কালীপাড়ার বস্তি (#5)
ভােরের আলাে ফোটার আগেই ময়না কাপড় পরে দানাকে জড়িয়ে অজস্র চুমু খেয়ে সারা অঙ্গে ছন্দ তুলে চলে যায়। দানা ওই অর্ধ নির্মিত ফাঁকা ফ্লাটের মেঝেতে অনেকক্ষণ চোখ বুজে শুয়ে থাকে, সারা শরীরে দুইজনের কামরস আর ঘাম মিশে এক মাদকতা ময় ঘ্রান নির্গত হয়।
সকাল বেলায় ঘরে ফিরে যথারীতি কান পেতে শােনে ময়না আর বিষ্টুর কথােপকথন। গত রাতের বিশেষ কোন কথা বিষ্টুর মনে নেই কেননা মাথার ওপরে। বেলনের ঘা খাওয়ার পরেই বিষ্টু অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। বিষ্ণুর সকালের দিকে যখন জ্ঞান ফেরে ততক্ষণে ময়না মন ভরে দানার সাথে সঙ্গম করে সারা চেহারায় এক অনাবিল সুখের পরশ মাখিয়ে ফিরে এসেছে। ময়নার হাতে মার খাওয়ার পরে বিষ্টু কাকুতি মিনতি করে ওর কাছে, বারেবারে ক্ষমা চেয়ে বলে যে খুব ভুল হয়ে গেছে।
দানা খুব খুশী, প্রতি রাতে ময়নাকে নিজের বুকে পাবে। সকাল বেলায় ময়না কাজে যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পরে আর যাওয়ার আগে আড় চোখে দানাকে ইশারায় জানিয়ে যায় রাতের কথা।
সারাদিন ট্যাক্সি চালিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরে, মনের মধ্যে নাচন কোদন অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছিল। ওদিকে বিকেলে থেকেই আকাশে কালাে মেঘের ঘনঘটা, দানা বাড়ি থেকে বেরনাের আগে মাদুর কাঁথা সবকিছু একটা প্লাস্টিকে বেঁধে এসেছিল যাতে বর্ষার জলে আবার ভিজে না যায়। ফেরার পথে ময়নার জন্য বেল ফুলের মালা আর মিষ্টি কিনে আনে, এ যেন ওর বাসর সজ্জা। ভাবতেই মনে মনে হেসে ফেলে দানা, পরস্ত্রী সম্ভোগ করে নিজের বাসর সাজাবে আর বিষ্টু আকণ্ঠ মদ গিলে ওদের পাশেই পরে থাকবে।
বিষ্টু আসতেই ময়নার রুপ আমূল বদলে যায়, অন্য দিনের মতন চুপচাপ পরে না থেকে বিষ্টুর ওপরে সােহাগের বারিধারা বর্ষণ করে। বিষ্টু বেশ খুশি হয়ে যায়, বােতলে আনা দেশি মদ গ্লাসে ঢেলে আকণ্ঠ পান করে, সেই সাথে ময়নাকে গেলাতে চেষ্টা করলে ময়না খিল খিল করে হেসে ওঠে আর বিষ্টুর অলক্ষ্যে মদের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। ওদিকে নিজের ঘরের আলাে বন্ধ করে ক্যালেন্ডার সরিয়ে দানা ওদের খেলা দেখতে শুরু করে।
ময়না আড় চোখে বারেবারে ওই ক্ষুদ্র জানালার দিকে তাকায় আর দানার চোখের ওপরে চোখ পড়তেই লজ্জাবতী লতার মতন মিচকি হেসে ওঠে। নেশায় টোল বিষ্ণু কিছুই আঁচ করতে পারেনা, এত নেশা করে ফেলে যে রাতে আর ময়নাকে ভােগ করার শক্তি থাকে না শরীরে, কিছুক্ষণের মধ্যে নিঃসাড় হয়ে মেঝের ওপরে লুটিয়ে পরে।
