আমি আর লজ্জায়ে ঘর থেকে বেরই নি। যিষ্ণুদা ও বেশিক্ষণ থাকে নি। দাদাকে নিয়ে কোথায় বেরিয়ে গেল। বিকেলে দাদা একা ফেরত এলো। মা কে বলল, যিষ্ণুর সঙ্গে গিয়ে কয়েকটা কারখানা তে চাকরির আবেদন দিয়ে এসেছে। দাদা যিষ্ণুদার খুব প্রসংসা করলো। আবার কেন জানিনা আমার বুকের ভেতর একটা জমাট ব্যথা উঠলো।
সেদিন রাত্রে স্বপ্ন দেখলাম, আমি আর যিষ্ণুদা কোনো একটা বাগানে বসে আছি। যিষ্ণুদার হাত আমার পিঠে, আমার মাথা যিষ্ণুদার কাঁধে, দুজনে দুজনার দিকে তাকিয়ে আছি। ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি ঘামাচ্ছিলাম। এ কি চিন্তা আমার। কোথায় যিষ্ণুদা আর কোথায় আমি। যিষ্ণুদা কত হ্যান্ডসম, ফর্সা, প্রায় ৫’ ৮” লম্বা, আর আমি একটা কালো মেয়ে, মাত্র ৫’ লম্বা। ছিঃ, কি আজে বাজে চিন্তা করছি। তার উপর সম্পর্কে আমি ওর মাসি হই। ও আমার বোন্-পো। আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। না, আজে বাজে চিন্তা আর করব না। কিন্তু আর ঘুমোতে পারলাম না। খালি স্বপ্নর কথা মনে পরে যাচ্ছিল।
যিষ্ণুদা ১০ – ১২ দিন অন্তর প্রায়ই আসতো। সকালে ১০ টা নাগাদ। দাদা আর ছোরদার সাথে বসতো। আমাকে দেখলে শুধু কেমন আছ জিজ্ঞেসা করত। বেসি কিছু কথা আমাকে বলত না। দাদা আর ছোরদার সাথে বেরিয়ে যেত চাকরির খোজে।
এক দিন যিষ্ণুদা এসে ছিল, দাদা আর ছোরদার সাথে কি কথা হচ্ছিল, আমি চা নিয়ে ঘরে ঢুকছিলাম, যখন শুনলাম যিষ্ণুদা বলছে, “নিজের মনে কনফিডেন্স রাখো। পারব, চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখব না। ঠিক সফল হব জীবনে। এমন কোনো কাজ নেই যেটা আমরা করতে পারব না। শুধু নিজের উপর বিশ্বাস রাখো, নিজের মনে কনফিডেন্স আনো, একটা মনে জেদ ধরো, আমি চাই, আদায় করে ছাড়ব।”
আমি হা করে কথা গুলো শুনছিলাম। চা দিয়ে আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। মনে মনে চিন্তা করলাম, জেদ, আমার চাই, কনফিডেন্স, পারব, বিশ্বাস রাখো।।। কিন্তু কি চাই, যিষ্ণুদার ভালবাসা। ছিঃ, আবার এ কি যা তা চিন্তা করছি। কিন্তু কি করব, আমি কি যিষ্ণুদা কে ভালোবাসতে শুরু করেছি? সারাটা দিন বুকের মধ্যে একটা জ্বালা নিয়ে কাটালাম।
অধীর হয়ে অপেক্ষা করতাম কবে যিষ্ণুদা আসবে। আমি যেন একবার চোখের দেখা পেলেই শান্তি পেতাম। বুঝতাম এটা আমার এক তরফা ভালবাসা। এই ভালবাসার পরিনাম যে অতি ভয়ানক বুঝতাম তবু মনে মনে আমি যিষ্ণুদার স্বপ্ন দেখতাম। আমার যিষ্ণুদার প্রতি প্রেম যেন দিন দিন বেড়ে যেতে লাগলো। কিন্তু যিষ্ণুদা একবারের জন্য ও এই কালো মেয়ের দিকে ফিরে তাকালো না।
দেখতে দেখতে একটা বছর পার হয়ে গেল। এক দিন দাদার নামে চিঠি আসলো, স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ড এ দাদাকে অপ্প্রেন্তিসশিপ এর জন্য জয়েন করতে বলেছে। এক বছর অপ্প্রেন্তিসশিপ এর পরে চাকরি। বাড়িতে এত দিন পরে যেন একটা খুশির খবর পেয়ে সবাই লাফা লাফি শুধু করলো। দাদা বলতে লাগলো যিষ্ণুর জন্যই এই চাকরিটা সম্ভব হয়েছে। যিষ্ণু নিজে জোর করে ফর্ম ভরে ছিল দাদার জন্য। দাদাকে স্টাডি মেটেরিয়াল যোগার করে দিয়েছিল পরীক্ষা তে যাতে পাস করতে পারে। দাদা, ছোরদা, দুই জনে যিষ্ণুদার খুব প্রসংসা করতে লাগলো। বাবা মা ও যিষ্ণুদার খুব গুণ গান করলো। আমার বুকের ভিতর যেন গর্বে ফুলে উঠলো। মিষ্টি নিয়ে দাদা আর ছোরদা চলে গেল যিষ্ণুদার বাড়ি।
দাদার ট্রেনিং কলকাতা তেই ছিল, তাই বাড়ির থেকেই যাতায়াত করত। দাদার চাকরি হয়ে যাবার পর যিষ্ণুদার আসা যাওয়া ও কমে গেল। দুই মাস পরে হটাৎ যিষ্ণুদা আসলো। হাতে অনেক মিষ্টি। বলল ওর ও চাকরি হয়ে গিয়েছে, তবে কলকাতা তে নয়। বাঙ্গালোর এ। শুনে আমার বুক ফেটে কান্না উঠে আসলো। আমি কোনো রকম নিজেকে সম্ভলে বাথরুম এ গিয়ে খুব কাঁদলাম। আর যিষ্ণুদার সাথে দেখা হবে না। অতি কষ্টে নিজেকে সাম্ভলে সবার সাথে বসলাম। সে দিন ছিল রবিবার, তাই সবাই বাড়িতে ছিল। সবাই বিকেল পর্যন্ত হই হই করলো।
বিকেলে যিষ্ণুদা, বাবা আর মা কে প্রনাম করে, দাদা আর ছোরদার সাথে কোলা কুলি করে, আমার মাথায়ে হাত বুলিয়ে, “চলি গ আমার ছোট্ট মাসি” বলে হাসলো।
আমি জিজ্ঞেসা করলাম, “আবার কবে আসবে।”
যিষ্ণুদা বলল, “এখন কিছু বলতে পারছি না, তবে এক বছরের মধ্যে নয়। নিশ্চিন্ত থাক, ছুটিতে আসলে, এখানে ঠিক দেখা করতে আসব।”
যিষ্ণুদা চলে গেল। আমার বুকের ভেতর যেন হাজার পোকা কুকড়ে কুকড়ে আমার হার মাংস চিবিয়ে খাচ্ছিল। অতি কষ্টে নিজেকে সাম্ভলালাম যিষ্ণুদার কথা মনে পড়ল, জেদ ধর, বিশ্বাস রাখো, পারবে আদায় কারো, মনে কনফিডেন্স আন।
