পর্ব ১৪
ইশানের হাত ধরে বেরিয়ে আসে সুদেষ্ণা… সোজা গিয়ে ওঠে রিতার কাছে… তাকে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে… ‘আমায় দু-তিনটে দিন একটু থাকতে দে… আমি তার মধ্যেই একটা ফ্ল্যাট খুঁজে চলে যাবো…’ বন্ধুর হাত ধরে অনুরোধ করে সুদেষ্ণা…
সুদেষ্ণার কথায় ধমকে ওঠে রিতা… কাছে টেনে নিয়ে শান্তনা দেয় সে… ‘দেখ, এই ভাবে বলবি তো এক্ষুনি বের করে দেবো বাড়ি থেকে… তুই কি একজন অপরিচিত মানুষ আমার কাছে? তোর যতদিন খুশি থাক আমার এখানে…’ তারপর হেসে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে তার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, ‘শুধু আমার কত্তাটা যদি হাত বাড়ায় তোর দিকে, তাহলে আমায় খবর করিস, মালটার বিচিটাই কেটে দেব…’ রিতার কথায় হো হো করে হেসে ওঠে দুজনেই…
.
.
.
তখনকার মত রিতার কথায় মনটা একটু হাল্কা হলেও ফের ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে একা হতেই… বুকের মধ্যেটা একটা প্রচন্ড কষ্ট তাকে ফালা ফালা করে দিতে থাকে… এতগুলো বছর একসাথে থাকার পর সৌভিকের কাছ থেকে এই ব্যবহার সে আশা করে নি… আর শুধু তাই নয়, নিজের হাতে সৌভিক তাদের এই সম্পর্কটাকে শেষ করে দিলো… এখন নিজেকে ভিষন মুর্খ বলে মনে হচ্ছে যেন তার… এই সৌভিকের জন্যই কিনা সে একজন অজানা অচেনা মানুষের কাছে নিজের দেহটাকে তুলে দিয়েছিল… শুধু মাত্র সৌভিকের কথা আর মনে ইচ্ছা মানতে, আর আজকে তাকেই সৌভিক বলছে কিনা বেশ্যা!… ভাবতে ভাবতেই মাথাটা তার ঝাঁ ঝাঁ করতে থাকে…
এর কিছুদিনের মধ্যেই সুদেষ্ণা অনেক ভেবে একটা সিদ্ধান্তে আসে… সৌভিককে ডিভোর্সের নোটিস পাঠায়…
.
.
.
সুদেষ্ণার চলে যাবার পর থেকে সৌভিকের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে যেন… দুর্বিসহ হয়ে ওঠে প্রতিটা দিন তার কাছে… কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও তার পুরুষ অহং মানতে দেয় না সুদেষ্ণার কাছে ফিরে যাবার… তাকে ফিরিয়ে আনার… সে যে নিজের ভুল বুঝতে পারে না তা নয়, স্বীকারও করে যে সত্যিই, সুদেষ্ণাই তো প্রথম থেকে বাধা দিয়েছিল এই সোয়াপিংএর, এর ব্যাপারটায় এগোতে, বরং সেই জোর করেছিল সুদেষ্ণাকে… শুধু জোরই বা কেন? প্রায় বাধ্যই করেছিল তাকে এই সোয়াপিংএ অংশগ্রহণ করার জন্য… মোবাইল ফোনটা বার বার হাতে তুলে সুদেষ্ণাকে ফোন করতে গিয়েও রেখে দেয় নামিয়ে… পারে না সুদেষ্ণার ফোন নাম্বারে ডায়াল করতে… দিনের পর দিন পেরিয়ে যায়, আশায় থাকে সুদেষ্ণা ফোন করবে তাকে, প্রথম পদক্ষেপটা সুদেষ্ণা অন্তত নেবে ফিরে আসার…
.
.
.
অফিসের ঠিকানাতেই আসে ডিভোর্সের নোটিসটা… হাতে ধরে থরথর করে কাঁপতে থাকে সৌভিক… বিশ্বাসই করতে পারে না যে সুদেষ্ণা তাকে ডিভোর্সের নোটিস পাঠিয়েছে বলে… বার বার উল্টে পালটে দেখে কাগজটাকে… তারপর কপালের ঘাম মুছে কাঁপা হাতে ডায়াল করে সুদেষ্ণার নাম্বারে…
‘এটা কি?’ লাইন কানেক্ট হতেই বলে ওঠে সৌভিক…
‘কোনটা কি?’ ফিরিয়ে প্রশ্ন করলেও সৌভিকের কথার মানে বুঝতে অসুবিধা হয় না সুদেষ্ণার… সে জানতো যে নোটিসটা পেয়ে সৌভিক তাকে ফোন করবেই, আর সেই ফোনের অপেক্ষাতেই ছিল সে…
‘এই যে… যে নোটিসটা আমায় পাঠিয়েছ তুমি… তু…তুমি এটা করতে পারো না… ইয়ু কান্ট বী সিরিয়াস…’ উদ্বিগ্ন গলায় বলে ওঠে সৌভিক…
‘ওয়েল… আই অ্যাম সিরিয়াস… আই ওয়ান্ট ডিভোর্স… আর আশা করি ব্যাপারটা আপসেই মিটিয়ে নেওয়া যাবে… আইনি কচকচির মধ্যে যেতে হবে না আমাদের দুজনকেই…’ সুদেষ্ণার গলার স্বরে মিশে থাকে হিম শীতলতা…
‘হাঃ… কত সহজে কথাটা বলে ফেললে… ডিভোর্স কি এতই সহজ ব্যাপার নাকি? এটা কি একটা ছেলেখেলা? চাইলাম আর পেয়ে গেলাম?’ মোবাইলটাকে হাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরে ব্যাপারটার গুরুত্বটাকে হাল্কা করার চেষ্টা করে সৌভিক… ‘এই সব পাগলামী বন্ধ করো… তুমি ফিরে এসো… আমরা বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলে সব ঠিক করে নেবো, দেখো…’
‘উমমম… কথা বলার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না… আর যদি থাকেও আর কিছু, সে ক্ষেত্রে আমি আসছি না, তুমি বরং এক কাজ করো, একজন উকিল খুঁজে নাও, আর আমার নোটিসের নীচে আমার ল’ইয়ারের কন্ট্যাক্ট নাম্বার দেওয়াই আছে, তার সাথে তোমার উকিল কথা বলতেই পারে…’ ভিষন শান্ত নিয়ন্ত্রিত গলায় উত্তর দেয় সুদেষ্ণা…
সৌভিক বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে সুদেষ্ণার কথায়… অনেক করে বোঝাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় সে, কিন্তু কোন ভাবেই নিরস্ত করতে পারে না সুদেষ্ণাকে… সুদেষ্ণা অটল থাকে নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তে… হতাশ সৌভিক শেষে ফোন কেটে দিয়ে বসে থাকে চুপ করে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে…
.
