বগলার ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দীর্ঘ চুম্বন দিয়ে বলল, প্লিস, বাইরের ধুলো ময়লায় ঘুরে এসেছি তো গাটা ভিষন চেট চেট করছে, দু মগ জল না ঢেলে এলে একটুও স্বস্তি পাব না, আর সারা রাত তো পরে আছে। যতখুশি দুষ্টুমি করুন কোন আপত্তি করব না। প্লিস যাব আর আসব, কথা দিচ্ছি পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে আসব। সুন্দরীর মুখের মিষ্টি কথাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা খুব কম পুরুষের আছে এক্ষেত্রেও তাই ঘটল, বগলা সুনিতিকে ছেড়ে দিল। সুনীতি ছাড়া পেতেই বগলাকে ধরে শুইয়ে দিয়ে একটা ফ্লাইং কিস দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ভোর চারটে
যাত্রাপালা শেষ হতে গ্রামের সব লোক এক এক করে বাড়িতে ফিরতে লাগল। হঠাত “চোর” “চোর” চিত্কারে গ্রামের সব লোক বাড়ির থেকে বেরিয়ে এসে যেদিক থেকে চিত্কারটা আসছিল সেইদিকে দৌড় লাগাল। যে বাড়ির ভিতর থেকে চোর চোর চিত্কারটা আসছিল সেই বাড়ির সামনে গ্রামের সব লোক হাজির হলো। এই গ্রামেতে চোর… তার উপর এই বাড়িতে চোর… অসম্ভব… গ্রামের লোকেরা নিজেদের মধ্যে এইসব কথা বলে মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। বাড়ির ভিতরে সাত আটজন ষন্ডা মত লোক একটা খাটের চারধারে দাঁড়িয়ে আছে আর খাটের উপরে উপুর হয়ে একটা লোক নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে, সে আর কেউ নয় শ্রীমান বগলাচরণ।
একটা ষন্ডা মত লোক লাঠি দিয়ে সজোরে বগলার পাছায় বাড়ি দিতেই বগলা কঁকিয়ে চিত হয়ে যায়। বগলা কোনো রকমে চোখ খুলে দেখে সাত আটজন ষন্ডা মত লোক তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে, বগলার মনে হয় সে মরে গেছে আর তাকে যম ও যমের চেলা চামুন্ডারা নিতে এসেছে। বগলার মাথাটা যন্ত্রনায় ছিঁড়ে যাচ্ছে, সে চোখ খুলে রাখতে পারছে না, তার ভিষন ঘুম পাচ্ছে। এর মধ্যেই বগলা শুনতে পেল যমের মত লোকটা তার চেলা চামুন্ডাদের বলছে, এটাকে তুলে বাইরের উঠোনে গাছের গুড়ির সাথে বাঁধ, এর বিচার হবে। এরপরেই বগলা দেখল যমের চেলা চামুন্ডারা তাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে উঠোনের নারিকেল গাছের গুড়ির সাথে শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে দিল। বগলা কোনরকমে চোখের পাতা দুটো একটু ফাঁক করে যা দেখল তাতে তার মনে হল তার বিচার দেখতে প্রচুর নরকবাসী তাকে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে গ্রামের সব লোক লাঠিসোটা নিয়ে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে মজা দেখছে আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে, লোকটার তো সাহস মন্দ নয়, চুরি করতে এলি এই গ্রামে তাও আবার কার বাড়িতে না স্বয়ং রঘু ডাকাতের বাড়িতে। লোকটা পাগল না চোর। এই নিয়ে গ্রামের লোকেদের নিজেদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়ে গেল, কিছু লোক বলল চোর, কিছু লোক পাগল আর একদল এদের থেকেও এক কাঠি ওপরে তাদের মতে ইনি এক মহাপুরুষ এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই অলৌকিক কিছু ঘটতে চলেছে।
বগলার কানে কোন কিছুই ঢুকছে না, তার শুধুই ঘুম পাচ্ছে সে ওই বাঁধা অবস্থাতেই ঢুলতে লাগল। বগলাকে ঢুলতে দেখে যমের মত লোকটা তার চোখে মুখে জল দিতে বলল। গ্রামের কিছু ইয়ং ছেলে যারা মজা লুটতে এসেছিল তারা দেখল একটর যদি ঘুমিয়ে থাকে তাহলে নাটকের মজাটাই নস্ট, তাই তারা কোথা থেকে বালতি যোগার করে বালতি বালতি জল বগলার মাথায় ঢালতে শুরু করে দিল। বালতি বালতি জল মাথায় পড়তেই বগলার ঘুমের নেশা পুরো ছুটে গেল, তার আস্তে আস্তে সব কিছু মনে পড়ল। সে এখানে এসেছিল যাত্রা দেখতে, যাত্রা দেখার আগে তার সাথে এক সুন্দরীর আলাপ হয়, তার নাম যেন কি… হ্যা, মনে পড়েছে সুনীতি, সুনিতিকে ভোগ করার লোভে সে সুনীতির মিষ্টি কথায় ভুলে তাকে পৌঁছে দিতে এই বাড়িতে