আমি নিজেকে নতুন ভাবে তৈরি করতে শুরু করলাম। পড়াশুনায় মন দিলাম। ছাত্র পরাতে লাগলাম। এই ভাবে দিন কাটতে লাগলো। মাঝে মাঝে যিষ্ণুদার চিঠি আসতো দাদার আর ছোরদার কাছে। সেখান থেকেই যিষ্ণুদার খবর পেতাম। দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেল। বাবার রিটায়ারমেন্ট এর সময় ও ঘনিয়ে আসলো। দাদার চাকরি পের্মানান্ট হয়ে গেল। ছোরদা ও একটি গাড়ি তৈরী কারখানায় চাকরি পেয়ে গেল। বাবা মা আমার বিয়ে দেবার জন্য উঠে পরে লাগলো। বেশ কয়েকটা পাত্র পক্ষ্য আমাকে দেখতে আসলো। সবার মুখে একই কথা, ‘মুখশ্রী খুব মিষ্টি, চোখ দুটো ভারী সুন্দর, ফিগার ও চোখ ঝলসানো, কিন্তু।।। মেয়ে ভীষণ কালো।।। আর একটু বেটে ।।।’ মা এর চিন্তা বাড়তে লাগলো। যিষ্ণুদার স্বপ্ন এখনো আমার মন এ গেথে ছিল।
আমি ২১ বছরে পা দিলাম। তিনটি বছর পার হয়ে গেল সেই বিভিসিখার দুপুর থেকে। দোলার সাথে আর আমার কোনো দিন দেখা হয় নি। ওরা খড়্গপুর চলে গিয়েছে।
দেখতে দেখতে ৩ টি বছর পার হয়ে গেল যিষ্ণুর সাথে প্রথম দেখা হবার পর। আমি ও আগের থেকে আনেক মেচুওরড হয়ে গিয়ে ছিলাম। কিন্তু যিষ্ণুর প্রতি দুর্বলতা কিছুতেই কমে নি। তবে মনে মনে ঠিক করে ছিলাম আমার জীবনের সব ঘটনা এক দিন বলব যিষ্ণুকে। হ্যাঁ যিষ্ণু কে, আর যিষ্ণুদা চিন্তা করতে ভালো লাগত না। যিষ্ণু… যিষ্ণু। আবার মনে ভয় ও ছিল, যিষ্ণু সব শুনে যদি আমাকে ঘৃনার চোখে দেখে? আমি তো নষ্ট মেয়ে। সেচ্ছায়ে না হলেও, আর তো কুমারী নই। কিন্তু যিষ্ণু কে যত টুকু আমি চিনেছি, সে ভীষণ প্রাকটিক্যাল। হয়তো আমাকে ক্ষমা করে দেবে। এই সব এলো মেলো চিন্তা নিয়েই আমার দিন কাট ছিল।
একদিন সকল ৯ টার সময় যিষ্ণু এসে হাজির। বাড়িতে হুল্লোর পরে গেল। সবাই খুব খুসি। আমার বুকের ভিতর আনন্দে যেন ঢাকের কাঠি বাজতে শুরু করলো। দাদা আর ছোরদা যিষ্ণু কে পেয়ে যেন নতুন জীবন ফিরে পেল। দুজনারই অফিস এ যাবার তারা ছিল। ওরা যিষ্ণু কে বিকেল পর্যন্ত থাকতে রিকোয়েস্ট করলো, ওরা না ফেরা পর্যন্ত। যিষ্ণু রাজি হয়ে গেল। মা আমাকে জল খাবার বানাতে বলল যিষ্ণুর জন্য। আমি অতি উৎসাহের সাথে লুচি তরকারী বানাতে বসলাম, যেন আনেক দিন পর আমার বর ফিরেছে, তাকে সেবা করার একটা সুযোগ পেয়েছি। মনে মনে প্রনাম করে যিষ্ণু কে জল খাবার দিলাম। যিষ্ণু হাসতে হাসতে খেল। আমি ও ওর সাথে খেলাম। বাবা, দাদা আর ছোরদা ভাত খেয়ে নিলো। দাদা আর ছোরদা অফিস এ চলে গেল।
আমিও আজকাল বেশ কথা বলতে শিখে গিয়েছি। একটা কনফিডেন্স যেন আমাকে পেয়ে বসেছিল। পারব, আমি পারব। যিষ্ণুর পাসে বসে আমি যিষ্ণু কে বাঙ্গালোর কেমন শহর, চাকরি কেমন লাগছে, কত দিন ছুটি ইত্যাদি জিজ্ঞেসা করতে লাগলাম। যিষ্ণু আমার প্রশ্নের উত্তর তো দিল কিন্তু অনুভব করলাম যে ও যেন আমাকে নতুন ভাবে দেখছে। এই আলো কে যেন এর আগে কোনো দিন দেখে নি। তাহলে কি আমি পারছি যিষ্ণুর মন কাড়তে? অনুভব টি মনে আসতেই আমার চোখে মুখে যেন একটি বিজয়িনীর হাসি ফুটে উঠলো। যিষ্ণুর যেন আমার সাথে কথা বলতে কি রকম অস্বস্তি হতে শুরু করলো। ঠিক তখন মা ও এসে আমাদের মাঝে বসলো। যিষ্ণু আবার সাধারণ ভাবে আমার সাথে কথা বলতে লাগলো।
বাবা রিটায়ারমেন্ট এর আগে একটি বাড়ি তৈরী করছিল। তার কাজ দেখতে যাবার কথা ছিল। যিষ্ণু তা শুনে বাবার সাথে যাবার কথা বলল। মা শুনে বলল, “না বাবা, এই গরম আর ধুলোর মধ্যে দুপুর টা কাটিয়ে কি করবে, এখানেই থাক, বিশ্রাম কারো।”
বাবা ও যিষ্ণু কে বাড়িতেই থাকতে বলল। বাবা বেরিয়ে গেল। আমরা তিন জনে রয়ে গেলাম বাড়িতে, মা, আমি আর যিষ্ণু। মা চা করে আমাদের সাথে বসলো। মা আমার বিয়ের কথা তুলে যিষ্ণু কে কালো আর বেটে মেয়ের বিয়ে দেবার কত যে জ্বালা বলতে শুরু করলো। বলতে বলতে একসময় যিষ্ণু কে মা বলল, “যিষ্ণু, তোমার তো অনেক চেনা জানা আছে, দেখো না বাবা, যদি তুমি একটা ভালো পাত্র যোগার করে দিতে পারো আলোর জন্য। আমি তোমাকে একটা ফটো ও দিয়ে দেব, দেখো না যদি পারো।”
যিষ্ণু হাসতে হাসতে ঠাট্টার ছলে বলল, “দিদা, তুমি কি আলোকে জিজ্ঞেসা করেছ ও নিজে কোনো ছেলে ঠিক করে রেখেছে কিনা নিজের জন্য।”
মা ও হাসতে হাসতে বলল, “যদি ও নিজে কোনো ছেলে কে পছন্দ করে থাকে, তবে আমরা হাসি মুখে তাকে জামাই করে নিয়ে আসব।”
দুজনে হাসতে শুরু করলো, আর আমি মনে মনে মা কে বললাম, “তোমার সামনেই তো বসে আছে পাত্র, তাকেই জামাই কারো না।”
মাথায় তখন আমার দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরছে, চোখে মুখে দুষ্টু হাসি। এক মনে যিষ্ণু কে দেখছিলাম আমি। যিষ্ণু একবার আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিলো।