মাথার ওপরে ঘনঘাের বর্ষার মেঘের খেলা শুরু হয়ে গেছে, থেকে থেকে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে বিদ্যুৎ ঝলকানি দিচ্ছে। একটু পরেই বিজলী বাতি চলে গেল, চারপাশে নেমে এলাে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেই আঁধারকে পাথেয় করে দরজা খুলে ময়নার ঘরে ঢােকে। ময়না তৈরি ছিল দানার বাহু মাঝে নিজেকে সমর্পণ করার জন্য। ময়না হ্যারিকেন জ্বালিয়ে নেয়। ওদের মিলনের আগে, একদম ঘুটঘুটে অন্ধকারে না দানার না ময়নার কারুর সঙ্গম করতে ভালাে লাগেনা। যদি একটু মনের মানুষকে চোখে না দেখতে পারল তাহলে সেই রতিক্রীড়ার আসল আনন্দের কি অর্থ? বিষ্ণুকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে দুই নর নারী শরীরে খেলায় মেতে ওঠে নিজেদের কাম জ্বালা নিবারণের জন্য।
কখন ময়নাকে নিচে ফেলে সঙ্গমে রত হয়, কখন ময়না দানার ওপরে চড়ে ওঠে, ওর বুকের ওপরে ঝুঁকে কোমর পাছা নাচিয়ে সঙ্গমে রত হয়, কখন ময়নাকে চার হাতেপায়ে কুকুরের মতন উবু হয়ে বসিয়ে পেছন থেকে সঙ্গমে রত হয়, সারা রাত ধরে ভিন্ন ভিন্ন আসনে বার তিনেক সঙ্গমে মেতে ওঠে ওরা। ভােরের আলাে ফোটার আগেই দানা নিজের ঘরে চলে আসে আর ময়না নিজের কাপড় চোপর ঠিকঠাক নিজেকে ধুয়ে পরিষ্কার করে আরামে ঘুমিয়ে পরে।
কয়েকদিনের মধ্যেই দানা, বিষ্ণু ময়নার সাথে বন্ধুত্ত পাতিয়ে নেয়, বাড়ি ফিরলেই একবার ওদের ঘরে উঁকি মেরে যায়, যদি ময়না একা থাকে তাহলে কথাই নেই, পাছায় হাত দিয়ে একটু খামচা খামচি করে দেয়। অথবা স্তনে হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে নিজেকে আর ময়নাকে উত্তেজিত করে তােলে আসন্ন রাতের রতিক্রীড়ার অপেক্ষায়। কোনােদিন যদি বিষ্ণু থাকে তাহলে ওর সাথে মদ খেতে বসে যায়, নিজে যত না গেলে তাঁর চেয়ে বেশি বিষ্ণুকে গেলায় আর মাঝে মাঝে বিষ্ণুর নজর এড়িয়েই ময়নার নধর অঙ্গে হাত বুলিয়ে আদর প্রকাশ করে।
কোন কোনােদিন দানার ফিরতে দেরি হয়ে যায়, এসে দেখে ময়না বেশ ফুন্টুসির মতন সেজেগুজে বসে, ঠিক কার অপেক্ষায়, ওর না বিষ্ঠুর? গলা খ্যাঁকরে নিজের অস্তিতের জানান দিতেই ময়না বেড়ার ধারে দৌড়ে এসে গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে কুশল। দানার মনের সাথে সাথে লুঙ্গির ভেতরের ক্ষুধার্ত হায়না চঞ্চল হয়ে ওঠে। দানা বেড়ার ফুটো বড় করে একটা জানালার মতন বানিয়ে ফেলে। সেই দেখে ময়নার চক্ষু চড়ক গাছ, একি করছে, যদি বিষ্ণু দেখতে পায়। তাহলে ওকে আর দানাকে আস্ত রাখবে না তবে জানে ওই দানবের মতন চেহারার দানার সামনে ওর বিষ্ণু জল চাইবে না।
ময়না নিজেদের দিকে ওই জানালার ওপরে একটা কাপড় মেলে দেয় আর দানা এইপাশে একটা ক্যালেন্ডার টাঙ্গিয়ে ঢেকে দেয়। এইভাবে রাতের পর রাত ওদের দেহের খেলা চলে। ময়না জানে বিষ্টুকে যদি ওর সাথে সঙ্গম না করতে দেয় তাহলে বিষ্ণুর মনে সন্দেহ জাগতে পারে, তাই কোন কোন দিন বিষ্টুকে সঙ্গম করতে দেয় তবে মাসের ওই পাঁচ দিন ছাড়া বেশির ভাগ দিন বিষ্ণুকে মদের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে ওরা দুইজনে চরম কামক্রীড়ায় মেতে ওঠে।
