বহরমপুর থেকে বেথুয়ার বাস ছাড়তে এখনো মিনিট ২০ বাকি ৷ নস্কর মশাই তাই তার সদ্য বিবাহিতা মেয়ে প্রতিমা কে নিয়ে ডাবের দোকানে গেলেন ৷ নস্কর মশাই স্কুল পেশায় শিক্ষক , পলাশীর এক প্রত্যন্ত মিরপুর গ্রামে স্কুলে পড়ান ৷ সরকারের দেওয়া মাইনেতে পেট না চললেও কিছু বাস্তু জমি আছে আর আছে খেত ৷ নিতান্ত ভালো মানুষটি জগতের চাল ঢাল কিছুই বোঝেন না ৷ আর গ্রামের এক কোনে পরে থাকা মানুষটি ভগবান বিশ্বাস করেন , ভক্তি করে পুজো দেন ৷ তাতেই চলে যায় এই বিত্ত হীন মধ্যবিত্ত মানুষটির ৷
ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে তার দুই মেয়ে আর মেয়ে দুটি পরমা সুন্দরী ৷ পদ্মা সরল আর সে তার দিদি প্রতিমার একমাত্র দোসর ৷ বিয়ের আগে পর্যন্ত তার সব দিন রাত্রির একাকিত্বের আর কৌতুহলের সঙ্গী ৷ কিন্তু বিয়ের এক দিন পর থেকেই কি যে হয়েছে প্রতিমার মাথায় , কিছুতেই কিছু মনে রাখতে পারে না ৷ জামাই বাবা তাঁতের কারবারী ৷ পইসা করি ভালই আছে ৷ তাছাড়া তাদের পৈত্রিক বিড়ির কারখানায় জনা দশেক লোক কাজ করে ৷ সুশীল বড়ই সুবোধ বালক ৷ সেই সুশীল প্রতিমা কে নিজে ঘর সংসার করতে নারাজ ৷ প্রতিমা নাকি যৌন সংসর্গে অপারক ৷ এরকম ভয়ানক গ্লানি মাথায় নিয়ে গোপাল নস্কর এসেছেন বহরমপুর এর নামী এক ডাক্তার এর কাছে তার প্রত্যাখ্যাতা মেয়ের বিচারের আশায় ৷ গোপাল বাবু নিজের হাথেই তুলে নিয়েছেন মেয়ের চিকিত্সার ভার ৷ মেয়েকে সুস্থ করে তুলে দেবেন জামাই বাবার হাথে ৷
” ওহ গোপাল বলি অঃ গোপাল ভায়া , বহরমপুর এ কি মনে করে ?” এক ৫০ উর্দ্ধ প্রৌড় ডেকে উঠলেন পিছন থেকে ৷
“আরে বিফল করিরাজ না ??” গোপাল বিফল কবিরাজ কে ভালো করেই চেনে ৷ তারা তাদের বাল্যের বন্ধু , আর সব থেকে বড় কথা বিফল , মহান সুফল কবিরাজ এর ছেলে ৷ তার বাবা সাক্ষাত ধন্নন্তরী ৷ অনেক জটিল রোগের তিনি উপশম করেছেন , কিন্তু সেই যশ হাথ বিফলের নেই ৷ তবুও কাজ চালিয়ে নেয়৷ আজ তার বাবা নেই কিন্তু তার বাবার বহরম পুরে একটা ছোট দোকান আছে আয়ুর্বেদ ঔষধালয় ৷ বিফল কবরেজ গ্রামে আর থাকেন না বহরমপুরে একটা বাড়ি বানিয়েছেন ৷
“মা তুমি দাঁড়িয়ে ডাব টা খেয়ে নাও , আমরা ওধারে একটু কথা সেরে নি !”