মা তার রান্নার কাজ আর ঘরের কাজ করতে চলে গেল। আমি আর যিষ্ণু সাধারণ কথা বার্তা করতে লাগলাম। আবার আমার মনে হলো যিষ্ণু একটু অস্বস্তি বোধ করছে। মনে মনে হাসি পেল। মাথায় দুষ্টুমি চাপলো। আমি যিষ্ণুর পাসে গিয়ে বসলাম আর ক্ষেপাবার তালে জিজ্ঞেস করলাম, “তা তুমি তো আমার জন্য বর যোগার করে আনবে, নিজের জন্য কি বউ যোগার করেছ আগে?” চোখে মুখে তখন আমার হাসি ফুটছিল।
যিষ্ণু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি তো না হয় তোমার বর খোজার দায়িত্ব নিলাম, তা তুমিই না হয় আমার বউ যোগার করার দায়িত্বটা নিয়ে নাও।”
দুজনেই হেসে উঠলাম। মাথায় কু বুদ্ধি চেপেছিল। আমি যিষ্ণুর হাতের উপর আলগা আমার হাত রেখে মুচকি হেসে বললাম, “আর যদি বলি যে আমি কাউকে ভালোবাসি, তাহলে।”
যিষ্ণু ও হাসতে হাসতে উত্তর দিল, “আলাপ করিয়ে দাও, তোমার বাবা মা র সাথে আমি কথা বলছি।”
মাথা নেড়ে আমি বললাম, “আলাপ আমি তোমার সাথে করিয়ে দিতে পারি, কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে যে আপাতত এই কথা তুমি কাউকে জানাবে না।”
“বা রে বা, যদি তোমার বাবা মা কে কিছু না বলি, তারা জানবে কি করে তোমার পছন্দের ছেলের সম্বন্ধে?” হাসতে হাসতে যিষ্ণু প্রশ্ন করলো।
আমি উত্তর দিলাম, “আপাতত আমি চাইনা যে কেউ জানুক আমার প্রেম কাহিনীর ব্যাপারটা।”
“কেন?” যিষ্ণু জানতে চেল।
“বলব তোমাকে, সব বলব পরে, কিন্তু তোমাকে আগে আমাকে ছুয়ে কথা দিতে হবে তুমি কাউকে কিছু বলবে না। গোপন রাখবে”, আমি আস্তে করে বললাম।
“আচ্ছা বাবা কথা দিলাম”, যিষ্ণু আমার মাথায়ে হাত রেখে বলল।
“প্রমিস।”
“প্রমিস।”
“হমমম… বেশ, আসছে সোমবার আমার কলেজ খুলছে, তুমি আমার সাথে সোমবার সকাল ১১ টার সময় কলেজ এর সামনে দেখা কর। কাউকে বলবে না কিন্তু।”
যিষ্ণু আমার দিকে এক আশ্চর্য দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে ছিল। তার পর বলল, “ঠিক আছে।”
খুসি তে আমার বুক ফেটে গেল। আনন্দে যিষ্ণু কে জড়িয়ে ধরলাম। মুখ থেকে বেরিয়ে গেল, “তোমাকে অশেষ ধন্যবাদ।”
যিষ্ণু কে ছেড়ে পাসে বসলাম। দেখলাম যিষ্ণু ভীষণ একটা অস্বস্তি বোধ করছে। আমার ও অবস্থা শোচনীয়। যিষ্ণু উঠে দাড়ালো আর বলল, “আলো, আমি একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসছি, একটা সিগারেট খাব।” ওর গলার স্বর কেমন পাল্টে গিয়েছে। আমি কিছু বলতে ভয় পাচ্ছিলাম। যিষ্ণু ছাদ এ চলে গেল।
নিজের ঘরে এসে বসলাম, সারা শরীর উত্তেজনায় কাঁপছে, আগুন নিয়ে খেলা করছিলাম আমি, সবাইকে কি পুড়িয়ে ছাড় খার করে দেব আমি। একটা জেদ চেপে ছিল আমার মধ্যে, আমাদের মতো কালো মেয়েদের কেউ ভালবাসে না? কেন? ভালবাসা আদায় করব, যিষ্ণুর ভালবাসা আদায় করব আমি।
আধ ঘন্টা পর যিষ্ণু ছাদ থেকে নেমে আসলো। মনে হচ্ছে চোখ মুখ জল দিয়ে ধুয়েছে। কেমন যেন বোকার মতো তাকাচ্ছিল আমার দিকে। মা খেতে ডাকলো। আমরা খেতে বসলাম, মা, আমি আর যিষ্ণু। মা যিষ্ণু কে তাদের দেশের বাড়ির গল্প সোনাচ্ছিল। যিষ্ণু মন দিয়ে শুনছিল।
খাওয়া দাওয়ার পর মা যিষ্ণু কে দাদার ঘরে বিশ্রাম করতে বলল। মা আর আমি নিজেদের ঘরে গেলাম। আমার ঘুম পাচ্ছিল না। শুধু যিষ্ণুর মুখটা ভাসছিল। আজ যখন যিষ্ণু কে জড়িয়ে ধরে ছিলাম, আমার দুধ দুটো ওর বুকের মধ্যে সক্ত হয়ে গিয়ে ছিল। যিষ্ণু কি টের পেয়েছিল? কি ভাববে আমাকে। ছিঃ, ওটা করাটা বোধ হয় উচিত হয় নি, কিন্তু তখন আবেশের মাথায়ে জড়িয়ে ধরে ছিলাম, ওকে একা পাবো সারা দিন ভেবে। এত তারা তারি যে আমি একা যিষ্ণুর সাথে সারা দিন প্রেমিক প্রেমিকার মতো কাটাতে পারব ভাবি নি। কি করবো সারা দিন? কথায়ে যাব, কি করে আমার মনের কথা ওকে সোনাব। কিছু একটা উপায় বার করতে হবে।
বিকেল ৫ টা নাগাদ মা আর আমি উঠে চা করলাম। মা যিষ্ণু কে ডেকে তুলল। যিষ্ণু হাত মুখ ধুয়ে আমাদের সাথে চা খেতে বসলো। তখনি বাবা বাড়ি ফিরল। আর কিছুক্ষণ পর ছোরদা আর দাদা ও বাড়ি ফেরত এলো। সবাই মিলে যিষ্ণু কে ঘিরে গল্প করতে লাগলো, আমি শুধু দূর থেকে সবার চোখ বাঁচিয়ে যিষ্ণুর মুখটা দেখছিলাম। রাত আট টা নাগাদ যিষ্ণু নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিল।
আমি কাছে গেলাম না, ভীষণ মন খারাপ লাগছিল তাই। ছাদ থেকেই দেখলাম। অন্ধকারে যিষ্ণু বুঝতে পারল না আমি ওকে দেখছি। বুকটা যেন ফাকা হয়ে গেল, চোখ দিয়ে আমার জল গড়িয়ে পড়ল। ঘরে ঢুকে আমার মাথায় কু বুদ্ধি ঢুকলো, গত কাল আমার পিরিয়ড শেষ হয়েছিল। মা কে বললাম একটা মাথা ব্যাথার ওষুধ নিয়ে আসছি। ওষুধের দোকানে গিয়ে একটা মাথা ব্যাথার ওষুধ আর এক মাসের গর্ব নিরোধক ট্যাবলেট কিনলাম। বাড়ি ফিরলাম। ওষুধ খেতে শুধু করলাম।