আসে, তারপরে সুনীতি তাকে খিড়কির দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে একটা ঘরে বসায়, এরপরে সুনীতি তাকে একগ্লাস শরবত খাওয়ায়, তারপরে আর তার কিছু মনে নেই, এরপরে একদম সকালে লাঠির বাড়ি খেয়ে তার ঘুম ভাঙ্গে। বগলার কাছে একটা জিনিস পরিস্কার হয় যে তার সরবতে এমন কিছু মেশানো ছিল যে সে গভীর ঘুমে ঢলে পরে। কিন্তু কেন? সে এর কোন সদুত্তর খুঁজে পায় না শুধু একটা জিনিসই পরিস্কার তার কাছে যে সে মস্ত বড় ফাঁদে পড়েছে। বগলা মুখ তুলে ভিড়ের মধ্যে সুনিতিকে খোঁজার চেষ্টা করে কিন্তু তাকে দেখতে পায় না।
হঠাত গালে সজোরে এক থাপ্পর খেতেই বগলা ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠে শুনতে পেল যমের মত লোকটা বলছে, তুই জানিস এটা কার বাড়ি, এটা রঘু ডাকাতের বাড়ি, আমিই সেই রঘু ডাকাত, তোর তো সাহস কম নয়, কি করতে এই বাড়িতে ঢুকেছিলি, সত্যি করে বল নইলে তোর শরীর থেকে মুন্ডু আলাদা করে নদীর জলে ভাসিয়ে দেব। সামনে স্বাক্ষাত রঘু ডাকাতকে দেখে বগলার ভয়ে রক্ত জল হয়ে গেল, মুখ ফ্যকাশে মেরে গেল, জিভ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। ভয়ে আতঙ্কে ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বগলা ভাবল যে যদি সে বলে সুনিতিকে ভোগ করার জন্য সে এই বাড়িতে এসেছিল তাহলে তো এরা এখনই তার লাশ ফেলে দেবে কিন্তু কোন মিথ্যে অজুহাতও তার মাথায় আসছে না। হঠাত বিরাশি সিক্কার দুটো থাপ্পর গালে পড়তেই বগলার মাথা ভোঁ ভোঁ করে ওঠে, ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে কোনরকমে বগলা বলে যে কালরাতে সে সুনীতি নামের এক মহিলাকে মেলার থেকে এই বাড়িতে পৌঁছে দিতে এসেছিল কিন্তু তারপরে সে বাড়ির ভেতরে ঢুকে কি করে ঘুমিয়ে পড়ল সেটা তার মনে নেই। এই শুনে রঘু ডাকাত বগলার জামার কলার ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলল, তোর সাহস তো কম নয়, তুই রঘু ডাকাতের সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যে বলছিস। রঘু ডাকাত বগলার জামার কলার ছেড়ে দিয়ে সরে যেতেই বগলার উপর শুরু হল কিল, চড়, ঘুষির বর্ষণ। মার খেতে খেতে বগলা শুনতে পেল ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ বলছে, রঘু দাদা, কাল রাতে আপনার বোন কাদম্বিনী বাড়িতে একা ছিল, তার তো কোন সর্বনাশ করেনি লোকটা। এই শুনে রঘু ডাকাত হুঙ্কার ছেড়ে বলল, কাল রাতে কাদম্বিনী ঘরে খিল দিয়ে ঘুমোচ্ছিল, সে জানেই না বাড়িতে লোকটার ঢোকার কথা। ভিড়ের মধ্যে গুঞ্জন উঠল, বাড়ির সদর দরজা তালা দেওয়া, খিড়কির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ, তাহলে লোকটা ঢুকল কি করে বাড়ির ভেতরে, হাওয়া হয়ে। ভিড়ের মধ্যে যে দলটা বগলাকে মহাপুরুষ বানিয়েছিল তারা সামনে আর কি কি অলৌকিক ঘটনা ঘটতে চলেছে সে নিয়ে জল্পনা আরম্ভ করে দিল। এই সমস্ত কথাই রঘু ডাকাতের কানে গেল। কাদম্বিনী যে মিথ্যে বলছে না সে বিষয়ে রঘু একশ ভাগ নিশ্চিত কিন্তু তার মনেও একটাই প্রশ্ন লোকটা ঢুকল কি করে বাড়িতে।
এই সময়ে ভিড় ঠেলে একজন বয়স্ক লোক বগলার সামনে গিয়ে দাঁড়াল, বগলার মুখটা তুলে ভাল করে দেখে চেঁচিয়ে উঠল, আরে এ তো মঙ্গলাচরণের ভাই শ্রীমান বগলাচরন। এই শুনে রঘু বগলার সামনে এসে বগলাকে ভাল করে দেখে বৃদ্ধ লোকটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কাকা, আপনি ঠিক বলছেন তো? আপনার চিনতে কোন ভুল হচ্ছে না তো? বৃদ্ধ তখন হেসে বগলাকে তার ও তার দাদার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল, বগলা তার উত্তরে যা বলল তা শুনে রঘু ডাকাত নিশ্চিত হল এই লোকটা মঙ্গলার ভাই বগলা। রঘু তখন নির্দেশ দিল বগলার বাধন খুলে দিতে, বাধন খুলে বগলাকে চেয়ারের উপর বসিয়ে জল খেতে দেওয়া হল। বগলার ওই বৃদ্ধকে দেবদূত বলে মনে হল। বগলা একটা ব্যাপারে খুব আশ্চর্য হল যে তার দাদার মত ধার্মিক লোকের সঙ্গে রঘু ডাকাতের কি করে পরিচয় হল, একটা ব্যাপারে বগলা নিশ্চিত যে তার দাদাকে রঘু ডাকাত খুব সমীহ করে। বগলা দেখল বৃদ্ধকে একান্তে রঘু ডাকাতের সঙ্গে আলোচনা করতে। একটু আগে যে বগলা মৃত্যুভয়ে কাঁপছিল এখন সেই বগলার মনে একটা ক্ষীন আসা দেখা দিল এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যাবার।