.
.
কোন কিছুতেই মনোসংযোগ করতে পারে না সৌভিক… কাজ কর্ম সব শিকেয় ওঠে… ক্লায়েন্টরা বিরক্ত হয়, অফিসের বস ডেকে তিরষ্কার করে তাকে, কিন্তু তবুও কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারে না… জীবনের সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে যেন তার… বাড়ি ফিরে একা ঘরে ভূতের মত অন্ধকার চুপ করে বসে বসে ভাবে সে শুধু… এই একাকিত্ব যেন তাকে চারপাশ থেকে গ্রাস করতে আসে এক ভয়ঙ্করতা নিয়ে…
পরদিন সৌভিক ঠিক করে সুদেষ্ণার মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়াবে সে… সেই ভেবে অফিসের পর গিয়ে হাজির হয় রিতার বাড়ি…
সে ভেবেছিল হয়তো সুদেষ্ণার বন্ধুও তার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে, মনে মনে তার জন্যও সে প্রস্তুত হয়েই গিয়েছিল… কিন্তু রিতা একেবারেই নর্মাল ব্যবহার করে তার সাথে… তাকে ডেকে ঘরে বসিয়ে চা অফার করে সাধারণ আতিথেয়তার নিয়মে…
কিছুক্ষনের জন্য ইশান ঘরে ঢোকে, তাকে নিয়ে টুকটাক কথা বলে সে… সময় কাটায় খানিকটা নিজের ছেলের সাথে… আর মনে মনে ভাবে কি করে থাকবে সে ইশান আর সুদেষ্ণাকে ছেড়ে…
একটা সময় একা পায় সুদেষ্ণাকে… তাদের ঘরে ছেড়ে রেখে ইশানকে নিয়ে উঠে যায় রিতা…
সুদেষ্ণার দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বলে ওঠে সৌভিক… ‘প্লিজ… ফিরে চলো…’
সুদেষ্ণা কোন উত্তর দেয় না, চুপ করে দরজার পাল্লাটা ধরে দাঁড়িয়ে থাকে মাথা নিচু করে…
সুদেষ্ণার নীরবতায় আরো যেন অধৈর্য হয়ে ওঠে সৌভিক… ‘কিছু তো বলো… এই ভাবে চুপ করে আছো কেন?… অনেক হয়েছে… এবার ফিরে চলো প্লিজ… আমরা বাড়ি ফিরে সব ঠিক করে নেবো… কিন্তু তুমি ফিরে চলো…’ কাতর গলায় ফের বলে ওঠে সৌভিক…
‘বেশ… বলতে যখন বলছো, তখন বলছি…’ সৌভিকের মুখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলে ওঠে সুদেষ্ণা… ‘তাহলে শোনো… আমার তোমার ওপরে আর এতটুকু বিশ্বাস অবশিষ্ট নেই… আমি আর তোমায় ভালোবাসি না… তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা আর কণা মাত্র অবশিষ্ট নেই… তাই আমার মনে হয় এবার আমাদের নিজের নিজের পথে চলাই ভালো… তোমার যা কিছু বলার তুমি কোর্টে বলতেই পারো, সেখানে আমার কিছু বলার নেই… কেসটা আগামী মাসের দশ তারিখে উঠেছে… সেখানেই না হয় তুমি বলো…’ বলে থামে সুদেষ্ণা…
সৌভিকের মনে হয় যেন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে… তার সারা শরীর কাঁপতে থাকে এক প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রনায়… সে ভেবে এসেছিল যে তাকে দেখে আর তার কথায় সুদেষ্ণা না বলতে পারবে না… সব কিছু আজই ঠিক হয়ে যাবে, ফিরিয়ে নিয়ে যাবে সুদেষ্ণা আর ইশানকে নিজের কাছে… কিন্তু সুদেষ্ণার এহেন শীতল আচরণে তার সব কিছু কেমন যেন টলে যায়… টলে যায় তার নিজের ওপরে থাকা আত্মবিশ্বাসটা…
‘তুমি ইশানের কথাটাও একবার ভাববে না?’ চোখের কোনটা জ্বালা করে ওঠে সৌভিকের… বুকের ভেতর থেকে চেপে রাখা কান্নাটা ঠেলে বেরুতে চায় তার…
