে জানো?হি-হি-হি ছেলেগুলো এমন ক্যালানে হয় বিরক্তিকর।
আমি উচ্চবাচ্য করিনা।তনিমা বলল,ভয় দেখায় আত্মহত্যা করবে।ওইসব দেবদাসী নাটকে তনিমা চক্কোত্তি ভুলছে না।
মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল,তুমি কি অন্য কাউকে পেয়েছো নাকি?
–এই তো বোউদি তুমিও মায়ের মত বলছো। কাউকে যদি নাও পাই তবু ওই সজল পাগলাকে পাত্তা দেবো ভেবেছো?
কদিন আগে যার চেষ্টা ছিল যেন তাকে কেউ অপমান না করে আজ সে সজল পাগলা? এই পরিবর্তনের পিছনে মনে হয় কিছু কারণ আছে।বয়স কম হলে বোঝানো যেত কয়েক বছরের ছোট আমার থেকে,বোঝাতে গেলে আমাকেই দু-কথা শুনিয়ে দেবে।বুঝতে পারি না আজ আমার ঘরে কি মনে করে?
–তোমার মা ফোন করেছিল।পা দোলাতে দোলাতে বলল তনিমা। আগড়ুম বাগড়ুম বলে মা ম্যানেজ করে দিয়েছে। গলার স্বর বদলে জিজ্ঞেস করে তনিমা,আচ্ছা বৌদি কাল যে তোমার যাওয়া হল না,খারাপ লাগেনি?
–যা খারাপ তা আমি মনে রাখি না।
–কত লোক আত্মীয় স্বজন এসেছিল সবার সঙ্গে দেখা হত–তোমার ছোড়দার সব বন্ধুদের তুমি চেনো?
মনে হচ্ছে তনিমা এবার আসল কথায় আসছে বললাম,কি করে চিনবো? মণিশঙ্করের কম্পিউটার ছিল না তাই ছোড়দার কম্পিউটারে এ্যাসাইনমেণ্ট ইত্যাদি করতে আমাদের বাড়ীতে আসতো তাই চিনি।
–অ।তনিমা হতাশ হল।বিয়ের দিন যারা তোমাদের বাড়ীতে এসেছিল তুমি তাদের কাউকে চেনো না?
–তুমি যাদের কথা বলছো ওদের কি করে চিনবো? ওরা ছোড়দার অফিস কলিগ।এসব জিজ্ঞেস করছো কেন বলতো?
–কেন জিজ্ঞেস করছি বলবো?তুমি কিছু মনে করবে নাতো?হাসতে হাসতে বলল তনিমা।
মেয়েটাকে যেমন ভেবেছিলাম তা নয় বেশ চালু আছে বললাম,তুমি কেন জিজ্ঞেস করছো বলবে তাতে আমি রাগ করবো কেন?
–ওদের মধ্যে কজন দারুণ স্মার্ট ছেলে ছিল এখন বুঝতে পারছি কেন তোমার সঙ্গে প্রেম হয় নি।
বুঝতে পারলাম কথাটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তনিমা রাণী নিজেকে চালাক ভাবতে চাও ভাবো কিন্তু তোমার বৌদিকে অত বোকা ভেবো না। তনিমার চোখে মুখে দুষ্টু হাসির ঝিলিক,বৌদি একটা সত্যি কথা বলবে?
কি জিজ্ঞেস করবে তনিমা? কাল রাতে শাশুড়ীর সঙ্গে অনেক কথা বলছিল সে সব তথ্য কে ওকে যোগান দিয়েছে জানি না।আমার সম্পর্কে নতুন কিছু জেনেছে নাকি? মন আগে এক অফিসে ছিল এখন অতনুর অফিসে এসেছে আমিই জানতাম না।ছোড়দা বলেছিল ভাল চাকরি পেয়েছে ঐ অবধি কোথায় কি চাকরি সে সব কিছু বলে নি।আমিও জানতে চাই নি,আর জেনেই বা কি লাভ?