“ভাই বিফল আমার মেয়েকে নিয়ে মহা বিপদে পড়েছি৷ মা মরা মেয়ে , কোনো সমস্যায় নেই , জামাই বাবা মেয়ে কে নিয়ে খুশি নয়, বলে কিনা মেয়ের দোষ আছে! এত অর্থ খরচা করে তিন তিন বার কলকেতার বড় ডাক্তার বাবু দের দেখালাম , বললেন মেয়ের কোনো দোষ নেই ৷ “
“দেখো গোপাল কলকেতার বড় ডাক্তার বাবুরা আসবেন পইসা নেবেন , মেয়েদের নাড়ি দেখা ওদের কম্ম না ভাই ৷ যদি জটিল দোষ হইয়ে থাকে তাইলে ইংরেজি দাবাইয়ে কাম নাই ভাই ৷ আমি কবরেজ , তোমার বন্ধু তোমায় ভুল পরামর্শ দেব না ৷ তুমি বরণ একবার কবরেজ করে দেখো , যদি কাজ হয় !”
“তুমি দেখবা নাকি একবার ?” উপকারের আশায় গোপালের চোখে আসার আলো জ্বলে ওঠে ৷ “তবে তাই হোক” ৷ চল আমার গিন্নি আবার অপেক্ষা করছে আমার বাড়ি চল ৷” বলে বিফল প্রতিমা কে আর গোপাল বাবু কে নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওনা দিলেন ৷ হাত পথে মিনিট ৩০ লাগে ৷ কথা বলতে বলতে সময় কেটে গেল বোঝাও গেল না ৷
প্রতিমার রূপের তুলনা নেই ৷ যেন মোমের মূর্তি কোনো দক্ষ কারিগর খোদাই করে দিয়েছে , কথাও কোনো দাগ নেই ৷ প্রতিমা এখনো ভালো করে শাড়ি সামলাতে শেখে নি ৷ স্বামী সোহাগ পেলেও স্বামীর সাথে সে সঙ্গম করতে পারে নি ৷ কেন পারে নি তার কারণ তার জানা নেই ৷ এক অজানা ভয় তাকে তাড়া করে ৷ তাছাড়া তার স্বামী সুওয়ারের মত যোনিতে লিঙ্গ চালনা করতে চায় , তার যোনিদেশ বিশেষ পিছিল থাকে না , আর তাই ভয়ানক ব্যথা ওঠে ৷ মেয়ে হয়ে এই কথা তার বাবা কে সে জানাতে পারে না ৷ ডাক্তার বদ্যি কে এই কথা সে বহুবার বলেছে ৷ একই কথা সে বিফল কবরেজ কেও জানালো ৷
বিফল কবরেজ ডাক সাইডে বিফল তান্ত্রিক ৷ সে কথা গোপাল নস্কর জানেন না ৷ গোপাল নস্কর তাকে ১৮ ২০ বছর পর দেখছে ৷ তার জীবনের কোনো অধ্যায়ই তার জানা নেই ৷ কিন্তু বিফলের প্রতি বিশ্বাস তার মনে এখনো আছে ৷ সেই বিশ্বাসের জেরে বিফলের হাথে প্রতিমাকে তুলে দিয়ে গোপালের বুক কাপল না এতটুকু ৷
প্রতিমার নাড়ি ধরে জিভ দেখে গোপাল কে পাশের ঘরে নিয়ে গেলেন ৷ ” গোপাল ভায়া এ কঠিন অসুক , তোমার মেয়ে বাচবে না , তুমি মানো না মানো তোমার মেয়েরে জিনে ধরেছে ৷ কোনো ওসুধেই কাজ হবে না৷ তুমি গ্রামের মানুষ তুই এসব বুঝবে অন্য কেউ হলে আমি ফিরিয়ে দিতাম৷ তুমি আমার বাল্য বন্ধু তোমায় কি করে ফেরাই! ভেবে দেখো কি করবে ! “
” কি বলছ হে ?? জিনে ধরেছে !” কিন্তু জিন কেন? ওহ তো কোনদিন সেরকম জায়গায় কোনদিন যায় নি ! তাছাড়া সে নয় বিশ্বাস করা গেল ওকে জিনে ধরেছে কিন্তু তুমি কবরেজ হয়ে বুঝলে কি করে ওকে জিনে ধরেছে !”
