কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী [পার্ট ১]

কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (#12)

চিঠির কথা শোনার পরে দেবেশের দিগবিদিগ জ্ঞান হারিয়ে গেল। কি করবে আর, যার প্রেমে শেষ পর্যন্ত পড়ল সেই ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। সারা রাত কাঁদার পরে সকাল বেলা চোখ মুছে মনিদিপাদির গলার হার হাতে নিয়ে প্রতিজ্ঞা করেল যে আই আই টি ও পাবেই। কারুর সাধ্যি নেই ওর আই আই টি রুখে দেবে। ওর সাথে আছে জেঠিমার দেওয়া মনিদিপার সোনার হার।

এক মাস বাকি আর পরীক্ষা দেবার। পুরপুরি বদলে গেল দেবেশ ঘোষাল। লোহার মূর্তি হয়ে গেছে দেবেশ। কোন ঝড় ঝঞ্জা ওকে ওর পথ থেকে নাড়াতে পারছে না। এই রকম মনব্রিতি নিয়ে জোড় কদমে শুরু করে দিল পড়াশুনা। রোজ রাতে একবার করে ওই সোনার হার টা দেখে আর পড়তে বসে দেবেশ। পরীক্ষা দিল দেবেশ এবং দিল্লি আই আই টি তে, ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পেয়ে গেল।

কিছু দিনের মধ্যে ওকে বারাসাতের গলি ছেড়ে, তিলোত্তমা কোলকাতা ছেড়ে পাড়ি দিতে হল দিল্লি। সব সময়ের সাথী মনিদিপার গলার হার। মনিদিপা আর নেই, তবে যদি কাউকে পায় কোনদিন তাকে পড়িয়ে দেবে দেবেশ। এই ভেবে সবসময়ে নিজের কাছে রেখে দিল ওই হার। ওই সোনার হার হয়ে গেল ওর রুদ্রাক্ষ মালা, ওর জীবনের সঙ্গী।

দিল্লী তে পড়ার সময়ে অনেক মেয়ের সানিধ্যে এসেছে দেবেশ, কিন্তু কাউকে ঠিক মনে ধরাতে পারেনি। সবার মধ্যে যেন মনিদিপাকে খুঁজে বেড়ায় ও।

বছর ঘুরে গেল, দেখতে দেখতে তিনটে বছর কেটে গেলে। পুরান স্মৃতির ওপরে অনেক ধুল জমে গেল। মনিদিপা এখন শুধু মাত্র একটি সোনার হার ছাড়া আর কিছু না। ও এখন আর মনিদিপাকে খোঁজে’না, খোঁজে এক ভালবাসার পাত্রী কে।

কলকাতার বাড়িতে এখন বাবা মা আর জেঠিমা থাকেন। গরমের ছুটির পরে কলকাতা থেকে ফিরছে দেবেশ। স্টেসান থেকে অটো নিয়ে হস্টেলের দিকে যাচ্ছে। ঠিক আই আই টি গেটের সামনে অটো একটা মেয়েকে ধাক্কা মেরে দিল। বিশেষ কিছু যদিও হয়নি মেয়েটার, তবুও ভদ্রতার খাতিরে নেমে গিয়ে সাহায্য করতে চাইল মেয়েটাকে। মেয়েটার মুখ দেখে দেবেশ থ। রিতিকা উপাধ্যায়, ওদের অঙ্কের প্রফেসার শ্যামল উপাধ্যায়ের মেয়ে, এল এস আর এ পরে। সারা আই আই টি মেয়েটার সৌন্দর্যের পেছনে পরে আছে।

দেবেশ জিজ্ঞেস করল রিতিকাকে “বেশি লাগেনি ত?”

মুখ তুলে তাকাল রিতিকা, “কি যে বল না, অটো ওয়ালা গুলো একদম দেখে চালায় না।”

দেবেশ বলল, “রিতিকা, তোমার কিন্তু দোষ ছিল। তুমি রাস্তা না দেখে পার হচ্ছিলে আর অটো ধাক্কা মেরেছে। যাইহোক বেশি লাগেনি মনে হয়, চল তোমাকে আমি বাড়িতে ছেড়ে দিচ্ছি।”

রিতিকা একজন অচেনা ছেলের মুখে নিজের নাম শুনে ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আমাকে চেন?”

হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “হ্যাঁ তোমাকে কে না চেনে। তুমি উপাধ্যায় স্যারের ছোটো কন্যে আর এল এস আর এ সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। আই আই টির সবাই তোমাকে চেনে আর আমি ত ইলেক্ট্রিকালের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র তাই আমিও তোমাকে চিনি।”

ওর যা দেমাক তার সামনে কোন ছেলে আজ পর্যন্ত এত সাহস করে কিছু বলতে পারেনি। দেবেশের এত সাহস দেখে রিতিকা হেসে ফেলল, “ওকে চল তাহলে আমাকে বাড়ি পউছে দাও। আজ আমার ক্লাস মিস হল আরকি।”

অটো তে বসে দেবেশ রিতিকাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি ত ইংলিশ নিয়ে পড়ছ তাই না?”

“বাঃবা, আমার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানো দেখছি।” রিতিকা ওর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।

হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “তুমি সুন্দরী আর ফেমাস তাই তোমার ব্যাপারে ত সবাই রিসার্চ করে। সেইখান থেকে আমিও কিছু শুনে ফেলেছি।”

হেসে জিজ্ঞেস করে রিতিকা, “তুমি আমার ওপরে রিসার্চ করনি?”

মাথা নাড়ায় দেবেশ, “না আমি করিনি, করার দরকার পড়েনি তাই করিনি।”

প্রশ্ন করল রিতিকা, “সবাই করে রিসার্চ তুমি কেন করনি?”

একদম অকাঠ সত্যি কথা বলে ফেলল দেবেশ, “তুমি ত ধরা ছোঁয়ার বাইরে তাই করিনি।”

এইরকম ভাবে কেউ যে কথা বলতে পারে সেটা রিতিকার ধারনা ছিলনা। হাঁ করে তাকিয়ে রইল দেবেশের মুখের দিকে।

“মুখ টা বন্ধ কর নাহলে মাছি ঢুকে যাবে” আলত করে চিবুকে আঙ্গুল ছুঁইয়ে মুখ বন্ধ করে দিল।

রিতিকা ত আর থ বনে গেল, কি সাহস ছেলের বাঃবা, প্রথম দেখায় চিবুকে হাত।

প্রফেসার কোয়ার্টার এসে গেল। রিতিকা অটো দাঁড় করিয়ে নেমে গেল, সাথে দেবেশ ও নামল।

মিষ্টি হেসে দেবেশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল রিতিকা, “থ্যাঙ্ক ইউ ফর হেল্প। আমি মনে রাখব।”

একটু থেমে তারপরে হ্যান্ড সেক করল দেবেশ, “ওকে বাই।”

পেছন ফিরে চলে যাচ্ছিল দেবেশ, এমন সময়ে পেছন থেকে রিতিকার ডাক, “হ্যালো তোমার নামটা ত জানা হল না। বাবাকে জিজ্ঞেস করতে হবে যে তুমি সত্যি আই আই টি তে পড়।”

হেসে উত্তর দিল দেবেশ, “সন্দেহ থাকলে কাল ইলেক্ট্রিকালের প্রাক্টিকাল ক্লাসে চলে এস যখন খুশি আমাকে পেয়ে যাবে। পেয়ে গেলে তবে আমি আমার নাম বলব তার আগে নয়।”

রিতিকার সামনে কোন ছেলে নিজের নাম না জানিয়ে ওই রকম ভাবে চলে যাবে সেটা রিতিকার ঠিক হজম হল না, “ছেলেটা ত বড় বেয়াদপ। আমাকে অমান্য করা, আমার মতন সুন্দরীকে অমান্য করা। ঠিক আছে দেখে নেব আমি।”

দেবেশ হাসতে হাসতে হোস্টেলের দিকে হাটা লাগাল আর মনে মনে রিতিকার সুন্দর ফর্সা গোল মুখখানির ছবি এঁকে নিল। উফ কি একটা মেয়ে, যেমন দেখতে তেমন যেন দেমাক। হবে নাই বা কেন, বাবা আই আই টির প্রোফেসর, মা যে এন ইউ তে পড়ায়, দিদি সুইজারল্যান্ডএ থাকে, এই রকম মেয়ে কি আর বারাসাতের দেবেশকে ঘাস দেবে।

পরের পর্ব আসছে

1 thought on “কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী [পার্ট ১]”

Leave a Comment