ছয়টা দিন……।এই ছয়টা দিন যেন কিছু তেই কাটছিল না। সময় যেন আটকে আছে। তার মধ্যে কাটা ঘায়ে নুন ছেটাতে পাসের বাড়ির কাকিমা আসলো। কাকিমা যিষ্ণু কে দেখেছিল। মা কে জিজ্ঞেস করলো ছেলেটি কে, মা বলল। কাকিমা বলল ছেলেটি খুব ভালো। মা ও যিষ্ণুর প্রচুর প্রসংসা করলো।
কাকিমা বলল, “আমার মধুর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে তা না হলে তোমাদের বলতাম যদি ওদের জাত বিচার না থাকে সম্বন্ধ পাতানো যেত।”
কথাটা শুনে আমার হিংসাতে গা জ্বলে গেল। ইচ্ছে করছিল চেঁচিয়ে বলি, ‘নজর দেবে না যিষ্ণুর দিকে। চোখ গেলে দেব।’মা কাকিমাকে তখন হাসতে হাসতে বলল, “বলতো তোমার ছোট মেয়ের জন্য কথা পারতে পারি।”
কাকিমা বলল, “দীপ্তি তো সবে ১৯ এ পড়ল। দুই বছর পরে বিয়ের চেষ্টা করব। তত দিন কি ওর বাবা মা অপেক্ষা করবে।”
মা কি বলল শুনবার জন্য অপেক্ষা করিনি, রাগে, আমার শরীর কাঁপছিল। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে উঠে নিজের ঘরে গেলাম। ভীষণ হিংসা হচ্ছিল।
এমনিতে কাকিমারা খুব ভালো। মাস আটেক হলো আমাদের পাসে এসেছে। দুই মেয়ে। মধু আর দীপ্তি। মাধুদী আমার থেকে এক বছরের বড় আর দীপ্তি আমার থেকে দুই বছরের ছোট। আমরা সময় পেলে তিনজনে মিলে গল্প করতাম। কিন্তু আজ যেন ওদের আমার শত্রু মনে হলো। ওদের আমি হিংসা করতে লাগলাম।
অবশেষে আমার অপেক্ষা শেষ হলো। ছয় দিন পর প্রতিক্ষিত সোমবার এসে হাজির হলো। আমার বুকের মধ্যে একটা চাপা ভয় উকি দিচ্ছিল কিন্তু মনে একটা উত্তেজনাও ছিল। বাবা মা কে আগেই বলে রেখে ছিলাম, এটা আমার ফাইনাল ইআর। তাই ক্লাস শেষ করে আমরা বন্ধুরা মিলে লাইব্রেরি তে নোটস তৈরি করব। বাড়ি ফিরতে দেরী হবে।
স্নান সেরে, একটি কচি কলাপাতা রঙের শারী পরে কলেজ যাবার জন্য তৈরী হলাম। দশটার মধ্যে কলেজ এ পৌছলাম। তিন তলায়ে কমন রুম এর একটি জানালার পাসে বসে কলেজ এর গেট এর বাইরে নজর রাখছিলাম। বুক টা ধরফর করছিল। আসবে তো ।। দু চারটে বন্ধুরা এসে ছিল, হাসি ঠাট্টা চলছিল, বললাম আজ ক্লাস করব না, হয় তো ঘুরতে যাবো। একটি মেয়ে জিজ্ঞেসা করলো কোথায়, বললাম দেখি কোথায় নিয়ে যায়। সবাই হাসতে হাসতে বলল, “ওওওওহহহ, বয় ফ্রেন্ড …। ভালো, যা ঘুরে আয়।”
এগোরটা বাজতে পাঁচ মিনিট আগে দেখি ট্যাক্সি থেকে যিষ্ণু নামছে। আমি উঠে পরলাম। বন্ধুরা আমাকে আটকে দিল, জিজ্ঞেসা করলো, “কোনটা রে?” দেখালাম, সবাই হা করে তাকিয়ে রইলো। আমি দৌড়ে নীচে নেমে আসলাম। নিজেকে একটু সাম্ভলে, আস্তে আস্তে যিষ্ণুর দিকে এগোলাম। যিষ্ণু আমাকে দেখে যেন একটা পাথরের মূর্তির মতন দাড়িয়ে রইলো, চোখ দুটো বড় বড় করে যেন একটা আশ্চর্য জিনিস দেখছে। “সুপ্রভাত যিষ্ণু,” বলতে বলতে আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। যিষ্ণু কেমন বোকার মতো আমতা আমতা করতে লাগলো। কাছে গিয়ে আলতো ধাক্কা দিলাম, স্বপ্নের দেশ থেকে ও ফেরত আসলো।
জিজ্ঞেসা করলাম, “কি হলো।”
নিজেকে সম্ভলে ও বলল, “না ঠিক আছে, সুপ্রভাত।”
যিষ্ণু দেখলাম এদিক ওদিক কাউকে যেন খুজছে। তার পর আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো, “কই কাউকে তো দেখছি না, কথাযে তোমার বয় ফ্রেন্ড।”
আমার হাসি পেল, মনে মনে বললাম, ‘এই তো আমার পাসে দাড়িয়ে আছে’,আর হাসতে হাসতে বললাম, “এত উতলা হচ্ছো কেন, সারা দিন তো পরে আছে। কি, তারা হুড়ো আছে নাকি।”
যিষ্ণু ও হাসলো, কিন্তু কেমন যেন হাসিটা, মনে হচ্ছে দুঃখের বা ঈর্ষার।
আমার বন্ধুরা তখনো তিন তলার কমন রুম এর জানালার থেকে হাত নারাছিল। আমি তারাতারি যিষ্ণুর হাত ধরে হাটতে শুরু করলাম। আমি আমার আঙ্গুল গুলো যিষ্ণুর আঙ্গুলের ভিতর ঢুকিয়ে হাটছিলাম। খুব ভালো লাগছিল। যখন আমাদের শরীর একে অপর কে ছোয়াছুই করছিল আমার তখন পা দুটো কাঁপছিল। যিষ্ণু কে বললাম ট্যাক্সি করতে, হাওড়া বোটানিক্যাল গার্ডেন যাব। যিষ্ণু ট্যাক্সি করলো।
ট্যাক্সিতে বসে, আমার বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটার মতন হৃদপিন্ড টা চলছিল। কোনো কথা বলতে সাহস হচ্ছিল না। ভগবান কি হবে, আবার নিজেই নিজেকে বললাম, নিজের মনে জোর আনো, আত্মবিশ্বাস রাখো, যা হবে হোক, দেখা যাবে। দেখলাম যিষ্ণু ও চুপ চাপ আছে, কেমন যেন বোকা বোকা দৃষ্টি দিয়ে বাইরের দিকে দেখছে।
বোটানিক্যাল গার্ডেন এ পৌছে, একটা নির্জন জায়গা দেখে আমি বসলাম এবং যিষ্ণুকে ও পাসে বসতে বললাম। যিষ্ণু ইতস্তত ভাবে পাসে বসলো, এবং চারিদিকে তাকিয়ে কি যেন খুজতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরে আমাকে প্রশ্ন করলো, “তোমার বয় ফ্রেন্ড এর কটা নাগাদ আসার কথা?”