বৃদ্ধ এগিয়ে এসে বগলার সামনে বসল, বগলা লক্ষ করল রঘু ডাকাতের ইশারায় ওদের দুজনের কাছ থেকে সবাই উঠে দুরে সরে গেল, বৃদ্ধ ও বগলাকে একান্ত আলোচনার সুযোগ করে দিল। বৃদ্ধ হঠাত করে বগলা বিবাহিত কিনা জানতে চাইল, বৃদ্ধের এই প্রশ্নে আশ্চর্য হলেও বগলা উত্তরে অবিবাহিত জানাল। এরপরে বৃদ্ধ তাকে বলে, গতকাল মেলায় আমি তোমাকে ঘুরতে দেখেছিলাম, তুমি কি কোন চুড়ির দোকানে ঢুকেছিলে? বগলা মাথা নেড়ে হ্যা বলে। এরপরে বৃদ্ধ বলে তুমি যখন চুড়ি কিনছিলে তখন কি তোমার পাশে কোন মেয়ে ছিল? বগলা মাথা নাড়ে, বৃদ্ধ বলে, তুমি কি ওই মেয়েটাকে চেন? বগলা ইতস্তত করে বলে, চিনি মানে শুধু নামটা জানি। বৃদ্ধ চোখ কুচকে বলে, নাম কি? বগলা উত্তরে বলে, সুনীতি। বৃদ্ধ মুখে একবার হুম শব্দ করে বলে, ও তাহলে কাদম্বিনী তোমাকে এই নামে নিজের পরিচয় দিয়েছে, কাল তুমি যে মেয়ের সাথে চুড়ির দোকানে ছিলে, একসাথে চা খেয়েছিলে তার আসল নাম কাদম্বিনী, রঘু ডাকাতের বোন। বগলা আশ্চর্য হয়ে জানতে চায়, আমাকে মিথ্যে পরিচয় দেবার মানে? বৃদ্ধ হেসে বলে, কাদম্বিনীকে তো তুমি দেখেছ, ওর মত সুন্দরী এই গ্রামে কেন আসে পাশের গ্রামেও পাবে কিনা সন্দেহ। কাদম্বিনীর অনেক ভাল ভাল সম্বন্ধ আসে কিন্তু ডাকাতের বোন শুনেই সব সম্বন্ধ ভেঙ্গে যায়, স্বাভাবিকভাবেই কাদম্বিনী হতাশ হয়ে পরে, আমার যেটুকু মনে হয় মেলায় তোমাকে দেখে কাদম্বিনীর খুব পছন্দ হয়, হয়ত তোমাকে বিয়ে করার বাসনাও জাগে, নিজের পরিচয় দিলে তুমি হয়ত মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে সেই ভয়ে নিজের আসল নামটা তোমাকে জানায় না। বৃদ্ধর মুখে এইসব শুনে বগলার মনটা ভিষন খুশিতে ভরে ওঠে, সেও যেমন কালকে প্রেমে পরে গিয়েছিল তেমনি সুনীতি.. থুড়ি কাদম্বিনীও তার প্রেমে পরেছিল। মনে একটাই প্রশ্ন খচ খচ করছে বগলার সেটাই সে বৃদ্ধর কাছে জানতে চাইল, আপনি যা বললেন তাতে সুনীতি.. সরি কাদম্বিনীর আমাকে ভাল লেগেছিল, তাহলে সে আমাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে শরবতের সাথে কিছু একটা মিশিয়ে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিল কেন? বৃদ্ধ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল, দেখ আমার যেটা মনে হয়, কাদম্বিনী তোমার প্রেমে না পড়লে সে কখনই তোমাকে তার বাড়ির ভেতরে নিয়ে যেত না। এখন হয়ত সেই সময়ে সে তার ভাইদের কথা ভেবে ভয় পেয়ে যায় আবার তোমাকে সেই কথা বলতেও পারছে না, প্রেমের মোহে তোমাকে বাড়িতে নিয়ে এসে তোমাকে নিরস্তও করতে পারছে না আবার তোমার সঙ্গে শারীরিক সম্বন্ধ হলে ভাইদের হাতে দুজনের নিশ্চিত মৃত্যু তাই আমার মনে হয় এই দোটানার মধ্যে পরে সে শরবতের মধ্যে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। পরে হয়ত ভেবে একটা কিছু রাস্তা বের করবে ভেবেছিল কিন্তু সেই সময় সে পায় না। বৃদ্ধের মুখে এই কথা শুনে বগলার মনের ধোয়াশা অনেকটা কেটে যায়। এরপরে বৃদ্ধ যা বলে সেটা শুনে বগলার আক্কেল গুরুম হয়ে যায়। বৃদ্ধ বলে, কাদম্বিনীকে তার ভাইরা নিজেদের প্রানের চেয়েও বেশি ভালবাসে। এখন মুশকিল হয়েছে একটাই যে গ্রামের লোকেদের মনে কতগুলো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেগুলো হল কাদম্বিনীর সাহায্য ছাড়া তুমি এই বাড়িতে ঢুকতে পরতে না আর তোমার ও কাদম্বিনীর একসাথে এই বাড়িতে রাত্রিবাস। ফলে লোকের মনে কাদম্বিনীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এইটা কাদম্বিনীর ভাইরা কোনমতেই বরদাস্ত করতে পারছে না। এখন তোমার সামনে দুটো রাস্তা এক তুমি কাদম্বিনীকে বিয়ে করতে রাজি হলে নতুবা দুই কাদম্বিনীকে বিয়ে করতে অসম্মত হলে। এখন প্রথম রাস্তায় তুমি প্রাণে বাঁচবে আর দ্বিতীয় রাস্তায় তোমার শরীর থেকে মুন্ডুটা আলাদা হয়ে যাবে। এখন তুমি ঠিক কর কোন রাস্তাটা বাছবে। বগলা মনে মনে ভাবল, প্রাণ বাঁচাতে শালা কানা, খোড়া, লুলোকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যেতাম আর এ তো স্বর্গের অপ্সরা। বগলা বৃদ্ধকে কাদম্বিনীকে বিয়ে করার সম্মতি জানাল।