একদিন বিষ্ণুর বাসের লাইনের কেউ মারা যাওয়ার জন্য রাতে আর ফিরল না। ময়না বাড়ি ফিরে সেই খবর জানার পরেই নেচে ওঠে আর দানাকে ফোনে সেই কথা জানায়। দানার মন বড় উৎফুল্ল, তাড়াতাড়ি ট্যাক্সির মালিককে আয় ব্যায় বুঝিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
আকাশে সেদিনও কালাে মেঘের ঘনঘটা, থেকে থেকে বজ্র বিদ্যুতের সাথে ঝড় শুরু হয়ে গেল আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার বিজলী চলে গেল। বিজলী গেলে ওদের বেশি সুবিধে হল, লণ্ঠনের আলােতে ময়নাকে অপরুপা সাজাতে পারবে। সেদিন দানা বাড়ি ফেরার সময়ে চাউমিন আর চিলি চিকেন কিনে আনে, ভাবে দুইজনে আগে বেশ আয়েশ করে খাবে আর তারপরে সারা রাত ধরে চুটিয়ে পরস্পরকে ভােগ করবে। দানার মন বুঝতে পারে যে ওই ময়নার ডবকা দেহ ওকে খুব টানে, কিছুতেই ওর থেকে চোখ ফেরাতে পারে না, ওর মধ্যে কোন এক অদৃশ্য চুম্বকীয় শক্তি আছে যার থেকে ও দূরে সরে থাকতে পারে না।
সেই রাতে দানা আর ময়না উদ্দম কামকেলি করে। মােবাইলে পর্ণ মুভি চালিয়ে ময়নাকে দেখায় আর ওই বিদেশি সব আসনে ভঙ্গিমায় কেলি করতে চেষ্টা করে। দানা একবার ময়নার পায়ুছিদ্রতে লিঙ্গ প্রবেশ করাতে চেষ্টা করে কিন্তু ময়না ব্যাথায় কুঁকড়ে প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে, দানাকে খাবলে কামড়ে একসা করে দেয়। শেষ পর্যন্ত দানা আর ময়না লিঙ্গ আর যােনির মিলনে সােজা সরল ভঙ্গিমায় কাম সম্ভোগে মেতে ওঠে। কামক্রীড়ার পরে পাশাপাশি জড়াজড়ি করে সােহাগের সাথে পরে থাকে। ময়না ওরদিকে পিঠে করে শুয়ে, আর দানা ওকে পেছন থেকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে থাকে। দানা ওর একটা স্তন হাতের মধ্যে নিয়ে আলতাে আলতাে টিপে আদর করে দেয়। ময়নার নরম পাছার খাঁজে দানার বৃহদাকার লিঙ্গ আটকে যায় আর ময়না ওর বিশাল থাবা গালের কাছে চেপে ধরে আদরে খায়।
ময়নাকে আদর করতে করতে দানা প্রশ্ন করে, “এই ময়না তােদের কি সত্যি সত্যি বিয়ে হয়েছে?” ময়না হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “তা নয়ত কি, ওই পালিয়ে আসার সময়ে বাঘেরখােল শহরে একটা কালী মন্দিরে আমরা দেবতাকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করেছি।”
দানা হেসে বলে, “উম্মম বুঝলুম… এই ময়না পাখী তুই আমার সাথে পালাবি?”
ময়না ওর কথা শুনে খিলখিল করে হেসে বলে, “অন্যের বউ নিয়ে পালানাের খুব শখ না তাের? এই ত পাশাপাশি বেশ ভালাে আছি, রােজ রাতে তুই তাের খােরাক ঠিক মতন পেয়ে যাচ্ছিস আর কি চাই তাের?”
দানা ওর তুলতুলে স্তনের ওপরে হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, “তােকে একদম নিজের মতন করে পেতে চাই রে ময়না। ওই বিষ্টুকে আর সহ্য হয় না যে আমার।”
ময়না ধিরে ধিরে ওর দিকে ফিরে শােয়, একপা দানার কোমরের ওপরে চড়িয়ে দুইহাতে ওর গলা জড়িয়ে আদুরে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?ʼʼ
দানা ওকে চুমু খেয়ে সারা পিঠে আদর করে হাত বুলিয়ে সােহাগ ভরা কণ্ঠে বলে, “এই মহানগর ছাড়িয়ে অন্য কোথাও যেখানে শুধু তুই আর আমি একটা ভালােবাসার ঘর বেঁধে থাকব।”
ময়না ওর নাকের ওপরে নাক ঘষে জিজ্ঞেস করে, “কি খাওয়াবি আমাকে? তুই ত শুধু গাড়ি চালাতে জানিস, অন্য কোন কাজ জানিস না।”
উত্তরে দানা বলে, “আমি বারাে কেলাস পর্যন্ত পড়েছি, কোন না কোন একটা কাজ পেয়েই যাবাে। আর না হয় এই সেই পশ্চিমে সাগর পাড়ের বড় শহরে যাবাে, সেইখানে নাকি বাতাসে টাকা ওড়ে, সেখানে আমি ট্যাক্সি চালাব আর তুই ঘরে বসে আমার অপেক্ষা করবি আর আমি এলে আমাকে ভালবাসবি।”
স্বপ্ন দেখতে পয়সা খরচ হয়না তাই দানা স্বপ্ন দেখা ছাড়ে না। ময়না হ্যাঁ না কিছু উত্তর না দিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে। দানা ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে ঘুমিয়ে পরে। মনে মনে দানা ময়নাকে ভালােবেসে ফেলে। বিষ্টুর নাকের তলা দিয়ে ওরা যে চরম কামক্রীড়ায় মত্ত সেটা কেউ জানতে পারে না। সবাই জানে বিষ্টু রােজ রাতে মদ খেয়ে এসে বউকে সম্ভোগ করে আর সেই সঙ্গমের সময়কার মিহি শীৎকার সবার রাতের খােরাক হয়, কিন্তু কেউ এর পেছনের আসল খবর জানে না যে আসলে রাতের পর রাত ময়না আর দানা পরস্পরের শরীর নিয়ে খেলা করে আর ময়নার যে শীৎকার বাকি লােকেরা শােনে সেইগুলাে বিষ্ণুর কারনে নয়, সেই সুখের শীৎকারের আসল কারন দানার বলশালী দেহ আর বৃহদাকার লিঙ্গ।
দানা ধিরে ধিরে বুঝতে পারে, যে ময়না ওদের এই কালী পাড়ার বস্তিতে থাকতে এসেছিল অথবা সেই রাতে যে ময়নাকে বুকে করে কামাগ্নির লেলিহান শিখায় ঝাঁপ দিয়েছিল, আদরের সেই ময়নাপাখী অনেক বদলে গেছে। দানার কিনে আনা সাবান শ্যাম্পু পারফিউম মেখে ওর জন্য তৈরি থাকে বটে কিন্তু ওর চোখে এক অজানা স্বপ্ন দেখতে পায়। ইদানিং শাড়ি ছেড়ে ছােটো হাতার চাপা কামিজ আর লেগিন্স পরে কাজে যায়। পােশাক এতই চাপা যে ওর নধর দেহের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আঁকিবুকি পরিস্কার পরিস্ফুটিত হয়। কামিজ লেগিন্স পড়লে নিচে প্যান্টি পরে, দানা ওকে বেশ কয়েকটা রঙ বেরঙের সুতির, নাইলনের ভিন্ন রকমের প্যান্টি কিনে দিয়েছে। চাপা লেগিন্সের নিচে নরম গােলাকার পাছার ওপরে সেই প্যান্টির দাগ পরিস্কার দেখা যায়। আগে শুধু দানা ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকত, কিন্তু এর পরে বস্তির অনেক কচি বুড়াে মদ্দ নােলা বের করে ময়নার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মাঝে মাঝেই ময়না ওকে আবদার করে জামা কাপড় কিনে দিতে, কোনােদিন সুগন্ধি তেল অথবা মুখে মাখার ক্রিম, কোনােদিন হিল তােলা জুতাে। দিনে দিনে ময়নার আবদার বেড়ে ওঠে কিন্তু দানা ওর সব আবদার পূরণ করে কেননা ময়নার শরীরের সাথে সাথে ওর হৃদয়ে জায়গা করে নিতে চায়। আয়ের বেশির ভাগ টাকা ময়নার পেছনে খরচ হয়ে যায়,
