— পর্ব ১২ —
সৌভিক মুখ তুলে তাকায় নগ্ন দেহে শুয়ে থাকা এলির পানে… হিলহিলে শরীরে এলি শুয়ে আছে তার দিকে পেছন ফিরে… মসৃণ সুঠাম পীঠ, সরু কোমর আর উদ্বেল স্ফিত নিতম্বে এক কাল্পনিক পরীর মত দেখতে লাগছে এলিকে… যেন বাস্তব নয়… এক স্বপনচারিতার মত নিজের শরীরটাকে মেলে ফেলে রেখেছে সে বিছানার ওপরে… নিঃশ্বাস নেবার সাথে ধীর লয়ে মেদহীন পেটটা খুব ধীরে ধীরে উঠছে নামছে… এলির নগ্ন পীঠে হাত রাখে সৌভিক… এই খানিক আগেই প্রচন্ড উদ্যামতায় তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে সে… রমনের প্রখর ছলাকলায় যৌন উত্তেজনার শিখরে কি করে পৌছে দিতে হয় সেটা বোধহয় এলির সংস্পর্শে না এলে জানতেও পারতো না সৌভিক… তার শরীর নিংড়ে যেন সমস্ত শক্তিকে চুষে নিয়ে অশেষ করে দিয়েছে যোনির উষ্ণতা দিয়ে… একটা বড় নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে সৌভিকের… সামনে এহেন এক প্রচন্দ কামোদ্রেককারি নারী থাকা সত্ব্যেও, তার মনের গভীরে সুদেষ্ণার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে… নিজেকে হটাৎ করে ভিষন দোষী মনে হয় তার…
‘কি ভাবছ? বউএর কথা?’ চিন্তার জাল ছেঁড়ে এলির কথায়… এলিজাবেথের মুখের দিকে তাকায় সে…
‘উমমমম…’ সরাসরি স্বীকার করতে দ্বিধা বোধ করে সৌভিক…
সৌভিকের দিকে ঘুরে শোয় এলি, চাঁপাকলির মত সরু সরু আঙুলে সাজানো হাত তুলে সৌভিকের বুকের ওপরে রেখে বলে, ‘ভেবো না… তোমার বউ ভালোই আছে… যার হাতে সে পড়েছে, সে জানে কি করে সুখে ভাসাতে হয়… ওর ভালোই লাগবে…’ বলতে বলতে ক্ষনিক থামে… তারপর সৌভিকের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘তুমি এঞ্জয় করেছে?’
‘ওহ! নিশ্চয়ই…!’ বলতে বলতে সামনের দিকে একটু ঝোঁকে সৌভিক, এলির নগ্ন কাঁধে গাঢ় চুম্বন এঁকে দেয় তার কথার স্বীকারক্তি হিসাবে… এলি আরো ঢুকে আসে সৌভিকের পানে… তার বুকের মধ্যে ঢুকে মাথা গুঁজে দেয় সে… সৌভিক প্রগাঢ় আলিঙ্গনে টেনে নেয় এলির শরীরটা নিজের দিকে… জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে এলির চুলে পীঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে… আস্তে আস্তে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে এলিজাবেথ, সৌভিকের হাতের আদর খেতে খেতে…
এলিজাবেথ ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু ঘুম আসে না কিছুতেই সৌভিকের… ছটফট করে বিছানায় শুয়ে… বারে বারে পাশ ফেরে এদিক থেকে ওদিকে… সে তার ফ্যান্টাসি পূরণ করেছে… এলিজাবেথ সততই নিঃসন্দেহে এক অপরূপ নারী, আর শুধু সুন্দরীই নয়, কামকলায় এলির অপার অভিজ্ঞতা… সে জানে কি ভাবে সুখের চূড়ায় পৌছে দিতে হয়… কিন্তু এই মুহুর্তে এক অদ্ভুত শূণ্যতা যেন সৌভিককে গ্রাস করে ফেলেছে… কিছুতেই যেন নিজের কাছে সে পরিষ্কার হতে পারছে না… মনের এক কোনায় যেন কি এক অশান্তির কালো মেঘ জমে উঠেছে…
বিছানা ছেড়ে সাবধানে উঠে দাঁড়ায় যাতে এলিজাবেথের ঘুমের কোন ব্যাঘাত না ঘটে… তারপর নিঃশব্দে ঘরের দরজা খুলে বাইরে আসে… ধীর পায়ে নেমে আসে নীচতলায়… কেন, তা সে জানে না… হয়তো সুদেষ্ণা ঠিক আছে, সেটা শুধু জানতেই? নিজের মনকে প্রবোধ দেয় সৌভিক…
ড্রইংরুমটা খালি, অবস্য সেটা থাকাটাই স্বাভাবিক… কিন্তু কেন জানে না সে, হয়তো আশা করেছিল এই মুহুর্তে ড্রইংরুমে সুদেষ্ণা আর ডেভিড বসে থাকবে… নিজেই নিজের বোকার মত চিন্তায় মাথা নাড়ে… ইতস্থত হেঁটে বেড়ায় নির্জন শব্দহীন ড্রইংরুমের মধ্যে, এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত… হটাৎ একটা শব্দে সচকিত হয়ে ওঠে সে… আওয়াজ লক্ষ্যে করে এগিয়ে যায়… কিচেনের মধ্যে সুদেষ্ণার দেখা পায়… ওকে দেখে খানিকটা আস্বস্থ হয় সৌভিক…
‘এই! এত রাত্রে কিচেনে কি করছ?’ চাপা গলায় পেছন থেকে প্রশ্ন করে সে…
পেছন থেকে এই ভাবে হটাৎ গলার স্বরে প্রথমটা চমকে উঠেছিল সুদেষ্ণা… তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে সৌভিককে দেখে হেসে ফেলে সে… ‘ওহ! তুমি! বাব্বা… হটাৎ করে জিজ্ঞাসা করাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম গো…’ তারপর ঘুরে মন দেয় নিজের কাজে… সৌভিককে উদ্দেশ্য করেই বলে ওঠে, ‘কফি করছিলাম… তা তুমি এখানে?’