এই শুনে বৃদ্ধ হাসতে হাসতে উঠে গিয়ে রঘু ডাকাতকে বগলার বিয়েতে সম্মত হবার কথা জানাল। হাসতে হাসতে বগলার সামনে এসে রঘু ডাকাত জিজ্ঞেস করল, বাবা বগলাচরণ, তুমি আমার বোন কাদম্বিনীকে বিয়ে করতে রাজি তো? বগলার ইতিবাচক উত্তর শুনে গোটা পরিবেশটাই পাল্টে গেল। যে লোকগুলো একটু আগে বগলাকে রাম কেলান কেলাচ্ছিল তারাই এখন বগলাকে কাঁধে তুলে নাচতে শুরু করে দিল। বেশ কিছুক্ষন নাচাকোদার পর লোকগুলো বগলাকে রঘু ডাকাতের সামনে এনে বসিয়ে দিল। রঘু বগলার দিকে তাকিয়ে বলল, আজ রাত আটটার সময় ভাল লগ্ন আছে, বিয়েটা তখনি হবে। এই শুনে বগলা চমকে উঠে মিউ মিউ করে বলল, আজ রাতেই বিয়ে… কিন্তু আমি তো বিয়ের কোন প্রস্তুতি নিয়ে আসিনি আর তাছাড়া আমার বাড়ির লোকদেরও তো জানাতে হবে, তাই বলছিলাম কয়েকদিন পরে শুভ লগ্ন দেখে বিয়েটা করলে হয় না। এই কথা শুনে বৃদ্ধ বলে উঠল, বাছা, তোমাকে তো একটু আগেই সব বললাম, কাদম্বিনী তার ভাইদের কাছে প্রানের চেয়েও প্রিয়, গ্রামের লোকেদের মনে যে সংশয় দেখা দিয়েছে সেটা একমাত্র তোমাদের বিয়ে হলেই কাটবে। এখন বিয়ে একদিন পেছোনো মানে এই সংশয় হু হু করে চারিদিকে ছড়িয়ে পরবে, এতে যেমন কাদম্বিনীর অসম্মান তেমনি যে রঘু ডাকাতের ভয়ে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায় সেই রঘু ডাকাতের প্রতি লোকেদের ভয়, সমীহ সব নস্ট হয়ে যাবে, সেটা তো আমরা হতে দিতে পারি না, তোমাকে বাবা আজকেই বিয়ে করতে হবে। কি রঘু ভুল বললাম কিছু? সঙ্গে সঙ্গে রঘু উঠে দাঁড়িয়ে বলল, না কাকা একদম ঠিক বলেছেন, বিয়ে আজকেই হবে। বাবা বগলা, বিয়ের সব যোগার যন্ত্র আমরা করব, তোমাকে এসব নিয়ে কিছু ভাবতে হবে না, তুমি শুধু বিয়ের পিঁড়িতে বসে বিয়েটা করবে। এই বলে রঘু তার দলবল নিয়ে বিয়ের যোগার যন্ত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
বগলা আর কি করে চাকর শ্রেনীর একটা লোককে তামাক দিয়ে যেতে বলল, চাকরটা একটু পরেই তামাক সেজে বগলার হাতে দিয়ে গেল। বগলা পায়ের উপর পা তুলে আয়েস করে তামাক সেবন করতে লাগল। চাকরটা এই দৃশ্য দেখে মনেমনে ভাবল, ভাগ্যের কি পরিহাস, এই শালাই একটু আগে রাম ধোলাই খাচ্ছিল আর এখন পায়ের উপর পা তুলে তামাক খাচ্ছে। বগলা তামাক খেতে খেতে ভাবল, তার বিয়েতে শুধু একজনই ভিষন দুখ্য পাবে সে তার বৌদি রম্ভা, বৌদির সাথে তার অবৈধ সম্পর্কটা কিছুদিন বন্ধ রাখতে হবে কারণ কাদম্বিনীকে দেখে বেশ চালাক চতুর বলেই মনে হয়েছে, তাই কাদম্বিনীর হাতে ধরা পরে গেলে মুশকিল একটাই তার ডাকাত ভাইগুলো তাকে ভোগে পাঠিয়ে দেবে।
সময় বহিয়া যায় নদীর স্রোতের ন্যায়, ঠিক সেরকমই সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে বিয়ের লগ্ন উপস্থিত হল। বিয়ের নানারকম উপাচার শেষ হয়ে শুভদৃষ্টি ও মালাবদলের অনুষ্ঠান উপস্থিত হয়। বগলা বর বেশে পিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছে, কাদম্বিনীর ছয় ভাই পিঁড়িতে বসা কাদম্বিনীকে তুলে সাত পাক ঘুরিয়ে শুভদৃষ্টির জন্য বগলার সামনে এসে দাঁড়াল। বগলা দেখল কাদম্বিনী দুটো বড় পান পত্র দিয়ে মুখটা ঢেকে রেখেছে। বর বধুর শুভদৃষ্টি সম্পন্ন করার জন্য পুরুত ঠাকুর কাদম্বিনীকে পান পত্র দুটো মুখের উপর থেকে সরিয়ে ফেলতে বলে। কাদম্বিনী আস্তে আস্তে মুখ থেকে পান পত্র দুটি সরিয়ে নিল। কাদম্বিনীর মুখ দর্শন করে বগলার মুখ হা হয়ে গেল, বড় বড় চোখে সে ড্যাব ড্যাব করে