মনে মনে বেশ ভালো লাগছিল যিষ্ণুর অবস্থা দেখে, মনে হচ্ছিল ওর মধ্যে যেন একটা ঈর্ষা ভাব উকি দিচ্ছে, বললাম, “ধৈর্য ধর, জানতে পারবে।”
“তোমার বয় ফ্রেন্ড এর নাম কি, আমি তাও তো যানি না।” যিষ্ণু এক মনে বলে গেল।
আমি আস্তে বললাম, “নামে কি যায়ে আসে।”
যিষ্ণু শুনলো কি শুনলো না বুঝলাম না, বলল, “কত দিন ধরে চেন ওকে।”
“তিন বছর,” যিষ্ণুর দিকে তাকিয়ে বলে ফেললাম।
যিষ্ণু বলল, “তিন বছর, বাহ, ভালই…। তা, ও কি তোমাকে প্রপস করেছে না এখনো করেনি।”
আবার আমি যিষ্ণুর চোখে চোখ রেখে বললাম, “না, না ও আমাকে প্রপস করেছে, না আমি ওকে।”
যিষ্ণু আমার কথা শুনে বলল, “অতি সুন্দর, আজব প্রেমিক প্রেমিকা তোমরা… তা এবার কি।”
কি বলব ঠিক বুঝতে পার ছিলাম না। একটু ভেবেই বললাম, “আসলে, আমার মনে হয় ও জানেই না যে আমি ওকে ভালবাসি, তা ছাড়া আমি নিজেও নিশ্চিন্ত ভাবে জানি না ও আমাকে ভালবাসে কিনা।”
শুনে যিষ্ণু আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “তার মানে। তুমি কি বলতে চাও।”
আমি বললাম, “কোনো দিনো তাকে বলি নি।”
“হে ভগবান, তাহলে তুমি আমাকে এখানে কি করতে নিয়ে এসেছ।”
খুব ধীরে গলায়ে বললাম, “আজ আমি তাকে সব বলতে চাই, আমি তাকে বলতে চাই …… আমি তোমাকে ভালবাসি।”
যিষ্ণু পাল্টা প্রশ্ন করলো, “তা হলে তিন বছর ধরে তুমি কি করেছ।”
“অপেক্ষা…।অপেক্ষায় ছিলাম সুযোগের, ওকে আমার মনের কথা জানাবার,” আস্তে আস্তে বললাম আমি।
যিষ্ণু রাগত ভাবে বলল, “তাহলে আমাকে কেন এখানে ডেকে নিয়ে এসেছ, তুমি তো ওকে একা ডেকেই সব বলতে পারতে।”
উঠে যাচ্ছিল যিষ্ণু। হাতটা চেপে ধরলাম আর করুন দৃষ্টি তে তাকালাম ওর দিকে। ও আমার দিকে তাকালো, তার পর আস্তে আস্তে বসলো আমার পাসে। বলল, “কিছু একটা প্রবলেম আছে তাই না। বল আমাকে সব খুলে।”
আমি চুপ করে ছিলাম কিছুক্ষণ, হে ভগবান আর কত খুলে বলব, কান্না পাচ্ছিল আমার। চোখ দিয়ে দু ফোটা জল ও গড়িয়ে পড়ল। যিষ্ণু হাত উঠিয়েও নামিয়ে নিল।
আমি চোখ মুছে মাথা নিচু করে বললাম, “তোমাকে তো আমি সব বললাম।” বুকের ভিতর ভীষণ একটা বোঝা যেন চেপে ছিল। যিষ্ণুর দিকে তাকালাম। ও কিছু বলছে না দেখে বললাম, “আশা করি তুমি আমাকে ঘৃনা করবে না।”
যিষ্ণু আশ্চর্য হয়ে বলল, “ঘৃনা, কেন ঘৃনা করব কেন।”
আমি বললাম, “আমি যে তোমাকে সব বলেছি।”
যিষ্ণু বলল, “হ্যাঁ, ঠিক আছে, আমি বুঝি তোমার ফীলিংস তোমার বয় ফ্রেন্ড এর প্রতি, কিন্তু তোমাকে তো ওকেও বলতে হবে, আর আমার মনে হয় না ও পছন্দ করবে কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি সামনে থাকুক যখন তুমি ওকে বলবে।”
আমার এবার হাসি পেয়ে গেল আর বলে ফেললাম, “যখন তোমাকে বলেছি তখন কেউ ছিল কি।”
যিষ্ণু উত্তর দিল, “না।”
“তা হলে তৃতীয় ব্যাক্তিটি কোথা থেকে আসলো।” দুষ্টুমির ছলে বলে ফেললাম।
বুঝলাম যিষ্ণু আমার কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলো না, বোকার মত আমার দিকে চেয়ে রইলো। তার পর বলল, “আমি কিছুই বুঝলাম না তোমার কথা।”
হেসে ফেললাম, বললাম, “চলো খিদে পেয়েছে, খাই কথাও।”
যিষ্ণুর হাত ধরে ওকে টেনে তুললাম আর বললাম, “তুমি এত ভালো একটা চাকরি যোগার করলে কি করে বল তো। আমার তো মনে হয় তোমার একটু উপর তলা টা খালি আছে।”
“কি আমার ইন্টেলিজেন্স নিয়ে প্রশ্ন করছ।” যিষ্ণু ও হেসে বলল।
বোটানিক্যাল গার্ডেন এর বাইরেই একটা ভালো রেস্টুরেন্ট এ এক কোনে ফাকা একটা জায়গা দেখে বসলাম দুজনেই সামনাসামনি। আমিই যিষ্ণু কে কিছু জিজ্ঞেস না করে দুজনার মত খাবার অর্ডার দিলাম। যিষ্ণু চুপ করে দেখছিল। খাবার দিয়ে গেল। যিষ্ণু এবার কি ভেবে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি তোমার বয় ফ্রেন্ড কে আজ আসতে বলেছিলে?”
খাবার বাড়তে বাড়তে আমি ছোট্ট করে উত্তর দিলাম, “হ্যা।”
“কটার সময় আসার কথা ওর।” যিষ্ণু প্রশ্ন করলো।
আমি বললাম, “এগারোটা।”
যিষ্ণু একবার আমার দিকে তাকালো, একবার নিজের ঘড়ির দিকে তাকালো, তার পর বলল, “তাহলে কোথায় ও।”
আমি আর থাকতে পারছিলাম না, বলে ফেললাম, “ও এখানেই আছে।”
যিষ্ণু চারি দিকে তাকাতে শুরু করলো।রেস্টুরেন্ট টি তে, আমাদের ছাড়া তখন আর কেউ ছিল না। কাউ কে না দেখতে পেয়ে বলল, “কোথায়।”
নির্লজ্জের মতো বলে বসলাম, “এখানেই, তুমি সত্যিই একটা টিউব লাইট, আমি যাকে ভালোবাসী, সে আমার সামনে বসে আছে।”
বলে আমি চোখ বুজে মাথা নিচু করে বসে রইলাম। যা হবার হবে, যদি চলে যায়, চলে যাবে, আমি হেরে গিয়েছি, যদি থাপ্পর মারে, মারুক আর আমার জীবনের কোনো মুল্য থাকবে না।
ঠিক তখন অনুভব করলাম ওর হাতের ছোয়া, ও হাত বাড়িয়ে আমার হাতের উপর রেখে বলল, “আলো, আমার মনেও তোমার প্রতি দুর্বলতা আছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিলাম না।”
আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার আঙ্গুল গুলো ওর আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে চেপে ধরলাম। আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছিল। দুজনেই দুজনার দিকে তাকালাম। কেমন এক অদ্ভুত দৃষ্টি ওর, মধুর, মায়াময়, ভালবাসার দৃষ্টি। আমার গলা দিয়ে কোনো কথা বেরোলো না।