‘হু… ভেবেছি ইশানকে নিয়ে… ও আমার সাথেই থাকবে… তুমি ওকে সপ্তাহে একবার করে দেখে যেও…’ সুদেষ্ণার গলার ভাবলেশহীন কন্ঠস্বরে ঘরের মধ্যেটায় অদ্ভুত একটা শূণ্যতা বিরাজ করে… সৌভিকের মনে হয় যেন তার বুকের মধ্যের হৃদপিন্ডের শব্দটাও তার কানে বাজছে… ‘হ্যা… তোমার অবস্যই অধিকার আছে ছেলেকে নিজের কাস্টডিতে নেবার, কিন্তু সেটা যদি চাও, তাহলে তোমাকে কোর্টে এই কেসটা ফাইট করতে হবে…’
সুদেষ্ণার কথা শুনতে শুনতে চোখের কোন দিয়ে জলের ধারা নেমে আসে সৌভিকের… সে যে এই দুজনকে ব্যতিত চিন্তাও করতে পারে না নিজের জীবনটাকে…
‘নাও… এবার এসো… আর দেখো… এটা তো আমার বন্ধুর বাড়ি… তাই এখানে আর এসো না কখনো…’ ঠান্ডা গলায় বলে সুদেষ্ণা…
কিন্তু একটুও নড়ে না নিজের আসন থেকে সৌভিক… স্থানুবৎ বসে থাকে সে সোফার ওপরে পাথরের মত… চোখ দিয়ে জলের ধারা বন্ধ হয় না তার… মুখ তুলে কাতর গলায় বলে ওঠে সে… ‘একটা… একটা সুযোগ দাও আমায়… শেষ সুযোগ… প্লিজ… আই অ্যাম সরি… সত্যিই আমি একটা বোকা… আমি মানছি সব আমারই ভূল ছিল… প্লিজ… একটা সুযোগ দাও আমায়…’ সুদেষ্ণার দিকে হাত জোড় করে ক্ষমার ভিক্ষা প্রার্থনা করে সৌভিক…
স্থির দৃষ্টিতে সৌভিকের দিকে খানিক তাকিয়ে থাকে সুদেষ্ণা… তারপর ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে এসে সৌভিকের পাশে সোফায় বসে সে… তারপর সেই একই রকম ঠান্ডা স্বরে বলে… ‘সুযোগ? একটা সু্যোগ দিতে বলছ?’
একটা ক্ষীণ আশার আলো দেখে সৌভিক… তাড়াতাড়ি এগিয়ে সুদেষ্ণার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় তুলে নিয়ে বলে ওঠে, ‘হ্যা… একটা সুযোগ… আমি সত্যিই তোমায় অসম্ভব ভালোবাসি… দেখো… আমি খুব ভালো হাজবেন্ড হয়ে উঠবো… তোমার কোন অভিযোগের জায়গা থাকবে না… তুমি যা বলবে আমি তাই করবো… যা বলবে… আমি তাতেই রাজি… সবসময়… শুধু একটা সুযোগ দাও… প্লিজ…’
‘ঠিক আছে… সেটা ভেবে দেখতে পারি আমি… কিন্তু আমি কি করে বুঝবো যে আবার কিছুদিন পরই তুমি ফের একই রকম ভুল করবে না? আবার তোমার এই পুরানো সত্তায় ফিরে যাবে না? সেই রাতের খোঁটা আবার দেবে না আমায়… বলবে না আমাকে যে আমি বেশ্যার মত একজন পরপুরুষের কাছে নিজের দেহটাকে তুলে দিয়েছিলাম? আমি তোমায় বিশ্বাস করি না!’ কঠিন স্বরে উত্তর দেয় সুদেষ্ণা…
‘প্লিজ… ওটা… ওটা একটা ভূল ছিল মাত্র… তার জন্য আমি তো সব দোষ স্বীকার করছি… তুমি যা বলবে তাতেই আমি রাজি…’ ফের কাতর স্বীকারক্তি করে সৌভিক…
‘দেখো সৌভিক… তুমি বলেছ… কিন্তু সেটা লেগেছে আমার মর্মে… আঘাত করেছে আমার ভালোবাসায়… তখন তোমার বলতে এতটুকুও খারাপ লাগে নি… ভাবো নি যে কাকে বলছো… যে মানুষটা নিজের জীবন দিতে পারে তোমার ভালোবাসার জন্য, তাকে তুমি সন্দেহ করেছ… না না, আমি জানি, আবার কিছুদিন পর, সব মিটে গেলে, আমরা এক সাথে থাকতে শুরু করলে, ফের তুমি তোমার ভেতরের পশুটার নখ বের করে আমায় আঘাত করবে… সেটা যে করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে তোমার কাছে?’