কাদম্বিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল, হা করে তাকিয়েই থাকল। ফচকে ছোঁড়াদের কিছু কমেন্ট ভেসে এল, কেউ বলল, “জামাইবাবু বৌকে দেখে পুরো মোহিত হয়ে গেছে” আবার কেউ বলল, “জামাইবাবু সারা জীবন ধরে দেখবেন, এখন মালাবদলটা সেরে নিন, ভাইদের যে পিঁড়ি ধরে হাত ব্যথা হয়ে গেল” এইধরনের নানা কমেন্ট ভেসে আসতে লাগল। কিন্তু বগলার তাতে কোন হেলদোল নেই, সে একদৃষ্টে কাদম্বিনীকে দেখে যেতে লাগল। হঠাত বৃদ্ধের হাতে সজোরে চিমটি খেয়ে বগলার সম্বিত ফিরে এল। বৃদ্ধ বগলার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, “বাছা, মালাবদলটা সেরে নাও নইলে কাদম্বিনীর ভাইরা তোমার ফটোয় মালা টাঙিয়ে দেবে, সেটা কি ভাল হবে।” বগলার দু চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এল। বগলার মনে হল এই তাড়কা রাক্ষসীকে বিয়ে করার থেকে রঘু ডাকাতের হাতে মরে যাওয়া অনেক ভাল ছিল। মুখটা ঠিক কুমড়, চোখ দুটো নেপালিদের মত ছোট ছোট এত ছোট যে হাসলে আর খুঁজে পাওয়া যায় না, নাকটা এতটাই চ্যাপ্টা যে আছে কি নেই বোঝা যায় না, ঠোঁট দুটো সাঁওতালি মেয়েদের মত পুরু, সামনের দাঁতগুলো এতটাই উঁচু যে সেগুলো সবসময় বাইরে বেরিয়ে থাকে, গায়ের রং ঠিক কালো মহিষের মত, অন্ধকারে কারো বাপের সাধ্যি নেই খুঁজে পাবে, কালো মহিষের মত শুধু রংটাই নয় গতরটাও মহিষের মত। এ হেন রূপ দেখে বগলার বৃদ্ধের একটা কথা মনে পড়ল, বৃদ্ধ বলেছিল, কাদম্বিনীর মত দেখতে মেয়ে এই গ্রামে শুধু নয় আশপাশের গ্রামেও পাওয়া যাবে না। বগলার মনে হল এইরকম কদাকার, কুত্সিত মাল ভূভারতে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। বগলাকে ভ্যাবলা কার্তিকের মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পাশ থেকে বৃদ্ধ বলল, কি বাছা আবার চিমটি খাবার সখ হয়েছে। বগলার মনে পড়ল তার বিয়ে বলে এরা সকাল থেকেই কিছু খেতে দেয় নি, দিয়েছে শুধু কিল, চড়, ঘুষি আর উপরি হিসাবে জুটেছে এই শালা বুড়োর রাম চিমটি। চিমটি দেবার জন্য বুড়োর হাত এগিয়ে আসতে দেখে বগলা আর দেরী না করে মালাবদলটা সেরে নেয়।
বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবার পরে নতুন বর বউ খাটের উপরে মহিলা ও বাচ্চাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে বসে আছে। এমন সময়ে বৃদ্ধ ঘরে ঢুকে সমস্ত বাচ্চা ও মহিলাদেরকে খাবার জন্য ডেকে নিয়ে চলে গেল। এর একটু পরেই একজন মহিলা এসে কাদম্বিনীকে জামা কাপড় চেঞ্জ করাবে বলে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল। ঘরে একা বসে বগলা কত কি ভাবছে, নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিতে দিতে মনে মনে ভাবল, গতকাল রাতে মেয়েটার রূপে এমন মজে গেলাম যে কোনকিছু না ভেবে ল্যাং ল্যাং করতে মেয়েটার বাড়ি চলে গেলাম, এমন মজা চাখাল যে মাগীটা রঘু ডাকাতের বাড়িতে এনে তুলল। মেয়েটার মিষ্টি কথায় এমন গলে গেলাম যে বিনা দ্বিধায় শরবতটা খেয়ে নিলাম, তখন কি জানতাম হারামজাদীটা শরবতের সাথে কিল, চড়, ঘুষি আর সেই সাথে বুড়োর রাম চিমটি খাওয়াবে। বুড়োটাকে দেখে ভাবলাম দেবদূত, আমার রক্ষাকর্তা, তখন কি জানতাম খানকির ছেলেটা আমায় রক্ষা করতে আসেনি আমার পেছন মারতে এসেছে। কি সুন্দর যুক্তি দিয়ে বুড়োটা আমায় বুঝিয়ে দিল সুনীতি আর কাদম্বিনী একই মেয়ের দুই নাম, আমার যেটুকু সংশয় ধোয়াশা ছিল বুড়োটার সুন্দর যুক্তি শুনে আমি মনে করলাম আমার সব ধোয়াশা কেটে গেল, তখন কি বুঝেছিলাম যে শুওরটা আমার ধোয়াশা কাটাতে আসেনি এসেছে আমার পোঁদে ধোয়া ঢোকাতে।