যিষ্ণু ও এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, মুখে একটা তৃপ্তির হাসি। আমি একটা হাত দিয়ে চোখের জল মুছলাম। আমার সব উত্তেজনা, ভয়, বুকের ভেতরের জ্বালা, পেটের মধ্যের কচলানো, সব শান্ত হয়ে গেল। পরম আনন্দে আমার শরীর জুড়িয়ে গেল। আমি হেরে যাই নি। আমাকেও কেউ ভালোবাসে। দুজনে দুজনার দিকে তাকিয়ে আছি যেন আনেক দিন পর দুই প্রেমিক প্রেমিকার দেখা হলো। যিষ্ণু আমার হাতটা ধরেই ছিল।
হঠাত যিষ্ণু আমার হাতটা আরো জোরে চেপে ধরল। মুখে একটা আতঙ্কের ছায়া। আমার মনে হলো, ওর মাথায় চিন্তা জেগেছে আমাদের দুজনার সম্পর্ক নিয়ে, আমরা মাসি – বোনপো। বুঝলাম ও চিন্তা করছে যে আমাদের এই সম্পর্ক আমাদের আত্মীয় রা কেউ মানবে না, সমাজ মানবে না, কাউকে আমরা আমাদের সম্পর্কের কথা বলতে পারব না।
যিষ্ণুর দিকে তাকিয়ে বললাম, “যিষ্ণু, আমি তোমার চিন্তার কথা বুঝি। শুধু একটা কথা আমাকে সত্যি সত্যি বলো, আমি বেটে, আমার গায়ের রং কালো, এগুলো সত্যেও কি তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারবে।”
যিষ্ণু দুই হাত দিয়ে আমার হাত ধরে বলল, “আমি তোমাকে ভালোবাসী কারণ তুমি ভারী সুন্দর। তোমার সৌন্দর্য টা শুধু তোমার চামড়ার রঙের মধ্যেই আছে তা নয়, তোমার সৌন্দর্য তোমার মনে, তোমার রক্তের প্রতি বিন্দুতে বিন্দুতে, তোমার হৃদয়ে, আর সেটা দেখা যায় তোমার চোখে, চোখ দিয়ে গড়িয়ে বেরোচ্ছে।”
আমি স্বর্গে ভাসতে শুরু করলাম। বললাম, “তা হলে আমাদের ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। বর্তমান এ থাকি আর জীবনের আনন্দটা নিয়ে খুসি থাকি।”
খাবার আমাদের সামনে পরে ছিল, ঠান্ডা হয়ে গিয়ে ছিল। তাই কিছু মুখে গুজে আমরা দুজনে হাত ধরা ধরি করে আবার বোটানিক্যাল গার্ডেন এ ঢুকলাম। আর যেন আমাদের কোনো চিন্তা ছিল না।
আমাদের একান্ত নিরালা জায়গাটিতে গিয়ে, দুজনে সামনা সামনি দাড়িয়ে, হাত ধরে দুজনের দিকে তাকালাম। চোখ জুড়িয়ে আমি যিষ্ণু কে দেখছিলাম। যিষ্ণু ও আমাকে দেখছিল। তারপর যিষ্ণু আমাকে তার বুকের মধ্যে টেনে নিল। দুজনে জড়িয়ে ধরলাম। আমার দুদু দুটো যিষ্ণুর বুকের ছোয়া পেয়ে সক্ত হয়ে গেল।
যিষ্ণু আমার পিঠে আলতো ভাবে হাত বোলাছিল। আমি ওকে দু হাত দিয়ে চেপে ধরলাম। আমার মাথাটা যিষ্ণুর বুকের মধ্যে গুঁজে রেখে ছিলাম। জীবনে আজ সত্যিকারের শান্তি পেলাম। তিন বছরের তপস্যা আমার সার্থক হলো। আমি আস্তে করে মাথা উঠিয়ে যিষ্ণুর দিকে তাকালাম। যিষ্ণু আমার কপালে চুমু খেল।
আস্তে আস্তে আমার কানের লতির কাছে মুখ নিয়ে চুমু খেল, চোখে চুমু খেল, গালে চুমু খেল, তার পর ওর ঠোট টা আস্তে আস্তে আমার ঠোটের কাছে নিয়ে আসলো। আমার সারা শরীরে একটা শিহরণ অনুভব করলাম, আমার যেন আর কোনো লজ্জা বলে কিছু ছিল না, ভয়ে ও না, যেন এর জন্যই আমি অপেক্ষা করছিলাম। আমাদের ঠোটে ঠোট লাগলো, আস্তে আস্তে আমরা দুজনেই ঠোট দুটো ফাঁক করলাম, দুজনই দুজনার জীবের ডগা এগিয়ে দিলাম, জীবে জীব লাগলো, আর দুজনেই পাগলের মতন একে অপর কে জড়িয়ে চুমু খেতে লাগলাম। দুজনই দুজনার ঠোট চুষতে লাগলাম, জীব দিয়ে যেন তলোয়ার খেলা খেলছিলাম। হাত দিয়ে একে অপরের শরীরে হাত ঘষতে লাগলাম। অনেকক্ষণ ধরে চুমু খাবার পর, দুজনে কিছুটা শান্ত হলাম।
সূর্য অস্ত গিয়ে ছিল, সন্ধ্যা হই হই, অনিচ্ছা থাকলেও বাড়ি ফিরতে হবে। আমরা দুজনে উঠলাম, এবং বোটানিক্যাল এর গেট এর বাইরে আসলাম। যিষ্ণু কে বললাম, “কালকের তারা তারি আসবে।”
যিষ্ণু হেসে বলল, “কি কালকের ও ক্লাস বাংক করবে।”
আমি বললাম, “তোমার আর মাত্র ৫ সপ্তাহ ছুটি আছে। আমি এই ৫ সপ্তাহের প্রতিটি দিন তোমার সাথে থাকতে চাই।”
যিষ্ণু বলল, “বেশ আমার মহারানী, কালকের কখন, কোথায় দেখা হবে বল।”
আমি বললাম, “কলেজ এ না, আমার বন্ধুরা তোমার দিকে নজর ফেলেছে, ওদের নজর থেকে তোমাকে বাচাতে হবে।”
যিষ্ণু হো হো করে হাসলো আর বলল, “কি বন্ধুরা দেখেছে নাকি।”
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “হ্যা, তুমি কাল সকাল ১০ টার মধ্যে শিয়ালদা স্টেশন এ আসতে পারবে, আমি রিসার্ভেসন কাউন্টার এর কাছে থাকব।”
যিষ্ণু বলল, “ঠিক আছে, চলো তোমাকে ছেড়ে দিয়ে আসি।”
আমি বারণ করলাম, বললাম, “দেখো, তুমি যাবে সোদপুর, আমি যাব টালিগঞ্জ। দুটো দুই দিকে। আমাকে একটা ট্যাক্সি করে দাও, আর তুমি আলাদা একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি যাও।”
হ্যা, না, করতে করতে শেষ পর্যন্ত আমরা আলাদা ট্যাক্সি করলাম, আর যে যার বাড়িতে ফিরলাম।