–কি বৌদি ভয় পেয়ে গেলে? তনিমার চোখে এমনভাব যেন কি এক গুপ্ত রহস্য উন্মোচন করেছে।
–তোমাকে একটা কথা বলতে পারি জীবনে এমন কিছু করিনি যার জন্য আমি অনুতপ্ত।
তনিমা আমার কথা কি বুঝল জানি না বলল,তুমি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছো বৌদি,আমি তা বলিনি।
–তুমি কিছুই বলোনি,আমি বলতে চাই জীবনকে আমি তোমার মত করে দেখি না।
তনিমা গম্ভীর হয়ে যায় বলে,বুঝেছি তুমি বলতে চাইছো সজলকে নিয়ে আমি খেলা করেছি।তুমিও কি জোর দিয়ে বলতে পারো,বিয়ের আগে তুমি কারো সঙ্গে প্রেম করো নি? কথাগুলো বলে গভীর আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে শোনার জন্য আমি স্বীকার করি কি না বা অন্য কোনো যুক্তি খাড়া করে বিষয়টা এড়িয়ে যাই।
অনেক কথা বলতে ইচ্ছে হয় কিন্তু সে সব কথা তনিমাকে বলা কতটা সমীচীন দ্বিধা হয়।কেন না কথা বলে একজন কিন্ত যে শোনে নিজের মত অর্থ করে নেয়। কিন্তু ও যেভাবে তাকিয়ে আছে সহজে ছেড়ে দেবে না আমাকে তাই বললাম,শোনো তনিমা ‘প্রেম’ শব্দটা তুমি যে ভাবে চেনো আমি সেভাবে চিনতাম না।
–মানে? তুমি বলতে চাও প্রেমের বিভিন্ন রকম অর্থ?
আমি হাসলাম এই আশঙ্কাই করেছিলাম বলবো এক বুঝবে আর।তুমি আপেল খাও কামড় দেবার পর বুঝতে পারো আপেলটা খেতে কেমন কারণ আপেলের স্বাদ সম্পর্কে তোমার একটা ধারণা আছে কিন্তু প্রকৃতির উদ্যানে আপেল দেখে আদম-ইভ যখন আপেলে কামড় দিল অনুভব করেছিল অনাস্বাদিত আনন্দ, তাদের মধ্যে এনেছিল অভিনব রূপান্তর।
–দারুন বলেছো বৌদি।তনিমা উচ্ছসিত।
–সচেতনভাবে পরিকল্পনা করে ছক কষে কারো সঙ্গে প্রেম করার কথা ভাবিনি।কিন্তু কারো ব্যবহার কারো সাহচর্য কখনো আমাকে আবেগ তাড়িত করেনি বললে সেটা হবে মিথ্যাচার।সেই আবেগ সেই অনুভুতি আজও আমার অন্তরের মণিকোঠায় সযত্নে রক্ষিত,সম্ভবত যতদিন বাঁচবো থাকবে অমলিন।
–বৌদি তুমি আমার চেয়ে ক-বছরের বড় জানি না কিন্তু ইচ্ছে হচ্ছে তোমার পায়ের ধুলো নিই।
–চ্যাংড়ামো হচ্ছে?
–আর একটা প্রশ্ন প্লিজ বৌদি এটাই শেষ, ধরো যদি সেই প্রেমিক তোমাকে ছেড়ে যদি অন্য কাউকে ভালবাসে এই হারানোর বেদনা তোমাকে যন্ত্রণা দেবে না?
–হারালাম কোথায়?পুরানো আনন্দানুভুতি তো সম্পদ হয়ে আমার কাছে গচ্ছিত,কেড়ে নেবে সাধ্য কার?