নুপুরের ছম ছম আওয়াজে বগলার ভাবনার সূত্র কেটে গেল, বগলা তাকিয়ে দেখে যার জন্য তার এই বিপদ সেই সুন্দরী একমুখ হাসি নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। বগলার হাত নিশপিশ করে উঠল মাগীটাকে ধরে দু ঘা দেবার জন্য কিন্তু বগলা ভাল করেই জানে ডাকাতের বাড়িতে তার এই ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করলে হাতটাই হয়ত ধড় থেকে আলাদা করে দেবে। বগলা সুন্দরীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রইল। সুন্দরী মুখে হাসিটা ঝুলিয়ে রেখে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে বলল, নমস্কার বগলাবাবু, এই অধমকে চিনতে পারছেন? আমার উপর খুব রেগে আছেন মনে হচ্ছে। আমি জানি আপনার মনে এখন হাজার একটা প্রশ্ন কিলবিল করছে। সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই আমি এলাম, তাছাড়া আপনাকে যতক্ষন উত্তর করতে পারছি না ততক্ষন আমার মনেও শান্তি নেই। এবারে আপনাকে আমার আসল নামটা বলি, আমার নাম সরলা, ঐভাবে তাকাবেন না, এই নাম আপনি আগে কখনো শোনেননি বা আপনি আমাকে আগে কখন দেখেননি। যাকগে এইবার আমি আপনাকে আর একটা নাম বলছি দেখুন তো এই নামটা আপনি আগে কখনো শুনেছেন কিনা বা এই নামের কাউকে চেনেন কিনা। যশোদা। চেনেন এই নামে কাউকে, মনে পড়ছে কিছু। কি হল বলুন? বগলা তখন বাধ্য হয়ে বলল, না এই নামে কাউকে চিনি বলে মনে করতে পারছি না। এই শুনে সরলা হাসতে হাসতে বলল, মনে পড়ছে না তাহলে, ঠিক আছে, আর একটা নাম বলছি, এই নামটা আশাকরি মনে করতে পারবেন, রাঘব ঘোষাল। কি মনে পড়ছে? এই নামটা শুনে বগলার মুখটা ফ্যাকাশে মেরে গেল, কোনরকমে ঢোঁক গিলে বলল, রাঘব.. রাঘব ঘোষাল, মানে.. মানে আমাদের গ্রামেতে যে থাকে, যে খুব দরকারে আমার কাছে একবার কিছু টাকা ধার নিয়েছিল। আপনি কি তার কথা বলছেন? সরলার মুখে এখন আর হাসি নেই, সে কঠিন চোখে বগলার দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যা আমি ওই রাঘবের কথাই বলছি, আপনার কাছ থেকে সে টাকা ধার নিয়ে ছিল তবে সুদের বিনিময়ে। আপনাকে সে প্রত্যেক মাসের নির্ধারিত সময়ে সুদ মিটিয়ে দিত, শুধু একবারই তার এক্সিডেন্ট হওয়াতে সে দু মাসের সুদ নির্ধারিত সময়ে দিতে পারেনি, কি ঠিক বলছি তো? বগলা মাথা নেড়ে হ্যা বলে। সরলা আবার বলতে শুরু করে, দু মাসের সুদ আপনি না পেয়ে কি করলেন, সমস্ত মনুষত্ব বিসর্জন দিয়ে আপনি আপনার লোক দিয়ে তার বৌকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে এলেন। আপনি একটা বৌকে তুলে নিয়ে আসার হুকুম দিচ্ছেন অথচ তার নামটা পর্যন্ত জানেন না, আপনি কি ধরনের ইতর, নিচ ভেবে দেখেছেন। রাঘবের বৌয়ের নাম যশোদা। আপনি সারা রাত ধরে অন্ধকার ঘুপচি মত জায়গায় যশোদাকে ধর্ষণ করলেন। আপনার ধর্ষণ যখন থামল তখন দিনের আলো ফুটে গেছে, দিনের আলোয় যশোদাকে ছেড়ে দেওয়াটা রিস্কের হয়ে যাবে বলে আপনি ওই ঘুপচি অন্ধকার ঘরে যশোদাকে আটকে রাখলেন, সারাটা দিন কোন খাবার তো নয়ই এমনকি একফোঁটা জল পর্যন্ত দিলেন না। রাত হতে আপনার লোকেরা যখন যশোদাকে ছেড়ে দেবে বলে বাইরে নিয়ে যেতে গেল তখন আপনি আপনার লোকেদের সামনে যশোদাকে আরো একবার ধর্ষণ করলেন। এরপরে আপনার লোকেরা এমন একটা জায়গায় যেখানে দিনের আলোয় যশোদার রাস্তা চিনে বাড়ি ফেরা মুশকিল সেখানে রাতের অন্ধকারে যশোদাকে ছেড়ে দিয়ে এল। সারা রাত যশোদাকে সাপ, খোপ, ব্যাং, কুকুর, বিড়াল এদের মধ্যে রাত কাটাতে হল। পরের দিন সকালে এক সহৃদয় পরিচিত ব্যক্তি অর্ধমৃত যশোদাকে পড়ে থকতে দেখে রাঘবকে খবর দেয় এবং রাঘব গিয়ে যশোদাকে বাড়ি নিয়ে আসে। আপনি কি জানেন এরপরে যশোদার কি হাল হয়, আপনি শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করে যশোদাকে একটা মানসিক রুগিতে পরিনত করে দেন। সেইদিন থেকে যশোদা একজন আতঙ্কগ্রস্ত রুগী, সে অচেনা কাউকে দেখলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, অন্ধকার তার কাছে বিভীষিকা, তার সর্বক্ষণের সঙ্গী ভয়, আতঙ্ক করে দিয়েছেন আপনি। অন্ধকারকে তার এমন ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন যে সারা রাত তার ঘরে লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়। যশোদার কনফিডেন্সকে আপনি দুমড়ে, মুচড়ে, ভেঙ্গে, চুরে এমন করে