এতদিন ট্যাক্সি চালিয়ে বেশ কিছু জমিয়ে ছিল সেই টাকাও শেষ। তবে দানার সেদিকে কোন ক্ষোভ নেই, ওকি ময়নার প্রেমে পড়েছে নাকি? না না জুলিকে টাকা দিয়েছিল ওর শরীর ভােগ করার জন্য এখানেও সেইরকম একটা কিছু ব্যাপার। ময়নার গতর জুলির চেয়েও ভালাে আর জুলি তিনশাে টাকা চেয়েছিল শুধু একঘন্টার জন্য। গত পুজোতে ময়নাকে নতুন শাড়ি শায়া ব্লাউজ কিনে দিয়েছিল, ময়না আবদার করেছিল যে সােনার জলের গয়না দিতে হবে। দানার হাতে টাকা ছিল না ওদিকে ময়নার মুখ হাড়ি। শেষ পর্যন্ত ওর আহ্লাদের ময়না পাখীকে শান্ত করার জন্য কেষ্টর বন্ধু ফারহানের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার নিয়ে ময়নার জন্য গয়না কিনে দিয়েছিল। এমনকি মায়ের এক জোড়া সােনার কানের দুল ছিল সেটাও ময়নাকে দিয়েছিল।
মহানগরের বুকে ঠাণ্ডা নেমে আসে, সেই রাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছিল। বস্তিতে ঢুকতেই খবর পেল যে ময়না পালিয়ে গেছে। সেই শুনেই দানার রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়, মাথা গরম হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ওর বুকে শক্তি শেল বিদ্ধ করে পালিয়ে গেল ময়না? কোথায় গেছে কার সাথে গেছে। জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারল যে রাস্তার ওপারে যে গগনচুম্বী বহুতল ফ্লাট হয়েছে, সেইখানের কোন এক ফ্লাটের বাসিন্দার সাথে ময়না পালিয়ে গেছে, কোথায় গেছে কেউ জানে না। বিষ্ণু রেগে মেগে কেঁদে কেটে একসা, বলে কি না পুলিসের কাছে যাবে কিন্তু ওর কাছে যে প্রমান নেই যে ময়না ওর বিয়ে করা বৌ। পালিয়ে বিয়ে করা গ্রাম্য দম্পতিদের কাছে কি আর বিয়ের সারটিফিকেট অথবা কোন ফটো থাকে নাকি যে বিষ্টু প্রমান করবে যে ময়না ওর বিয়ে করা বউ। বিষ্ণুর চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছু করনীয় থাকে না।
ভালােবাসা এই মহানগরের বুক থেকে উধাউ হয়ে গেছে, দানা সেটা অচিরেই বুঝতে পারল। এতদিনে ভেবেছিল যে ময়না ওকে ভালবেসে ফেলেছে, কিন্তু অকাঠ্য সত্য ওর চোখের সামনে একদিন ফুটে উঠল যে একটা ট্যাক্সি চালকের সাথে রাতের পর রাত শারীরিক খিধে মেটান যায় কিন্তু ঘর বাঁধা যায় না। একটা ট্যাক্সি চালক কত টাকা উপার্জন করে যে ময়নার মতন ডাগর দেহের মেয়েকে বশে আনবে। শুধু মাত্র বৃহদাকার লিঙ্গ থাকলেই ভালােবাসা যায় না তার সাথে একটা হৃদয় থাকা চাই, কিন্তু সেই হৃদয় ছিল দানার, তাও কেন ময়না ওর হল না? কারন ভালােবাসা বলে যা কিছু ওই সিনেমা টিভিতে দেখায় তার সবটাই আলেয়া সবটাই মেকি পেতলে সাজানাে। কত কিছু দিল, কত সােহাগ আদর করল, তাও ময়না ওর কোলে ধরা দিল না, ফুরুত করে ময়না, দানাকে ছেড়ে বিষ্টুকে ছেড়ে ওই কালীপাড়ার বস্তি ছেড়ে উড়ে গেল। খালি ঘরে বুকের পাঁজর চেঁচিয়ে ওঠে, এই দুনিয়াটা কার বশ? চাপা প্রতিধ্বনি আসে কানে, এই দুনিয়া টাকার বশ।