বাড়িতে এসে, কাপড় চোপর পাল্টে, রান্নাঘরে মা কে সাহায্য করলাম। আজ যেন আমার মধ্যে কোনো ক্লান্তি ছিল না। মা এর প্রশ্নর উত্তরে বেশ সহজেই মিথ্যে কথা বলে দিলাম, কলেজ এ তিন টি ক্লাস হয়েছে তারপর বন্ধুরা মিলে, লাইব্রেরি তে গিয়ে বই পরছিলাম আর নোট তৈরী করছিলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর, শুতে গেলাম, ঘরে ঢুকে বই পত্র ছড়িয়ে বসলাম, যেন কত পড়ছি, কারণ আমি জানি মা এক বার দেখতে আসবে। মন টা পরে ছিল যিষ্ণু চিন্তা তে। সারা টা দিন কি কি করেছি মনে পড়ল, যিষ্ণুর বোকা বোকা দৃষ্টি, যিষ্ণুর মুখে ঈর্ষার রেখা। যিষ্ণু ঈর্ষা করছিল আমার না দেখা বয় ফ্রেন্ড কে, কেন, কারণ ও মনে মনে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। মনে করে খুব ভালো লাগলো। মা মাঝে এসে বলে গেল বেসি রাত না করতে। আমিও কিছু পরে লাইট অফ করে, পাস বালিশ জড়িয়ে বিছানায়ে শুয়ে পরলাম, যেন যিষ্ণু কে জড়িয়ে আছি। ঘুম চোখের থেকে উড়ে গিয়েছে। সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে টের পেলাম, আমার চোখে ঘুম নেই। আমার সব ইচ্ছা পূরণ হলো, কিন্তু কোথায় যেন একটা সমস্যা উঁকি মারছিল। এর পর কি হবে জানি না। আমাদের ভবিষ্যতে কি হবে জানি না। আমার জন্য যিষ্ণু বদনাম হয়ে যাবে … না তা হতে পারে না …। তবে। অনেক চিন্তা করলাম, সমাধান খুঁজে পেলাম না। ভোর রাতের দিকে মনে হলো একটা সমাধান হয়ত আছে। তবে যিষ্ণু কে বোঝাতে হবে। পারতেই হবে আমাকে, যিষ্ণু কে বোঝাতে। কিছু পেতে গেলে যে কিছু ত্যাগ করতে হয়। মনস্থির করে নিলাম। তারপর নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হলো। তারা তারি তৈরি হয়ে একটি গোলাপী রঙের সালয়ার কামিজ পরে সকাল সকাল বাড়ির থেকে বেরিয়ে গেলাম। শিয়ালদা স্টেশন এ এসে দেখি যিষ্ণু আমার আগেই পৌছে গেছে। আনন্দে মনটা নেচে উঠলো। যিষ্ণু ও আমাকে দেখে যেন নিশ্চিন্ত হলো।
আমি কাছে পৌছাতেই, আমাকে বলল, “গুড মর্নিং, আসতে অসুবিধা হই নি তো।” আর গলার আওয়াজ খুব ধীরে করে বলল, “ডার্লিং।”
আমি বললাম, “সুপ্রভাত, না অসুবিধা কেন হবে” আর গলার আওয়াজ কম করে যোগ করলাম, “তুমি আমার ডার্লিং।”
“কোথায় যাবে মহারানী,” যিষ্ণু প্রশ্ন করলো।
ঠিক তখন স্টেশন এর মাইক এ ক্যানিং এর ট্রেন এর খবর জানালো, আমিও সঙ্গে সঙ্গে বললাম, “চলো ক্যানিং যাই।”ক্যানিং এর টিকিট কেটে আমরা ক্যানিং এর ট্রেন ধরলাম। পাসাপাসি বসে খুব ভালো লাগছিল। দুজনেই অল্প বিস্তর কথা বাত্রা করছিলাম। অনুভব করলাম, যিষ্ণু একটু চিন্তিত, হয়ত আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে।
ক্যানিং পৌছে, একটা রিকশা নিয়ে, আমরা একটু দুরে একটা গেস্ট হাউস এর কাছে, মাতলা নদীর পারে এসে বসলাম। যিষ্ণু আমার হাত ধরে বলল, “আলো, আমি কি করব বুঝতে পারছি না, আনেক রাত পর্যন্ত চিন্তা করেছি কিন্তু কোনো উপায় পেলাম না। এটুকু শুধু বুঝেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি বলার আগের থেকেই, কিন্তু তোমাকে বলতে পারছিলাম না শুধু আমাদের সম্পর্কের জন্য। কাল তুমি তোমার মনের কথা আমাকে বলার পর আরো বুঝলাম আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না। কিন্তু কি করে আমরা ঘর করব। তোমার আমার বাড়ির লোকেরা কেউ আমাদের এই সম্পর্ক মানবে না। পালিয়ে যদি বিয়ে করি, আর তোমাকে ব্যাঙ্গালোর এ নিয়ে যাই, সেখানে আমার মাসি মেশোমশাই আছে, তারাও জানতে পারবে। আমাদের সব আত্মীয় স্বজন থেকে আলাদা, একা একা থাকতে হবে। তা ছাড়া ব্যাঙ্গালোরেও অফিসে জানা জানি শেষ পর্যন্ত হয়ে যাবে, চাকরি ছেড়ে আমাদের নতুন কোনো শহরে, নতুন চাকরির বেবস্থা করতে হবে। তোমাকে আনেক কষ্ট পেতে হবে। পারবে তো আলো, পারবে আমার সঙ্গে কষ্ট করে থাকতে।”
যিষ্ণুর সব কথা বাধা না দিয়ে বলতে দিলাম। যিষ্ণুর আরো পাসে ঘেসে, আলতো করে ওর হাতের উপর হাত রেখে বললাম, “যিষ্ণু, আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি এমন কিছু করব না যাতে তোমার কোনো ক্ষতি হয়। কিন্তু তার মানে এই ভেবো না, যে আমি তোমাকে ছেড়ে দেব। না, সেটা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি ভালো করে বুঝি যে আইনত আমরা বিয়ে করতে পারব না। কিন্তু কে আমাদের আটকাতে পারে যদি আমরা দুজনে স্বামী – স্ত্রীর মতন ভালবাসা উপভোগ করি। মনে মনে আমি তোমাকে আমার স্বামী রূপে মেনে নিয়েছি, তুমিও আমাকে তোমার স্ত্রী রূপে গ্রহণ কারো।”
যিষ্ণু আবেগের সঙ্গে বলল, “আমিও তোমাকে আমার স্ত্রী রূপে চাই। এই সমাজ কে আর আমি মানি না। চলো আমরা পালিয়ে যাই। আমরা অন্য কোনো শহরে গিয়ে বসবাস করব।”
আমি যিষ্ণুর চোখে চোখ রেখে শান্ত গোলায়ে বললাম, “তোমার চাকরির কি হবে, এত ভালো একটা চাকরি তুমি খোআবে। তা ছাড়া আমাদের আত্মীয় সজনরা সব জানতে পারবে, লোকে অনেক কথা বলবে যে গুলো গায়ে কাঁটার মতন ফুটবে। তুমি ভালো করে যান, আমাদের দুজনারি আত্মীয় স্বজনরা ভারতের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কেউ না কেউ আমাদের সন্ধান পাবেই। তখন আমরা সমাজের সব থেকে মুখোরোচক, টাটকা তাজা খবর হয়ে দাঁড়াবো। তার থেকেও বড় কথা, আমরা আমাদের ছেলে মায়ে দের কি বলব বল তো। ছেলে – মেয়ে তো হবেই আমাদের, তাই না।”
“তাহলে আমরা কি করব?” ভীষণ একটা ব্যাথা যুক্ত সুর এ যিষ্ণু প্রশ্ন করলো।
যিষ্ণুর গলার আওয়াজ শুনে, ওর বুকের ব্যাথা অনুভব করলাম। যিষ্ণুর প্রতি আমার ভালবাসা যেন আরো গভীর হলো। চোখ ছল ছল করে উঠলো। যিষ্ণুর হাত দুটো কে আরো শক্ত করে ধরে, অনেক কষ্টে, শান্ত গলায়ে বললাম, “যিষ্ণু, প্লিস সোনা আমার, আমার কথা শোনো। আজ আমি একটা নির্লজ্জ মত্ত হস্তিনির মতো হয়ে গিয়েছি। আমার মাথায়ে একটা উপায় খেলছে, কিন্তু তোমাকে আমার উপর সম্পূর্ণ ভরসা করতে হবে, আমাকে বিশ্বাস করতে হবে, আমি যা বলব, বিনা দ্বিধায় তা মানতে হবে, পারবে তো।”
যিষ্ণু উত্তর দিল, “আমি তোমাকে পুরো পুরি বিশ্বাস করি। তুমি যা বলবে, তা আমি চোখ বুঝে বিনা প্রশ্নে মানব।”
যিষ্ণুর উত্তর শুনে কিছুটা ভরসা পেলাম। পারব আমি যিষ্ণু কে বোঝাতে, আজ মাথাতে দুষ্টুমি করতে ইচ্ছা জেগে গিয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকালাম, প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে। যিষ্ণুর দিকে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকালাম আর বললাম, “খিদে পেয়েছে, চলো কিছু খেয়ে নি।” এই বলেই আমি উঠে দাড়ালাম আর যিষ্ণুর হাত ধরে টেনে তুললাম। আমরা গেস্ট হাউস এর দিকে হাটতে শুরু করলাম। সেখনে একটা ছোটো ধাবার মতো দোকানে অল্প বিস্তর খেলাম। আবার গেস্ট হাউস এর দিকে তাকালাম। গেস্ট হাউস নামেই, গোটা দশেক কুটির, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
যিষ্ণু কে বললাম, “দেখো না একটা ঘর ভাড়া পাওয়া যাবে কিনা, নিশ্চিন্তে গল্প করা যাবে আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও।”
যিষ্ণু গেস্ট হাউস এর অফিস এ গিয়ে একটা কুটির ভাড়া করে আসলো। আমরা দুজনে কুটির টি তে ঢুকলাম। কুটির টি তে একটি বড় ঘর, বাথরুম এবং একটি লাগোয়া বারান্দা ছিল। ঘরে একটি বড় খাট, পরিস্কার বিছানা পাতা, একটি বড় সোফা আর জানালা গুলিতে মোটা পর্দা।
ঘরটিতে ঢুকে, আমরা একে অপরের দিকে তাকালাম। ধীরে ধীরে আমরা একে অপরের দিকে এগিয়ে গেলাম, দুজনেই হাত বাড়ালাম, আমরা একে অন্যজনের চোখে চোখ রেখে যেন মনের কথা বলছিলাম, তার পরেই দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরলাম। যিষ্ণু এতক্ষণ যেন নিশ্বাস আটকে রেখেছিল, এবার সেটা ছাড়ল আর আমার গলা থেকে একটা তৃপ্তির আওয়াজ বেরিয়ে এলো। আমরা একে অপর কে চুমু খেতে লাগলাম, হাত দিয়ে একে অপরের শরীরের ধাঁচ অনুভব করতে লাগলাম। যিষ্ণুর ছোয়াএ আমার সারা শরীরের ভেতর যেন কেঁপে উঠলো।
আমি যিষ্ণুর বুকে হাত রাখলাম আর ওর জামার বোতাম খুলতে লাগলাম। আমার যেন আর তর সইছিল না। দু তিনটে বোতাম খুলতে না খুলতেই যিষ্ণু নিজে তার জামার সব বোতাম খুলে ফেলল আর জামাটি এবং গেঞ্জিটি শরীর থেকে খুলে ফেলল। কি সুন্দর চেহারা যিষ্ণুর, ফর্সা চওরা বুক, বেশ লোমে ভরা, আমি আর থাকতে পারছিলাম না। আলতো করে হাত রাখলাম ওর বুকে, আমার আঙ্গুল গুলো দিয়ে ওর বুকের লোমগুলো নিয়ে খেলতে ইচ্ছে করছিল। লজ্জা ও পেলাম। নিজের মুখ ঢাকার জন্য যিষ্ণু কে জড়িয়ে ধরলাম আর ওর লোমশ বুকে আমার মুখ গুজে রাখলাম। যিষ্ণু ও আমাকে জড়িয়ে ধরল।
আমার তল পেটে কিছু একটা শক্ত জিনিস এর চাপ অনুভব করলাম, বুঝলাম ওটা আর কিছু না, যিষ্ণুর বাড়া। সারা শরীরে আরো কম্পন ধরল, উত্তেজনা বেড়ে গেল, আমার বুকের ভেতর কে যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছিল।
এক সময় টের পেলাম যিষ্ণু একটা হাত দিয়ে আমার কামিজ এর জিপ টা ধীরে ধীরে কাঁধ থেকে নিচে নামছে। তার পর হাত দুটো কে আমার কোমরের নিচে নিয়ে গিয়ে কামিজ টি আস্তে আস্তে উপরে ওঠাচ্ছে। আমি ও আলগা হয়ে দাড়ালাম আর আস্তে আস্তে নিজের হাত দুটো তুলে ধরলাম যাতে কামিজটি খুলতে কোনো অসুবিধা না হয়। লজ্জা লাগছিল খুব শুধু ব্রা পরে। যিষ্ণু একটা হাত বাড়িয়ে ব্রা এর উপর দিয়ে আমার ঠাসা দুধের উপর রাখল। আমার পা দুটো কেঁপে উঠলো, আর গলা থেকে একটা অদ্ভুত আওয়াজ বেরিয়ে গেল।
আমি কেন জানি না আমার হাতটি আমার দুধের উপর রাখা যিষ্ণুর হাতের উপর রেখে অল্প চাপ দিলাম। যিষ্ণু আমার দুধ দুটো আস্তে আস্তে চাপ দিতে লাগলো আর মুখ নীচে করে আমার গলায়, কাঁধে আর গালে চুমু খেতে লাগলো। আমার অবস্থা তখন পাগল এর মতন। দুই হাত দিয়ে যিষ্ণুর মুখ ধরে আমি ওর ঠোটে চুমু খেতে লাগলাম। যিষ্ণু ও আমার ঠোট চেপে দিল ওর ঠোট দিয়ে আর আমরা পাগলের মতো চুমু খেতে লাগলাম, আমাদের জীভ একে অপরের মুখে ঢোকার জন্য লড়তে লাগলো।
আমি এক হাত দিয়ে যিষ্ণুর মাথা চেপে ধরে ছিলাম আর অন্য হাত দিয়ে ওর কাঁধে জড়িয়ে ছিলাম। যিষ্ণু ও আমাকে তার বুকের মধ্যে জড়িয়ে চেপে রেখে ছিল। এই ভাবে চুমু খেতে খেতে আমাদের দম বন্ধ হবার মতন হলো। জড়াজড়ি অবস্থাতেই আমরা নিশ্বাস নেবার জন্য মাথা আলগা করলাম। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম দুজনেই। যিষ্ণুর বাড়া আমার তলপেটে তখনো চাপ সৃষ্টি করছিল।
যিষ্ণু এবার তার হাত দুটো আমার পিঠের পেছনে নিয়ে গেল আর ব্রা খোলার চেষ্টা করছিল। আমার ইচ্ছে করছিল নিজে খুলে দি, কিন্তু লজ্জা তে পারলাম না। দু তিন বার চেষ্টার পর যিষ্ণু আমার ব্রা এর হুক গুলো খুলে দিল আর ব্রা টা খুলে ফেলল আমার শরীর থেকে। আমি তখন বেসামাল হয়ে পরেছি। যিষ্ণু তার হাত বাড়িয়ে আমার নিঢেল দুদু দুটো কে ধরল আর টিপতে লাগলো। দুধের বোটা দুটো শক্ত হয়ে গিয়েছিল। আমার গলা দিয়ে অদ্ভুত সব গোঙানির শব্দ বেরোচ্ছিল।