দিয়েছেন সে সামান্য কোন কাজ করতে ভরসা পায়না, তার নিজের প্রতি বিশ্বাসটাই চলে গেছে। ভয়, আতঙ্কের মধ্যে তাকে মাসের পর মাস কাটাতে হয়েছে শুধু আপনার জন্য। রাঘবের স্ত্রী যশোদা আমার নিজের দিদি। কাদম্বিনী আমার ঘনিষ্ঠতম বন্ধু, তার দাদারা আমাকে ও যশোদাকে বোনের চোখে দেখে, আমি যদি চাইতাম কাদম্বিনীর দাদাদের দিয়ে আপনার শরীর থেকে মুন্ডুটা আলাদা করে দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে আপনি শুধু কয়েক মুহুর্তের জন্য ভয় বা আতঙ্ক কি জিনিস তা উপলব্ধি করতে পারতেন। দিনের পর দিন যে ভয় বা আতঙ্কের মধ্য দিয়ে আমার দিদি যাচ্ছে সেটা আপনি বুঝতে পারতেন না। ভয় বা আতঙ্ক কি জিনিস সেটা সারা জীবন ধরে বোঝার জন্যই আপনাকে রঘু ডাকাতের বোনের সাথে বিয়ে দিলাম। আপনার কাছে মেয়েরা ভোগ্যবস্তু, বউ মানে দাসী। কিন্তু বিয়ের পরে আপনার বউ মানে কাদম্বিনীর আপনি ক্রীতদাস হলেন। আপনার বউ কোনদিন তার দাদাদের কাছে আপনার বিরুদ্ধে সামান্য কোন অভিযোগ জানালে আপনার কি হাল হবে সেটা আপনি ভাল করেই জানেন তাই আজ থেকে আপনার বৌয়ের সামান্য অসন্তুষ্টির কারণ যাতে আপনি না হন সেই ভয়ে আপনি সারা জীবন থাকবেন। এই পর্যন্ত বলে সরলা একটু দম নিল।
বগলার মুখটা পুরো সাদা হয়ে গেছে যেন কেউ ব্লটিং পেপার দিয়ে সমস্ত রক্ত শুষে নিয়েছে। সরলা আবার বলতে শুরু করল, এতক্ষন আপনি কেন করেছি সেটা শুনলেন এবারে বলি কি করে করলাম। আপনার যাত্রা দেখার নেশার কথা আমার জানা ছিল, তাই যখন এখানকার ক্লাব যাত্রাপালার অনুষ্ঠান করতে চলেছে শুনলাম তখন আমি আপনাকে ক্লাবের লেটার হেডে নিমন্ত্রন পত্র ও যাত্রার টিকিট খামে ভরে আপনার কাছে পাঠিয়ে দি, আমি জানতাম আপনি আসবেন, ঠিক তাই হল, আপনার জন্যই আমি মেলাতে অপেক্ষা করছিলাম। আপনারা নিজেদের সিংহ ভাবেন আসলে আপনারা ভেড়ার জাত, তাই আপনাকে বসে আনতে আমার একটু হাসিই যথেস্ট, দু মিনিটের মধ্যে আপনি কুত্তার মত আমার পেছন পেছন ঘুরতে শুরু করে দিলেন। আপনি মেয়েদের শরীর ছাড়া কিছু বোঝেন না তাই আপনাকে যখন আমার বাড়ি ফাঁকার কথা বললাম আপনার জিভ দিয়ে লালা ঝরতে শুরু করে দিল। এই গ্রামের সম্পর্কে আপনি কোন খবরই যে রাখেন না সেটা আমার জানা ছিল তাই আপনাকে সোজা নিয়ে এলাম রঘু ডাকাতের বাড়িতে। কাদম্বিনী আমার বন্ধু বলে সেদিন সকালেই ওর কাছ থেকে ওদের বাড়ির সদর দরজার ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম। কাদম্বিনী যদি একবার ঘুমিয়ে পরে তাহলে ওর পাশে বোমা ফাটালেও ওর ঘুম ভাঙ্গবে না। এরপরে আমি আপনাকে বাইরে রেখে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখলাম কাদম্বিনী অঘোরে ঘুমোচ্ছে, আমি নিশ্চিন্ত হয়ে খিড়কির দরজা দিয়ে আপনাকে ঢুকিয়ে নিলাম। আমি আগে থেকেই ঘুমের ঔষধ ভেলিয়াম ১০র একটা পাতা যোগার করে আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম, ভেলিয়াম ১০র দশটা বড়ি শরবতের সঙ্গে মিশিয়ে আপনাকে খাইয়ে দি। পরের দিন সকালে লাঠির বাড়ি খেয়ে আপনার ঘুম ভাঙ্গে, এরপরে আপনি ব্রেকফাস্ট সারেন কিল, চড়, ঘুষি, লাথি খেয়ে। আপনাকে শুধু লাথি, কিল, চড়, ঘুষি খাওয়ানো আমার লক্ষ্য ছিল না, ওগুলো আপনার ফাউ, আমার লক্ষ্য ছিল কাদম্বিনীর সাথে আপনার বিয়ে দেওয়া।
একটু দম নিয়ে সরলা আবার বলতে শুরু করে, পরের দিন সকালে যে বয়স্ক লোকটা আপনার রক্ষাকর্তার ভুমিকা পালন করে তিনি আমার ও যশোদার বাবা। সেদিন রাতে আপনাকে আমার শরীরটা একটু ছুঁতে দিয়ে আপনার মধ্যে আমাকে পাবার ইচ্ছেটা বহুগুন বাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম। ফলে আমার বাবা যখন আপনাকে আমি ও কাদম্বিনী যে এক ব্যক্তি এটা বুঝিয়ে দিল তখন আপনার শুধুমাত্র আমাকে পাবার প্রবল ইচ্ছে কাদম্বিনীকে না দেখে বিয়ে করতে রাজি করিয়ে দিল। এরপরের সবটাই আপনার জানা আছে, আশাকরি আপনার সমস্ত সংশয়ের নিরসন ঘটাতে পেরেছি। “ভাল থাকবেন” এই কথাটা আপনার মত লোকের জন্য নয়, তাই শুধু বলতে পারি “ভয়ে থাকবেন” । এইবলে সরলা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
