কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী [পার্ট ২]

কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#24)

“দেবু, শুতে আসবে, না টি.ভি গিলবে? আর একবার ডাকবো, না এলে রাতে কিন্তু কাউচে শুতে হবে।”

“ডারলিং ব্যাস আর একটু খানি। দেপারদিউ’র মুভি, প্লিস।”

“সেসব আমি জানি না, তোমার কাছে টি.ভি. আগে না বিবি আগে?”

“অভিয়াস্লি তুমি, তাও একটা বার প্লিস।”

“আমাকে একদম ভালোবাসো না তুমি, আমি ত এখন পুরান হয়ে গেছি তাই না।”

“কি আবার হল, এই রাতে কি আবার শুরু করবে নাকি।”

“আমি বলেছিলাম আমার অলিভ অয়েল চাই… মনে নেই ত…।”

“অঃ একদম ভুলে গেছি।”

“দেখলেত, ভালবাসলে ভুলতে না। বউয়ের কথা মনে থাকে না তাই বউয়ের জিনিস আনার প্রয়োজন বোধ কর না।”

“উফফ… বাবা একটা অলিভ অয়েল আনতে কি ভুলে গেছি তাই নিয়ে মহাভারত শুরু করে দিলে।”

“আমি মহাভারত শুরু করিনা সোনা, তুমি এক একটা যা কাজ কর তাতে ত আর চুপ করে থাকা যায় না।”

“আবার কি করলাম আমি।”

“গত উইক এন্ডে বলেছিলাম যে আমাকে নিয়ে একটু রু ক্যাথেরিনে যেও। নিয়ে গেছিলে? না, তোমার’ত ওয়াইন পার্টি ছিল, সেটা বেশি ইম্পরট্যান্ট ছিল।”

“আরে বাবা বোঝো না কেন, দিউদোনের পার্টি না গেলে আবার…”

“তোমার সব পার্টিতে আমাকে যেতে হবে আর আমি যখন বলি আমার কিছু একটা করে দিতে তখন তোমার কাজ পরে যায়, সেটা কি ঠিক?”

“তোমার কোন পার্টি’তে আমি যাই নি, বল।”

“সবসময়ে শুধু পার্টি মাথায় ঘোরে তাই না। ফ্রিতে মদ গিলতে পেলেই হল।”

“সোনামনি আমার, আমি কোথায় ড্রিঙ্ক করি?”

“তুমি করোনা, ওই সব বোতল গুলো যেন আমি শেষ করেছি। আচ্ছা, আমি তোমাকে বলেছিলাম অফিস ফেরত একবার ফ্লেউরেত কে দেখে আসতে, গেছিলে তুমি?”

“যাঃ বাবা তুমি গেছিলে’ত হসপিটালে, আবার আমি গিয়ে কি করব।”

“বাঃবা একটা বাচ্চা কে দেখতে যেতে পারনা তুমি? অদ্রে তোমার কথা খুব জিজ্ঞেস করছিল।”

“আচ্ছা তাই নাকি। ঠিক আছে কাল না হয় যাব।”

“আর গিয়ে কাজ নেই, কাল সকালে ওরা লিওন চলে যাবে।”

“কেন? কি হল আবার।”

“না না, বেশি কিছু না। কাল সকালে হসপিটাল থেকে ছুটি পেয়ে যাবার পরে ওরা লিওন যাচ্ছে।”

“অঃ তাই বল। তা ফিরছে কবে।”

“তোমাকে আগেই জানিয়েছিলাম, হপ্তা দুই পরে ওরা ফিরবে। মরন আমার, কিছুই মাথায় থাকে না।”

“উম্মম… তুমি আছো’ত আমাকে মনে করিয়ে দেবার জন্য।”

“হ্যাঁ বিনা পয়সার বাঁদি পেয়েছ’ত আমাকে।”

“না ডার্লিং… আই রিয়ালি লাভ ইউ।”

“হয়েছে অনেক হয়েছে, এবারে টি.ভি.টা বন্ধ করে শুতে আসো, সকাল চারটেতে উঠতে হবে। মা, মামনি আসছে, সেটা খেয়াল আছে ত নাকি সেটাও ভুলে খেয়েছ।”

“না না… সেটা ভুলিনি।”

“কাল অফিস ফেরত একবার রু রেমিতে গিয়ে দেখ’ত লবস্টার পাও কিনা। এখানে ত মামনি’কে আর চিংড়ি মাছ খাওয়াতে পারব না, তা লবস্টার খেয়ে দেখুক।”

“পারলে একটু ওয়াইন দিয়ে রান্না করো, বেশ দারুন লাগবে।”

“পাগল হলে! ওয়াইন! ওরা খেতে পারবে না। আর মামনি জানতে পারলে তোমার মাথা ফাটিয়ে দেবে।”

“আর তুমি একটা কিস করো তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।”

“অনেক হয়েছে প্রেমালাপ, এবারে এক লাত্থি মারব।”

“ওকে বেবি, আসছি…” (টি.ভি অফ) “আবার আজকে পায়ের দিকের জানালা’টা খুলে রেখেছ?”

“উম্মম্মম্মম্ম…… ছাড়ো ছাড়ো… ইসসস… কর কি তুমি… না তোমার সাথে সত্যি পারা গেল না আর…”

“একবার ব্যাস প্লিস, একটা ছোট্ট কিসি…”

“এই দেখ, প্যালাসের, ওই ডান দিকের তৃতীয় লাইট’টা ওরা ঠিক করে দিয়েছে।”

“যা বাবা, তুমি রোজ রাতে কি লাইট গোনো নাকি?”

“হ্যাঁ গো, খুব ভাল লাগে। ওর রিফ্লেক্সান’টা যখন গারওননের জলের ওপরে পরে তখন খুব সুন্দর লাগে, ঠিক মনে হয় গঙ্গার পাশে আছি।”

“তুমি পার বটে, মনি।”

“হুম্ম… চল আজ সারারাত ধরে দুজনে মিলে প্যালেসের লাইট গুনি।”

“খুব রোম্যান্টিক মুডে আছো আজ, কি ব্যাপার? একটু আগে’ত শুতে যাবার কথা বলছিলে।”

“ওকে হানি… চলে এসো…”

দুজনে মিলে গারওননের তীরে সেই প্যালেসের আলো আবার করে গুনতে লাগল…

এটা মনে হয় পঞ্চাশ বার …..

**সমাপ্ত**

2 thoughts on “কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী [পার্ট ২]”

  1. অনেক সুন্দর একটি উপন্যাস। আমি বহু বার পড়েছি। যে কোন সাইটেই যাই না কেন এটা পেলে একবার পড়বোই পড়বো।

Leave a Reply