‘আমি তোমায় কথা দিচ্ছি… তোমার ভালোবাসা ফিরে পাবার জন্য আমার কোন কিছু করতেই আপত্তি নেই… তুমি যা বলবে তাতেই আমি রাজি… বিশ্বাস করো আমায়…!’ ফের কাতর গলায় বলে ওঠে সৌভিক…
‘বেশ… যখন সব কিছু করতে রাজি আছো… তাহলে আমার তরফ থেকে একটা প্রোপজাল আছে… সেটা মানা না মানা তোমার ওপরে… মানতে পারলে ভালো, আর না মানতে পারলে তো…’ বলতে বলতে থামে সুদেষ্ণা…
উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকে সৌভিক… সুদেষ্ণার কাছ থেকে শোনার অপেক্ষায়… মনে মনে তৈরী হয় যে কোন শর্তের জন্য সুদেষ্ণা আর ইশানের ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে…
‘বেশ… শোনো তাহলে… আমি আরো একজনের সাথে সেক্স করবো… আর তোমায় সেটা সামনে বসে দেখতে হবে… আর তারপরও যদি তোমার মনে হয় যে তুমি আমায় তখনও ভালোবাসো, তাহলে আমার ফিরে যেতে কোন আপত্তি নেই… আমরা তারপর থেকে একসাথে থাকতে পারি…’ বলতে বলতে সৌভিকের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে সুদেষ্ণা সোজাসুজি…
সৌভিক নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারে না যা সুদেষ্ণা বলে… একটা প্রচন্ড ধাক্কায় হতবুদ্ধির মত সুদেষ্ণার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে সে খানিকটা…
‘তুমি… তুমি কি বলছো?’ ধরা গলায় বলে ওঠে সৌভিক… ‘সুদেষ্ণা… আমার কৃতকার্যে আমি সত্যিই মর্মাহত… আমি সেই কাজের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত… প্লিজ… এই সব একেবারে ভেবোই না আর…’ প্রায় ফুঁপিয়ে ওঠে সে…
‘ওটাই একমাত্র পথ… যাতে আমিও নিশ্চিত হতে পারি যে এর পর তুমি আমার সাথে ঠিক ব্যবহারটা করবে বলে… আর সেটা যদি না চাও, যদি এই বেশ্যা স্ত্রীকে নিজের কাছে না ফিরিয়ে নিতে চাও, তাহলে তো কোন কথাই নেই আর… কোর্ট থেকে তো ডেট দিয়েই দিয়েছে… আগামী মাসের দশ তারিখ…’ বলে উঠে দাঁড়ায় সুদেষ্ণা… সৌভিককে বলার আর কোন সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে… হতবাক সৌভিক মাথা নীচু করে বসে থাকে ঘরের মধ্যে… একা…
শেষ পর্ব
যে ভাষায় আর যে ভাবে নিজের অবস্থানে অনড় থেকে সৌভিককে নিজের সিদ্ধান্ত সুদেষ্ণা জানিয়ে দিয়ে গেল, তাতে আর যাই হোক, কোন সন্দেহের অবশিষ্ট থাকে না যে তাদের সম্পর্কটা কোন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে সেটা বুঝতে… তাকে বা ইশানকে হারাতে চায় না কোন মতেই সৌভিক… তারা ছাড়া তার জীবনটা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, সেটা সে এই ক’দিনেই প্রতিটা পদে উপলব্ধি করেছে… কিন্তু এই খানিক আগে সুদেষ্ণার ফিরে আসার যে শর্ত প্রয়োগ করে গেলো… সেটা? যে ঘটনা নিয়ে এই জায়গায় তাদের সম্পর্কটার পরিণতি ঘটেছে, সেটাকেই অবলম্বন করে ফিরিয়ে আনতে হবে সুদেষ্ণাকে? তার জীবনে… নচেৎ সে হারাবে চিরদিনের মতো? এ কি করে মেনে নিতে পারে সৌভিক? এ কি নির্মম শাস্তির বিধান দিয়ে গেল তাকে? এর থেকে যে তাকে গঙ্গার বুকে ঝাঁপ দিতে বলাও অনেক সন্মানের ছিল… তাতে সে এতটুকু কুন্ঠা করত না হয়তো, ভাবতো না দ্বিতীয়বারের জন্যও… কিন্তু তার সামনে সুদেষ্ণা এক অপরিচিত পুরুষের বাহুলগ্না হবে, সঙ্গমে লিপ্ত হবে, আর সেটা কিনা খোলা চোখে তাকিয়ে দেখতে হবে? তাদের নিগাঢ় মিলনের শাক্ষী থাকতে হবে সামনে বসে? এটা কি কোন পুরুষের পক্ষে সম্ভব? যতই সে ভালোবাসুক না কেন তার জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে… কিন্তু তাই বলে…
রিতার বাড়ি থেকে ফেরার পর থেকে সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারে নি সৌভিক… এক টুকরো খাবারও দাঁতে কাটতে পারে নি… বিছানায় শুয়ে ছটফট করেছে সে… সারা বিছানাটা… ঘরটা… তিল তিল করে সাজিয়ে তোলা তাদের পুরো ফ্ল্যাটটাই যেন একটা বিশাল রাক্ষসের মত তাকে গিলতে হাঁ করে এগিয়ে আসছে মনে হয়েছে তার… ঘরের প্রতিটা কোনে সুদেষ্ণার হাতের ছোঁয়া… তার ভালোবাসার স্পর্শ… মেঝের প্রতিটা ইঞ্চি জুড়ে ইশানের পদধূলির রেখা… নিঃস্তব্দ ফাঁকা ফ্ল্যাটের মধ্যে ঘুরে বেরিয়েছে প্রেতে ভর করা একটা জীবন্ত মৃতদেহের মত… বার বার ড্রইংরুমে টাঙানো তাদের তিনজনের ছবিটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সৌভিক… অস্ফুট স্বরে প্রশ্ন করেছে ছবির নির্বাক সুদেষ্ণাকে… কেন? কেন এ শর্ত? কি ভাবে পারবে এ শর্ত মেনে নিতে সে? এতটুকুও তার প্রতি দয়া হলো না সুদেষ্ণার? এত নিষ্ঠূরতা কি করে লুকিয়ে রেখেছিল ওই নরম শরীরটার মধ্যে সে? পাগলের মত ছটফট করে গেছে… গলায় ঢেলেছে একের পর এক মদের গ্লাস… কিন্তু তাতেও নেশা হয় নি তার… সুস্থির হতে পারে নি সে এতটুকুও… তারপর কখন ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছিল, নিজেও জানে নি আর…
.