গপ্প করতে করতে অনেক বেলা হয়ে গেল।মনে পড়ল বিকেলে মনের সঙ্গে দেখা হবার কথা। খেয়েদেয়ে ছোটো করে একটা ঘুম দিতে হবে।বাথরুমে গিয়ে সাবান মেখে শরীরের মালিন্য যতদুর সম্ভব সাফ করলাম।সমস্ত শরীর তন্ন তন্ন করে দেখতে থাকি–উন্নত বক্ষ ক্ষীণ কোটি পুরুষ্ট যোণী উত্তল নিতম্ব।
মন বিশ্বাস করো সেদিনের জন্য আমি তোমাকে দায়ী করিনি।সেদিন যা ঘটেছিল তা অনিবার্য,যখন মেলে ধরলাম নিজেকে তুমি যদি উপেক্ষা করতে সে হত আমার চরম অপমান নারীত্ব হত কলঙ্কিত,আমার অঞ্জলিকে সাদরে গ্রহণ করে আমাকে সম্মানিত করেছিলে বরং সেদিন যদি কিছু না ঘটলেই তা হত আমার পক্ষে মর্যাদাহানিকর।কোনোদিন তোমার দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারতাম না।
বিকেল বেলা আমাকে সাজগোজ করতে দেখে তনিমা বলল,বৌদি কোথাও বের হচ্ছো?
হালকাভাবে বললাম,ঘরে বসে বোর হয়ে যাচ্ছি যাই একটু পার্কের দিকে।মুটিয়ে যাচ্ছি একটু হাটাচলা করা দরকার।
–দেশবন্ধু পার্ক?চলো আমিও যাই ভাল্লাগে না ঘরে বসে থাকতে।
আশঙ্কাটা ছিল না তা নয় কিন্তু যদি আপত্তি করি সন্দেহ আরো বাড়বে বললা,তোমার বাবা কিন্তু পার্কে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়।
–হ্যা হ্যা দেখেছি রিটায়ারড ক্লাব।হেসে বলল তনিমা।
অগত্যা তনিমাকে সঙ্গে নিয়ে হাটতে লাগলাম।তনিমা চেনে মনকে,কি করব ভাবছি।ফিরে যাব? ঘড়িতে পাঁচটা কুড়ি।তনিমার মধ্যে কেমন অস্থির ভাব।এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে।পার্কে গেটের কাছে আসতে তনিমা বলল,বোউদি তুমি ফুচকা অলার কাছে দাঁড়াও আমি একটা জিনিস কিনে আসছি।তনিমা আরজিকর রোডের দিকে
চলে গেল।যাক ভাল হয়েছে এখন মন আসলে হয়।চমকে উঠলাম ফুচকা অলার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে মন।জিজ্ঞেস করলাম,কতক্ষণ?
–অনেক্ষণ ঐ গাড়ীর মধ্যে বসে ছিলাম তোমাকে আসতে দেখে এখানে দাঁড়িয়ে আছি।সঙ্গে লেজুড় কেন?
মনের কথা শুনে হাসি পেলেও হাসলাম না বললাম,আনবো কেন নিজেই এসেছে।
খুব অস্বস্তি লাগছে যখন মণিদা-মণিদা করতাম তখন এমন হত না।ওর দিকে না তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি,বলো কেন আসতে বলেছো?
–তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হল,কতদিন দেখিনি তাই।
–ফুচকা খাওয়াবে না?
মন একটা একশো টাকার নোট ফুচকাঅলাকে দিয়ে বলল,মেমসাবকে ফুচকা দেও।
–বেশি করে ঝাল দেবে।আমি বললাম।
শালপাতার ঠোঙ্গা করে আমাকে দিল মনকে দিতে গেলে বলল,আমি না।
–তুমি খাবে না? আমি একা খাবো?