‘না, মানে এই, জল খেতে এসেছিলাম…’ সুদেষ্ণার সরল প্রশ্নে কেমন ঘাবড়ে গিয়ে কোনো মতে উত্তর দেয় সে… ‘তুমি… তুমি ঠিক আছো তো?’ উদ্বিগ্ন প্রশ্ন করে পরমুহুর্তে…
‘হ্যাএ্যা… কেন? আমায় নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল?’ বলতে বলতে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা… ‘দূর… তোমায় সামলে দিয়েছি যখন, তখন একেও সামলানো আমার কাছে কোনো ব্যাপারই না, বুঝেছো?’ ঘাড় ফিরিয়ে বলতে বলতে তাকায় সুদেষ্ণা, চোখের মণিতে দুষ্টুমীর ঝিলিক খেলে যায়…
‘ওহ!!!… হ্যা… আচ্ছা!…’ বোকার মত মুখ করে জোর করে ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে আনে সৌভিক…
‘তুমি কফি খাবে? করবো তোমার জন্যও?’ আবার নিজের হাতের কাজে মন দেয় সুদেষ্ণা… তার ফাঁকে জিজ্ঞাসা করে সৌভিককে…
‘না… খাবো না…’ বলতে বলতে খেয়াল করে সুদেষ্ণার পরনের কাপড় বদলে গিয়েছে… এই মুহুর্তে তার পরনে আগের লং স্কার্ট নয়, তার বদলে একটা নাইট গাউন… গায়ের জামাটাও নিশ্চয়ই নেই… মনে মনে ভাবে সৌভিক…
‘তুমি নাইট গাউন পড়ে আছো? তোমার জামা কাপড়?’ না ভেবেই দুম করে জিজ্ঞাসা করে বসে সে, আর তারপরই বুঝে চুপ করে যায়…
ফের খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা… ‘এটা পড়তেই বেশি সুবিধার, তাই…’ হাসতে হাসতে জবাব দেয় সে…
সৌভিকের কিরকম একটা ভিষন অস্বস্থি হয়… কিন্তু সুদেষ্ণা তার মনের কথা ধরতে পারে না…
‘এই তুমি সত্যিই খাবে না কফি?’ ফের প্রশ্ন করে সুদেষ্ণা দুটো কাপে কফি ঢালতে ঢালতে… সে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সৌভিক…
ট্রের ওপরে কাপ দুটোকে তুলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় সুদেষ্ণা… ‘এই না গো… এবার যাই…’
‘ওহ!… হ্যা…’ মাথা নেড়ে সরে দাঁড়ায় সৌভিক… ওকে পাশ কাটিয়ে ট্রেতে রাখা দুকাপ কফি নিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যায় নীচের তলার বেডরুমের দিকে সুদেষ্ণা… ওর চলে যাওয়ার দিকে বিহবল চোখে পলকহীন তাকিয়ে থাকে সৌভিক… খানিক পরেই কানে আসে বেডরুমের দরজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আওয়াজ…
ধীর পায়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ায় বেডরুমের বন্ধ দরজার সামনে… ভেতর থেকে হাল্কা কথা ভেসে আসে…
‘তোমার কফি…’ সুদেষ্ণার গলার স্বর… তারপরই সৌভিকের হাতের লোম খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে যায় … ‘এই… একটু তো ঢেকে শোও… ইশ… কি ভাবে শুয়ে আছো!’ সুদেষ্ণার খিলখিলে হাঁসির সাথে প্রচ্ছন্ন প্রেমের পরিভাষা মিশে থাকে ওইটুকু তিরষ্কারে…
‘আচ্ছা, আচ্ছা… ঢেকে নিচ্ছি…’ হাসির সাথে ডেভিডের গলার স্বর…
বেডরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে দরজার পানে আরো খানিক তাকিয়ে থাকে সৌভিক… মনের মধ্যে একটা মিশ্র অনুভূতি খেলে বেড়ায়… কিছুটা অপরাধবোধ আর তার থেকে অনেকটাই বেশি বোধহয় ইর্ষার… ‘আমার স্ত্রী… যে এই গতকাল অবধিও এই ঘটনাটার তীব্র বিরোধিতা করে এসেছে… বারে বারে বাধা সৃষ্টি করেছে তাকে এটা নিয়ে এগোবার… আর সেই কিনা…’ ভাবতে ভাবতে সরে আসে দরজার সামনে থেকে… দ্রুত পায়ে উঠে আসে ওপর তলায়… নিঃশব্দে বেডরুমের দরজা খুলে ঘরে ঢোকে… এলিজাবেথ তখনও বিছানার ওপরে গভীর ঘুমে তলিয়ে রয়েছে… স্থির দৃষ্টিতে খানিক তাকিয়ে থাকে এলির নগ্ন লোভনীয় দেহটার পানে… কিন্তু এলির সে নগ্নতা তার কামোত্তেজনা জাগাতে পারে না… চোখের সামনে তখন সুদেষ্ণার দুষ্টুমী মাখা ঠোঁট আর ঘরের মধ্যে থেকে ভেসে আসা খিলখিলিয়ে ওঠা হাসি তার বুকের মধ্যেটায় কেমন অদ্ভুত ভাবে কুরে কুরে দেয়… একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বুকটাকে কাঁপিয়ে… ‘ও তাহলে এঞ্জয় করছে ভালোই!’
.
.
.
‘তোমার ভালো লেগেছে?’ কফির কাপে চুমুক দিয়ে সুদেষ্ণার দিকে মুখ তুলে প্রশ্নটা ছুড়ে দেয় ডেভিড…
‘সত্যিকথা বললে তো পুরুষ অহংটা ফুলে ফেঁপে উঠবে যে…’ ঠোঁটের কোনে একটা রহস্যের ছোঁয়া রেখে উত্তর দেয় সুদেষ্ণা… একটা প্রচ্ছন্ন ভালো লাগা চোখের মণিতে চকচক করে ওঠে উত্তরটা দেবার সময়…
‘হ্যা… অবস্যই… আমার এতে পৌরষের অহংবোধটা আরো বেড়ে যাবে বইকি!’ হাসতে হাসতে বলে ডেভিড…
‘আর সেটা বেড়ে গেলে কি করা হবে শুনি?’ চোখের মণিতে কামনা ঘনিয়ে আসে সুদেষ্ণার… ঝিলিক দেয় এক দূরন্ত আহ্বান…
‘তখন আমি একটা পশুতে পরিণত হয়ে যাবো… আর তোমায় এই বিছানায় পেড়ে ফেলে…’ বলতে বলতে থামে ডেভিড… মুখের কথা শেষ না করে তাকিয়ে থাকে সুদেষ্ণার দিকে…’
‘কি? কি করবে?’ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা সারা শরীরটা দুলিয়ে… নাইট গাউনটার আড়ালে থাকা ব্রাহীন ভারী স্তন হাসির দমকে টলটলিয়ে ওঠে…
সেই দিকে দেখতে দেখতে গাঢ় স্বরে বলে ওঠে ডেভিড… ‘আইল্ ফাক ইয়ু অল ওভার এগেন…’
‘ওহ! তাই? ইশশশশ… তাহলে তো আমার ভিষন ভয় পেয়ে যাওয়া উচিত! তাই না?’ বলে মেকি ভয় পাওয়ার ভঙ্গি করে সুদেষ্ণা… আর তাতে দুজনেই হো হো করে হেসে ওঠে…
হাসি থামতে হাতের কফির কাপটা নামিয়ে রেখে আরো খানিকটা এগিয়ে আসে ডেভিডের দিকে… তার কাছ ঘেঁসে বসে বুকের ওপরে হাত রাখে সুদেষ্ণা… ‘সত্যিই বলছি… আমার তোমায় ভালো লেগেছে…’ বলতে বলতে থামে সে, তারপর ডেভিডের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, ‘জানো… এটা আমার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা… মানে এই ভাবে একজন স্বামী ছাড়া অপর কোনো পুরুষের সাথে সঙ্গম… আমি প্রথম থেকে এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব নেতিবাচক ছিলাম… মানতে চাইনি কিছুতেই… এখানে আসার আগেও, বার বার মনে হচ্ছিল যে এটা না ঘটলেই ভালো হয়… যদি কোনভাবে ক্যান্সেল হয়ে যায় পুরো ঘটনাটা… কিন্তু আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে তুমি সেটাকে খুব সুন্দরভাবে মনোময় করে তুলেছ… ইয়ু হ্যাভ মেক ইট আ গুড এক্সপিরিয়েন্স… কিন্তু তা সত্ত্যেও, এটাও আবার ঠিক, যে এটাই আমার প্রথম আর এটাই আমার শেষ…’ বলতে বলতে থামে সুদেষ্ণা… ম্লান হাসে ডেভিডের পানে চেয়ে…
‘তা কেন?’ ভুর কুঁচকে প্রশ্ন করে ডেভিড…
‘কারণ আমি এটাতে রাজি হয়েছিলাম শুধু মাত্র আমার স্বামীর কথা ভেবে… আর সত্যি বলতে কি জানি না ভবিষ্যতে আমি তোমার মত একজন কে পাবো কি না, সেই রকম ভাগ্য আমার হবে কিনা…’ বলতে বলতে আনমনে ডেভিডের বুকের স্তনবৃন্তে আঁচড় কাটে নখের…
‘তাতে কি? আর দরকারই বা কি অন্য কোন কাপলএর… আমরাই পরে আবার করতে পারি… তাই না?’ উৎসাহি হয়ে ওঠে ডেভিডের গলার স্বর…
মাথা নাড়ে সুদেষ্ণা… পলকহীন খানিক তাকিয়ে থাকে ডেভিডের দিকে… তারপর নীচু গলায় বলে ওঠে… ‘উহু… আর নয়… আমি প্রথমেই বলে দিয়েছিলাম এই একবারই… সেটা আমি আমার স্বামীর কাছেও পরিষ্কার করে দিয়েছিলাম… তাই আমাদের কাছে কাল বলে কিছু নেই আর…’ বলতে বলতে মৃদু হেসে ওঠে সুদেষ্ণা… ঠোঁটের কোনে কামজ ছোঁয়া লাগে… ‘দরকার কি কালকের কথা ভেবে… আজকের রাতটা তো পুরো পরে রয়েছে… এসো না… আজকের রাতটাকে কালকের মধূর স্মৃতি করে রাখি…’
‘বেশ… তবে তাই হোক… আই অ্যাম অ্যাট ইয়োর সার্ভিস ম্যাডাম…’ বলতে বলতে উঠে বসে ডেভিড… সাড়ম্বর অভিবাদন জানায় ঝুঁকে পড়ে… ওকে এই ভাবে দেখে ফের খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা… অসম্ভব এক ভালোলাগায় মনটা ভরে ওঠে…
.
.
.
সূর্যদয়ের সাথে সাথেই প্রায় যত দ্রুত সম্ভব তৈরী হয়ে নীচে নেমে আসে সৌভিক… তাড়াতাড়ি গিয়ে দাঁড়ায় নীচের তলার বেডরুমের সামনে… কিন্তু অবাক হয় বেডরুমের দরজা খোলা দেখে… একটু ইতঃস্থত করে উঁকি মারে ভেতরে… কিন্তু কারুর দেখা পায় না সে… কুঞ্চিত ভুরুতে সে ফিরে আসে ড্রইংরুমে, কিন্তু সেখানেও কেউ নেই… এবার একটু অবাকই হয়… চিন্তিতচিত্তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ঘুরতে ঘুরতে পেছনের বাগানে ঢুকতেই দূর থেকে ডেভিড বলে ওঠে… ‘গুড মর্নিং সৌভিক…!’
ডেভিডের উদ্বাত গলার স্বরে কেমন যেন গুটিয়ে যায় সৌভিক… কোন রকমে উত্তর দেয় ডেভিডের সুপ্রভাতের সম্বোধনের… ‘অ্যা… হ্যা… গুড মর্নিং…’ আড় চোখে তাকায় সুদেষ্ণার দিকে… ভোরের আলোয় এক অপার্থিব সৌন্দর্য যেন ঘিরে রেখেছে সুদেষ্ণাকে… অন্য সময় হলে কি করত সে জানে না, কিন্তু এই মুহুর্তে সুদেষ্ণার ওই রকম সতেজ সৌন্দর্যেও তার যেন ভালো লাগে না… সুদেষ্ণার দিকে মুখ তুলে বলে সে, ‘সুদেষ্ণা… এবার আমাদের যেতে হবে… তুমি তৈরী তো?’
সুদেষ্ণার বদলে উত্তর দেয় ডেভিড… একটু আশ্চর্যও হয় যেন সৌভিকের এহেন আচরণে… ‘সেকি? এতো তাড়া কিসের? ব্রেকফাস্ট করে না হয়…’
ডেভিডের কথা শেষ করতে দেয় না সৌভিক… একটু কঠিন স্বরেই কথার মধ্যে বলে ওঠে সে, ‘না ডেভিড, আমাদের এখনই যেতে হবে, আমাদের বেলার ফ্লাইট রয়েছে মুম্বাই ফিরে যাবার… তাই অনর্থক আর বেশি দেরী করতে চাই না…’ বলতে বলতে সুদেষ্ণার দিকে ফিরে বলে ‘তুমি তো রেডিই হয়ে আছো দেখছি… তাহলে চলো এখান থেকেই রওনা হয়ে যাই…’ বলতে বলতে ফিরে হাঁটা লাগায় সে…
সুদেষ্ণা আর ডেভিড দুজনেই সৌভিকের আচরণে খানিকটা হতবাক হয়েই তাকিয়ে থাকে তার দিকে, তারপর কাঁধটাকে শ্রাগ করে ডেভিড ক্যাব ডেকে নেয়…
যতক্ষন না ক্যাব আসে, ওরা ড্রইংরুমেই অপেক্ষা করে… ডেভিড আর সুদেষ্ণা গল্প করতে থাকে… সৌভিক চুপচাপ বসে থাকে তাদের কথার মধ্যে না ঢুকে… ক্যাবের হর্ন পেয়েই উঠে হাঁটা লাগায় দরজার দিকে…
ঠিক গাড়িতে ওঠার মুহুর্তে হটাৎ করে সুদেষ্ণা বলে ওঠে, ‘এক মিনিট…’
‘আবার কি?’ বিরক্ত সৌভিক প্রশ্ন করে…
‘না, একবার এলিজাবেথকে বাই বলে আসি…’ বলে আর সৌভিকের উত্তরের অপেক্ষা করে না সে… দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়…
‘আরে এলিজাবেথ এখনও ঘুমাচ্ছে তো…’ প্রায় চিৎকার করেই জানায় পেছন থেকে সৌভিক, কিন্তু সুদেষ্ণা কানে তোলে না… দাঁড়িয়ে থাকা ডেভিডের পাশ ঘেঁসে ঢুকে যায় বাড়ির মধ্যে… যেতে যেতে একবার অর্থপূর্ণ দৃষ্টি হানে ডেভিডের দিকে… বিহবল ডেভিড কিছু না বুঝেই সুদেষ্ণার পেছন পেছন ঢুকে আসে বাড়ির মধ্যে…
সৌভিকের দৃষ্টির আড়াল হতেই ডেভিডকে জড়িয়ে ধরে সুদেষ্ণা উষ্ণ আলিঙ্গনে…
‘এলিজাবেথ তো সত্যিই ঘুমাচ্ছে…’ ডেভিড জানায় সুদেষ্ণাকে…
‘আমি জানি সেটা…’ মুচকি হেসে বলে সুদেষ্ণা… ‘আমি তোমাকে গুডবাই বলার জন্যই এসেছি… সঠিক ভাবে…’ বলতে বলতে পায়ের আঙুলের ভরে নিজের শরীরটাকে সামান্য তুলে ধরে নিজের তপ্ত ওষ্ঠ চেপে ধরে ডেভিডের ঠোঁটের ওপরে… ডেভিড অনুভব করে সুদেষ্ণার দেহের উষ্ণতা তার শরীরেরও ছড়িয়ে পড়ার…
‘হুম… তাহলে ম্যাডাম সিম টু বী ইন লাভ…’ হেসে বলে ওঠে ডেভিড… ডেভিডের কথায় খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে সুদেষ্ণা… তারপর আরো দৃঢ় আলিঙ্গনে ডেভিডকে জড়িয়ে ধরে মিশিয়ে দেয় নিজের ঠোঁট জোড়া ডেভিডের ঠোঁটের সাথে… বাইরে গাড়ির হর্ন বাজানো অবধি সেই ভাবেই মিশে থাকে তারা দুজনে দুজনের মধ্যে…
‘ওকে… বাই…’ বলে এক ছুটে সুদেষ্ণা বেরিয়ে যায় বাড়ির থেকে…
.
.
.
গাড়ির মধ্যে একটা কথাও বলে না সৌভিক… যেন কোন এক গভীর চিন্তায় নিমগ্ন থাকে সারাটা রাস্তা…
‘কেমন কাটলো তোমার রাতটা?’ হোটেলের রুমে ঢুকে প্রশ্ন করে সুদেষ্ণা…
‘ভালো…’ ছোট্ট উত্তর দেয় সৌভিক…
‘তুমি এঞ্জয় করেছো?’ বাচ্ছা মেয়ের মত আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে বলে ওঠে সুদেষ্ণা, জড়িয়ে ধরে সৌভিককে…
‘হুম… তুমি?’ গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে সৌভিক…
‘ভিষণ… খুব এঞ্জয় করেছি…’ উচ্ছসিত সুদেষ্ণা ঠোঁট বাড়িয়ে চুমু খেতে যায় সৌভিককে…
‘হুম… আমারও তাই মনে হয়…’ বলে সুদেষ্ণার আলিঙ্গন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সে…
‘তাহলে? তোমার ফ্যান্টাসি পূরণ হলো… বলো! এখন থেকে আবার আমরা সেই বিয়ের দিন গুলোর মত হয়ে যাবো… তাই না?’ উচ্ছাসে উদ্বেল সুদেষ্ণা ফের চেষ্টা করে সৌভিককে চুম্বন করতে…
এবার প্রায় একটু জোর করেই সরিয়ে দেয় সুদেষ্ণাকে নিজের থেকে সৌভিক… ‘আগে স্নান করে এসো…’ রুঢ় গলায় বলে ওঠে সে…
এহেন সৌভিকের ব্যবহারে হতচকিত হয়ে পড়ে সুদেষ্ণা… বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে স্বামীর দিকে… এ যেন কেমন অচেনা ঠেকে তার…
‘এই… ইজ এভ্রিথিং ওকে?’ চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করে সুদেষ্ণা…
‘হ্যা, হ্যা… এভ্রিথিং ইজ ওকে…’ বলতে বলতে ঘুরে দাঁড়ায় সৌভিক… ‘যাও, আগে স্নান করে এসো…’
সৌভিকের এহেন আচরণে ভিষন ভাবে আহত হয় সুদেষ্ণা… ধীর পায়ে গিয়ে ঢোকে হোটেলের বাথরুমে…
পর্ব ১৩
মুম্বাই ফিরে সোজা সুরেশদের কাছে গিয়ে ইশানকে তুলে নেয় সৌভিকরা… তারপর তাদেরকে ইশানকে রাখার সৌজন্য জানিয়ে ফিরে আসে নিজেদের ফ্ল্যাটে… পুরোটাই ঘটে নিঃশব্দে যেন… কেউ কারুর সাথে সেই ভাবে কথা বলে না একান্ত প্রয়োজন ছাড়া… সুদেষ্ণা সৌভিকের এহেন ব্যবহারে যতটা না অবাক হয়, তার থেকে অনেক বেশি চিন্তিত হয় ওঠে মনে মনে… কিছুতেই সৌভিকের ব্যবহারে এই ধরণের শীতলতার মানে খুজে পায় না সে… ইচ্ছা করে সৌভিককে জড়িয়ে ধরে মনের কথা বলার জন্য জোর খাটাতে, কিন্তু সৌভিকের ওই ধরণের বরফ শীতল ব্যবহার তাকে দূরে থাকতে বাধ্য করে… এত দিনকার চেনা মানুষটাকে কেমন অচেনা ঠেকে সুদেষ্ণার…
‘কি হয়েছে সোনা?’ রাতে বিছানা উঠে সৌভিকের কাছে সরে এসে প্রশ্ন করে সুদেষ্ণা… হাত রাখে সৌভিকের হাতের ওপরে…
নিজের হাতের ওপর থেকে সুদেষ্ণার রাখা হাতটাকে আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে বলে সে, ‘নাঃ কিছু হয় নি তো… আসলে ভিষন ক্লান্ত লাগছে… তাই!’ বলতে বলতে ও পাশ ফিরে শোয় সে…
‘প্লিজ… বলো না কি হয়েছে…’ পেছন ফিরে শুয়ে থাকা সৌভিকের দেহটা ধরে নাড়া দেয় সুদেষ্ণা… ‘ওখানে কিছু হয়েছে সোনা?’ উদ্গ্রিব গলায় প্রশ্ন করে সে…
‘বললাম তো কিছ হয় নি… এতবার জিজ্ঞাসা করার কি আছে তো বুঝছি না…!’ সৌভিকের গলায় বিরক্তি ঝরে পড়ে…
‘এলিজাবেথকে তোমার ভালো লাগে নি… তাই না?’ সৌভিকের বিরক্ত সত্তেও ফের প্রশ্ন করে সুদেষ্ণা…
‘না তো… ভালোই তো ছিল বেশ এলিজাবেথ… আমি তো বেশ এঞ্জয় করেছি… ওসব নিয়ে কোন সমস্যা নেই… ছাড়ো এ সব… এক কথা বার বার শুনতে ভালো লাগছে না… ঘুম পেয়েছে… ঘুমিয়ে পড়ো তুমিও…’ বেজার মুখে উত্তর দেয় সৌভিক…
‘হুম… এই বার বুঝেছি…’ বলতে বলতে সৌভিকের কাছে আরো ঘন হয়ে বসে সুদেষ্ণা… ‘আমাকে নিয়ে সোনাটা খুব চিন্তায় ছিল, তাই না গো?’ বালিশের ওপরে শরীরটাকে হেলিয়ে রেখে হাত রাখে সৌভিকের মাথার চুলে… বারেক হাত বুলিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সৌভিকের দেহটা… চেপে ধরে নিজের নরম ভরাট স্তনজোড়া সৌভিকের পীঠের সাথে… ‘আরে বোকা… আমায় নিয়ে অত ভাবার কি ছিল? জানো না, ডেভিড না খুব ভালো লোক, ও আর আমি…’
সুদেষ্ণার কথা শেষ হয় না, তড়াক করে উঠে বসে সৌভিক… সুদেষ্ণার দিকে ঘুরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে থাকিয়ে দাঁতে দাঁত চিপে বলে ওঠে, ‘থামবে?’ চকিতে তার চোখটা সুদেষ্ণার এলিয়ে রাখা শরীরটার ওপরে মাথা থেকে পা অবধি বুলিয়ে নেয়… তারপর ফের সুদেষ্ণার মুখের দিকে ফিরে প্রায় চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘আমি জানতে চেয়েছি? জানতে চেয়েছিলাম তোমার আর ডেভিডের মধ্যের রসালো কথা? কি করেছ তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ? ঘুমোতে দেবে আমায়?’
এহেন সৌভিকের আচরণে হতবাক হয়ে যায়… একটু পিছিয়ে সেও উঠে বসে বিছানায়… আহত হয় এই ভাবে সৌভিক তার সাথে কথা বলার ফলে… এই ভাবে তার ওপরে চিৎকার করে ওঠার জন্য, যেখানে সত্যি বলতে তার কোন কারণই সে খুঁজে পায় না… চুপ করে যায় সে… আর দ্বিতীয়বার কোন কথা বলার চেষ্টাও করে না… একটু একটু করে সৌভিকের আচরণের কারণ তার কাছে পরিষ্কার হয়ে ওঠে এবার… অপরদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে সে… চোখের কোন দিয়ে নিঃশব্দে উষ্ণ জলের ধারা নামে… ভিজে যায় বালিশ…
.
.
.
সেদিনের পর আরো দু-দিন কেটে যায়… তাদের মধ্যের সম্পর্কের কোন উন্নতি ঘটে না… বরং আরো শীতলতা গ্রাস করে উত্তরত্তোর… একে অপরের সাথে কথা বলে অচেনা আগুন্তুকের মত… একান্ত প্রয়োজন ব্যতিত কেউ কারুর সামনে আসতেও চেষ্টা করে না… সুদেষ্ণা নিজের মধ্যেই গুমরে মরে শুধু… এ এমন এক কথা যা সে কাউকে বলে নিজেকে হাল্কা করতে পারে না… এমনকি প্রাণের বন্ধু রিতাকে বলতে পারে না সে…
.
.
.
এই ভাবে আরো কেটে যায় বেশ কিছুদিন… সপ্তাহান্তে রবিবার আসে… সুদেষ্ণা ততদিনে পুরো ঘটনাটা নিয়ে নিজের মনে পর্যালোচনা করতে করতে পাগল হবার উপক্রম হয়ে উঠেছে… শেষে সে সিদ্ধান্ত নেয় সৌভিকের সাথে সামনা সামনি পরিষ্কার কোন নির্ণয়ে আসার…
ইশানকে নিজের ঘরে আঁকতে বসিয়ে ঘরে ঢোকে সুদেষ্ণা… সৌভিক তখন বিছানায় বসে নিজের ল্যাপটপ খুলে এক মনে কোন অফিসের কাজে নিমগ্ন… অন্য রবিবারগুলো সে কখনও অফিসের কাজ নিয়ে বসে না, বরাবর সেই বলে যে ছুটির দিন গুলো শুধুমাত্র পরিবারের জন্য… কিন্তু আজকে ছুটির দিনটা অন্য দিনের মত নয়… সকাল হলেই বাজার করার জন্য তার পেছনে লাগেনি একবারও… ডাকে নি ইশানকেও নিজের কাছে…
ধীর পদক্ষেপে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ায় সুদেষ্ণা… তার উপস্থিতি বুঝতে পারলেও মুখ তোলে না সৌভিক… যেন জোর করেই তার দৃষ্টিটাকে আটকে রাখার চেষ্টা করে ল্যাপটপের স্ক্রিণের ওপরে…
‘এই ভাবে তো চলতে পারে না!’ একটা নিঃশ্বাস টেনে কথাগুলো প্রায় উগড়ে দেয় সুদেষ্ণা…
মুখ তুলে ভুরু কুঁচকে তাকায় সৌভিক…
‘আমাকে তোমায় বলতেই হবে সমস্যাটা ঠিক কোথায়…’ শ্বাস টেনে নিয়ে বলে সুদেষ্ণা… ‘তুমিই চেয়েছিলে এই ব্যাপারটা ঘটুক, তোমারই উৎসাহে ঘটেছে এটা, আর এখন তুমিই সামলাতে পারছ না…’ বলতে বলতে ক্ষনিক থমকায় সে… তারপর সৌভিকের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে সে, ‘কেন? তুমিই বলেছিলে না? যে, এটা ঘটলে আমাদের দাম্পত্য জীবন আরো রঙীণ হয়ে উঠবে, আমাদের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে, আমরা আমাদের পরষ্পরকে আরো ভালো করে চিনবো, জানবো… স্পাইসি হয়ে উঠবে আমাদের পরবর্তি জীবন? কি? বলো নি? তাহলে সে সব কথা কোথায় গেল? উল্টে আমাদের জীবনটা আগে যা ছিল তার থেকেও আরো বেশী করে দুর্বিসহ হয়ে উঠল…’ একটানে বলে উঠে হাঁফায় সুদেষ্ণা…
‘সমস্যা কোথায়? বুঝতে পারছ না?’ ক্রুর চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে সৌভিক… ‘সমস্যা হচ্ছ তুমি… হ্যা, হ্যা… তুমি… যে তুমি একেবারে একটা বাজারের বেশ্যার মত আচরণ করছিলে ওই শুয়োরের বাচ্ছা ডেভিডটার সাথে…’ হিসিয়ে ওঠে সৌভিক… ‘মনে নেই? তুমি… তুমিই তো বলতে যে তোমার নাকি অন্য কোন পুরুষে কোন আগ্রহই নেই… তুমি আমায় ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে গ্রহণই করতে পারবে না… আর যেই সুযোগ পেয়েছ, অমনি নিজের রূপ রঙ খুলে মেলে ধরেছ… ওই খানকির ছেলেটার সাথে এমন ভাবে চোদাচুদি করতে শুরু করে দিয়েছিলে যেন সেদিনই তোমার জীবনের শেষ দিন… এত বড় খানকি মাগী তুমি…’ বলতে বলতে গলা চড়ে সৌভিকের… মুখ বিকৃত হয়ে ওঠে এক পাশবিক আক্রোশে…
সৌভিকের মুখ থেকে তার দিকে এমন ভাষায় কথা ধেয়ে আসতে মাথার মধ্যে যেন আগুন জ্বলে ওঠে সুদেষ্ণার… সে কল্পনাও করতে পারে না তাকে এই ভাবে তার এতদিনকার সব থেকে ভালোবাসার মানুষটা বলতে পারে বলে… অনেক কষ্টে নিজের রাগটাকে অবদমিত করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় সুদেষ্ণা… দাঁতে দাঁত চেপে হিসিয়ে ওঠে সে, ‘আস্তে কথা বলো… পাশের ঘরে ইশান ঘুমাচ্ছে…’
‘আস্তে? কেন? কিসের জন্য?’ গলার স্বর নামে না সৌভিকের, ‘আস্তে বললে কি ছেলে জানতে পারবে না যে মা কেমন করে বেশ্যার মত একটা পরপুরুষকে দিয়ে চুদিয়ে এসেছে? হ্যা?’
মাথার মধ্যেটায় যেন দাবানল জ্বলতে থাকে সুদেষ্ণার… সৌভিকের মত একজন শিক্ষিত ভদ্র ছেলে এই ভাষায় তার সাথে কথা বলছে… এটা যেন সে কিছুতেই নিতে পারে না… চাপা স্বরে বলে ওঠে সে… ‘ভূল বলছো সৌভিক… সমস্যা কোন খানেই নেই… আমি তো নইই… আসলে কি বলতো? তুমিই সহ্য করতে পারছ না আমায়… কারণ আর কিছুই নয়, তুমি মানতেই পারছো না যে আমিও একটা মানুষ, আমারও মনের মধ্যে কোন অনুভূতি আছে, আমিও আনন্দ উপভোগ করার ক্ষমতা রাখি…’ বলতে বলতে প্রায় সেও চিৎকার করে ওঠে সৌভিকের ওপরে… ভুলে যায় পাশের ঘরে থাকা ইশানের উপস্থিতি…
‘আসলে কি জানো তো… এই যে এখনকার সমাজের তথাকথিত পুরুষেরা… হ্যা… পুরুষই বললাম, কারণ তারা মনে করে নিজেদের পুরুষ, কিন্তু পুরুষ, এই শব্দটার প্রকৃত অর্থটাই তাদের জানা নেই… সেই পুরুষেরাই বিদেশী কিছু কথা ইন্টার্নেটের মাধ্যমে জেনে সেটা ব্যবহার করতে চায় আমাদের মেয়েদের ওপরে… চায় ওয়াই সোয়াপিং, কাকল্ডিং… ব্যাগারা ব্যাগারা… তারা চায় ঠিকই… কিন্তু আসলে তারা সেটা প্রকৃত অর্থে কিন্তু একেবারেই চায় না… শুধু চায় নিজেদের পুরুষ অহংটাকে আরো সমৃদ্ধ করতে… তোমরা, এই তথাকথিত বেশির ভাগ পুরুষ নামক জীবেরা শুনতে আসলে পছন্দ করো যে একমাত্র আমিই আমার স্ত্রী বা প্রেমিকাকে চরম সুখ দিতে সক্ষম, আর অপর জনের কাছে গিয়ে সেই মেয়েটি সম্পূর্ণ ভাবে হতাশ হয়ে ফিরেছে… তাতেই তোমাদের মনের মধ্যের পুরুষকারটা ফুলে ফেঁপে বেড়ে ওঠে… আমি যদি বলতাম যে ডেভিড কিচ্ছু পারে নি করতে, ও একেবারেই সুখ দিতে অপারগ, কিম্বা ওর দাঁড়ায় না, বা ওই রকম কিছু, আমি রাতটা কোনরকমে কাটিয়েছি শুধু মাত্র তোমার কথা মনে করতে করতে, তাহলে তুমি খুব খুশি হতে… তখন আর কোন সমস্যাই থাকতো না…’ বলতে বলতে কাঁপতে থাকে সুদেষ্ণার সারা শরীরটা এক অবর্ণনীয় ক্রোধ আর বিদ্বেষে… ‘সেটা বললে তখন তোমার পৌরষে আর আঘাত করত না, আর এখন যেই শুনেছ যে তোমার মত আমিও ভালো ছিলাম, এঞ্জয় করেছি ডেভিডের সাহচর্য, তখন তোমার ওই তথাকথিত মেল ইগোতে আঘাত লেগে গেছে… আসলে তোমরা প্রত্যেকেই এক একটা হিপোক্রিট… অ্যান্ড নাথিং এলস্…’ রাগে মনে হয় সুদেষ্ণার চোখ মুখ দিয়ে আগুনের হল্কা বেরিয়ে আসছে…
‘আর আমার কি মনে হয় বলো তো তোমার দিকে তাকালেই… মনে হয় বাজারের একটা বেশ্যার সাথে আমি ঘর করছি…’ গর্জে ওঠে সৌভিকও…
সৌভিকের কথায় তার দিকে কিছুক্ষণ স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুদেষ্ণা… সৌভিকের থেকে এই শব্দটা তার দিকে ধেয়ে আসবে, তাও এতদিনের পর… যেন কিছুতেই ভাবতে পারে না সে… একটু নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ওঠে… ‘বেশ্যা!… তোমার মনে হয় যে একটা বেশ্যার সাথে ঘর করছো… এতদিন তোমার সাথে সংসার করার শেষে এই পেলাম আমি?’ বলতে বলতে জ্বালা করে ওঠে চোখের কোনটা…
ঠিক সেই মুহুর্তেই ঘরের মধ্যে ইশান দৌড়ে ঢোকে… অবাক চোখে একবার সৌভিক তারপর মায়ের মুখের দিকে তাকায়… তারপর কি বোঝে সেই জানে, এগিয়ে গিয়ে সুদেষ্ণার পাদুটোকে জড়িয়ে ধরে মুখ গুঁজে দেয় তার কোলের মধ্যে…
ইশানকে দেখে চুপ করে যায় দুজনেই… সৌভিক অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে, সুদেষ্ণাও ইশানের মাথায় হাত রেখে চেষ্টা করে নিজের মনের কষ্টটাকে সংযত রাখার… তারপর ইশানকে পাশে সরিয়ে দিয়ে মাথা নীচু করে বলে ওঠে… ‘বেশ… ঠিক আছে… তাহলে তো আর আমার এখানে থাকার কোন প্রশ্নই থাকে না… ফাইন… দেন আই অ্যাম লিভিং…’
‘সেটাই বোধহয় সব থেকে ভালো… আর কখনও ফিরে আসার চেষ্টাও করো না…’ পেছন ফিরে থাকা সৌভিক যেন স্বগক্তি করে এক প্রচন্ড ঘৃণায়…
আর একটাও কথা বলে না সুদেষ্ণা… চুপচাপ আলমারী খুলে নিজের আর ইশানের কাপড় জামা বের করে সুটকেসে গুছিয়ে নিতে থাকে… ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তা দেখেও গুরুত্ব দেয় না সৌভিক… মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সুদেষ্ণাকে…
পড়লা, পুরোটা, প্রতিটা লাইন, অক্ষর।
ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ লেখককে।