.
.
এই ভাবে আরো দিন সাতেক গড়িয়ে গেছে… প্রতিবার হাতের মুঠোয় মোবাইলটা তুলে নিয়েও নামিয়ে রেখেছে সে… যোগাযোগ করার ইচ্ছা থাকলেও সাহস আর কুন্ঠায় এগোতে পারে নি সৌভিক… অফিস যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে… চুপচাপ একা নিজেকে বন্দি করে ফেলেছে অন্ধকার নিঃসঙ্গ ফ্ল্যাটের চার দেওয়ালের মধ্যে…
.
.
.
একদিন সত্যিই কোর্টের ডেট এসে যায়… কিন্তু সৌভিকের সাহসে কুলায় না কোর্টে গিয়ে সুদেষ্ণার মুখোমুখি দাড়াবার…
কোর্ট থেকে নোটিস আসে… পরবর্তি শুনানির দিন যদি সৌভিক না হাজিরা দেয়, তাহলে এক্স-পার্টি হিসাবে জজ রায় সুদেষ্ণার পক্ষেই দিয়ে দেবে… নোটিস হাতে হতোশ্মি সৌভিক চুপ করে বসে থাকে বিছানার ওপরে স্থানুবৎ…
অনেক কষ্টে নিজের দেহটাকে টেনে ড্রইংরুমে নিয়ে আসে সে… ডাইনিং টেবিলের ওপরে পরে থাকা মোবাইলটা নিয়ে নাম্বার টিপে টিপে ডায়াল করে সুদেষ্ণাকে…
লাইন কানেক্ট হতে কোন সম্ভাষণ ছাড়াই শুরু করে কথা সৌভিক… ‘বেশ… তুমি যদি নিজের সিদ্ধান্তে এতটাই অনড় থাকো, তবে তাই হোক… আমি রাজি তোমার শর্তে… আমি শুধু তোমায় ফিরে পেতে চাই… তার জন্য আমি সব করতে রাজি…’
‘ঠিক আচ্ছে… আমি দেখছি…’ ওপাশ থেকে বলে সুদেষ্ণা… গলার স্বরে কোন রকম অনুভুতির মিশেল থাকে না… একেবারে নির্লিপ্ত সে কন্ঠস্বর…
‘কোথায় বা কার সাথে…’ সবে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করেছিল সৌভিক, কিন্তু তার কথার মধ্যেই তাকে থামিয়ে দেয় সুদেষ্ণা, বলে, ‘সেটা আমার ওপরেই ছেড়ে দাও… তোমার ওই সুইংগার সাইটাটার পাসওয়ার্ডটা আমার কাছে আছে… আমি ওখানে না হয় ক্যাপসানটা একটু বদলে দেবো… লিখে দেবো “কাপল লুকিং ফর আ ম্যান টু হ্যাভ ফান টুগেদার”… কি? তাতে ঠিক হবে না?’ বলতে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা ফোনের মধ্যে… সৌভিকের মনে হয় যেন তাকে বসিয়ে রেখে ঠাস ঠাস করে চড় মারছে কাউ… সুদেষ্ণার হাসির কলতান শুনতে শুনতে কাঁধ ঝুলে যায় তার… হাত থেকে মোবাইলটা খসে পড়ে মাটিতে…
.
.
.