–তুমি খেলেই আমার তৃপ্তি।
–আহা ঢং।অনেকদিন পর ফুচকা খাচ্ছি ,কলেজের দিনগুলো মনে পড়ছে।ফুচকাওলা তেতুল গোলা জল ভরে ফুচকা ঠোঙ্গায় দিতে আমি মুখ তুলে হা-করে ফুচকাটা জিভের উপর রেখেছি মন অমনি মুখ থেকে ফুচকাটা টুপ করে তুলে নিজের মুখে পুরে দিল। ফুচকাওলা ফিক করে হাসল।ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে থমকে গেলেও সামলে নিয়ে বললাম,এটা কি হল?
–বলেছিলাম তুমি খেলেই আমার খাওয়া হয় তাই দেখিয়ে দিলাম।
–মুখ থেকে নিলে আমার যদি কোনো রোগ থাকে?
–মণি আমি তোমার সব নিতে চাই।তোমার রোগ শোক ভাল মন্দ আনন্দ বেদনা সব।
চোখে জল চলে এল বললাম,তুমি কি আমাকে কাঁদাতে এসেছো?
–রাতে ফোন করবো।ভাই বাকী পয়সা মেমসাবকে দিয়ে দিও। চলে গেল মন।
তনিমা হাপাতে হাপাতে এসে হাজির,একি বৌদি তুমি শুরু করে দিয়েছো?
বুঝতে পারি মন কেন চলে গেল।তনিমাকে বললাম, কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?আমি ভাবলাম তুমি বুঝি আর আসবে না।তুমি কি কিনতে গেছিলে কিনেছো?
–কি কিনবো?
–ঐ যে বললে কি কেনার আছে।
–ও; হ্যা,দোকানটা আজ খোলেনি।বৌদি তুমি কটা খেলে?
–তোমার যে কটা খেতে ইচ্ছে হয় খাও।
–পাঁচটা?
–যা ইচ্ছে।
–ঠিক আছ দশটা?এই দশটা আমাকে দাও।আমার কাছে পয়সা নেই কিন্তু।
ফুচকাওলা দিতে থাকে ,খেতে খেতে তনিমা বলল,এইবার মনে পড়েছে। bangla choti golpo
আমি হাতের ফুচকা মুখে পুরে তনিমার দিকে তাকাই।তনিমা বলল,জানো বৌদি কোথায় দেখেছি কোথায় দেখেছি কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না। তোমার ছোড়দার বন্ধু মণিশঙ্কর বাবুকে দেখলাম,নীল টি-শার্ট রাস্তার ধারে একটা গাড়ীতে উঠল।
–তুমি কথা বললে না কেন?
–দূর থেকে দেখেছি তার আগেই গাড়ী ছেড়ে দিল।
ভাগ্যিস আমাদের একসঙ্গে দেখেনি। ফুচকাওলা আমাকে চুরানব্বই টাকা ফেরত দিল।আমি বুঝতে পারলাম কৌশল করে মন আমাকে হাত খরচা দিয়ে গেল।
তনিমা বলল,বৌদি ঐ দেখো শুড্ডাদের ক্লাব।
মাঠের অন্যপ্রান্তে দূরে একটা বেঞ্চে কয়েকজন বয়স্ক লোক বসে কারো হাতে লাঠি।তনিমাটা ভীষণ ফাজিল বললাম,ওর মধ্যে তোমার বাবাও তো আছেন।
–বাবা কি শুড্ডা নয়?
–ছিঃ এভাবে কেউ বলে?
–অন্যের বাবাকে শুড্ডা বলা যাবে?দেখো বৌদি শুড্ডা ইজ শুড্ডা সে যার বাবাই হোক।
আমিও তো আজকালকার মেয়ে কিন্তু তনিমার মত এভাবে কথা বলতে পারিনা।মনের সঙ্গে আরও কিছু সময় থাকার ইচ্ছে ছিল তনিমার জন্য হলনা। অতদূর হতে গাড়ী নিয়ে এসে অপেক্ষা করছিল বেশি কথা নয় বা একটু ছোয়া নয় এক পলক দেখেই আশ মিটে গেল?কেমন অদ্ভুত লাগে।বিয়েতে আসেনি অথচ বাড়ীর কাছেই পার্ক সব খবর রাখে।মনে মনে হাসি পেল।
তনিমাকে দেখে অবাক হই ওতো চুপচাপ করে থাকা মেয়ে নয় জিজ্ঞেস করি কি ভাবছো?
–ভাবছি ভুল দেখলাম নাতো?
–কেন এরকম মনে হচ্ছে?
–ওর তো আরজি করের দিকে যাবার কথা মাণিকতলার দিকে গেল কেন?
–তাহলে দেখো কাকে দেখতে কাকে দেখেছো?
–আমার মনে হয় এখন বাড়ী ফিরছে না হয়তো কোনো কাজে ওদিকে গেল।
মনকে নিয়ে ও এত চিন্তা করছে কেন?মনে কোনো স্বপ্ন বাসা বাধেনি তো?সজলদের বাড়ি নেই মনেরও বাড়ী নেই বস্তিতে থাকে।অবশ্য মন অনেক হ্যাণ্ডসাম।আচ্ছা সজল কি বেকার তনিমাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি।
দশম পর্ব
রাতে খেতে বসে কথাটা তুললেন আমার শ্বশুর পশুপতি, বৌমা আজ পার্কে গেছিলে? আমি কিছু বলার আগেই জবাব দিল তনিমা,হ্যা বাবা পার্কে গিয়ে ফুচকা খেলাম,বৌদি খাওয়ালো।
পশুপতির মুখে বিরক্তি এ ব্যাপারে মেয়ের কথা বলায় বললেন,তুমি ছিলে? তোমাকে তো দেখিনি।আমার যেন মনে হল একটা ছেলে–তবে কি আমি ভুল দেখলাম?
নির্মলা সুন্দরী বললেন,তোমাকে হাজারদিন ধরে বলছি চোখটা দেখিয়ে চশমার পাওয়ার বদলাও। কে শোনে সে কথা।
–আমার সঙ্গে কমলবাবু ছিলেন উনিই আমাকে দেখালেন–।কথা শেষ না করে পশুপতি নীরবে খেতে থাকেন। নির্মলা সুন্দরী চশমা বদলের কথা বললেও লক্ষ্য করলাম ওর সন্দিহান দৃষ্টি আমার দিকে।
ওরাই আলোচনা সেরে ফেলল আমাকে কিছু বলতে হলনা।বুঝতে পারলাম পশুপতি মনকে দেখেছেন।কিন্তু কখন দেখলেন?উনি কি আমার পরে পার্কে গেছিলেন? আমার মুখ থেকে ফুচকা তুলে নেওয়া দেখেন নি তো?খাওয়া শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম,দরজা বন্ধ না করে ভেজিয়ে রাখলাম।আমার মনে হল পশুপতির দম শেষ হয়নি আমি উঠলেই আবার শুরু করবেন,কান খাড়া রাখলাম।
নির্মলা সুন্দরী বললেন,কি হল কি ভাবছো বলতো?শরীর খারাপ লাগছে?
পশুপতি গলা নামিয়ে বললেন,তুমি বৌমার দিকে একটু নজর রেখো।হুটহুাট করে বেরিয়ে যায়।
–তুমি মেয়েটার দিকে একটু লক্ষ্য রাখো,আমি বলে দিয়েছি বৌমা তুমি ওকে জড়িও না।
কারো অবর্তমানে কাউকে নিয়ে আলোচনা আমার অপছন্দ। আমাকে নিয়ে আলোচনা করছে সন্দিহান চোখে দেখছে সর্বক্ষণ এই রকম একটা পরিবেশ কতখানি দুর্বিষহ অবস্থায় না পড়লে কেউ বুঝতে পারবে না।পার্কে গিয়ে ফুচকা খেয়েছি–হ্যা পাশে মন ছিল তাতে কি হয়েছে? মনের জায়গায় অন্য খদ্দেরও থাকতে পারতো? আমাকে স্পর্শ করেনি বা এমন কথা বলেনি যা অন্য মহিলাকে বলা উচিত নয়।একটা ফুচকা আলগোছে মুখ থেকে তুলে নিয়েছে।নিতেই পারে,ফুচকার দাম ঐ দিয়েছে,আমি ভেবে পাই না কি এমন হল যাতে ফিসফিস করে আলোচনা করতে হবে?চেপে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
বেশ ছিলাম পুরানো অস্বস্তিটা ফিরে এসেছে আবার। ভাল লাগেনা কোনো কিছু কেন ভাল লাগে না বুঝতে পারি না। অতনু নেই বলে কি মন খারাপ? যখন ছিল তখনও এই রকম একটা হতাশার ভাব আমাকে ঘিরে থাকতো মায়ের কথা মনে পড়ছে,ছোড়দা ফাল্গুণীকে নিয়ে কি করছে এখন?মোবাইলটা নিয়ে মেসেজ বক্স খু্ললাম,নতুন কোনো মেসেজ নেই। মাথার কাছে রেখে শুয়ে পড়লাম।সবাই মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে,কোনো সাড়া শব্দ নেই।চোখ বুজে শুয়ে আছি ঘুম আসছে না। শোঁ-শোঁ নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি। মনের সম্পর্কে এত খবর তনিমা জানল কি করে? আর কি জেনেছে,আমার বিয়ের আগের কথা জানতে চাইছিল কেন?মনে হচ্ছে মোবাইল বাজছে,হাত বাড়িয়ে বালিশের পাশ থেকে নিয়ে কানে ধরে বললাম, হ্যালো?
–যাক তাহলে ঘুমিয়ে পড়োনি?
–ও মন?এত রাতে কি ব্যাপার?
–আগে করতাম,ভাবলাম তুমি কথা বলতে পারবে কিনা?
–আজ পার্কে শ্বশুর মশায় মনে হয় আমাদের দেখেছেন।
–কি করে বুঝলে?
–সে অনেক কথা পরে বলবো এখন বলো কি জন্য ফোন করেছো?
–মণি তুমি কেমন আছো?
কি বলবো ভাল আছি?সত্যিই কি আমি ভাল আছি?
–মণি তুমি কথা বলছো না কেন?
–আমি ভাল নেই মন।একদম ভাল নেই।
–কেন কি হয়েছে কেউ কিছু বলেছে?মণিশঙ্করের গলায় উদবেগ।
–কিছু হয়নি,কেউ কিছু বলেনি তবু–তবু আমার কিছু ভাল লাগছে না।
–বুঝেছি।
–তুমি কি ভাবছো আমি ইয়ার্কি করছি?
–না না মণি আমি তা বলিনি–আমার মনে হয় দ্বন্দ্ব মানে অন্ত্রর্দ্বন্দ্ব এর কারণ?
–তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না।
–সহজ করে বলি,মণি তোমার মনের দ্বিধা–একদিকে তোমার মায়ের ইচ্ছে আবার তোমার নিজের ইচ্ছে এই দুইয়ের দ্বন্দ্ব।তুমি তোমার মায়ের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিলে অবদমিত সুপ্ত ইচ্ছে তোমাকে ক্ষত বিক্ষত করছে।
–হি-হি-হি।তুমি মনস্তাত্ত্বিক নাকি?
–তুমি হাসবে আমি জানতাম এটাই তোমার আসল কারণ,তুমি অশান্তি এড়িয়ে যাবার জন্য সত্যকে হেসে উড়িয়ে দিতে চাও।
বাইরে যেন কিসের শব্দ হল?বললাম,মন একমিনিট ধরো।পা টিপে টিপে দরজার কাছে গিয়ে শব্দ না করে ছিটকিনিটা নামিয়ে দরজা খুলতেই দেখি শায়া ব্লাউজ পরে দাঁড়িয়ে নির্মলা সুন্দরী।মনে হচ্ছে এইমাত্র চুদিয়ে এলেন। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,আপনি? কিছু বলবেন?
–না না বাথরুমে এসেছিলাম।আমতা আমতা করে বললেন শাশুড়ী।
–বাথরুম ঐ দিকে।
–হ্যা ঘুম চোখে বুঝতে পারিনি।তুমি ঘুমাও।
দরজা বন্ধ করে ফোন ধরে জিজ্ঞেস করি,মন তুমি আছো?
–হ্যা হ্যা মণি,তুমি কোথায় গেছিলে?
–তোমাকে বলছিলাম না আমি ভাল নেই?এইমাত্র শাশুড়ী দরজায় আড়ি পেতে আমাদের কথা শুনছিলেন।
–মণি এটা তোমার ভাল না থাকার কারণ নয়। এটা স্বাভাবিক ঘটনা বাড়ীর বউ পার্কে অন্য লোকের সঙ্গে ঘুরবে কার ভাল লাগে বলো?তোমার রোগের কারণ অন্যত্র।
–আমার যা হবার তাই হবে এবার তুমি একটা কথা বলতো? তুমি সবাইকে বলো একটা মেয়ে তোমাকে ভালবাসে–কথাটা কি সত্যি?
–আমি মিথ্যে বলিনা।
মন খারাপ হয়ে গেল,ভেবেছিলাম বলবে মজা করে বলেছি।কথাটা মিথ্যে নয়? তাহলে এত রাতে আমাকে জ্বালানো কেন,তাকেই ফোন করতে পারত। ফোন কেটে দেব কিনা ভাবছি,মন জিজ্ঞেস করল,জিজ্ঞেস করলে না তো মেয়েটা কে?
–তুমি কি ভেবেছো এ কথা শুনে আমি ভেঙ্গে পড়বো? তুমি মণিমালাকে চিনতে পারোনি।
–শোনো মণি আমার সব কথা না শুনে তুমি ফোনটা রেখে দিও না। মেয়েটার বাড়ীর লোক সন্দেহবশে তাড়াতাড়ি মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিল অন্য ছেলের সঙ্গে।
–মেয়েটা রাজি হয়ে গেল?এ কেমন ভালবাসা?আপদ গেছে ভাল হয়েছে।তাহলে যা শুনেছে মিথ্যে নয়? আজ থাক পরে শুনবো তোমার প্রেম কাহিনী,রাখছি?
–শুভরাত্রি।
শুভরাত্রি বলে আমি রেখে দিলাম ফোন। মনকে একটি মেয়ে ভালবাসতো আমি জানতাম না। কে হতে পারে? তার নামটা জিজ্ঞেস করা হয়নি,মেজাজটা এমন বিগড়ে গেল।বললে হত প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেছে,বড় চাকরি পেয়ে গেছো,এবার বাউণ্ডেলের মত ঘুরে না বেড়িয়ে বিয়ে করে ফেলো।পরের বউয়ের পিছনে ঘুর ঘুর করে মিথ্যে সময় নষ্ট করার কি দরকার?কি বলছিল মন,দু-টো বিপরীত ইচ্ছের দ্বন্দ?
সকালবেলায় ঘুম ভাঙ্গলো মনটা ঝরঝরে।ব্রাশ করে চা নিয়ে বসেছি নির্মলা সুন্দরী কার সঙ্গে কথা বলছেন ফোনে ডাকলেন,বউমা ফোনে কথা বলো।
–হ্যালো?মা কেমন আছো?…আমি? মনে পড়ল শাশুড়ী বলেছিলেন, আমার শরীর ভাল নয় বললাম,এখন ভাল আছি। বাবা কেমন আছেন?…একরকম মানে ডাক্তার দেখাছে না?…এত ব্যস্ত সবাই?…অতনুর ফিরতে আরো মাস পাঁচেক….ফোন করেছিল তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…আচ্ছা রাখি?