এই কথা সুনে বিফল হাথের মুখ্তয় একটা জড়িবুটি মাখিয়ে নিয়ে পাশের ঘরে ব্যসে থাকা প্রতিমা কে শুকিয়ে দিতেই চন্ড মূর্তি নিয়ে মাথা ঝাকিয়ে চোখ উল্টে পাল্টে প্রতিমা ভিরমি খেল খাটে বসে ৷ এ দৃশ্য গোপাল নস্কর তার জীবদশায় দেখেন নি ৷ তিনি কে মন বাক্যে চান তার সন্তান সুখে স্বামী সংসার করুক ৷ আর ভেবে লাভ নেই ৷ ” তাহলে বিফল উপায় ???”
“আমায় সামনের অমাবস্যায় পূজা দিতে হবে , আর মঙ্গল শনি আমি ওর চিকিত্সা করতে পারি যদি তুমি অনুমতি দাও ৷ তবে বাবা হয়ে তোমায় অনেক শক্ত হতে হবে ৷ আমি মেয়েকে দু হাতে কেটে ফেললেও তুমি রা করতে পারবে না , নাহলে মেয়ের ভীষণ সর্বনাশ হয়ে যাবে , মেয়ে পাগল-ও হয়ে যেতে পারে ৷ তুমি কি রাজি!”
“তুমি কি পারবে মেয়ে কে ভালো করতে?” গোপাল অসহায় হয়ে জিজ্ঞাসা করে !
“পারবনা মানে আলবাত পারব ৷ সুধু তোমায় শক্ত হতে হবে , এ জিন খুব ক্রুর ৷ মেয়ের দেহে বাস করে , কিন্তু মেয়ের শরীর খেয়ে নেয় তাই তোমার মেয়ের কাম ইচ্ছা জাগে না ৷ ” গোপাল নস্কর নিরুপায় ৷ সুশীল মেয়ে ফিরিয়ে দিলে পদ্মার তিনি বিয়ে দিতে পারবেন না ৷ তাছাড়া গ্রামে বদনাম হয়ে যাবেন তিনি ৷ তাকে সবাই শ্রদ্ধা করে ৷ তিনি রাজি হলেন ৷ মেয়ে কে চোখ বন্ধ করে বিফলের হাথে তুলে দেবেন ৷ মেয়ের কোনো কষ্টই তিনি কানে তুলবেন না ৷ মেয়ে চিত্কার করে বাবা ডাকলেও না ৷
বিফলের পত্নী চা দিয়ে গেল ৷ এটা বিফলের দ্বিতীয় স্ত্রী ৷ তার থেকে বছর ২২-২৪ ছোট ৷ বয়স বড়জোর ২৪ বা ২৫ হবে ৷ বিফলের ক্ষমতা দেখে গোপাল আশ্চর্য হয়ে গেছেন ৷ গোপাল বুড়িয়ে গেছে , দুই মেয়েকে মানুষ করে তিনি আজ বৃদ্ধ বলেও ভালো বলা হয় ৷ মঙ্গলবার আসতে হবে ৷ বিফল তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন
“মালতি মঙ্গলবার সকালে প্রতিমা আসবে , ওকে জিনে ধরেছে , তুমি সব যোগাড় রেখো ৷ ” মালতি যেন বিফালের বশে৷ পুতুলের মত তার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই যেন তার কাজ।
মঙ্গলবার গোপাল বাবু তার বড় মেয়েকে নিয়ে বিফলের বাড়িতে সকেই এসে উপস্থিত হয়েছেন ৷ ” মা এ কাপড় তো তোমার চলবে না পূজা তে ! তুমি এই গামছা পরে নাও তোমায় সুদ্ধ বস্ত্রে থাকতে হবে ৷ ‘ বিফল নির্দেশ দিল ৷ প্রতিমা যুবতী গামছা দিয়ে তার শরীর সে ঢাকতে পারবে না ৷ বাবার দিকে তাকাতেই গোপাল বাবু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷ বললেন ” মা তোমার কঠিন অসুক , বিফল যা বলে তোমায় সুনতে হবে না হলে বিপদ হতে পারে না আমি বাইরের দাওয়ায় বশে রইলাম বিফল তোমার পূজা শেষ হলে আমি ভিতরে আসবো!”