দিন দুয়েকের মধ্যেই ফোন আসে সুদেষ্ণার… বলে সে নাকি সব ঠিক করে ফেলেছে… সৌভিককে একটা হোটেলের ঠিকানা দিয়ে বলে ওখানে আসতে… সময় ও তারিখ বলে দেয় ফোনে…
সেই মত সৌভিক পৌছায় হোটেলে… মন না চাইলেও প্রায় শরীরটাকে যেন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসে অতি কষ্টে… লবিতে বসে অপেক্ষা করে সুদেষ্ণার জন্য…
একটু পরেই ক্যাব থেকে হোটেলের সামনে নামে সুদেষ্ণা… অত কষ্টেও চোখটা উজ্জল হয়ে ওঠে সৌভিকের সুদেষ্ণাকে দেখে… একটা গাঢ় রঙের স্কার্ট পরেছে সে… স্কার্টটা এতটাই চাপা যে উরু আর নিতম্বের প্রতিটা ঢেউ প্রকট স্কার্টের ওপর দিয়ে… স্কার্টের হেমটা ঠিক হাঁটুর দুইঞ্চি ওপরে থমকে গিয়েছে… তার নীচ থেকে সুঠাম দুটো মসৃণ পা বেরিয়ে নেমে এসেছে… পায়ে স্টিলেটো জুতো জোড়া… প্রতিটা পদক্ষেপের সাথে মেঝের ওপরে একটা অদ্ভুত ছন্দে খটখট করে শব্দ তুলছে যেন… স্কার্টের ওপরে, উর্ধাঙ্গে স্কার্টের মতই একেবারে শরীর চাপা শার্টিনের দুধ সাদা ব্লাউজ… ভেতরের গাঢ় বেগুনি রঙের ব্রায়ের উপস্থিতি একেবারে প্রস্ফুটিত হয়ে রয়েছে শার্টের কাপড়ের ওপর দিয়ে… সামনের দুটো বোতাম খুলে থাকার ফলে গভীর স্তনবিভাজিকাটার দৃশ্যমণ্যতা ভিষন ভাবে প্রকট… সুগোল দুটো ভরাট স্তন যেন দুই ধার থেকে চেপে ধরে সেই বিভাজিকাটাকে আরো বেশি করে লোভনীয় করে তুলেছে… অন্য সময় হলে কি হতো জানে না সৌভিক… কিন্তু এখন যেন এই পোষাকে সুদেষ্ণাকে দেখে একটা নিদারুণ আত্মগ্লানীতে ডুবে যায় সে… মাথাটা ঝুঁকে যায় আরো মাটির দিকে…
হোটেলের ঝকঝকে মেঝেতে জুতোর আওয়াজ করতে করতে এগিয়ে আসে সুদেষ্ণা… তার পদসঞ্চালনার সাথে সাথে পুরো দেহটা যেন দুলে দুলে ওঠে অত্যন্ত লোভনীয় ভাবে… উপস্থিত সকলেই একবার না ফিরে তাকিয়ে থাকতে পারে না সুদেষ্ণার দিকে… কিন্তু সুদেষ্ণার সে দিকে কোন যেন ভ্রুক্ষেপই নেই… মাথা উঁচু করে সোজা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় সোফায় বসে থাকা সৌভিকের সামনে…
‘আমাকে মেসেজ করে দিয়েছে… ও রুম নাম্বার ৮০৯এ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য…’ বলতে বলতে থামে সুদেষ্ণা একবার… তারপর গলার স্বর একটু খাদে নামিয়ে খুব ধীরে অথচ পরিষ্কার ভাবে বলে ওঠে… ‘তবে মনে আছে তো আমার শর্ত? তুমি এই পুরো সময়টা আমাদের সামনেই বসে থাকবে… আর যদি উঠে বেরিয়ে যাও…’ বলতে বলতে ফের থমকায় সে… সৌভিকের চোখের দিকে সোজা তাকিয়ে থাকে সে… তারপর বলে, ‘তাহলে… আমাকে আর কোনদিন দেখতে পাবে না…’
সৌভিক সুদেষ্ণার কথার কোন উত্তর দেয় না… শুধু মাথা নেড়ে শায় দেয়… সুদেষ্ণা সৌভিকের দিকে থেকে মুখ সরিয়ে সোজা গিয়ে ঢোকে অপেক্ষমান লিফটের মধ্যে…
.
.
.
হোটেলের আট তলায় পৌছে রুমের দরজাটা খুঁজে পেতে সময় লাগে না… দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আলতো হাতে নক করে সুদেষ্ণা… প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে যায়… তাদের যে অভ্যর্থনা জানায়, তাকে দেখে সৌভিকের দম বন্ধ হয়ে আসে যেন… পেটের মধ্যে একটা গিঁট পাকায় তার…
যথেষ্ট সূদর্শন ছেলেটি… হ্যা ছেলেই বলা যায়… মেরেকেটে বয়স খুব বেশি হলে পঁচিশের ওপার তো নয়ই… লম্বা, স্বাস্থবান… একটা জিন্স আর টি-শার্ট পরণে… মাথায় কোঁকড়ানো এক ঝাঁক চুল… পেছনে প্রায় ঘাড় অবধি ঝুলে রয়েছে… একটা পনিটেল করে বেঁধে রাখা চুলের গোছা… সরু কপাল, টিকালো নাক, পাতলা ঠোঁট, ধারালো চিবুক… অসম্ভব চওড়া ছাতি… পরণের টি-শার্টটা যেন মনে হচ্ছে ছিড়ে বেরিয়ে আসবে বুকের ছাতিটা… পাতলা টি-শার্টের ওপর দিয়েই বুকের সমস্ত পেশিগুলো সুস্পষ্ট… হাতের বাহু সৌভিকের যেন উরুর সমান… ভরাট ভারী গলার স্বর…
তাদের দেখেই দরজা খুলে পাশে সরে দাঁড়ায় সম্ভ্রমের সাথে… সৌভিককে সাথে নিয়ে ঘরে ঢোকে সুদেষ্ণা… দরজাটা ফের বন্ধ করে দেয় ছেলেটি… তারপর তাদের দিকে ফিরে সৌজন্য বিনিময় করে সে… হাত তুলে মেলায় সৌভিকের সাথে… এত বড় হাতের পাঞ্জা যে সৌভিকের মনে হয় যেন তার পুরো হাতটাই হারিয়ে গেল ছেলেটির হাতের মধ্যে… সৌভিক যেন আরো হীনমন্যতায় ডুবে যায়…
সুদেষ্ণা বিছানার ওপরে ছেলেটির পাশেই বসে… একটু যেন বেশিই ঘেসে বসে ছেলেটির শরীরের সাথে নিজের শরীরটাকে লাগিয়ে রেখে… উল্টো দিকের সোফায় বসে সৌভিক… বুকের মধ্যেটায় যেন মনে হয় তার দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে তার…
‘হোয়াট উইল ইয়ু হ্যাভ?’ ভরাট গলায় প্রশ্ন করে ছেলেটি…
‘উমমমম… নাআআআ… আমি কিছু নেবো না…’ সুর টেনে বলে ওঠে সুদেষ্ণা… তারপর সৌভিকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘তুমি কি কোন ড্রিঙ্কস্ নেবে ডার্লিং?’ সুদেষ্ণার কথা বলার ধ্বনিতে যেন যৌনতা ঝরে পড়ে…
মাথা নেড়ে না বলে সৌভিক… এখন সে শুধু অপেক্ষায় রয়েছে কোন রকমে এই অগ্নিপরীক্ষার শেষ হওয়ার জন্য… চোখের সামনে দেখে সুদেষ্ণা একটা হাত তুলে রাখে ছেলেটির উরুর ওপরে… গলার মধ্যেটা যেন শুকিয়ে ওঠে তার…
অস্বস্থি হয় ছেলেটিরও সম্ভবত… নিজের উরুর ওপরে সুদেষ্ণার হাতের ছোয়ায় কেমন যেন কাঠ হয়ে যায় সে… অস্বচ্ছন্দ স্বরে বলে ওঠে… ‘প্লিজ… ক্ষমা করবেন… আসলে… দিস ইজ ফার্স্ট টাইম ফর মী… আপনারা বোধহয় এই ব্যাপারে এক্সপিরিয়েন্সড…’
‘ওহ!… ফার্স্ট টাইম? কোন মেয়ের সাথে?’ খিলখিলিয়ে হেসে প্রশ্ন করে সুদেষ্ণা… ঠোঁটের কোনে লেগে থাকে দুষ্টুমীর হাসি… হাত বোলায় বলিষ্ঠ উরুতে…
‘ন… না… মানে… মেয়েদের সাথে ফার্স্ট টাইম নয়… কি… কিন্তু এই ভাবে এই রকমটা আগে কখনও করি নি…’ ওই বিশাল দেহী ছেলেটি তোতলায় সুদেষ্ণার স্পর্শে…
‘গুড…’ সুর টেনে বলে ওঠে সুদেষ্ণা… হাতটা তার উঠে আসে আরো ওপর পানে ছেলেটির উরুর ওপর দিয়ে প্রায় পিছলিয়ে… ‘উমমমম… কিন্তু চিন্তা কোরো না একটুও… দেখো না… সব ঠিকঠাক হবে… আমি আছি তো…’ তারপর এক ঝলক নিজের স্বামীর দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলে, ‘আর আমার স্বামীকে নিয়েও তোমার চিন্তা করার কোন কারণ নেই… ও আমাদের সাথে জয়েন করবে না… ও শুধু দেখবে… আমাদের…’ বলতে বলতে সুদেষ্ণার গলার স্বরটা আরো ফ্যাসফ্যাসে হয়ে ওঠে…
একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বুকের মধ্যে থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসে সৌভিকের… সে জানে… আজ তার কোন নিস্তার নেই… তাকে এখানে বসেই তাকিয়ে থাকতে হবে চোখের সন্মুখে এই ছেলেটি কি ভাবে তার সব থেকে ভালোবাসার মানুষটাকে ভোগ করে সেটা দেখার জন্য… মনে মনে প্রস্তুত করে নিজেকে… ‘আজ আমার কর্মফলের সাজা পেয়েছি আমি… আমাকে তাই সেটার জন্য অনুতাপ করতেই হবে”… নিজেকেই মনে মনে বোঝায় সে… ভাবতে ভাবতেই চোখ বড় বড় হয়ে ওঠে তার… তার সামনেই সুদেষ্ণা উঠে গিয়ে ঘুরে বসে ছেলেটির কোলের ওপরে… দুটো হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ছেলেটির গলা… সৌভিকের মনে হয় তার বুকের মধ্যে তখন হাজারটা দামামা এক সাথে বেজে চলেছে… ইচ্ছা করছে উঠে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছেলেটির ওপরে… সর্ব শক্তি দিয়ে আঘাত হানে ছেলেটির মুখের ওপরে… কিন্তু এটাও সে জানে… সেটা হবে সুদেষ্ণাকে পাবার শেষ সুযোগ হারানোর কফিনে শেষ পেরেক গেঁথে দেওয়া… এরপর তার আর কোন বলার জায়গা থাকবে না সুদেষ্ণাকে নিজের জীবনের ফিরে আসার জন্য…
‘আমার মনে হয় এটাই যথেষ্ট… আর প্রয়োজন নেই…’ কানে আসে ছেলেটির কথা…
‘এই… কি হচ্ছেটা কি? এই কয়’এক মিনিটেই সব ব্যাপারটা মাটি করে দিচ্ছো?’ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে সুদেষ্ণা…
সৌভিক অনুধাবন করতে পারে না কথার মানে… আরো বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে, যখন দেখে প্রায় জোর করেই নিজের কোল থেকে ঠেলে তুলে দেয় সুদেষ্ণাকে ছেলেটি… খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা সারা শরীর দুলিয়ে… আর তার সাথে বোকার মত হাসে ছেলেটিও… ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে সৌভিক তাদের দুজনের দিকে…
সুদেষ্ণা এবার ঘুরে দাঁড়ায় সৌভিকের দিকে… তারপর এক পা দু পা করে এগিয়ে যায় সৌভিকের পানে… গিয়ে দুহাতের আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে সৌভিকের গলাটা…
‘এএএএ… এটা… মা… মানে?’ বিভ্রান্ত গলায় প্রশ্ন করে সৌভিক…
‘আচ্ছা? তুমি কি সত্যিই ভেবেছিলে আমি এই রকম করবো? হু?’ সৌভিকের চুলের মধ্যে বিলি কাটতে কাটতে বলে ওঠে সুদেষ্ণা…
‘না… ভাবি নি…’ মাথা নাড়ে সৌভিক… সংশয়িত থাকে নিজের সম্বন্ধেই…
‘তুমি রিতাকে দেখেছ তো… আমার বন্ধু?’ গাঢ় দৃষ্টিতে সৌভিকের চোখের দিতে তাকিয়ে বলে সুদেষ্ণা… ‘ও হচ্ছে অভিষেক… রিতার ভাই… বুঝলে হাঁদু রাম? ও এসেছে আমার সাথে এই অভিনয়টা করার জন্য…’ বলতে হাত রাখে সৌভিকের গালের ওপরে… ঝুকে আসে আরো খানিকটা সে সৌভিকের পানে…
‘এবার আমি যাই… আমার মনে হয় এবার আমার যাওয়ার প্রয়োজন…’ পেছন থেকে বলে ওঠে অভিষেক… পরিষ্কার বোঝা যায় সে রীতিমত অস্বস্থির মধ্যে রয়েছে পুরো ব্যাপারাটায়…
সোজা হয়ে অভিষেকের দিকে ফিরে দাঁড়ায় সুদেষ্ণা… হাত বাড়িয়ে করমর্দন করে বলে, ‘হ্যা হ্যা… অ্যান্ড থ্যাঙ্কস আ লট…’
অভিষেক আর দাঁড়ায় না… দরজা খুলে বেরিয়ে যায় রুমের থেকে… যাবার সময় দরজাটা টেনে বন্ধ করে দিয়ে যেতে ভোলে না…
সৌভিক তখনও হতবুদ্ধির মত বসে থাকে সোফায়… তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে সুদেষ্ণা… সামনে ঝুঁকে এগিয়ে এসে সৌভিকের দুটো গালে হাত রেখে চুমুর পর চুমু খেয়ে যেতে থাকে সৌভিকের সারা মুখ জুড়ে পাগলের মত…
একটু পর মুচকি হেসে বলে সুদেষ্ণা… ‘ইশশশশ… কি বুদ্ধি বাবুর… আচ্ছা… সত্যিই ভেবেছিলে আমি তুমি ছাড়া একজন পর পুরুষের সাথে করবো? তাও ওই রকম একটা বাচ্ছা ছেলের সাথে? কত বয়স ওর? মাত্র বাইশ…’
‘সত্যিই তুমি করতে চাও নি? সত্যিই’ প্রশ্ন করে সৌভিক… যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল সে এতক্ষন… হড়কে সেও সোফার থেকে নেমে আসে মাটিতে, সুদেষ্ণার সামনে… শক্ত আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে সুদেষ্ণাকে নিজের বুকের মধ্যে… চোখ দিয়ে তখন তার অবিরাম জলের ধারা বয়ে চলেছে… ‘আই লাভ ইয়ু সুদেষ্ণা… বিলিভ মী… আই লাভ ইয়ু…’ পাগলের মত চুমু খেতে থাকে সুদেষ্ণাকে… আর প্রতিটা চুমুর ফাঁকে বলে যেতে থাকে সে… ‘খুব… খুব বাজে মেয়ে তুমি… কেন আমায় এমন কষ্ট দিলে?… কেন… কেন… কেন?’
‘আমিও তোমায় ভালোবাসি সোনা… আগের মতই এখনো… কিন্তু তুমি আগের মত ভালোবাসো আমাকে কিনা, সেটা আমার জানার দরকার ছিল… তার প্রমাণ আমি পেয়ে গিয়েছি… আর শুধু তাই নয়… একটা শিক্ষাও তোমায় দেবার প্রয়োজন ছিল… তোমার ওই একটা বুদ্ধুরামের মত ব্যবহারের ফল…’ বলে জড়িয়ে ধরে স্বামীকে সুদেষ্ণা…
‘চলো… বাড়ি চলো…’ নিজে একটু ধাতস্থ হতে বলে ওঠে সৌভিক…
‘ইশশশশ… মোটেই না…’ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা…
ফের অবাক হয় সুদেষ্ণার কথায় সৌভিক… বোকার মত তাকিয়ে থাকে সুদেষ্ণার দিকে…
‘আরে? ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি কি বলেছি যে বাড়ি যাবো না? আমি বললাম যে এখন যাবো না… এমনি এমনি এই রুমটার ভাড়া দিয়েছি? উশুল করতে হবে না? তাই আজ আমরা দুজনে এই রুমেই সেলিব্রেট করবো… বুঝেছো বুদ্ধুরাম?’ বলতে বলতে ফের জড়িয়ে ধরে সৌভিককে… সৌভিকও দৃঢ় আলিঙ্গনে টেনে নেয় সুদেষ্ণার নরম শরীরটা বুকের মধ্যে…
সৌভিকের বুকের মধ্যে গুনগুনায় সুদেষ্ণা… ‘কি গো? মাটিতেই করবে না বিছানায় যাবে?’ বলেই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সে… টলটল করে দুলে ওঠে ভরাট বর্তুল স্তনদুটো…
সমাপ্ত
সেরা বাংলা চটি পড়ুন ছেলেচোদানি মাগী মার কেচ্ছা
পড়লা, পুরোটা, প্রতিটা লাইন, অক্ষর।
ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ লেখককে।