ফোন রেখে দেখলাম শাশুড়ী আমার দিকে তাকিয়ে আছেন তারপর নিজের মনে বললেন,বিয়ের পর মেয়েরা আর বংশের কেউ নয়। ঘরে ঢুকে এলাম।বেশ সুন্দর ছিল সকালটা আবার যেন মলিন মেঘে ছেয়ে গেল।মন বলছিল আমার অবস্থার জন্য নাকি আমিই দায়ী। কথাগুলো অর্থহীন হলেও কেন ঘুরে ফিরে আসছে আমার মনে?
রোজ রাতে খাওয়া দাওয়ার পর সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে মন ফোন করে।কতকথা হয় এলোমেলো অর্থহীন তবু শুনতে ভাল লাগে।ক্রমশ যেন নেশার মত হয়ে যায় বিছানায় শুয়ে থাকি অধীর প্রতীক্ষায় কখন বেজে উঠবে মোবাইল?একদিন মন বলছিল,মণি অশান্তি থেকে দূরে সরে গেলে শান্তি পাওয়া যায় না বরং অশান্তি আরো পেয়ে বসে।মুখোমুখি দাড়াও দেখবে যত ভয়ংকর মনে হয়েছিল অশান্তিকে সে তা নয় পালাবার পথ পাবে না।
সকাল হতেই শুরু হল অশান্তি। শ্বশুর মশায়কে চা দিয়ে চলে আসছি ডাকলেন,বউমা শোনো।
আমি দাড়ালাম কি বলবেন উনি?
–কাল রাতে ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছিলে?
আড়ি পেতে শুনেছে বুঝলাম বললাম,ফোনে কথা বলা কি অপরাধ?শাশুড়ী মা কথা বলেন তনিমা কথা বলে আমি তো জিজ্ঞেস করিনি?
–তর্ক কোর না।বাড়ীতে তুমি কি করতে সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাইনা কিন্তু এখানে আমার ইচ্ছে তুমি ফোনে আর কথা বলবে না।
–আপনার ইচ্ছে?আমার ইচ্ছের কোনো মুল্য নেই? কার কার ইচ্ছে মেনে আমাকে চলতে হবে এ বাড়ীতে?
–বউমা।গর্জে উঠলেন শাশুড়ি,তুমি কার সঙ্গে কথা বলছো ভুলে যেও না।বাড়ীর বাইরে যেতে গেলে জিজ্ঞেস করে যেতে হবে। এ বাড়ীর নিয়ম।
ঘরে এসে কাদলাম।আমার ইচ্ছেতে কান্নায় কেউ বাঁধা দেবে না নিশ্চয়ই।রাতে ফোন বাজতে কেটে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আবার বেজে উঠোল,আবার কেটে দিলাম। তন্দ্রামত এসেছিল আবার ফোন বেজে উঠল,বিরক্ত হয়ে বললাম,আমাকে আর ফোন করবে না।কেন ফোন করো?
–একটা জরুরী কথা কাল একবার পার্কে এসো।
–আমার সময় হবে না। ফোন কেটে দিলাম।
সবাই খুশি সবার ইচ্ছে মত চলছি এ বাড়ীর নিয়ম ভাঙ্গছি না। আর কারো কিছু বলার নেই,মন বলছিল ওরা যে ব্যবহার করছে সেটা স্বাভাবিক।জরুরী কি কথা বলছিল শোনা উচিত ছিল।একটু বেশী রূঢ় ব্যবহার হয়ে গেল।মন তো কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি কার উপর রাগ কার উপরে ঝাড়লাম।মন ঠিকই বলেছিল আমি নিজের ভুলের জন্য নিজে ভুগছি।সব সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখা যায়?