পরের দিন সকালে
বগলা রেডি হয়ে ঘরের এক কোনে চুপ করে বসে আছে। কনে বিদায় হবে, নিয়ম অনুযায়ী বৌ কান্না করবে হাউমাউ করে, বৌয়ের বাবা বা ভাইরা শব্দহীন কান্না করতে করতে রুমাল দিয়ে চোখ মুছবে, কিন্তু হল উল্টোটা। কাদম্বিনী ও তার ভাইরা তারস্বরে গলা ফাটিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে যা দেখে বগলার মনে হল বোমা ফাটলেও এর থেকে কম শব্দ হত। এই সময়ে ঘরে প্রবেশ করল গতকালের সেই বৃদ্ধ মানে সরলার বাবা।
সরলার বাবাকে দেখে বগলার ভেতরটা চিরবিরিয়ে উঠল। বৃদ্ধ বগলার কাছে এসে বসে নিচু গলায় বলল, বাছা, তোমার বউ ভাগ্য দেখে তো আমার খুব হিংসে হচ্ছে। এই শুনে বগলার গোটা শরীরটা রাগে রি রি করে উঠল, কিন্তু হজম করা ছাড়া বগলার কোন উপায় নেই। এরপরে বৃদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, কালকে তাড়াহুড়োয় তোমাকে আশির্বাদ করতে পারিনি তাই তোমাকে আমি আজ আশির্বাদ করছি আজ থেকে তোমার সব ভাল মন্দ ঈশ্বরের কাছ থেকে নিয়ে তোমার হাতে দিলাম। বৃদ্ধর এহেন আশীর্বাদের ধরন দেখে সবাই অবাক হয়ে বৃদ্ধর মুখের দিকে তাকাল। বৃদ্ধ মুচকি হেসে বলল, বাছা, বুঝতে পারলে না, ঈশ্বরের কাছে আমরা কি চাই, ভাল থাকতে চাই সুখে থাকতে চাই এইসব তো, রঘু ডাকাতের আদরের বোন তোমার বউ, সে ভাল থাকলে তুমি ভাল থাকবে, সে সুখে থাকলে তুমি সুখে থাকবে, তোমার বউকে ভাল রাখা বা সুখে রাখা তোমার হাতের মধ্যে তাই কাদম্বিনী সুখে থাকলে তুমি ভাল থাকবে, কাদম্বিনী কষ্ট পেলে তুমি তার ডবল কষ্ট পাবে। তাই তোমার হাতেই রয়েছে তোমার ভাল থাকা মন্দ থাকা। বৃদ্ধর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে বগলা ভাবল, শুওরটা আশির্বাদ করল না থ্রেট দিল। বৃদ্ধ খুব নিচু স্বরে বলল, বাছা, বড়দের আশির্বাদ পা ছুঁয়ে নিতে হয়। অনিচ্ছা সত্বেও বগলা বৃদ্ধকে নিচু হয়ে প্রনাম করল, বৃদ্ধ বগলাকে হাত দিয়ে তোলার ভান করে রাম চিমটি কেটে দিল। চিমটি খেতেই বগলা “শুওরের বাচ্চা” বলে এক হাত লাফিয়ে উঠল। বগলার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, কি হল বাছা এত ভয় পেয়ে গেলে কেন? কিছুতে কামড়াল নাকি? বগলা ক্রুদ্ধ চোখে বৃদ্ধর দিকে তাকিয়ে ভাবল, তোকে একবার পাই শালা হাতের মধ্যে তোর ঢেমনামি আমি ছোটাব তখন। বগলার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বৃদ্ধ আস্তে করে বলল, বাছা তুমি এখন আমার হাতের মধ্যে আছ, তুমি এরকম চোখ রাঙালে আমি ভয় পেয়ে তোমাকে আবার আমার হাতের খেলা দেখালে সেটা কি তোমার ভাল লাগবে। এরপরে বৃদ্ধ পকেট থেকে রাংতায় মোরা একটা প্যাকেট বার করে বগলার হাতে দিয়ে বলল, আমার মেয়ে তোমার জন্য এটা পাঠিয়েছে।
এরপরে কাদম্বিনী এক এক করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল, বগলাও গাড়িতে উঠে গাড়ি ছেড়ে দিতে বলল। কিছুদুর আসার পরেই বগলা দেখল কাদম্বিনী নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। বগলা পকেট থেকে বৃদ্ধর দেওয়া প্যাকেটটা বার করল। রাংতা খলে দেখল তার মেলাতে সরলাকে কিনে দেওয়া চুড়িগুলো আর সেই সাথে একটা চিঠি। চিঠিটা খুলে দেখল তাতে লেখা আছে,
বগলাচরন সমীপেষু,
আপনাকে এখন মন প্রাণ ঢেলে আপনার স্ত্রীর সেবায় নিয়োজিত হতে হবে, আপনার স্ত্রীর সামান্যতম অসন্তুষ্টি আপনার জীবনে দুর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে আসবে, তাই আপনার আসল চরিত্র স্ত্রৈণ রূপের পরিপূর্ণ প্রকাশের জন্য চুড়িগুলো ফেরত পাঠালাম।
চুড়ি পরে বাকি জীবনটা ভয়ে ভয়ে অতিবাহিত করবেন এই আশা রেখে আজকের মত ইতি।
আপনার অশুভাকান্খি
চিঠি ও চুড়িগুলো গাড়ির জানালা গলিয়ে রাস্তায় ফেলে দিল, রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বগলা গুম মেরে বসে রইল গাড়ির মধ্যে।
এই সিরিজের গল্পগুলি: